| 18 এপ্রিল 2024
Categories
চলচ্চিত্র বিনোদন

হেলপার থেকে সুপারষ্টার

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

রজনীকান্ত কে তামিল চলচ্চিত্রের ঈশ্বর বলা হয়। অনেকে তামিলের তালাইভা অর্থাৎ নেতা বলে থাকে। রজনীকান্ত একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, প্লেব্যাক গায়ক। তার পারিবারিকভাবে নাম হলো শিবাজী রাও গায়েকোয়াাড। তার বর্তমান বাসস্থান ভারতের চেন্নাই, তামিলনাডুতে। তিনি মোট ১৭৮ টি চলচিত্র করেন । ১৯৭৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত তামিল সিনেমা অপূর্ব রাগাঙ্গাল সিনেমাতে খলনায়ক হিসাবে চলচিত্র জগতে অভিষেক করেন।

পরিচালক কে.বলচন্দ্র উপদেশে তিনি সিনেমাতে অভিনয় মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। তার অসংখ্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্র মধ্যে উল্লেখযোগ্য তামিল চলচ্চিত্র হল “মুনড্রু মুদিচ্চু”, আভারগাল, ভায়াথিনিলে, চিলাকাম্মা চিপ্পিন্দি, শিবাজী, চন্দ্রমুখী, বাবা , এনথারিন, কোচাহদাইয়্যান, কাবালি, ২.০ পেটটা ও হিন্দী চলচ্চিত্র হল চালবাজ, বুলান্ডি, হাম, দোস্তি দুশমন, রাওন, ইনসানিয়াত কি দেবতা, ফারিস্তে ইত্যাদি।

রজনীকান্ত ১৯৫০ সালে ১৬ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন ভারতের মিসোর রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে একটি মারাঠি পরিবারে। তার বাবা নাম রামজী রাও গায়েকোয়াাড একজন পুলিশ কনস্টেবল ছিলেন ও তার মা নাম জিযাবাই। তারা চার ভাইবোন তাদের মধ্যে রজনীকান্ত হলেন ছোট। তার বাবা ১৯৫৬ সালে কাজ হতে অবসর গ্রহণ করেন তখন তার পরিবার হনুমান্থনগর চলে আসে তাদের নিজ বাড়িতে। ছোট বেলায় তিনি খেলাধুলা ও পড়াশুনায় আগ্রহ ছিলেন।

রজনীকান্ত ছয় বছর বয়সে “গাভিপুরাম সরকারি কন্নড় মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে” ভর্তি হন এবং সেখানে তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এগারো বছর বয়সে তার মা মারা যান। তিনি তার ভাই তাকে রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃক স্থাপিত রামকৃষ্ণ মঠে নিয়ে যান। আধ্যত্মিক শিক্ষার সাথে তিনি মঠে নাটকে অভিনয়ও করা শুরু করেন।তিনি হিন্দু মহাকাব্য মহাভারত-এ “একলব‌্য” এর বন্ধুর চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান এবং তার পরিবেশনা দর্শকের কাছ থেকে প্রসংশা অর্জন করেন। ষষ্ঠ শ্রেণি পড়া সম্পন্ন করার পর আচার্য্য পাঠশালা পাবলিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ওখান থেকে তিনি প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় কোর্স সম্পন্ন করেন।

বিদ্যালয়ের পড়া সম্পন্ন করার পর অভাবের সংসার অর্থ জোগাতে তিনি বেঙ্গালুরু এবং মাদ্রাজ শহরে বিভিন্ন রকম কাজ করেন এমনকি কুলি এবং মিস্ত্রীর কাজও করেন। তিনি বেঙ্গালুরু ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের বাসের হেলপার হিসেবেও কাজ করেন।

তিনি ১৯৭৩ সালে মাদ্রাজ আসেন “মাদ্রাজ ফিল্ম ইনিস্টিটিউট” থেকে অভিনয়ের উপর ডিপ্লোমা পড়ার কোর্স করতে চান এতে তার বন্ধু এবং সহকর্মী তাকে ঐ প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্যে উৎসাহ প্রদান করে এবং তাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করেন। ঐ প্রতিষ্ঠানে থাকাকালীন সময়ে তিনি স্টেজ নাটকে অভিনয় করতেন ফলে তিনি তামিল চলচ্চিত্র পরিচালক কে.বলচান্দের নজর কাড়েন ১৯৭৫ সালে তারই পরিচালিত তামিল সিনেমা অপূর্ব রাগাঙ্গাল সিনেমাতে খলনায়ক হিসাবে অভিনয় করেন।

তার দাম্পত্য জীবনের সঙ্গী হলেন লতা অ্যাথিরাজ মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন লতা। যিনি তাদের কলেজ ম্যাগাজিনের জন্য রজনীকান্তের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্যে গিয়েছিলেন। তাদের একজন আরেকজনকে পছন্দ হয়। তাদের বিয়ে হয় ১৯৮১ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারী, অন্ধ্র প্রদেশের ত্রিপাটিতে।

তাদের দুই মেয়ে “ঐশ্বর্য্য রজনীকান্ত” এবং “সৌন্দর্য্য রজনীকান্ত”। তার বড় মেয়ে, ঐশ্বর্য্য অভিনেতা ধানুশকে ২০০৪ সালের ১৮ নভেম্বর বিয়ে করেন। তার ছোট মেয়ে সৌন্দর্য্য চলচ্চিত্র শিল্পে পরিচালক, প্রযোজক এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত। তিনি ২০১০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর শিল্পপতি আশ্বিন কুমারকে বিয়ে করেন।

তিনি অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন, বিশেষভাবে তামিল সিনেমার জন্যে। তিনি ১৯৮৪ সালে চলচ্চিত্র “নাল্লাভানুকু নাল্লাভান” প্রথম “ফিল্মফেয়ার সেরা তামিল অভিনেতা পুরস্কার” অর্জন করেন। ২০১৪ সালে তার বিভিন্ন সিনেমার জন্য ছয়টি “তামিল স্টেট চলচ্চিত্র পুরস্কার” পান।

তিনি “সিনেমা এক্সপ্রেস” এবং “ফিল্মফ্যান এসোশিয়েশন” থেকে অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৮৪ সালে “কালাইমামানি” পুরস্কার জিতেন এবং এম.জি.আর পুরস্কার জিতেন। ১৯৯৫ সালে, দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র কলাকৌশলী সংগঠন “কালাইচেল্ভাম” পুরস্কার প্রদান করে। ২০০০ সালে ভারত সরকার কর্তৃক তাকে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ উপাধী প্রদান করে।

২০০৭ সালের সেরা বিনোদনদাতা হিসেবে নির্বাচিত হন। একই বছর মহারাষ্ট্র সরকার তাকে রাজ কাপুর পুরস্কার প্রদান করে। তিনি ২০১০ বিজয় পুরস্কার অনুষ্ঠানে ভারতীয় সিনেমায় তার অবদানের জন্য তাকে “চিভালিয়া সিবাজী গণেশ পুরস্কার” প্রদান করে। এছাড়াও তিনি অসংখ্য পুরষ্কার ও সন্মাননা পান।

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্রসহ অন্যান্য দেশের সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন। ২৬০ মিলিয়ন (ইউ এস ৩.৬২ মিলিয়ন) সম্মানী নেওয়ার পর তিনি জ্যাকি চ্যানের পর এশিয়ার সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক গ্রহণকারী তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত