| 19 মার্চ 2024
Categories
ইতিহাস

নালন্দা ধ্বংসে বখতিয়ার খিলজি: ইতিহাস এর নির্মোহ দৃষ্টিকোন থেকে

আনুমানিক পঠনকাল: 10 মিনিট

 

নালন্দা , আমাদের বাঙালি দের শত শত বছর ধরে জমানো জ্ঞান ভাণ্ডার , আমাদের সহস্র সাধনার পুঞ্জি । গুপ্ত যুগে মধ্যভারতীয় গণ পন্ডিত দের , এরপরে হর্ষবর্ধন আর পুশ্যভুতি রাজবংশ  এর বিদগ্ধজন দের পদচারনা মাঝে যা সদা ছিল কর্মচঞ্চল , কনৌজ এবং মধ্যভারতীয় দের ক্ষমতা কমে গেলে , মহাত্নক উত্তরাপথস্বামী ধর্ম পাল এর অধীনে আসে এই মহাবিহার বা বিশ্ববিদ্যালয় , এরপরেই নালন্দা থেকে উৎসারিত হতে থাকে জ্ঞান এর ফল্গুধারা , যার মাঝে সেই সময়ের বাঙালির অবদান ছিল সিংহভাগ , কেননা ষোড়শ মহাস্থবীরগণ এর মাঝে নালন্দা এর , অন্তত তিনজন বাঙালি ছিলেন সেটি প্রমাণিত। কিন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয় সহসা যেন হারিয়ে যায় আমাদের মাঝ থেকে , এর মাঝে থাকা লক্ষাধিক বই এর সংকলনে সজ্জিত মহাগ্রন্থাগার ধর্মগঞ্জ বা জ্ঞান এর নগরী ও সমাপ্ত হয়ে যায় । কেমন করে হয় এটা? আর নালন্দা কেনই বা ধ্বংস হয় ? আর এটিই কি ছিল এর প্রথমবার ধ্বংস হওয়া ? আর এর সাথে বাংলা কে সেন দের শাসন থেকে মুক্ত করা বখতিয়ার খিলজি এরই বা নাম কেন ? আসুন দেখা যাক ।

নালন্দা , মহাবিহার এর স্থাপনা করা হয়েছিল গুপ্ত যুগে , গুপ্ত যুগে শুক্রাদিত্য উপাধি সম্পন্ন একজন সম্রাট নালন্দা কে তৈরি করেন , তার নামের একটি সিল নালন্দা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে , অধিকাংশ ইতিহাসবিদদের মতে এই শুক্রাদিত্য হচ্ছেন গুপ্ত সম্রাট কুমারগুপ্ত  কুমারগুপ্ত এর আগের মৌর্য যুগেও যদিও এখানে একটি সুবিশাল মন্দির স্থাপন করেছিলেন সম্রাট অশোক , কুশান মহাপন্ডিত নাগার্জুন এখানে ২৭ বছর যাবত অবস্থান করেছেন , এর পূর্বে গৌতমবুদ্ধ সেখানে নিজের জীবন এর চারটি বর্ষাকাল অতিবাহিত করেন বলেও জানা যায় । এই কারণেই নালন্দা এক অভূতপূর্ব শক্তি নিয়ে জাগ্রত হয় এক মহাবিদ্যার পিঠস্থান হিসেবে , এখানে সর্বমোট ভবন ছিল ২৭ টি , অর্থাৎ প্রায় ২৭ টি মহাস্তুপ বা মহামন্দির এর সমন্বয়ে তৈরি হয়েছিল নালন্দা ।তবে নালন্দার চলার পথ একেবারেই মসৃণ ছিল না , তার এই পথে হাজারও সমস্যা এসে দাঁড়ায় , উপমহাদেশ হতে বৌদ্ধ ধর্মের ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্তি , হেপথালাইট বা শ্বেতহূন দের ক্রমাগত আক্রমণ, আভ্যন্তরীণ কোন্দল ইত্যাদি কারণে নালন্দা ধীরে ধীরে শীর্ণ হতে থাকে , এর চূড়ান্ত সমাপ্তি এর ব্যাপারে আমাদের সমগ্র পন্ডিতগণ একমত যে নালন্দা ১১৯৩ সালে সমাপ্ত হয়ে যায়, কোন এক বহিঃশক্তির আক্রমণে , তো কে ছিলেন সেই বহিঃশক্তি ? বখতিয়ার ? নাকি অন্যকেউ?

চিত্র: প্রাচীন নালন্দা ইউনিভার্সিটি


অনেকে মনে করে থাকেন যে নালন্দা , মাত্র একবার ধ্বংস হয়েছিল ।একবার ধ্বংসের পরেই  পুনরায় নালন্দার উঠে দাঁড়ানো এর শক্তি ছিল না।তাহলে দেখা যাক নালন্দা কতবার ধ্বংস হয়েছিল ।

১ম ধ্বংস:নালন্দা এর প্রথম ধ্বংসের ঘটনাটি ঘটে মিহিরকূল এর দ্বারা , নিজের স্থাপনা এর সবেমাত্র ১০০ বছর পার হতে না হতেই নালন্দা ধ্বংস হয়ে যায় , সেই সময়কার শ্বেতহূন মিহিরকুলের সেনানি দ্বারা  সেটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় ।

চিত্র: মিহিরকূল


আমরা সেই সময়ের বিভিন্ন তথ্য থেকে জানতে পারি যে মিহিরকূল এর রাজ্য গোয়ালিয়র পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়েছিল সেই সময়ে ।  অ্যালকন হূনদের বিজয়াভিযান এর চিত্র নিম্নে প্রদান করলে আমরা সেটি আরও ভালো করে বুঝতে পারবো ।

চিত্র: অ্যালকন বা শ্বেত হূন দের অভিযান


আমরা উপরে দেখতে পাচ্ছি যে মিহিরকূল এর একটি অভিযান নালন্দা পর্যন্ত চলে এসেছিল ,মিহিরকূল এর ধ্বংসের সুত্রপাত তার পিতা তোরাম্মা এর সময় থেকেই চলে আসছিল , স্কন্দগুপ্ত এর সময়কালে হূন এবং গুপ্তদের মাঝে একটি প্রচণ্ড যুদ্ধ হয় বলে আমরা জানতে পেরেছিলাম । এমনকি হূন দের আক্রমণেই গুপ্ত সাম্রাজ্য ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায় এটিও প্রমাণিত সত্য, এই কারণেই নালন্দা ধ্বংসের সাথে তার নাম থাকাটা অতি স্বাভাবিক , নালন্দা কে যে তিনি ধ্বংস করেন সেই বিষয়ে পন্ডিতদের বক্তব্য ছিল নিম্নরূপ ।



তাহলে দেখা যাচ্ছে যে নালন্দা এর প্রথম ধ্বংস হয় মিহিরকূল এর হাতে , মিহিরকূলের পরবর্তীতে এই নালন্দা কে যিনি ধ্বংস করেন , তার নাম আমাদের অনেকের জন্যই অনেক বড় একটি আঘাত নিয়ে আসতে পারে , তিনি হচ্ছেন শ্রীগুপ্ত এর পরেই  দ্বিতীয় বাঙালি  এবং বাংলাদেশ এর ভুখন্ডের প্রথম স্বাধীন সম্রাট শশাঙ্ক ।

DD kosambi তার বইতে উল্লেখ করেছেন

“সর্ব প্রথম এই মহাবিহার এর উপরে সত্যিকার এর হামলা আসে শশাঙ্ক নরেন্দ্রগুপ্ত এর দ্বারা , যিনি পশ্চিমবঙ্গ থেকে তার সেনাবাহিনী নিয়ে এসে , গাঙ্গেয় উপদ্বীপ এর এক বিস্তীর্ণ এলাকা অধিকার করেন , তার বৌদ্ধ বিদ্বেষ এতটাই তীব্র ছিল যে তিনি , বোধিবৃক্ষ কে উপড়ে নদীতে নিক্ষেপ করেন , বুদ্ধের পদচিহ্ন ধ্বংস করেন । নালন্দা এর প্রভূত ক্ষতি ধ্বংস করেন তিনি , এমনকি হিউয়েন সাঙ আসার পরেও নালন্দা নিজের দৈন্যদশা থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি ,শশাঙ্ক এর মৃত্যুর পরে এমনকি এই নালন্দা এর প্রধান মঠ টিকেও পরিপূর্ণ রূপে ধ্বংস করা হয় ৬৫৫ খ্রিস্টাব্দে “।

কিন্ত এরপরেই আমাদের বাংলাদেশ এর প্রথম স্বর্ণযুগের স্থপতি পালসম্রাটরা রঙ্গমঞ্চে আসেন , তাদের দ্বারা প্রায় সমগ্র ভারত ৮০ বছর এর বেশী সময়, প্রায়  সমগ্র বঙ্গ ও বিহার ৪০০ বছরকাল শাসিত হয় , মহাত্নন ধর্মপাল এই মহাবিহার এর পুনঃনির্মাতা হিসেবে আমাদের ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবেন ।

            চিত্র: ধর্মপাল এর সাম্রাজ্য


এরপরেই আসে আমাদের নালন্দা এর ধ্বংস ১১৯৩ সালে, এই মহাধ্বংস যে ১১৯৩ সালেই সংগঠিত হয় সেটি নিয়ে এখন তেমন কোন বিতর্ক নেই । এই সর্বশেষ ধ্বংসের জন্য  দায়ী করা হয় বখতিয়ার খিলজি কে , তবে এখানে একটি বড় ঝামেলা আছে , আর সেটি হচ্ছে , এটি যে বখতিয়ার মূলত ভারতে জীবিকার জন্য আসেন ১১৯৫ সনে , অর্থাৎ তার সময়কাল এর দুই বছর আগেই নালন্দা ধ্বংস প্রাপ্ত হয় , প্রমাণস্বরূপ নিচের বই এর পাতার ছবি দেওয়া হল ।


(Sri Dineshchandra The history of Bengal ancient period 700-1201)page2-3


তাহলে এটিই বলতে হয় , যে নালন্দা এর ধ্বংস বখতিয়ার নয় বরঞ্চ আর কেউ করেছিলেন ।  আর মুসলিম সুলতান দের উপরে এর পূর্বেই জুন্দিশপুর মেডিকেল কলেজ  এবং সেরাপিয়াম এর লাইব্রেরী কে ধ্বংস করে দেবার অভিযোগ করা হয়েছিল যেগুলি পরে মিথ্যা প্রমাণিত হয় ।

তাহলে নালন্দা এর ধ্বংস কে করল ? আর মিনহজ-ই-সিরাজ এর তাবাকাতে নাসিরি তে তাহলে কি উল্লেখ করা হয়েছে ? যে একটি মাথা ন্যাড়া ব্রাহ্মণ দের শিক্ষলয় তিনি ধ্বংস করেছিলেন বলে উল্লেখ আছে সেই কোথায় ছিল ।

নালন্দা কি করে ধ্বংস হল এই বিষয়ে সবথেকে চমৎকার উত্তরটি আমরা পাই দুইজন এর কাছ থেকে , তাদের মধ্যে  একজন হচ্ছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর DN JHA তার রচিত , How History Was Unmade in Nalanda এর কিছু অংশ এর অনুবাদ নিচে দেওয়া হল ।“বখতিয়ার নিজের অভিযানে সর্বদা তিনটি ভাগে বিভক্ত করে জনবল রাখতেন , তিনি রণবেশে সজ্জিত হয়ে তার দুইশত ঘোড় সওয়ার নিয়ে , বিহার এর দুর্গ শহর কে আক্রমণ করেন তার এই বাহিনীর মধ্যে শামস-উদ-দিন এবং নিজামউদ্দিন নামের দুই পন্ডিত ভাই ছিলেন ফারগানা এর , যারা এই বিষয়টিকে লিখে রাখেন নিজের মত করে , ইনাদের কাছ থেকেই ৬৪১ হিজরি তে  মিনহজ-ই-সিরাজ নামক ইতিহাসবিদ বিষয়টিকে সংগ্রহ করেন , এই থেকে জানা যায় যে বখতিয়ার ঘোড়ার উপরে চেপে এই দুর্গের পরিখা পাড়ি দেন এবং অতর্কিতে হামলা করেন এই দুর্গ শহর বা গড় এর উপর , তাদের হাতে বিপুল পরিমাণে ধন সম্পত্তি  লদ্ধ হয় , এছাড়াও সেখানে বিশাল সংখ্যক মাথা কামানো , টিকি বিশিষ্ট ব্রাহ্মণ দের উপস্থিতি ছিল , যারা অত্যন্ত পন্ডিত ছিলেন ,তাদের সবাইকে হত্যা করা হয় , এর সাথে সাথে প্রায় কয়েক হাজার এর বেশী বই তাদের হাতে আসে , যা অনুবাদ করার জন্য সেখানকার হিন্দুদের কে ডাকা হয় , বখতিয়ার এই দুর্গ টিকে পরিপূর্ণ রূপে ধ্বংস করার আগে জানতে পারেন এটি মূলত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , যাকে এলাকার মানুষেরা বিহার নামে অভিহিত করে। “

এই একই কথা আছে উইকিপিডিয়াতেও

“Muhammad-i-Bakht-yar, by the force of his intrepidity, threw himself into the postern of the gateway of the place, and they captured the fortress, and acquired great booty. The greater number of the inhabitants of that place were Brahmans, and the whole of those Brahmans had their heads shaven; and they were all slain. There were a great number of books there; and, when all these books came under the observation of the Musalmans, they summoned a number of Hindus that they might give them information respecting the import of those books; but the whole of the Hindus had been killed. On becoming acquainted [with the contents of those books], it was found that the whole of that fortress and city was a college, and in the Hindui tongue, they call a college [مدرسه] Bihar.  “

তাহলে এই মাথা ন্যাড়া করা ব্রাহ্মণরা ছিলেন কারা ?আর এরা যে সংস্কৃত ভাষী ছিলেন সেটিও অনেকটা ধারণা পাওয়া যায় , কেননা বৌদ্ধরা নিজের জ্ঞান লিখতেন পালি তে , তারা মূলত কখনই খুব একটা সংস্কৃত ব্যবহার করতেন না । তাহলে তাদের কে অনুবাদ করার জন্য হিন্দুদেরকে দরকার পড়েছিল বৌদ্ধ দের কে না ।

তাহলে আমরা দেখি যে আসলে কি হয়েছিল ,আমরা উপরে স্যার যদুনাথ এর বই থেকে দেখতে পাচ্ছি বখতিয়ার তার এই অভিযান শুরু করেন ১১৯৯ সনে , এই বিষয়ে ইরফান  হাবিব এর বই থেকে তুলে দিচ্ছি আমি

“১১৯৯ সালে বখতিয়ার খলজি দক্ষিণ বিহার অভিযান চালান এবং রাজা গোবিন্দপাল দেব কে পরাজিত করেন। “

এরপরেই ইরফান হাবিব উল্লেখ করেছেন যে বখতিয়ার উদন্তপুরী তে অভিযান চালান , যেটি  বৌদ্ধ অথবা হিন্দুদের দ্বারা  পরিচালিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল , মূলত দুর্গের ন্যায় গঠন এর কারণেই সেটিকে তিনি ভুল করে দুর্গ মনে করে ফেলেছিলেন , সেই সময় অদন্তপুরী ছিল বিহার এর রাজধানী , প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় নালন্দা অপেক্ষা সেটি ছিল অনেক অনেক দূরে অবস্থিত ,  আর অদন্ত পুরী একেবারেই দুর্গের মত ছিল যেখানে নালন্দা বিন্দুমাত্র এরকম ছিল না , গঠনে ।  নিম্নের চিত্রতে এর গঠন দেখলেই আমরা বুঝতে পারব ।


চিত্র: নালন্দার প্রধান মঠ পুনঃ নির্মিত কম্পিউটারে


 

 

 

 

 

 

চিত্রঃপ্রধান শিক্ষালয় নালন্দা


এছাড়াও DN Jha তার লেখনি তেও এটি উল্লেখ করে দিয়েছেন“The above account mentions the fortress of Bihar as the target of Bakhtiyar’s attack. The fortified monastery which Bakhtiyar  captured  was, “known as Audand-Bihar or Odandapura-vihara” (Odantapuri in Biharsharif then known simply as Bihar). This is the view of many historians but, most importantly, of Jadunath Sarkar, the high priest of communal historiography in India (History of Begal, vol. 2,  pp.3-4) “ .এরপরেও ভারত এর ইতিহাসবিদদের রাজপুরোহিত নামে পরিচিত স্যার যদুনাথ এর বই থেকে সরাসরি উল্লেখ করে দিচ্ছি আমি , পেজ এর ছবি থেকে ।



তবে মুসলিমরা , যে বিক্রমশীল বিহারে আক্রমণ করেছিলেন , সেটি এর ব্যাপারে স্যার যদুনাথ ও এরপরে  নিশ্চিত ছিলেন না , এখানে একটি কথা থেকেই যায় আর সেটি হচ্ছে , যে বখতিয়ার যতই নালন্দা ধ্বংস না করুক । তিনি যে উদন্তপুরী কে ধ্বংস করেছিলেন সেটি নিশ্চিত , আর এরই সাথে সাথে তিনি আরও ৮০ টি বিহার কে অধিগ্রহণ করেন , যদি সে বিহারসমূহ তিনি ধ্বংস করেন নি , এরই মাঝে অন্যতম প্রধান হচ্ছে বিক্রমশীল বিহার , এটি ধর্মপাল এর প্রতিষ্ঠা করা একটি বিহার ছিল ।

যদিও স্যার যদুনাথ উল্লেখ করেছেন যে এটিকে বখতিয়ার অধিকার করেছিলেন , কিন্ত এর শেষ পরিণতি কি হয়? সেটি আমরা দেখতে পাই  , বিক্রমশীল মহাবিহার এর প্রধান তিব্বতি মঙ্ক ধর্মস্বামী এর বর্ণনাতে ।

“ধর্মস্বামী বর্ণনা করেন , যে তিনি ১২৩৪-৩৫ সাল এর মধ্যে বিক্রমশীল মহাবিহার এর দায়িত্ব পালন করেন মহাস্থবীর হিসেবে , এবং সেখানে কমপক্ষে ৮০ টি বিহার বা ইউনিভার্সিটি কে পরিচালিত হতে দেখেন তিনি “

এটি তার জীবনীর ইংরেজি  অনুবাদ থেকে তুলে দিচ্ছি আমি

“As to the topographical details, our pligrim states, “It(Nalanda) had seven great lofty pinnacles in the centre. On the outside towards the north, stood fourteen lofty pinnacles, Outside it there were about 80 small Viharas’. Possibly the seven great lofty pinnacles in the centre were the structures in the Stiipa, row,the remnants of four of which can be seen ;:tt present. What can the 14 lofty pinnacles refer to? The pilgrim says that they were to the north of the seven great lofty pinnacles. Had he given the direction as east, we could have identified these I4 structures with the big monasteries, the remnants of eleven of which have been so far exposed by moderp excavations. Outside these fourteen pinnacles, says our pilgrim, there were about 800 small Viharas. Modern explorotion or excavations have found no traces of them so far “

এছাড়াও তারই জবানিতে আমরা জানতে পারি যে আচার্য শীলভদ্র এর সময়ে তিনি নালন্দা তে ছয় মাস কাল কাটিয়েছিলেন (১২৩৪-১২৩৫ সনে)  , তখন নালন্দার ৩৪ টি সুবিশাল ফ্যাকাল্টি এর মধ্যে মাত্র ২ টি কার্যক্ষম ছিল , মুসলিম সৈন্যরা অনেক সময়েই এখানে আসতেন এবং এখানকার পাথর নিয়ে যেতেন , মসজিদ বা অন্য কিছু নির্মাণ করার কাজে । এটাও তিনি বলেন যে একবার বৌদ্ধ একটি দেয়ালচিত্রে গোবর নিক্ষেপ করেছিল কিছু মুসলিম সৈন্য , কিন্ত তাদের মাঝে একজন সেই রাত্রেই শূল-বেদনা (হার্নিয়া) তে মারা যায় উদন্তপুরিতে পৌঁছানোর আগেই , এরপর থেকে মুসলিম সৈন্যরা এখানে আর ভয়ে আসতেন না ।

তাহলে মুসলিমেরা কেনই বা উদন্তপুরী কে ধ্বংস করলেন ? যেখানে তারা সেই যুগে সমগ্র বিশ্বে জ্ঞান এর মশালবাহক ছিলেন , সেটি একবার দেখা যাক ।

এখানে আমরা দেখতে পাই পণ্ডিত কুলাচার্য জ্ঞানানশ্রী (Kulacharya Yanansri) তার ‘ভাদ্র কল্পদ্রুম’(Bhadra Kalpadrum) গ্রন্থে কি উল্লেখ করেছেন

“সেই সময়ে বৌদ্ধ এবং ব্রাহ্মণ দের মাঝে এতই বেশী মাত্রাতে দ্বন্দ্ব বিদ্যমান ছিল ,এছাড়াও বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা নিজেরাও এতই বেশী মাত্রাতে বিভক্ত ছিলেন নিজেদের মধ্যে যে তারা কোন একক সিদ্ধান্তে আসতে পারতেন না , যখন তারা তুর্কি দের কে এখানে হামলা করে সেন দের উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা করেন , তখন লক্ষণ সেনও নদীয়া থেকে বখতিয়ার এর নজর অন্যদিকে সরিয়ে দেবার জন্য গুপ্তচর মারফত এটাই খবর পাঠান যে সেখানে একটি দুর্গ রয়েছে বৌদ্ধদের , যাতে বখতিয়ার নিজেই অন্তঃদ্বন্দ্ব এর মাঝে পড়ে যান , বখতিয়ার এই এলাকা একদম চিনতেন না , এই কারণেই তিনি জানতেন না, উদন্তপুরী একটি বৌদ্ধ বিহার , পরে সারিবদ্ধ বই দেখে তার এই মোহভঙ্গ ঘটে “

অনেকেই হয়তবা বলবেন , বখতিয়ার , যুদ্ধ করেছেন এখানকার অধিবাসীদের সহিত , তিনি বিক্রমশীল এবং নালন্দাকে অধিকার করেছেন , উদন্তপুরী ধ্বংস করেছেন , তিনি কেমন করে নায়ক হতে পারেন ? তাহলে এটিই বলার আছে , যে বখতিয়ার কোন পাপমুক্ত প্রেরিত পুরুষ বা বৌদ্ধদের পরমমিত্র আব্বাসিদ রাজবংশ এর কেউ ছিলেন না , তিনি ছিলেন একজন তুর্কি , যিনি আফগান বংশদ্ভুত মুহাম্মদ ঘুরি এর অনুগত একজন সেনানায়ক ছিলেন , তার মাঝে রুক্ষতা এবং নিষ্ঠুরতা পূর্ণ মাত্রাতেই ছিল , তারও দোষ এবং গুণ রয়েছে , কিন্ত তার দেহ কে  যখন দেবগিরি তে ফেরত আনা হয় , তখন সেই স্থানে তার সৈনিকদের সাথে বিয়ে হওয়া স্থানীয় নারীদের আহাজারি তে তার মহত্ত্ব ফুটে উঠে , তিনি যে গ্রামে আজও শায়িত সেই গ্রামে যে আজও কেউ বিছানাতে ঘুমান না , সেটার মধ্যে তার মহানুভবতা শায়িত ।

শেষ কথা

বখতিয়ার , শুধু আমাদের কে চরম কুসংস্কারে নিমজ্জিত , কৌলীন্যবাদের কট্টর অনুসারি সেন দের হাত থেকে আমাদের কে রক্ষাই করেননি , বরঞ্চ তিনি আমাদের সহজিয়ার উপরে টিকে থাকা সংস্কৃতি কে আবারও বেঁচে ওঠার এক নতুন দিক দেখিয়েছিলেন , তারই কারণে আমরা পাই আমাদের স্বাধীন সুলতানি আমল বা দ্বিতীয় স্বর্ণযুগ বাংলার। শেষ কথা বলতে গেলে বলতেই হয় , তাহলে নালন্দা কে আগুন দিল কে? নালন্দা যে ১১৯৩ সনে আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছিল সেটিও সত্য কথা , তাহলে সেটি বলতে গেলে বলতেই হয় যে এই নালন্দা ধ্বংসকারী ছিলেন তীরহুত এর রাজা অর্জুন , সেটি কিভাবে , তা আরেক পর্বের জন্য উঠিয়ে রাখা হল ।

রেফারেন্সঃ

  1.  বাঙালির ইতিহাসঃ আদিপর্ব নীহাররঞ্জন রায়
  2.  Altekar, Anant Sadashiv (1965). Education in Ancient India. Nand Kishore. ISBN 8182054923.
  3. 3Ghosh, Amalananda (1965). A Guide to Nalanda (5 ed.). New Delhi: The Archaeological Survey of India. Chandra, Satish (2004).
  4. Volume 1 of Medieval India: From Sultanat to the Mughals. Har-Anand Publications. ISBN 8124110646.
  5.  Foreign Influence on Ancient India
  6. By Krishna Chandra Sagar
  7.  DD Kosambi The Culture and Civilisation of Ancient India in Historical Outline
  8.  Chandra, Satish (2004). Volume 1 of Medieval India: From Sultanat to the Mughals. Har-Anand Publications. ISBN 8124110646
  9.  The History of Bengal muslim period sir Jadunath Sarker.(vol2)page2-3
  10.  How History Was Unmade At Nalanda! D N Jha
  11. Tabaqat-I-nasiri
  12.  (M. Habib in I. Habib, Medieval India 1, Delhi, 1992)।
  13.  The History of Bengal muslim period sir Jadunath Sarker.(vol2)page2-3
  14.  বাংলার ইতিহাস , সিরাজুল ইসলাম
  15.  BIOGRAPHY ” f OF DHAR~[ASV AMIN (Chag 10 tsa-ba Chos-rjc-dpal) A( TIBETAN l\iONI{ PILGRIM
  16.  ibid
  17. Journal of Varendra Research Society, 1940  cited in A. Mu’min Chowdhury, The Rise and Fall of Buddhism in South Asia, London: London Institute of South Asia, 2008
  18.  Rc Mojumdar History Of Bengal

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত