| 29 মার্চ 2024
Categories
এই দিনে গল্প সাহিত্য

নলিনী বেরা’র গল্পঃ ঝরা পালকের খোঁজে

আনুমানিক পঠনকাল: 5 মিনিট

আজ ২০ জুন কথাসাহিত্যিক নলিনী বেরা’র জন্মতিথি। তাঁর প্রতি রইলো ইরাবতী পরিবারের শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।


আমাদের উঠোনের পুবদিকে অবস্থিত অঝোরঝর নিম গাছটার ডালে বসে একটা অলম্বুস দাঁড়কাক তার হেঁড়ে গলায় ডাক দিয়ে গেল।
সাদামাটা পাতিকাকের তুলনায় ঈষৎ ভারী দাঁড়কাকটার শরীরের ভারে কতক বুড়ো নিমপাতা ঝরেও পড়ল ঝুরঝুর। অমনি আমাদের মা-কাকিমাদের মধ্যে চিন্তার উদ্রেক হল—না জানি কী খারাপ খবর আসছে!
আর, সত্যি সত্যি আমাদের গ্রামের না-নারী না-পুরুষ আনন্দী, যে কি না হপ্তায় হপ্তায় বাঁকে করে ডালায় ভরে হাঁস-মুরগি চালান দেয় খড়্গপুরের গোলবাজারে, সেই এসে সাতকাহন করে বলল—মাথা খারাপ হয়ে যাওয়া আমাদের ছোট পিসিমা নাকি খড়্গপুর রেল ইস্টিশানের কাছে রেলের এক বাতিল কামরার ভিতরে ঢুকে দু হাত তুলে নির্ধূমসে নাচছেন!
খবর ওই পর্যন্তই। তারপর তো জানি, অবধারিতভাবে আমার ও ছোট কাকার উপর দায়িত্ব বর্তাবে যে করেই হোক ছোট পিসিমাকে খড়্গপুর রেল ইস্টিশানের পরিত্যক্ত রেল কামরা থেকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ঘরে ফিরিয়ে আনার।
হলও তাই। তল্লাটের নামজাদা কোব্‌঩রেজ আমাদের মেজ কাকা আচমকা হাঁক দিয়ে বলে উঠলেন, ‘কই রে ললিন, যা তো তোর ছোটকাকে ডেকে আন!’ ছোটকার সন্ধানে আমিও বেরিয়ে পড়লাম তৎক্ষণাৎ।
গ্রামের মধ্যে আমাদের ‘বাখুল’টাই সবচেয়ে বড়। একদিকে নদী আরেক দিকে ঘনঘোর জঙ্গল, মাঝখানে আমাদের গ্রাম। বাবা-কাকাদের ঘর। বাবা, কাকাদের মা, আর আমার মা-কাকিরা।
বর্ষায় যখন নদীর দু’কূল ছেপে হড়পা বান আসত, ধড়াস ধড়াস করে নদীর ‘কাতা’ ভাঙত, নদীধারের লোকেরা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে গবাদি পশু-পাখি নিয়ে উঠে যেত ইস্কুল ডাঙায়, তখন আমাদের গ্রাম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথিবীর একেবারে বাইরে এসে পড়ত। রীতিমতো ‘আউট সাইডার’ ‘আউট সাইডার’।
অঝোরঝর বর্ষণ, খড়ের চাল ভেদ করে জল এসে মেঝেয় পড়ছে অবিরাম। মা-কাকিরা গিনা-বাটি-তাটিয়া পেতে রেখেছেন জলের ধারা বরাবর। জলে বাটিতে টুং-টাং আওয়াজ, বাজছে জলতরঙ্গ।
দড়ির খাটিয়ার উপর বাবা-কাকাদের মা। মুখে অবিরাম বলেই চলেছেন, বলেই চলেছেন—‘যা না রে বিজু, গোবরগাদায় লাঙলটা পুঁতে আয়!’
তাঁর ছোট ছেলে বিজয় ল্যাংটো হয়ে হালের লাঙলটা গোবরগাদায় পুঁতে এলে তবেই না বৃষ্টি থামবে! ছোট কাকা বিজয়চন্দ্র তখন কোথায়? এর-তার বাড়ি গান গেয়ে বেড়াচ্ছেন—‘ওপারে তুমি শ্যাম এপারে আমি, মাঝে নদী বহে রে…’
এমন যে গ্রাম, ‘আউট সাইডার’, এ গ্রামে কেউ তো আসে না, কেউই না—সে গ্রামে কী করে যে একদিন এল ‘রবিনহুড’! আমার নাইন পাশ ছোট কাকা বইটা লুকিয়ে-চুরিয়ে কখনও আম গাছের ডালে, কখনও খড় গাদার আড়ালে কখনও বা মাটির দোতলার ছাদে বসে পড়তে লাগলেন।
ক’দিন বাদেই দেখলাম—ছোটকাকা বই ছেড়ে বাঁশের তির-ধনুক বানিয়ে মাঝুডুবকার জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ততদিনে ‘রবিনহুড’ পড়ে আমিও ‘লিটল জন’।
মাঝুডুবকার জঙ্গলে তির-ধনুক হাতে মাথায় পালক গুঁজে নাইন পাশ আমাদের ছোট কাকার ‘রবিনহুড’ সাজার এখন আর বয়সটাও নেই।
রবিনহুড তো রবিনহুড, এতদিনে গ্রামে সশরীরে আসতে শুরু করেছে ‘পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ’-র ‘নবকুমার’, ‘মরণে ক্ষতি নাই, কিন্তু সে সময়ে যেন একটি স্নেহকর স্পর্শ তাহার ললাটে পৌঁছে—যেন একটিও করুণার্দ্র স্নেহময় মুখ দেখিতে দেখিতে এ জীবনের অন্ত হয়’-এর ‘দেবদাস’, ‘কলিকাতায় রোজগারের ভাবনা কি’ পি কে দে সরকারের ইংলিশ কম্পোজিশন অ্যান্ড ট্রান্সলেশন’ বইয়ের সেই অনুচ্ছেদের কথাংশ নয়, সম্পূর্ণাংশ পড়েই কেউ কেউ ‘সুরেন্দ্র’ সেজে ‘বড়দিদি’র অনুসন্ধানে কলিকাতা যাবার ঝুঁকি নিতেও প্রস্তুত।
শেষের দলে সম্ভবত নাম লিখিয়েছেন আমাদের ছোট কাকাও। আজকাল দিন নেই, রাত নেই পড়ে থাকেন ভালিয়াঘাটী-টটাসাহী-ডাঙাসাহীর সাঁওতাল পাড়ায়। নাকি সম্প্রতি ভালিয়াঘাটীর মঙ্গল সরেন, টটাসাহীর ত্রিলোচন হাঁসদা, ডাঙাসাহীর বুধন মুর্মু যোগ দিয়েছেন পুলিসে-মিলিটারিতে। তাঁরা কেউই পাশ করেননি আট ক্লাসও। আমাদের ছোট কাকা বিজয়চন্দ্র তো ন’ক্লাস!
ছুটি-ছাটায় সরেন হাঁসদা-মুর্মুরা বাড়ি এলে তাঁদের কাছে চাকরিতে যোগ দেওয়ার ‘ট্যাক্‌঩টিস’ জেনে নিতেই তাঁর সাঁওতাল পাড়ায় ছুটে যাওয়া, পড়ে থাকা। ঠিক তাই। দেখা গেল ডাঙাসাহীর বুধন মুর্মুর বাড়িতে বসে কাঁচা শালপাতার ঠোঙায় লাল-নীল-হলুদ রঙের বোঁদে খাচ্ছেন আমাদের ছোট কাকা।
ছুটিতে বাড়ি এসেছেন বুধন, সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন সস্তার রাশি রাশি বোঁদে আর স্লাইস্‌ পাউরুটি। যে আসছে তাকেই পাত পেড়ে পাউরুটি আর বোঁদে খাওয়াচ্ছেন বুধনের মা।
আমি ‘খাব না’ ‘খাব না’ করা সত্ত্বেও বুধনের মা আমাকেও জোর করে বসিয়ে দিলেন, ‘হঁ ক্যানে খাবি নাই, ব্যাটার আনা শহরের মিঠাই বলে কথা! তকে ত আর ঘুসুরের মাস দি নাই, হঁ!’
‘ঘুসুরের মাস’ অর্থাৎ শুয়োরের মাংস। এ কথায় তখন মিলিটারি পোশাক পরা বুধন মুর্মু আর আমাদের ছোট কাকা হাসলেন, দু’জনই তো পরস্পর বন্ধু। আরও উৎসাহিত হয়ে বুধনের মা একটা ‘সেরেঞ’ বললেন, ‘জম আবন ঞুই আবন রাইস্কারে বন তাঁহে না। নওয়া হাসা হড়ম বার সিঞ লাগিৎ।।’ কে জানে গানটার কী মানে!
গান পাগল আর ‘সাঁওতালি ঠার’ জাননেওয়ালা আমাদের ছোট কাকা উচ্ছ্বসিত হয়ে কিন্তু বলে উঠলেন, ‘আহা কী কথা! খাব দাব ফূর্তি করব, এই মাটির শরীর দু’দিন বই ত নয়!’
আমি নিশ্চিত জানি, আমাদের ছোট কাকা বোঁদে খেয়ে ফূর্তি করতে এ পাড়ায় আসেননি, এসেছেন বুধনের কাছে টিপস্‌ নিতে চাকরির—কী করে পুলিসে, মিলিটারি, নিদেনপক্ষে হোমগার্ড হওয়া যায়! মেজ কাকার আদেশে ছোট কাকার অনুসন্ধানে বেরিয়ে বাস্তবিকই আমি আমার দু’কান খাড়া রেখেছিলাম—কোথায় কার বাড়ি কোন ঝোপঝাড় কোন ইস্কুলঘর গাছের মগডাল থেকে ভেসে আসে গান—
‘জীবনে যদি দীপ জ্বালাতে নাহি পারো সমাধি পরে মোর জ্বেলে দিও’ কিংবা, ‘কাজল নদীর জলে ভরা ঢেউ ছলছলে প্রদীপ ভাসাও কারে স্মরিয়া/ সোনার বরণী মেয়ে বলো কার পথ চেয়ে আঁখি দুটি ওঠে জলে ভরিয়া’—
যতসব বিরহ ব্যথাতুর গান, ওই গান শুনেই আন্দাজ করে নিতে হয় আমাদের ছোট কাকার ভৌগোলিক অবস্থান। তার ওপর সময় সময় গান শেষে শ্রোতার কাছে তাঁর আকুল জিজ্ঞাসাও—‘ঠিক রেডিওর মতো লাগছে, না?’ বলেই হয়তো আরও দুয়েক কলি, ‘বোঝ না কেন আমি যে কত একা—’
আমাদের গ্রাম থেকে ডাঙাসাহী এই বড় জোর এক হাঁকের ভিতর। গ্রামের পশ্চিম মাথায় টপা সাঁওতালের বাঁশঝাড়। তার ওধারেই বেগুনাঝাড়, কদমডাঙা। ডাঙা তো ডাঙা, তার নীচে গড়ানে নেমে গেলেই সাঁওতাল বস্তি, ডাঙাসাহী বা ডাঙাসাই।
দু-তিনটে বাড়ির পরেই বুধনদের। মাটির দেয়ালে ‘ছঁচ্‌-মাটি-লেপা’। তার উপর গিরিমাটি, সিমপাতা, পুঁই মেচড়ির লাল রং, হলুদ গাঁদার রস আর কাঠ-কয়লা দিয়ে সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকা, ফুল-পাতা। জীবন্ত লাউয়ের লতা মাচান বেয়ে চালে উঠেছে।
বাগানে তিন-চারটে ‘ঘুসুর’ ঘোঁত‌ ঘোঁত শব্দে মাটি খুঁড়ছে। একটাই কুকুর বোঁদের রস লাগা কাঁচা শালপাতা চাটছে তো চাটছেই। বোধকরি গোটা শালপাতাটাই সে এবার খেয়ে ফেলবে!
বোঁদে খাওয়ায় মত্ত শ্রীমান বিজয়চন্দ্রকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিলাম যে তাঁকে আমাদের মেজ কাকা তলব করেছেন, বলা হল না, তার আগেই ছোট কাকা বুধনের হাত ধরে গোপন শলা-পরামর্শ করতে ঘরের ভিতর ঢুকে গেলেন।
অগত্যা ফের চারপাশটা দেখছি। বোঁদে-পাউরুটি খেতে ধীরে ধীরে লোক বাড়ছে বুধন মুর্মুদের উঠোনে। স্ত্রীলোকরাই বেশি, সঙ্গে তাঁদের ‘ন্যাঙটা-ভুটুঙ-সাধের কুটুম’ বাচ্চাকাচ্চারা।
ভাবছি, না রাবড়ি, না রসগোল্লা, না সন্দেশ, কেবলমাত্র বোঁদে আর পাউরুটি খেতে এত লোক জড়ো হয়েছে। এ সময়ই বুধনের মা কাছে এসে আমার মাথার চুল ঘেঁটে বললেন, ‘আজ থাক্‌ ন, ঘুসুর কাটব, খাবি ত?’
আমি সভয়ে মাথা নাড়লাম। বুধনের মা হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ক্যানে খাবি নাই? ঘুসুর খাইলে তোর জাত যাবেক?’
আমি স্পষ্ট বললাম, ‘জাত আবার কী! আমি ওসব মানি না।’ বুধনের মায়ের সঙ্গে আমার নাতি-নানীর সম্পর্ক, ঠাট্টা-ইয়ার্কি তিনি করতেই পারেন। ঠাট্টা করে বললেন, ‘তবে শুন রে ছোঁড়া!’ বলেই একটা ‘কাইনি’ শুরু করলেন—
সাঁওতাল বুঢ়হা-বুঢ়হিদের কাছ থেকে শোনা। এক গ্রামে এক বামুন ছিল, তার দুই বউ। বউ দুটি বড়ই ঝগড়ুটে, ‘নিত লিয়াই’ করে। অর্থাৎ নিত্যদিন ঝগড়া করে, তাই নিয়ে ব্রাহ্মণের বড়ই অশান্তি।
রাগে-দুঃখে একদিন সে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। গেল তো গেল। যেতে যেতে এক লোকালয় পড়ল, গঞ্জ এলাকা। গঞ্জে সে সময় মড়ক লেগেছে। ‘দমে’ লোক মরছে! হাড়ি-ডোম-সান্তাল-বামুন-কায়স্থের মড়া না পুড়িয়ে শ্মশানে ফেলে যাচ্ছে। শকুনের দল মহা আনন্দে তাদের ভোজ সারছে। কিন্তু ব্রাহ্মণ খুব আশ্চর্য হয়ে দেখল যে, শকুনের দল বেছে বেছে হাড়ি-ডোম-সান্তালদের মড়া খাচ্ছে, ব্রাহ্মণ-কায়স্থদের ছুঁয়েও দেখছে না!
ব্রাহ্মণ মুখ ফস্কে বলেও ফেলল, ‘আহা, শকুনগুলি কী বোকা! বেছে বেছে নোংরা মানুষদের মড়া খাচ্ছে!’
এক বুড়ো ‘শুগ্‌নি’ মানুষদের ভাষা বুঝত। ব্রাহ্মণের কথা শুনে সে বলল, ‘ওহে ব্রাহ্মণ! আমরা হিসাব করে মানুষের মাংসই খাচ্ছি, তুমি ঠিক চিনতে পারছ না!
আসলে ‘চান্দো বোঙা’ মানুষের শরীরে পশুর আত্মাও ভরে দেন। আবার পশুর শরীরে মানুষের আত্মাও। আমরা ঠিকই চিনতে পারি। তাই যাকে তুমি ব্রাহ্মণ-কায়স্থের মড়া ভাবছ, তা আসলে কুকুর-বিড়াল কী শিয়ালের মড়া।
যদি মানুষের দেহে মানুষের আত্মাই থাকে তবে তার স্বভাব-চরিত্র আচার-বিচার মানুষের মতোই হবে। বিড়াল-কুকুর কী শিয়াল-শুয়োরের আত্মা পেলে মানুষ অমানুষ ‘ঝগড়াটি’ হয়, আর ব্যাঙের আত্মা পেলে চুপচাপ বা মুখচোরা হয়। বাঘের আত্মা পেলে সে ভয়ঙ্কর বদরাগী হয়।’
বুড়ো শকুনের মহামূল্যবান কথা শুনে ব্রাহ্মণ কাঁদতে কাঁদতে তার দুই স্ত্রীর স্বভাব-চরিত্রের বিস্তারিত বিবরণ দিল, তাদের থেকে পরিত্রাণের উপায় জানতে চাইল। তখন দয়াপরবশ হয়ে বুড়ো ‘শুগ্‌঩নি’ নিজের গায়ের একটা পালক খসিয়ে ‘বাম্‌ভনের’ হাতে দিয়ে বলল, ‘কানে গুঁজে যা-ই দেখবি ‘আসল’ দেখবি, যা!’
গাঁয়ের ভিতর দিয়ে ভিক্ষা চেয়ে যেতে যেতে কানে শকুনের পালক-গোঁজা ব্রাহ্মণ সত্যি সত্যি দেখল—যারা ভিক্ষা দিতে আসছে তাদের মধ্যে কেউ কুকুর, কেউ ভেড়া, কেউ বিড়াল, সবাই মানুষ না।
ঘরে ফিরে কানে পালক গুঁজে এতদিনে সে আবিষ্কার করল—তার এক বউ ‘কুকুর’ আরেক বউ ‘শুয়োর’। ‘কাহনি’ শেষ করে এক গাল হেসে বুধনের মা অতঃপর বললেন, ‘হামার ঘরে ওই পালকটা আছে, লিবি ত? লিঞে দেখবি যাকে ভাবছিস ‘ঘুসুর’ আসলে উটা ‘মেরম’, খাসির মাংস—তা’লে খাবি ত?’
বলেন কী বুধনের মা! তাঁর কাছে সেই অলৌকিক পালকটা আছে! শকুনের পালকেরও এত গুণ! মরিয়া হয়ে হাত পাতলাম—
—‘হ্যাঁ, খাব—আগে তো পালকটা দাও’
ফের আমার মাথার চুল ঘেঁটে দিয়ে বুধনের মা বললেন, ‘আর যে বাবুছানার তর সইছে নাই! দাঁড়া, আগে ত ঘুসুরটা কাটি!’
এ সময়ই ছোট কাকা আর বুধন ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। আমাকে দেখতে পেয়ে ছোট কাকা বলে উঠলেন, ‘তুই এখনও আছিস?’
—‘হ্যাঁ ছোটকা, মেজ কাকা যে আপনাকে ডাকছেন!’
ভীত সন্ত্রস্ত ছোট কাকার গলা—
—‘আগে বলবি তো!’
বলেই কাঁচুমাচু মুখ করে নিজ গৃহাভিমুখে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়-দৌড়-দৌড়—আগে আগে ছোট কাকা, তার পিছনে আমি। তারও পিছনে বুধনের মা। তাঁদের উঠোনে দাঁড়িয়েই হাসছেন আর চেঁচাচ্ছেন—
—‘হায় রে গ চলেঞ গেলি! শুগ্নির পালক লিবি বললি যে?’
আর পালক—
এখন ভাবি, এই মাগ্গি-গন্ডার দেশে সেই—সেই পালকটা আজ যদি হাতে থাকত!

.

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত