| 29 মার্চ 2024
Categories
ইতিহাস

নেপোলিয়নের জীবনে এক করুণ পরাজয়ের কাহিনী

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

নেপোলিয়ানের বীরত্বগাঁথা সবারই জানা। সারা জীবন ধরে নেপোলিয়ান অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এসবের মধ্যে কিছু কিছু যুদ্ধে তিনি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে বিজয় অর্জন করেন, আবার অনেক যুদ্ধে হেরে তার কতৃত্ব হারান। তবে তার এক করুণ পরাজয় ঘটেছিল তার জীবনে। এ কাহিনী খুবই অদ্ভুত এবং হাস‍্যকরও বটে। নেপোলিয়নের একবার পরাজয় হয়েছিল কয়েকটি খরগোশের কাছে।

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ছিলেন ফরাসি বিপ্লবের সময়কার একজন জেনারেল। নেপোলিয়ন ১৭৬৯ সালের ১৫ আগস্ট ফ্রান্সের কর্সিকা দ্বীপের আজাক্সিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কার্লো বোনাপার্ট এবং মা মারিয়া লেটিজিয়া রামোলিনো। নেপোলিয়নের বড় ভাই ছিলেন জোসেফ বোনাপার্ট। নেপোলিয়ন ছিলেন দ্বিতীয়। তার অনুজরা ছিলেন- লুসিয়েন বোনাপার্ট, এলিসা বোনাপার্ট, লুই বোনাপার্ট, পউলিন বোনাপার্ট, ক্যারোলিন বোনাপার্ট এবং জেরোমি বোনাপার্ট। অবিসংবাদী যোদ্ধার বিষয়ে কত না কাহিনী প্রচলিত আছে পৃথিবীর ইতিহাসে। 

নেপোলিয়নের বীরত্বগাঁথা সবারই জানা

নেপোলিয়নের বীরত্বগাঁথা সবারই জানা


তার জীবনে জয়ের পাশাপাশি রয়েছে কিছু পরাজয়েরও গল্প। এর মধ্যে ওয়াটারলুর যুদ্ধে তার পরাজয়ের গল্প সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য। ওয়াটার লু’র যুদ্ধ ১৮১৫ সালের ১৮ জুন বেলজিয়ামের ওয়াটার লু নামক স্থানে সংগঠিত হয়। ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এই যুদ্ধে দুইটি সম্মিলিত শক্তি, যথা- ডিউক অব ওয়েলিংটনের অধীন ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এবং গাবার্ড ভন বুচারের অধীন পার্শিয়ান সেনাবাহিনীর নিকট পরাজিত হন। তবে এর থেকেও করুণ এক পরাজয় ঘটেছিল নেপোলিয়ানের জীবনে।   

 


আরো পড়ুন: ঊনিশ শতকের বীর নারী চিকিৎসক – আনন্দবাই ও অন্যান্যরা


 

সর্বাধিক সম্মত এবং প্রচলিত কাহিনীটি হল, ১৮০৭ সালের জুলাই মাসে নেপোলিয়ন তিলসিটের চুক্তি স্বাক্ষর করার পরে ঘটেছিল এই ঘটনাটি যা ফরাসী সাম্রাজ্য এবং ইম্পেরিয়াল রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শেষ ছিল। এই জয় উদযাপনের জন‍্য, একটি খরগোশের শিকারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। নেপোলিয়ান চিফ অফ স্টাফ আলেকজান্দার বার্থিয়ারকে এই খরগোশ শিকারের প্রস্তাব দেন।

তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় খরগোশের দলের সঙ্গে নেপোলিয়ান দলের তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় খরগোশের দলের সঙ্গে নেপোলিয়ান দলের


বার্থিয়ার একটি বাইরের জঙ্গলে একটি মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। সামরিক বাহিনীর কিছু উচ্চপদস্থ কর্মচারীকে আমন্ত্রণ জানানো হল ওই মধ্যাহ্নভোজনে,এবং সঙ্গে সংগ্রহ করা হল এক পাল খরগোশ। কারও কারও মতে বার্থিয়ার কয়েকশো খরগোশ সংগ্রহ করেছিলেন, আবার কেউ কেউ দাবি করেন যে তিনি প্রায় তিন হাজার খরগোশ সংগ্রহ করেছিলেন। তবে মতানৈক্য নির্বিশেষে, প্রচুর খরগোশ ছিল এবং বার্থিয়ার লোকেরা ঘাসের মাঠের প্রান্তে তাদের সকলকে খাঁচায় বন্দী করে রেখেছিল। 


আরো পড়ুন: পৃথিবীর ইতিহাসে স্মরনীয় সব প্রথম চুমুর গল্প


নেপোলিয়ন যখন মধ্যাহ্নভোজনের পর পায়চারি শুরু করেন বন্দুকধারী এবং শিকারীদের সঙ্গে, তখন খরগোশগুলোকে তাদের খাঁচা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। শুরু হয় শিকার উৎসব। তবে অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটে তারপরেই। ওই খরগোশগুলো ভয় তো পায়ইনি উপরন্তু, তারা নেপোলিয়ন এবং তার বাহিনীর দিকে ক্রমেই এগিয়ে আসতে থাকে আক্রমণ করার জন্য। কয়েকশো খরগোশ বিশ্বের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ব্যক্তির দিকে চড়াও হয় নির্ভয়ে।

পুরো বিশ্ব চষে বেড়িয়েছেন একসময় তিনি পুরো বিশ্ব চষে বেড়িয়েছেন একসময় তিনি


নেপোলিয়নের দলের সবার মধ্যে প্রথমে এই ঘটনায় বেশ হাসির উদ্রেক হয়েছিল। কিন্তু হামলা চালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত অতিথিদের উদ্বেগ বাড়তে থাকে। লম্বা কানের খরগোশের পাল নেপোলিয়নের বন্দুকের থেকে বাঁচতে যে ঝড় তুলেছিল তা বলাই যায় বিপ্লবীদের বাস্টিলের উপর ঝড় তোলার চেয়েও দ্রুতগামী ছিল। ঝাঁকে ঝাঁকে খরগোশ সম্রাটের নেপোলিয়ানের পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়,আবার কখনও বা কিছু খরগোশ তার জ্যাকেট বেয়ে শরীরে উঠে পড়তে থাকে। নেপোলিয়ন তার ঘোড়সওয়ার বাহিনী খরগোশগুলোকে শিকার করার চেষ্টা করতে থাকেন। উপস্থিত নেপোলিয়নের কর্মচারীরা লাঠি হাতে ওই খরগোশগুলোকে তাড়া করে এক জায়গায় আনার চেষ্টা করতে থাকে। খরগোশগুলোকে ভয় দেখিয়ে এক জায়গায় জড়ো করার জন্য কোচম্যানরা তাদের পটকা ফাটাতে শুরু করে। 


আরো পড়ুন: নাঙ্গেলি নারীদেরকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছিলো


তবে খরগোশেরা ভয় পাওয়ার পরিবর্তে নেপোলিয়নের দিকে ধাওয়া করতে থাকে। আতঙ্কিত নেপোলিয়ন পিছু হটেন। কিন্তু খরগোশেরা তখনও থামেনি। ঐতিহাসিক চ‍্যান্ডলারের মতে, নেপোলিয়নের স্ট্র‍্যাটেজি তার জেনারেলদের চেয়েও তাড়াতাড়ি ও নিখুঁতভাবে বুঝতে পেরে খরগোশেরা দুই দলে ভাগ হয়ে যায়। একদল খরগোশ এগিয়ে যায় নেপোলিয়নের ঘোরসওয়ার বাহিনীর দিকে। এভাবেই খরগোশের ঝাঁকের আক্রমণ অব‍্যাহত থাকে এবং কিছু খরগোশ তো নেপোলিয়নের ঘোড়ার গাড়ির উপরও ঝাঁপিয়ে পড়ে। যতক্ষণ না নেপোলিয়ন তার সমস্ত বাহিনী নিয়ে ওই স্থান পরিত্যাগ করে খরগোশ বাহিনীর এই আক্রমণ চলতেই থাকে।  

নেপোলিয়নের ভুল ছিল বুনো খরগোশ না এনে কৃষকের পালিত খরগোশ আনা নেপোলিয়নের ভুল ছিল বুনো খরগোশ না এনে কৃষকের পালিত খরগোশ আনা


বার্থিয়ার নিজেই ছিলেন নেপোলিয়নের এই হাস‍্যকর পরাজয়ের কারণ। তিনি যদি কৃষকদের পোষা খরগোশের বদলে বুনো খরগোশ সংগ্রহ করতেন তবে এসবের কিছুই হতো না। পোষা খরগোশরা নেপোলিয়ন ও তার বাহিনীকে তাদের পরিচিত কৃষকই ভেবেছিল। ফলে তারা খাবারের সন্ধানে আক্রমণ করে বসে নেপোলিয়নকে। ছোট আকৃতির এই খরগোশগুলোর তো আর বিরধী দলের নেতা সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। পরবর্তীতে নেপোলিয়ন ও এই ব্যাপারটিকে বেশ মজার ছলেই গল্প করতেন। 

 

 

 

সূত্র: ভিন্টেজ নিউজ 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত