আজ ০৫ মার্চ কবি ও কথাসাহিত্যিক নাসরীন জাহানের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
এখানে আমার দোষটা কোথায়?
প্রায় চেঁচিয়ে প্রশ্নটা করে নিজেই হতচকিত হয়ে পড়ি। একটি নিঃসঙ্গ ঘরে বসে মনে পড়ছিল কৈশোরে চাকরির বদলির সূত্রে আমাদের পাড়ার মায়াময় ভাষাটাকে পালটে দিয়ে এক অপূর্ব সুন্দরী মেয়ের আগমনের কথা।
তার চালচলন, ঠাটবাটে ছেলেগুলো কেমন ছেনাল হয়ে উঠতে শুরু করেছিল।
আমি বেচারি এক বালিকা, এমনিতেই জীবনে অনেক কিছু না-পাওয়ার টানাপড়েনে নিজের প্রবণতার তাল সামলেই কূল পাই না…এর মধ্যে দিঘির মধ্যে ধপাস করে পড়া ঢিল নয়, যেন বা মস্ত পাথর, শান্ত থাকি কী করে? উন্মত্ত জলের স্রোত ঠেকানোর চিন্তায় আমার অসহায় জীবনে যন্ত্রণা আর অনিদ্রার বিষ ঢুকে গেল।
তক্কে তক্কে ছিলাম। এক ফাঁকে তার সঙ্গে দিন-দিন চলা-বসা বয়ফ্রেন্ডকে বললাম, এক্কেবারে বোকা-বোকা মুখ করে, আপনি কি ওকে বিয়ে করবেন?
গাড়ি নিয়ে ঢাকা থেকে এসে ছেলেটি প্রেমিকার অপেক্ষায় অস্থির পায়চারি করছিল।
কেন খুকি? ছেলেটি উন্মুখ।
খুকি আমি? গা-জ্বলে-যাওয়া বোধটাকে দাবিয়ে বলি-না, আরেকটা ছেলের সঙ্গেও হোন্ডায় আপনার মতনই দেখি কি না। তো, ওকে দুজনই বিয়ে করবেন, এমন হয়? মানে আমি কারও দুজন বর দেখি নি তো, তাই আমার জাস্ট…।
আর কী।
ভূমণ্ডলে ঝড় উঠল। সেই ঝড়ে ঢাকা থেকে আসা-যাওয়া করা গাড়িটি উড়ে গেল। জানালা-কপাট বন্ধ করে দিনের পর দিন নিজ বাড়িতে পড়ে রইল সুন্দরী।
খোকা ঘুমাল পাড়া জুড়াল, হতোদ্যম রোমিওগুলো আগের রূপে যত ফেরে তত আমার পরাণে আরাম জমে।
খুকিরা কখনো মিথ্যা বলে না।
আমিও বলি নি, এক বার দেখেছি তো বাইকে করে কে যেন ওকে নামিয়ে দিয়ে গেল, সুন্দরী থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ করল, আমি কি জানি সে তার আত্মীয় না হঠাৎ বিপদের বন্ধু? আমার পাড়া, আমি ছাড়া কে দেখবে তার ভালোমন্দ? পড়শি?
আমি কী খুব ভুল বলেছি?
শৈশব থেকে আমার অনন্ত অঙ্গনে কেবল অপ্রাপ্তির কাঙালপনা। দোকানে গেলে আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়, যাবতীয় দামি দুর্লভ জিনিস আমাকে লোভী পাগল করে তোলে, যাবতীয় অলঙ্কার, কারুকাজময় পোশাক, রঙিন টিভি, মোবাইল, সুন্দর আসবাবে সাজানো কক্ষ…সব…সব আমার আশপাশেই থাকবে, এগুলো এই পৃথিবীরই, বেহেশতেরও না, দূর কোনো দেশেরও না, এগুলো না-পাওয়ার যন্ত্রণায় আমি ডাঙ্গার বাইন মাছের মতো তড়পাব, কিছুই আমার হবে না, আমার গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে হবে, কোনও এক ফাঁকে আলটপকা যদি কখনো পুতুল, কখনো লকেট চেন, কখনো পারফিউমের বোতল তুলে নিয়ে মটকা মেরে পড়ে থেকে ধরা না খাই, তা কি খুব দোষের?
না না… বলো নি, তালু গলানো সূর্যটা মাথায় নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে উত্তর দিই, তোমার ভেতর এতসব স্বপ্ন ঢুকিয়ে সৃষ্টিকর্তা কি ঠিক করেছেন একটা ফকিন্নি মার্কা বাড়িতে তোমাকে জন্মের জন্য পাঠিয়ে? তোমার ভুল জন্মের ভার বয়ে যে ঠাঠা রোদে হেঁটে ইশকুলে তুমি ক্লাস নিতে যাচ্ছ, এটা কি তোমার কম যোগ্যতার কথা? কম লড়াইয়ের ব্যাপার?
স্যান্ডেলের ফিতে ছিঁড়ে যায়।
আমি চিরকালের মতো পায়ের দিকে নির্বিকার তাকিয়ে সৃষ্টিকর্তার তামাশা দেখি। জিভের গোড়ায় কামড় পড়ার মতো জন্মের পর থেকেই তিনি আমার পেছনে কুফা লেলিয়ে দিয়েছেন।
যে দিন জন্মেছি, বাবার জমি নদীভাঙনে তলিয়ে গেছে। নানার বাড়ি থেকে আসতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আমার তিন ভাই-বোন মারা গেছে। এর পর থেকেই যে দিন বৃষ্টি চাইব সে দিন রোদ, যে দিন পরীক্ষা সে দিনই পড়ে গিয়ে ডান হাত ভেঙে যাওয়া, চৌদ্দ তলায় যেতে হবে, আমি গিয়ে দাঁড়াতেই লিফট নষ্ট, ছাপোষা টাকায় কিনে আনা বিরিয়ানি রসিয়ে খেতে যাব, তেলাপোকা উড়ে পড়ে নার্ভাস হয়ে গু ছেড়ে যাবে, প্রখর ঘামে ঘরে ফিরতেই এক ঘণ্টার লোডশেডিং শুরু-কত শুনবেন?
ক্ষোভে, সমর্পণে, আপোশে বিষয়গুলো আমার জীবনের সঙ্গে ক্ষতগুলো যে এক হয়ে গেছে নিজেও অত বলতে পারব না, তাই বলে মধ্য বিরতিতে দুটো ডাল-ভাত খেতে বাড়ি আসব আর পথে জাস্ট গতকাল কেনা স্যান্ডেল ছিঁড়ে যাবে, কড়কড়ে রোদের দাবাগ্নির তোড়ে ক্যানক্যান করে যাওয়া কোনো ভিখিরিকে যদি বলেই ফেলি- ‘খানকির বাচ্চা, তোর চোখ কানা, আমার অবস্থাটা তুই দেখতাছস না?’ খুব কি অন্যায়? একজন টিচার কি রক্ত-মাংসের মানুষ না, যে সে অবস্থান ভেদে এমন একটা গালিও কাউকে দিতে পারবে না?
বলুন, আমি কি খুব ভুল বলেছি?
এ পর্যন্ত ঠিক ছিল, কিন্তু আমার অস্তিত্বের নিখিল ঘূর্ণিময় করে পাশ দিয়ে যেতে থাকা এক স্টুডেন্টের গার্জেন শুনে ফেলল যে?
না, আর শক্তি পাই না। ভূতগ্রস্ত দাঁড়িয়ে থাকি, চারপাশে রোদ-ছায়া-বৃষ্টি, দিনরাত্রির গতায়মানতা কিছুই দেখতে পাই না। যেন ফেরেশতার মতো হাত বাড়ায় কেউ।
অতল থেকে তুলে শৈশব-কৈশোরের মায়াতেই যেন ধুয়ে মুছিয়ে আমার খুদে হয়ে আসতে থাকা সত্তাটিকে পরম ভালোবাসায় বিছানায় লম্বা করে শুইয়ে দিল।
এই একজনই শৈশব-কৈশোরে আমাকে আমূল বুঝত। আমার একমাত্র প্রিয় সখী, যার জীবন-বাস্তবতা হুবহু আমার সমান্তরালে ছিল। আমার ভেতর জাগতিক সুন্দর দ্রব্যের প্রতি আমার লোলুপ চাওয়াকে অন্যরা লোভ বললেও সে বলত আকাঙ্ক্ষা।
ম্যাট্রিকের পর একজন তার জীবনে এলো। পেইন্টিং কবিতায় ভাসিয়ে আমার কাব্যিক সখীকে যে কোন দেশে নিয়ে গেল আমি তার খোঁজই রাখতে পারি নি।
দু’ দিন আগেই ফোনে কথা হয়েছে, বলেছে আমাদের এলাকাতেই একটা বাসা পছন্দ হয়েছে তার।
আমি চেতনে-অবচেতনেই নিজের ওই ভয়াবহ দুঃসহ জীবনকে বাতাস দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে আমার চাইতে বড়, সমৃদ্ধ, সুন্দর যা, তাদের একফোঁটাও ধারে কাছে ঘেঁষতাম না, নিজেকে অন্যের চাইতে ছোট ভেবে একসঙ্গে চলা, অন্তত আমার যা প্রকৃতি, সম্ভব?
তুমি নিজেকে কারও কাছে বিকিয়ে দাও নি, চেপে চেপে সুন্দর দ্রব্যগুলোর আকাঙ্ক্ষা যাতে মরে তার চেষ্টা করে যাচ্ছ। চাইলে দাগি চোর হতে পারতে, তোমার আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গে সেই ক্ষমতাও তোমার ছিল, ভেবেছিলে, কোটিপতি কেউ হাত বাড়াবে, হোক বিপত্নীক, বয়সী, আপত্তি ছিল না, দেখেছ তাদের, বাড়িয়েছে হাত, কিন্তু তুমি বিয়েহীনা সেই সম্পর্ক থেকে কষে-বেঁধে নিজেকে দূরে রেখেছ, আজকাল ক’জন তোমার মতো এত অনেস্ট হয়?
হুম, মনে পড়ে এক বার নিউইয়র্ক প্রবাসী মামাত বোনের দেওয়া জিনসের প্যান্ট আর গেঞ্জি পরে কৈশোর-উত্তীর্ণ সময়ে গটগট হেঁটে সিনেমা হলে গিয়েছিলাম? পুরুষের বাড়ানো হাত, সিগারেটের ছ্যাঁকা খেয়ে বাড়ি এসে বাড়তি হিসেবে বাবার হাতের থাপ্পড়ে, কান্নায় ছিন্নভিন্ন হয়ে পুরুষদের লাম্পট্যের অভিসম্পাত করছিলাম। পরে ধীরেসুস্থে ভেবেছি, ও রকম একটি অজ মফস্বলে, ওসব পরে ও-ভাবে বুক চিতিয়ে হাঁটব, আর পুরুষেরা ছ্যাঁকা না-মেরে আমাকে কুর্নিশ করবে, এটা আমি প্রত্যাশা করি কী করে?
বলুন, আমি কি ঠিক বলি নি?
ইশকুলের চাকরির কী হবে, আপাতত এইসব না ভেবে সখীর বাড়িতে যাই। দম আটকে আসছিল, বিদেশফেরত বাড়িতে না-জানি কত জৌলুসের জেল্লা দেখে বুক পুড়বে।
না। হাঁপ ছাড়ি। শাদামাটা ঘর, অলস স্বামী বিদেশের কঠিন কাজে নিজেকে না মানাতে পেরে বহু আগেই এ দেশে চলে এসেছে। ধাক্কা-গুঁতা খেতে খেতে সখী কবিতা লেখা ছেড়ে অনার্স করে আটপৌরে একটা চাকরি করছে। না, না, ও আমার প্রিয় সখী, ওর ব্যাপার আলাদা, নিজেকে বোঝাই, ওর বাড়ি আসবাবে জ্বলজ্বল করলেও আমার কষ্ট হতো না। না, হতো না।
এর মাঝেই অতি সন্তর্পণে সে আমাকে একেবারে তাজ্জব করে দিয়ে একটি পেইন্টিং বের করে, না ঠিক পেইন্টিং না, উদ্ভাসিত মুখে বলে জয়নুলের আসল স্কেচ, দাদার সঙ্গে জয়নুলের এক ভ্রমণে দেখা-খুব খাতির হয়েছিল, মৃত্যুর আগে দাদা এটা আমাকে দিয়ে গেছে, জলদিই ফ্রেম করাব।
বর যতই অর্কমা হোক, এটা সে বিক্রি করে ধনী হওয়ার কথা ভাবে না, আদতে শিল্পচর্চা করত তো, বলে, এটা হবে আমাদের বাড়ির তুখোড় আভিজাত্য।
হেরে গেলাম নাকি?
আমার সমান্তরাল থেকে প্রিয় সখী একটান খেয়ে ওপরে উঠে গেল?
স্কুলের এক টিচারের সখ্যে বেশ কিছু আর্ট গ্যালারি ঘোরা হয়েছে। দামি পেইন্টারদের স্কেচ হোক, কিছুই না বোঝা রঙের ছোপাছাপিই হোক, সেসবের দাম দেখে আসমান থেকে পড়েছি। আসল জয়নুল কারও কালেকশনে থাকা মানে…
ওই হাড্ডিগুড্ডি মানুষ আর আধমরা কাউয়ার আঁকিবুকির দামই এখন লাখ…। না, গুনতে পারি না, নিজেকে শান্ত করি, একমাত্র খাঁটি সখী তোমার, অন্তত এই একটা জায়গায় নিজেকে নিজেই হেলিয়ে ছোট কোরো না।
আসলে জৌলুসময় দ্রব্যকাঙ্ক্ষা আমার পুরো অস্তিত্ব মন গ্রাস করেছিল, প্রেমবোধটা মাথা ফুঁড়ে দাঁড়াতেই পারে নি। ফুড়ুৎ-ফাড়ুৎ এক আধবার এসেছে-গেছে, তবে যখন ভেতরে ওসব কষে চেপে মারছি, তখন নতুন নতুন ফেসবুক খুলতেই দারুণ লাগল একজনকে। কথোপকথনে প্রেম যখন তার চূড়ান্তে, আমিও মুগ্ধই, দেখা হলো এক রেস্তোরাঁয়। যখন হেঁটে আসছে তার সৌন্দর্যে আমি কম্পিত, কিন্তু পরেই পারফিউমের গন্ধ ছাপিয়ে তার গায়ের, মুখের দুর্গন্ধ, মাঝে মাঝেই অশ্রাব্য হাই এ আমার জীবনের প্রথম কম্পন উল্টো দৌড় দিল, যত সে ডাকে তত প্রবল হয় আমার দৌড়ের মাত্রা। এই যে এখন আমি একাকী, হাজার পুরুষের চক্ষু লেহন, জাস্ট স্বামী বন্ধুটি নেই বলে বুড়ো-ছেলে সব্বারই কানে কেবল আমার উপোস যৌবনের আহাজারির হুল ফোটানো পীড়ন, জায়গা-অজায়গায় নির্লজ্জ প্রস্তাবে হামলে পড়া, পাড়ায়, স্কুলে নানা মানুষের কটাক্ষ সহ্য করে বেঁচে আছি, এ কি আমার দোষ?
আমি কী খুব ভুল বলেছি?
মুর্মূষু মার ক্রমাগত কষ্টধ্বনি, নিজের ওপর যমদূতের মতো আছড়ে পড়া কুফা সত্তাটাকে হাত-পা ধরা মিনতিতে বাঁচিয়ে চাকরিটা করে ক্লাসের বাচ্চাদের কলরোলের মাঝে দিনগুলো যাচ্ছিল।
এর মাঝে প্রিয় সখী কান্নায় আছড়ে পড়ল, তার জয়নুলের ছবিটা চুরি হয়ে গেছে। সে এর জন্য দায়ী করল তার বরকেই, নিশ্চয়ই সে এটা কোথাও বিক্রি করে দিয়েছে, ক’দিন ধরেই টাকার জন্য পাগল-পাগল হয়েছিল। আহা! আমার স্বভাব জানা বাল্যসখী, একটি বারের জন্যও আমাকে সন্দেহ করে নি। সত্যি, আমি ওই ছবি চুরি করি নি, বিক্রির তো প্রশ্নই আসে না। ও এত জানেও এত চেনে আমায়?
আহা! প্রবল মায়ায় বলি, ভালো করে খুঁজে দেখো।
আমি তন্নতন্ন করে খুঁজেছি, ভেঙে পড়ে সখী, দুঃখ একটাই। আমার কাছে চাইলে কি আমি ওকে ছবিটি বিক্রি করতে দিতাম না? নিজের ঘরে চুরি? যতটুকু ব্যক্তিত্ব ছিল আমার সামনে তা নিঃশেষ না করলে তার চলতই না?
এভাবে ভাবিস না লক্ষ্মী হয়তো দ্বিধা বোধ করেছে তোর সামনে, নিজেকে একেবারে উদোম করে দেয় নি, এ কি ওর কম মহত্ত্ব? মানুষ কত বিচিত্র তুই কি তার কম জানিস? শান্ত হ’ প্লিজ।
ছায়াঘরে একাকী চেয়ারে বসে দামি বিল্ডিং দিয়ে দূর আসমানের পাঙ্গাস মাছের পেটের মতো চকচকে ঝলক দেখি। সারা ঘরে আতরের গন্ধ আর মার মৃত্যুর ছায়া আমাকে মুহ্যমান করে রাখে। চোখ টিভি স্ক্রিনে যায়, শ্রীকান্ত আচার্যের গান ‘আমার সারাটা দিন…’ এর আশ্চর্য সুন্দর দৃশ্যায়ন, প্রকৃতি, বৃক্ষের তরঙ্গ, জলের লিরিক…বৃষ্টি মুখরতায় কাকেরা হুজ্জোত করছে নিঃশব্দে। সঙ্গে হাড্ডিসার মানুষ।
বুকটা মোচড় দিতেই বাঁচার স্বস্তিতে দাঁড়াই। না, ছবিটা আমি চুরি করি নি, বিক্রি করে অভাবও ঘোচাই নি। কেবল সন্তর্পণে ছবিটাকে সরিয়ে আসমানের নিচে এসে ছিঁড়ে কুচি-কুচি করে বাতাসে উড়িয়ে হাঁপ ছেড়েছিলাম। নিজের হেলে পড়া সত্তাটাকে প্রিয় সখীর সমান্তরালে দাঁড় করেছিলাম।
সে আমার জীবনের একমাত্র মানুষ, আশৈশব থেকে আমার একজনই প্রিয় সখী, তাকে হারিয়ে আমাকে আমার অনন্ত শূন্যতায় ঠেলে দেওয়া ঠিক হতো?
বলুন, এদ্দিনে তো আমাকে কিছুটা হলেও জানেন, আমি কি খুব ভুল বলেছি?
জন্ম: মার্চ ৫, ১৯৬৪, লেখক, ঔপন্যাসিক, এবং সাহিত্য সম্পাদক। আশির দশকের শুরু থেকে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। উড়ুক্কু উপন্যাসের মাধ্যমে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। এই উপন্যাসের জন্য লাভ করেন ফিলিপ্স সাহিত্য পুরস্কার। এছাড়া বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য লাভ করেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার।
নাসরীন জাহান ১৯৬৪ সালে ৫ মার্চ বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা গোলাম আম্বিয়া ফকির ছিলেন সরকারী চাকুরিজীবী ও মা উম্মে সালমা ছিলেন গৃহিণী।বাবার চাকরির কারণে থাকতেন মামাবাড়িতে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে তাকে আর তার ভাইকে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় তাদের এক মামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে ভর্তি হন শানকিপাড়া স্কুলে। যাতায়াতের সুবিধার জন্য থাকতেন ফুফুর বাড়িতে। ফুফুর এক মেয়ে ছিল শবনম জাহান। ফুফু তার নামের সাথে মিল রেখে মা-বাবার দেয়া নাম নাসরীন সুলতানা পরিবর্তন করে তার নাম রাখেন নাসরীন জাহান। স্কুলে পড়াকালীন পারভিন সুলতানা নামে এক বন্ধুর সাথে তার সখ্য গড়ে উঠে। সে বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়-এ ভর্তি হলে তিনিও একই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৭৭ সালে শিশু একাডেমি থেকে লেখা চাওয়া হলে দুই বান্ধবী লেখা পাঠায়। দুজনের লেখা প্রকাশিত হয় সেই পত্রিকায়। নাসরীনের লেখা গল্পের নাম ছিল ছাপানো গল্পটা।