বিখ্যাত নাসিরুদ্দিন হোজ্জা কিংবদন্তির রসিকরাজ
তাহলে জানলে কী করে
হোজ্জা তাঁর বন্ধুকে চিঠি লিখছিলেন। একজন উৎসুক প্রতিবেশী চুপিচুপি হোজ্জার পেছনে এসে চিঠিতে কী লেখা হচ্ছে, তা পড়তে থাকে।
এদিকে হোজ্জার সামনে ছিল একটা আয়না। ওই আয়নাতেই হোজ্জা লোকটাকে দেখতে পেলেন। তিনি পুরো ব্যাপারটা পাত্তা না দিয়ে চিঠি লিখতে লাগলেন: ‘অনেক কিছুই লেখার ছিল। কিন্তু পারলাম না। ঠিক এই মুহূর্তে একজন অভদ্র ও নির্লজ্জ লোক আমার পেছনে দাঁড়িয়ে চিঠি পড়ছে—’
লোকটা রেগেমেগে অভিযোগ করল, ‘হোজ্জা, আপনি এসব কী লিখছেন? আমি কখন আপনার পেছনে দাঁড়িয়ে চিঠি পড়েছি?’ জবাবে হোজ্জা বললেন, ‘তুমি যদি আমার পেছনে দাঁড়িয়ে চিঠি না পড়তে, তাহলে জানলে কী করে চিঠিতে আমি কী লিখেছি?’
তুমি একটা নেকড়ে
হোজ্জার এক প্রতিবেশী শিকারে গিয়ে নেকড়ের কবল থেকে এক ভেড়াকে বাঁচিয়ে বাড়ি নিয়ে আসে, পালবে বলে। শিকারির যত্নে ভেড়াটি দিন দিন নাদুস-নুদুস হয়ে উঠল। একদিন শিকারির লোভ হলো ভেড়ার মাংস খাওয়ার জন্য। তাই জবাই করতে উদ্যত হতেই ভেড়াটি ভয়ে বিকট শব্দে চিত্কার জুড়ে ছিল। ভেড়ার চিত্কারে হোজ্জার ঘুম গেল ভেঙে। ব্যাপারটা বোঝার জন্য সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশীর বাড়িতে ছুটে গেলেন হোজ্জা।
হোজ্জাকে দেখে শিকারি প্রতিবেশী লজ্জিত গলায় বললেন, ‘এই ভেড়াটার প্রাণ বাঁচিয়ে ছিলাম একবার।’
‘তাহলে ও তোমাকে গালি দিচ্ছে কেন?’
‘গালি দিচ্ছে?’
‘ভেড়া বলছে, “তুমি একটা নেকড়ে”।’
আরো পড়ুন: মোল্লা নাসিরুদ্দিন হোজ্জার কয়েকটি মজার গল্প
হোজ্জা জানতে চাইল, ‘কেন?’
বন্ধুটি বলল, ‘আমি আবার চিনি ছাড়া দুধ খেতে পারি না। অথচ, একজনের খাওয়ার মতোই চিনি আছে আমার কাছে। তাই বলছিলাম যে, তুমি অর্ধেকটা খেয়ে নিলে বাকিটা আমি চিনি দিয়ে খাব।’
হোজ্জা তখন গ্লাসটা হাতে নিয়ে তার মধ্যে অনেকটা লবণ ঢেলে বলল, ‘তাহলে আমার অর্ধেক ভাগটা আমি লবণ দিয়ে খেয়ে নিলাম। বাকিটা তুমি চিনি মিশিয়ে মিষ্টি করে খেয়ো!’
অর্ধেক ভাগ
একবার হোজ্জা বাদশাহর জন্য কিছু উপহার নিয়ে যাচ্ছিল। গেটে প্রহরী হোজ্জাকে আটকে দিল। বলল, তোমার উপহার আমাকে দাও, আমিই জাঁহাপনাকে দিয়ে আসব। কিন্তু হোজ্জা নিজেই উপহার দিয়ে আসতে চায়। এদিকে প্রহরীও নাছোড়বান্দা। শেষ পর্যন্ত হোজ্জা বলল, ‘ঠিক আছে, আমি ভিতরে গিয়ে বাদশাহরকাছ তেকে যা বখশিশ পাব, তার অর্ধেক তোমাকে দিয়ে দিব।’ একথা শুনে প্রহরী হোজ্জাকে ভিতরে যেতে দিল।
হোজ্জা দরবারে গিয়ে বাদশাহকে উপহার দেওয়ার পর বাদশাহ খুব খুশি হলেন এবং হোজ্জাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে তার কী চাই? হোজ্জা বলল ৫০ ঘা বেত্রাঘাত! দরবারের সবাই তো অবাক! এ কেমন উপহার চাওয়া? বাদশাহ যতই অন্য উপহার দিতে চান, হোজ্জা ততই বেতের বাড়ি নিতে চায়। মহা মুসিবত। শেষ পর্যন্ত হোজ্জার জেদের কাছে হেরে গিয়ে বাদশাহ নির্দেশ দিলেন হোজ্জাকে বেত মারার। ২৫ ঘা বেত মারার পর হোজ্জা থামতে বলল। তারপর বাদশাহর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘জাঁহাপনা, আমার পুরস্কারের একজন ভাগীদার আছে।’ বাদশাহ জানতে চাইলেন, ‘কে?’ তখন হোজ্জা দরবারে আসার পথে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। পুরো ঘটনা জানার পর বাদশাহ তখন ঐ প্রহরীকে ডেকে আচ্ছাসে বেত্রাঘাত করে তার পাওনা মিটিয়ে দিলেন!
অন্য গ্রামের মানুষ
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা একবার কী একটা কাজে পাশের গ্রামে গেল। কাজ শেষে ফেরার পথে এক লোক তকে জিজ্ঞাসা করল, ‘ভাই সাহেব, আজ কী বার?’ হোজ্জা লোকটির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ভাই, আমি এই গ্রামের লোক না। অন্য গ্রামের মানুষ। কাজেই এই গ্রামে আজ কী বার, আমার জানা নেই।’ এ কথা বলেই হোজ্জা আবার হন হন করে হেঁটে চলে গেল!
