| 25 এপ্রিল 2024
Categories
গদ্য সাহিত্য

ইরাবতী গদ্য: নতুন কবিতার লক্ষণ । অমিতাভ পাল

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
চিন্তার প্যাটার্ন বদলানোই নতুন কবিতার প্রধান লক্ষণ।
সমাজ মূলত কারিগরদের গ্রাম। এখানে বিভিন্ন পেশার কারিগররা আগের বানানো প্যাটার্ন অনুযায়ী ছকবাঁধা জিনিসপত্র বানায়। আর এইসব প্যাটার্ন তৈরি করে তাদেরই আগের প্রজন্মগুলিতে যেসব কারিগররা ছিল, তাদের মধ্যে যারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল ছকের নৈমিত্তিকতায়, তাদের চিন্তাঅভিযানের সাহস, অগ্রযাত্রা আর নতুন সময়ের নতুন বোধ। সাহিত্যের ক্ষেত্রেও এরকমটা ঘটে, বিশেষত কবিতার ক্ষেত্রে। বাংলা কবিতায় এরকম প্যাটার্নের জন্ম দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ আর জীবনানন্দ। এই দুই কবির কবিতার প্যাটার্ন বস্তা বস্তা প্যাটার্ন কবিতার জন্ম দিয়েছে কবিতা-কারিগরদের খাতার পাতায়। এসব প্যাটার্ন কবিতার কোন কোনটা হয়তো একটু বাড়িয়েছে প্যাটার্নের সীমা কিন্তু অযথা ভারই বাড়িয়েছে বেশি। ফলে করে খাওয়া ছাড়াও প্যাটার্ন কবিতার কারিগররা বাংলা কবিতায় অহেতুক গতি মন্থরতা যুক্ত করেছে।
যেকোন ভাষার সাহিত্যেই এই প্যাটার্ন কবিতার দৌরাত্ম দেখা যায়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলতে থাকে এদের রাজত্ব। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক কারণ কবি কোন হাতের ময়লা না যে হাত ঝাড়লাম আর ঝুরঝুর করে পড়লো। সারা পৃথিবীর কবিতার কোন অ্যান্থলজি যদি তৈরি করা সম্ভব হয় তাহলে যতজন কবি তাতে জায়গা পাবেন, প্যাটার্ন কবিতার কারিগরদের সংখ্যা তারচেয়ে হাজার গুণ বেশি। যদি বাংলা কবিতার কথাই ধরি, কবি সার্বভৌম বলতে যারা আছেন, তাদের নাম খুব ছোট একটা কাগজেই লিখে ফেলা যাবে। কিন্তু কেন এরকম? এর প্রধান কারণ হলো- চিন্তাঅভিযানের সাহস সবার হয় না। ফলে প্যাটার্নের একঘেঁয়েমীতায় ক্লান্তিও আসে না সবার মনে। সর্বোপরি সবকিছুকে পিছনে ফেলে একা এগিয়ে যাওয়ার পিছনে যে দায়িত্ববোধ কাজ করে, তার চেয়ে গড্ডালিকায় গা ভাসানো অনেক সহজ।
নতুন চিন্তার খোঁজে যদিও সামনে এগিয়ে যেতে হয় কিন্তু চলার শক্তি আসে পিছন থেকেই। অর্থাৎ পিছনে যাকিছু হয়েছে, তাদের মধ্যেই যাকিছু হয়নি- সেসবের খবর থাকে। ফলে শিখতে হয় পিছনের ইতিহাস থেকেই। সেই ইতিহাস আমাদের বলে দেয় একদা যে পাথরের টুকরাটা মানুষের কাজের সহায়ক ছিল, সেটাই বিবর্তিত হতে হতে, কাজের প্রয়োজনে জটিল হতে হতে আজকের কম্পিউটার হয়েছে। এই জ্ঞান ইতিহাসচেতনা ছাড়া সম্ভব না। আর এই জ্ঞানের যে নির্যাস- তা আমাদের শেখায় বিবর্তনের নিয়ম। ফলে আমরাও বিবর্তনকে ঠেলে দিতে পারি আরো যথার্থ ও দ্রুততর আবেগে। অর্থাৎ আমরা পরীক্ষা করতে পারি, শনাক্ত করতে পারি এবং প্রয়োগ করতে পারি। আর এই কাজগুলিই তৈরি করে এমন এক প্রবহমান ধারার যা পিছনের পাহাড়ের বৃষ্টির ঢলের শক্তিতেতো বটেই, নিজে যখন যেখানে থাকে- সেখানকার স্থানীয় উত্থানপতন ও বৃষ্টির প্রেরণাতে তৈরি হওয়া স্রোতে এগিয়ে চলে।
কবিতার গণিত লিমিট টেন্ডস টু’র গণিত। অর্থাৎ পূর্ণতার কাছে পৌঁছানোর আপ্রাণ চেষ্টা। এখানে দশমিকের পরে সংখ্যা কেবল বেড়েই চলে। আরেকটু ছোট হয়ে আসে ব্যবধান। আরেকটু টাইট হয়, নিখুঁত হয় যেন অনুপরমাণুর জগতে কোন একটা সূক্ষ্ম মোচড়। বিশাল ভৌত পৃথিবীতে এর অবস্থান হয়তো অলক্ষ্যে কিন্তু জড়ো হওয়া ক্ষুদ্রতাও ঠেলে ঘুরিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে। কবিতার বাঁকবদল হয় এইসময়গুলিতে। ক্ষুদ্রতর শক্তিসমূহের প্রবলতায় নতুন কবিতা মুখ দেখায়।

One thought on “ইরাবতী গদ্য: নতুন কবিতার লক্ষণ । অমিতাভ পাল

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত