| 24 এপ্রিল 2024
Categories
এই দিনে সময়ের ডায়েরি

নেলসন ম্যান্ডেলা তুমি অমর কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

আজ নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মদিন। ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই তিনি জন্মগ্রহণ করেন দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ প্রদেশের ম্ভেজো গ্রামে। জাতিসংঘ দিনটিকে নেলসন ম্যান্ডেলা আন্তর্জাতিক দিবস বলে ঘোষণা করেছে। সময়ের বিচারে তিনি আমাদের বঙ্গবন্ধুর সমসাময়িক নেতা। বঙ্গবন্ধুর থেকে বছর দুয়েকের বড়। বঙ্গবন্ধুর জন্ম ১৯২০ সালে।তবে বঙ্গবন্ধুর জীবনকাল ছিল সংক্ষিপ্ত। মাত্র ৫৫ বছর। সে তুলনায় নেলসন ম্যান্ডেলা বেঁচে ছিলেন প্রায় ৯৫ বছর। দুজনই তাদের জীবনের চার ভাগের এক ভাগ বা তারও বেশি সময় জেলে কাটিয়েছেন। মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে তারা জীবনের ব্রত হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। নেলসন ম্যান্ডেলা দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে সারা বিশ্বের বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের এক অবিসংবাদিত নেতায় পরিনত হন

১৯৬০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার শার্পভিলে কৃষ্ণাঙ্গ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিতে ৬৯ জন মানুষ নিহত হয়। নেলসন ম্যান্ডেলা তখন বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেন। ফলে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন তীব্রতর হয়ে উঠে। তিনি তখন অহিংস আন্দোলনের পথ পরিহার করে সশস্ত্র সংগ্রামের আহ্বান জানান। তিনি তার বক্তৃতায় বলেন, সরকার যখন নিরস্ত্র এবং প্রতিরোধবিহীন মানুষের ওপর পাশবিক আক্রমণ চালাচ্ছে, তখন সরকারের সঙ্গে শান্তি এবং আলোচনার কথা বলা নিস্ফল। এরপর শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথ ছেড়ে ম্যান্ডেলা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সশস্ত্র সংগঠন উমখন্তো উই সিযওয়ের নেতা হিসাবে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তার নেতৃত্বে শুরু হয় সশস্ত্র সংগ্রাম

১৯৬২ সালে তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার গ্রেপ্তার করে এবং তার বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতসহ সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়। বিচার শেষে নানা অপরাধের দায়ে তার যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। সময়ের সাথে সাথে তার মুক্তির জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার ম্যান্ডেলাকে বারবার আপোস করার প্রস্তাব দেন, রাজনীতি থেকে সরে আসলে তাকে মুক্তি দেয়া হবে। আদর্শে অবিচল নেতা নেলসন মেন্ডেলা স্বাধীনতাকামী অধিকার বন্চিত মানুষের রক্তের সাথে তিনি কখনও আপোস করেননি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, ম্যান্ডেলা ২৭ বছরের অধিক সময় কারারুদ্ধ ছিলেন।শেষ পর্যন্ত ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি কারামুক্ত হন

দীর্ঘ কারা জীবন শেষ করে তিনি থেমে থাকেননি। কারাগারের সামনে দাঁড়িয়েই নতুন আন্দোলনের ঘোষনা দেন। তিনি তার ভাষনে বলেন, এমন এক দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্ন দেখি, যেখানে সব জাতি, সব বর্ণের মানুষ সমান সুযোগ নিয়ে একসঙ্গে থাকতে পারবে। এটা এমন এক আদর্শ, যেটির আশায় আমি বেঁচে থাকতে চাই। কিন্তু যদি দরকার হয়, এই আদর্শের জন্য আমি মরতেও প্রস্তুত।

দেশের ভেতরে আন্দোলনের পাশাপাশি বিশ্ব জনমত গঠন তথা বর্ণবাদী সরকারের ওপর চাপ সৃস্টির জন্য তিনি বিভিন্ন দেশ সফর করেন। যার অংশ হিসাবে ১৯৯০ সালের ২০ জুন তিনি নিউ ইয়র্ক আসেন।এইসব সফরের ফলে যেমন বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে ওঠে তেমন দক্ষিন আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকারের ওপর বিভিন্ন ধরণের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ওই একই বছরের শেষের দিকে তিনি ভারতেও সফর করেন। প্রবীণ বামপন্থী নেতা, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সাথে তিনি সাক্ষাত করেন।ভারতের লক্ষ লক্ষ মানুষ তার অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সতস্ফূর্ত সমর্থন যোগান

এই ভাবে নেলসন ম্যান্ডেলার দীর্ঘ আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটে এবং সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৪ সালের ১০ মে নতুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন নেলসন ম্যান্ডেলা। তিনি ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দক্ষিন আফ্রিকার মানুষকে দীর্ঘ দিনের বর্ণবাদী শ্বেতঙ্গ শাসকদের নিপীড়ন নির্যাতন থেকে মুক্ত করে নতুন এক আফ্রিকা গড়ার ডাক দেন। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কোন প্রতিশোধ না নিয়ে তাদের দিকে তিনি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেন।এর মাত্র এক দশক আগেও সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ শাসিত দক্ষিণ আফ্রিকায় এই রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ছিল এক অকল্পনীয় ঘটনা। এই পরিবর্তনটি সম্ভব হয়েছিল নেলসন ম্যান্ডেলার রাজনৈতিক আদর্শ সততা আর নেতৃত্বের কারনে। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকায় নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। তিনি হয়ে ওঠেন সারা পৃথিবীর সকল অধিকার বন্চিত স্বাধীনতাকমী মানুষের আশার প্রতিক। তার এই অবদানের স্বীকৃতি সরূপ ১৯৯৩ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত আর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সুলেমান ডেমিরেলের সাথে তিনি আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে বাংলাদেশ সফর করেন। এই কিংবদন্তী নেতা ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। রেখে যান তার পৃথিবীর সকল অধিকার বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের স্বপ্ন। বর্তমানে আমেরিকা ইউরোপসহ দেশে দেশে চলমান বর্ণাবাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি আমাদের আদর্শ, তিনি আমাদের স্বপ্নদ্রোষ্টা। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব

এখন আমাদের। তাই আজ তার জন্মদিনে সেজান মাহমুদের লেখা আর ফকির আলমগীরের কন্ঠে গাওয়া সেই বিখ্যাত বাংলা গান, যেটা তিনি বাংলাদেশ সফরের সময় শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন, আমরা তার অংশবিশেষ স্মরণ করি

কালো কালো মানুষের দেশে, কালো মাটিতে

রক্তের স্রোতের সামিল

নেলসন মেন্ডেলা তুমি অমর কবিতার অন্তমিল।

শুভ হোক তোমার জন্ম দিন

শুভ হোক তোমার মুক্তির দিন।

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত