নোবেল জয়ী ডরোথি ক্রফুট হডকিন

Reading Time: 2 minutes

জুন মাসের এক রৌদ্র দীপ্ত মধ্য দিন। পারদের মাত্রা তর তর করে উঠে গেছে অনেকটা। বাতাসের ভেতর আগুনের হলকা। ক্লান্তিকর একটি অভিযাত্রা। তবুও বিন্দুমাত্র দমেনি কিশোরী কন্যাটি। প্রত্নতাত্ত্বিক বাবার হাত ধরে এগিয়ে চলেছেন একটি পিরামিড থেকে আর একটি পিরামিডের সন্ধানে।

পিরামিড শব্দটি উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে তোমরা নিশ্চয়ই এই গল্পের পটভূমিটাকে চিহ্নিত করতে পেরেছো। হ্যাঁ, আমি মিশরের কথা বলছি। এই সেই মিশর এখনও যে সযত্নে ধরে রেখেছে তার পাঁচ হাজার বছরের সভ্যতাকে। রহস্য আর রোমাঞ্চের হাতছানি।

এই মিশরের বুকেই একটি কিশোরী কন্যা নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, যে জীবনটা এখন আমরা ভোগ করছি, সেটাই জীবন নয়। আসল জীবন লুকিয়ে আছে ওই পিরামিডের অন্ধকারে। মমির অভ্যন্তরে, সিংহ দেবতার বীভৎসতায়।

কে তিনি, তা জানতে তোমাদের নিশ্চয়ই ইচ্ছে করছে। আরো জানতে ইচ্ছে করছে কেন তাঁর কথা বলার জন্য আজ আমাকে কলম ধরতে হয়েছে। তিনি হলেন ডরোথি ক্রফুট হডকিন। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দের ১২ মে মিশরের রাজধানী কায়রো শহরে জন্ম হয়েছিল তাঁর। তাঁর বাবা ছিলেন এক বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ। সরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। চাকরি সূত্রে তাঁকে জীবনের অধিকাংশ সময় আফ্রিকার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে কাটাতে হয়েছিল। যেখানে যেতেন, সময় এবং সুযোগ থাকলে ডরোথিকে সঙ্গে নিতেন। প্রত্নতত্ত্বে ডরোথির আশ্চর্য অনুরাগ তাঁকে বিস্মিত করেছিল। মেয়েরা সাধারণত এই ধরনের স্বভাবের হয় না। তারা ঘরের কোণে থাকতেই ভালোবাসে। পুতুল খেলা, অথবা বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করা। ডরোথি ছিলেন এর বিপরীত চরিত্রের কিশোরী। কোনো পরিশ্রমকেই তিনি কষ্ট বলে মনে করতেন না। মাইলের পর মাইল হেঁটে যেতেন। নতুন কিছু করার স্বপ্ন জেগেছিল তাঁর বিস্মিত দুটি চোখের তারায়। শেষ অব্দি অবশ্য ডরোথি প্রত্নতত্ত্ববিদ হতে পারেন নি, তিনি হলেন এক রসায়ন বিজ্ঞানী। মিশর এবং সুদান, এভাবেই কেটে গেল তাঁর কৈশোর এবং প্রাক–যৌবনের দিনগুলো। এবার বোধ হয় অন্য কোথাও যেতে হবে। কী নিয়ে পড়াশোনা করা যেতে পারে? পিতার আগ্রহ ছিল এক্সরে ক্রিস্টালোগ্রাফির ওপর। এটি একটি নতুন বিষয়। এর সাহায্যে আমরা এক্সরশ্মি প্রয়োগ করে যে কোনো জীবজন্তুর শরীরে অঙ্গ সংস্থাপন সম্পর্কে অনেক কথা জানতে পারি। কিশোরী কন্যা এই বিষয় নিয়ে পড়বেন বলে ঠিক করলেন।

এলেন তিনি কেমব্রিজে। দু’বছর পড়াশোনা করলেন সেখানে। তারপর মাত্র ছব্বিশ বছর বয়সে এলেন অক্সফোর্ডে। জীবনের অনেকগুলো বছর তিনি জমা রেখেছিলেন মানুষের শাশ্বত সাধনার এই অন্যতম সেরা কেন্দ্রে। কাজ করতে করতে ডরোথি হয়ে উঠেছিলেন আরো বেশি প্রাজ্ঞ। সারাজীবন তিনি শুধুমাত্র একটি বিষয়কে অবলম্বন করেই অনিদ্রিত রাত কাটিয়ে গেছেন। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে কিংবদন্তী মহিলার হাতে তুলে দেওয়া হল নোবেল পুরস্কার। বলা হল–আপনি এক্সরে প্রযুক্তিকে জৈব রাসায়নিক ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়েছেন। এ অত্যন্ত দুরূহ গবেষণা। এরই স্বীকৃতিতে আপনাকে এই পুরস্কার দেওয়া হল।

পুরস্কার মঞ্চে দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠস্বরে ডরোথি জানিয়েছিলেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। তিনি স্পষ্টতর বলেছিলেন– এই পুরস্কার আমি তুলে দিচ্ছি মিশর এবং সুদানের বুকে জমে থাকা কুহক মায়ার হাতে যদি আমি আমার ছোট্ট বেলার দিনগুলোতে এভাবে এক পিরামিড থেকে অন্য পিরামিডের সন্ধানে নিরন্তর ছুটে না যেতাম, তাহলে হয়তো আজ এই আলোকিত মঞ্চে দাঁড়াবার সৌভাগ্য আমার হত না!

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>