| 19 এপ্রিল 2024
Categories
সময়ের ডায়েরি

যদি ভিজেমাটির গন্ধ তোমায় গল্পকথা শোনাতে চায়:হামিদপুর চর, অক্টোবর ২০২০

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

তপোমন ঘোষ

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

সেচদপ্তরের আধিকারিকের সঙ্গে কথাবার্তা সেরে বেরিয়ে আসছে ওরা-তিনি প্রচুর সময় দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, মালদা জেলার আর যেখানেই ভাঙন হোক, বাঙ্গীটোলা-পঞ্চানন্দপুর অঞ্চলে আগামী পাঁচ বছরেও ভাঙনের কোন সম্ভাবনা নেই। গুগল আর্থ ব্যবহার করে নিজের বক্তব্যকে জোর দিয়ে প্রতিষ্ঠা করে তিনি বলেন-“…চাইলে আপনারাও এখান থেকে নিজের মতো করে দেখে নিতে পারেন, এ তো একটা ওপেন রিসোর্স…আমাদের রিভার সায়েন্সও একথাই বলছে।”একটু দোনামনা করে স্থানীয় প্রভাবশালী দৈনিকের এক সিনিয়ার রিপোর্টার যেন নিজেকে শুনিয়েই বলেন- “একটু ওভারসিমপ্লিফায়েড হয়ে যাচ্ছে না ব্যাপারটা!” মিটিঙে তিনি একটা দারুণ সম্ভাবনার কথা তুলেছিলেন- ইঁদুরের গর্ত! জল নেমে যাওয়ার পর ইঁদুরেরা নদীর পাড়ে অনেকসময় খাদ্য সঞ্চয়ের জন্য গর্ত খোঁড়ে, যাদের দৈর্ঘ্য দশ ফুট পর্যন্ত হতে দেখা গেছে-এইরকম অসংখ্য গর্তে জল ঢুকে ভাঙনের সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দেবে না তো? বক্তব্যের সমর্থনে একেবারে ফোটোগ্রাফসহ এভিডেন্স পেশ করেছিলেন তিনি… যথারীতি কোন লাভ হয়নি, কিন্তু ঋষি এই মধ্যবয়সীকে আলাদা চোখে দেখতে শুরু করে দিয়েছে! অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের অকাল বর্ষণ মালদায় অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা-তেমনি এক ঝমঝমে দুপুরে সেচ দপ্তরের অফিসেই আটকে পড়েছে ওরা। রিপোর্টার দাদাই ওদের বলেন, এদিনের বৃষ্টি মালদার ষোল বছরের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবে! এমন সময় নিচু গলায় কেউ একজন ওদেরকে ডেকে ওঠে-চকিতে পিছন ফিরে ওরা দেখে-আরে! ইনিই অফিসারের টেবিলে ফাইল সাজিয়ে দিচ্ছিলেন না?একটু আড়ালে ওদের ডেকে নিয়ে সেই মানুষটি এক নিঃশ্বাসে বলেন-“স্যর!আমাদের ছোট মুখে বড়ো কথা মানায় না, তবু বলছি-সাহেবরা যা বলছেন, তা বলছেন-কিন্তু বাঙ্গীটোলায় চর কাটার পর মাছমারা জেলেরা অন্য কথা বলছে… আর হামিদপুর চরটা একটু ঘুরে দেখবেন, অনেক নতুন জিনিস পাবেন!” কোনমতে কথা কটা বলেই দ্রুত অফিসে ঢুকে যান তিনি। উত্তেজনার বশে দুষণবিধি ভুলে ফস করে একটা সিগারেট ধরিয়ে ফেলেন সিনিয়ার রিপোর্টার দাদা, এক চোখ বন্ধ করে ঋষির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলেন-“নিউজ অ্যাঙ্গেলটা পেয়ে গেছি!”

  অতএব, ডেস্টিনেশন হামিদপুর চর। বাঙ্গীটোলাকে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলো সে, কিন্তু সৌমেন্দু বলে বাঙ্গীটোলা-পঞ্চানন্দপুরকে এড়িয়ে আট নম্বর স্পারে পৌঁছনো যাবে না আর আট নম্বর থেকে খেয়া পার হওয়া ছাড়া হামিদপুরে পৌঁছনোর কোন উপায় নেই।সম্মতি জানিয়ে মাথা নাড়ে সুশান্ত-সে সৌমেন্দুরই বন্ধু। টাউনের কলেজ থেকে সায়েন্স গ্র্যাজুয়েট হয়ে,বি. এড করে এস এস সি কোয়ালিফাই করেও কি এক কেসের চক্করে পড়ে গেছে সে… অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারকেও তার এখন অনেক দূরের নক্ষত্র বলে মনে হয়! সে ঐ জোতকস্তুরীর মেঘের মতো-ঋষিদের সঙ্গে মিশছে, অথচ কোথাও যেন মিশছে না। তীক্ষ্ণ, রসিক, পড়ুয়া, সুবক্তা, চ্যাম্পিয়ন ডিবেটার সৌমেন্দু যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, তাকে নিয়েই প্রতিমুহূর্তে নানারকম রসিকতা করে চলে। নিজের ভঙ্গিমাতেই সে বলে, বাঙ্গীটোলার পথ আমার মামাবাড়ির পথ-ছোটবেলার অনেক স্মৃতি, অনেক বেড়াতে যাওয়া, অনেক মণ্ডা খাওয়া এই পথের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে… ফলে, এখানকার বয়স্ক পুরুষমাত্রেই আমার “মামা”! ফলে বাঙ্গীটোলা মাছহাটে বাইক থামিয়ে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সঙ্গে যখন অবাধে মিশে যায় সে, ঋষি খেয়াল করে একেবারে মামা-ভাগ্নের আন্তরিকতাতেই নিজেদের মতো করে সমস্যার গভীরে ঢুকে পড়েছে তারা-তাকে আর এগোতেই হচ্ছে না। তাদের কথাতেই পরিষ্কার ভাঙনে শুধু নদীর পাড় কাটছে না, সেইসঙ্গে গঙ্গাগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে নদীর বুকে গজিয়ে ওঠা প্রচুর জমিও-যেখানে চাষাবাদ করে জীবিকানির্বাহ করতেন ঐ এলাকার ভাঙনদুর্গত মানুষেরা। পটল, তরমুজ, শশা বা কলাই চাষ করে সংসার প্রতিপালন করা কালিয়াচক ব্লক-২র সেই হাজার হাজার কৃষকের পেশা আজ বিপন্ন।পাশাপাশি সমস্যার একটা বিরাট দিক উঠে আসে তাদের সামনে-গঙ্গা ও ভাগীরথীর মিলনস্থলে পাগলি নদীর পশ্চিমের আপস্ট্রিমে গত এক দশক ধরে তৈরি হয়েছিলো একটি প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট বিরাট চর। এবারের ভাঙনে এই চরের আশি শতাংশ গঙ্গা নিঃশব্দে খেয়ে ফেলেছে। স্থানীয় মানুষজন জোর দিয়ে বলছেন, এই চরটি সম্পূর্ণ কেটে গেলে বাঙ্গীটোলা-পঞ্চানন্দপুর অঞ্চল গঙ্গায় তলিয়ে যেতে এক সপ্তাহও লাগবে না-তাদের স্মৃতিতে কড়া নাড়ছে ৯৮ সালের ভাঙনের স্মৃতি। এছাড়াও সবথেকে অ্যালার্মিং যেটা মনে হলো ঋষির কাছে, সেটা হলো এই-নদীর সঙ্গে নিত্য সহবাস করা এই মানুষগুলো বলছেন, এই পুরো প্রক্রিয়াটা ঘটতে দুই বছরও লাগবে না… অর্থাৎ, পঞ্চানন্দপুর-বাঙ্গীটোলার অস্তিত্ব একটা সরু সুতোর উপর দুলছে!একেবারে প্রফেশনালি ঋষি স্পট থেকেই ফোনে ধরে সেচ দপ্তরের সেই আধিকারিককে, যিনি “পাঁচ বছর নিশ্চিন্ত”র তত্ত্ব খাড়া করেছিলেন… ফোনের ওভারে আগের মতোই নিস্পৃহ লাগে তাকে;বরং সুযোগ পেয়ে ঋষিকে একটা সূক্ষ্ম খোঁচা দিতে ছাড়েন না তিনি-” বাঃ,আপনি এরই মধ্যে একেবারে দলবল নিয়ে পৌঁছে গেছেন স্পটে? গুড- ইট ইজ রিয়েলি গুড টু সি সামওয়ান অ্যাট ওয়ার্ক! “তিনি বলেন, পাগলি কালিমন্দিরের আপস্ট্রিমে বড়ো চরটা কাটছে-এটা শুনেছি, তবে কতোটা কেটেছে সেটা গুগল আর্থ না দেখে বলা যাবে না…বলেই দার্শনিকের মতো তিনি বলেন, নদী তার প্রাকৃতিক নিয়মেই চলে,তাই চর কাটলেই তাতে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বরং এই চর কেটে চরের পলি জোতকস্তুরী ও সকুল্লাপুর অঞ্চলে যদি পড়ে, তাহলে ভাঙনের কোন সম্ভাবনা আগামীতে থাকছে না। ঋষি কাউন্টার করার আগেই ঝটিতি ফোন কেটে দেন তিনি। তার বাক্যের অনেকগুলি “যদি” শুনে ঋষির হঠাৎ তার ঠাকুমার মুখে অনেককাল আগে শোনা একটা পুরনো প্রবাদের কথা মনে পড়ে যায়-“যদির কথা নদীতে ফেলো”! বিদ্যুৎচমকের মতো তার মনে পড়ে যায়,সকুল্লাপুরে বাঁধের উপর বাইক থামিয়ে তার উপর উঠে দাঁড়িয়ে সৌমেন্দু আর সুশান্তর সেই কেটে যাওয়া চরের ছবি তোলার কথা;ডিপট্রিজ করা এলাকার পাড়ে ইঁদুর কীভাবে মাটি কাটছে, তা দেখতে তার আর সৌমেন্দুর বিপজ্জনক উতরাই পথে নেমে যাওয়া… ঋষি বোঝে, কেন সেচদপ্তরের সেই লোকটি তাদের এলাকার পরিস্থিতি একবার নিজের চোখে দেখে যেতে বলেছিলেন!পাশাপাশি সৌমেন্দু মনে করিয়ে দেয়, বাঙ্গীটোলার পিছনের দিকে মহাদেবপুর অঞ্চল দিয়ে একটি সাপোর্টিং রিং বাঁধ তৈরির কথা হয়েছিলো-তার বর্তমান অবস্থা কি বা আদৌ তাতে কোন লাভ হবে কি না, সে নিয়ে কারোর কাছেই কোন উত্তর নেই।

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

  দুধারের কাশবনের মধ্যে দিয়ে তারা এগোতে থাকে আট নম্বর স্পারের দিকে-যেভাবেই হোক, হামিদপুর চর কভার করতে হবে তাকে… যেখানকার খবর কোন গণমাধ্যমের ফুটেজ বা নিউজপ্রিন্টে উঠে আসে না, অন্তত এ মরশুমে উঠে আসেনি। এই পথ ধরে যাওয়ার মাঝেই তাদের সঙ্গে দেখা হয়েছিলো মালদা কলেজের এক অধ্যাপিকা আর স্থানীয় এক ছাত্রীর-তীব্র রোদের মধ্যে ঘুরে ঘুরে একেবারে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোন বাড়ির বাচ্চার পুজোর জামা হয়নি, তা জেনে তাদের হাতে সাধ্যমতো পুজোর পোষাক তুলে দিচ্ছিলেন তারা! তাদের দুজনের রোদে পোড়া মুখে এক অদ্ভুত আলো দেখেছিলো ঋষি-অবশ্য বাইকে তাদের তিন মূর্তিকে দেখে গজগজিয়ে উঠলো এক বাচ্চার মা- “… তাও তো দিদিমণিরা এসে কিছু করছে-আর এদের দেখো!… শুধু ছবি তুলে কি হবে, ডুবতে তো আমাদেরই হবে! “নেতা-মন্ত্রীদের ফেসবুকময় প্রচারসর্বস্ব অনুদানের পাশাপাশি এই নীরব মানবিকতাকে লেন্স বন্দী করার জন্য ক্যামেরা বের করেছিল ঋষি-সৌমেন্দু তার হাত চেপে ধরে-“ওটা ছাড়ুন- বাচ্চাগুলো আর ম্যাডামের মুখে আনন্দটা শুধু একবার দেখুন না! আরে দাদা, মানুষের চোখের থেকে ভালো ক্যামেরা আর কি আছে বলুন তো! “

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

  মাঝখানে চড়া রোদের মধ্যে একটুখানি জিরিয়ে নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছিলো তারা। নির্জন সেই বাঁধের উপর হঠাৎ বাইকের স্টার্ট বন্ধ করে দিয়ে সৌমেন্দু বলে, “ঋষিদা, সারাদিন বহুত খাটাচ্ছো-এখনই একটা গান না শোনালে আর একপাও এগোবো না! অ্যাই সুশান্ত, বাইক থামাও তো “। ঋষি অভিজ্ঞতা থেকে জানে এইসব পরিস্থিতিতে সৌমেন্দুকে থামানো “মুশকিল হি নেহি, না মুমকিন ভি হ্যায়”… তার একসময়ে গান শেখার কথাটা সৌমেন্দু জানে!
– আজ নচিকেতা নয় কিন্তু, অন্য গান-চলবে?
– চলবে মানে? দৌড়োবে!তুমি ধরো তো!
  বিনা ভূমিকায় ঋষি ধরে সৃজিত মুখার্জি পরিচালিত ‘নির্বাক’ সিনেমার গান- অর্ক মুখার্জির ছকভাঙা গলায় যে গান প্রাণ পেয়েছে। অন্তরার দিকটায় এসে হঠাৎ যেন গলা বুজে আসে তার- এই যে নিজেকে ছাপিয়ে শুধু নদীর সঙ্গেই ঘর করে যাওয়া;নদী আর নদীর মতো মানুষদের সঙ্গে নিরন্তর মেলামেশা;নিজেকে ক্রমাগত টুকরো টুকরো করে নিজের জন্মভূমির থেকে প্রায় ৪০০কিলোমিটার দূরের এই বিভুঁইতে ছড়িয়ে দিয়ে কিছুই কি যোগ হলো না-জমার ঘরে?চিরকালের মতো সে ভালো বলেই একা-না কি একা বলেই ভালো? কোনটা ঠিক?
“… যদি ভিজেমাটির গন্ধ তোমায়
  গল্পকথা শোনাতে চায়-
  আমি মাটির তলায় ঘর না বান্ধিলে,
  তোমার জঠরগন্ধ পাবো না…
  যদি আকাশের গায়ে কান না পাতি,
  তোমার কথা শুনতে পাবো না! “

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

  আট নম্বর স্পার থেকে মাঝির সঙ্গে দরাদরি করে খেয়ার উপর বাইক তুলে হামিদপুরের দিকে যখন রওনা হলো তারা, তখনই খেয়ার অন্য যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তারা বুঝতে পারলো-প্রথমত, এই বছর কোন ভাঙনজনিত বড়ো বিপদ এখানে ঘটে নি;আর দ্বিতীয়ত,প্রায় ত্রিশ বছরের পুরনো এই চরের মানুষ ভাঙন নিয়ে এতোটাই অভ্যস্ত যে, নিধুবাবুর টপ্পার মতো তারাও গাইতে পারে-“সিন্ধুতীরে বাস আমার/বিন্দুরে কি ভয় দেখাও”! ঝাড়খণ্ড-বাংলা সীমান্ত লাগোয়া ১৫-১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তন ও প্রায় আড়াই-তিন হাজার জনসংখ্যাবিশিষ্ট এই চরের বাসিন্দারা মোটামুটিভাবে ১৩টি টোলা(পাড়া) য় বিভক্ত হয়ে থাকেন-খাটিয়াখানা, এতোয়ারিটোলা, হারুটোলা, মঙ্গতপুর,জানকি সরকার টোলা, কাতলামারি তাদেরই মধ্যে কয়েকটি। একদিকের জমি ডুবে গিয়ে অন্যদিকের জমি ভেসে উঠলে সেই জমি দখল করে চাষাবাদ করাই তাদের একমাত্র পেশা। হামিদপুর পঞ্চায়েত থেকে চৌকিদারি ট্যাক্স সংগ্রহ করতে এসেছিলেন একজন, তার সঙ্গে হিসাবনিকাশের তরজা চালাতে চালাতে মোটের উপর সবাই একমত হন-এবছরের ভাঙন আর চরের ভিতরে ঢোকে নি… রাজমহল থেকে ঝাড়খণ্ড সীমানা বরাবর যে নদীপ্রবাহ (স্থানীয় নাম:উদুয়াদাড়া) দিয়েই বিপদটা শুরু হতে পারতো-এবার তা নিয়ে কোন সমস্যা নেই। সৌমেন্দু আর সুশান্তর কথোপকথনের মধ্যেই ঋষি খেয়াল করে-কয়েকটি কৌতূহলী বাচ্চা ওদের বাইকদুটোকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে। একটু বন্ধুত্ব করার ছলেই সে প্রশ্ন করে:
– কোন ইস্কুলে পড়িস রে তুই?
– কে কে জে এম ইস্কুলে।
– ইস্কুল রোজ বসে?
– মাস্টার আসে… চাল আলু দেয়…
ঋষি বুঝে যায়-কে কে জে এম আসলে খাটিয়াখানা,কাতলামারি,জানকি সরকার টোলা আর মঙ্গতপুর-এর আদ্যক্ষর… প্রাইমারি স্কুলের নামের মধ্যেই এখানকার পাড়াগুলির এক যৌথতার ছবি মিশে রইলো!এমনই গোটা তিনেক প্রাইমারি স্কুলে এই চরের শিক্ষাব্যবস্থার প্রাথমিক সলতে পাকানোর কাজটা চলতে থাকে।
– নদী কেমন কাটছে রে এবার?
– এদিকটা কাটে নাই…

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
  বলতে বলতেই সাইকেলে হাফ প্যাডেল করে এগিয়ে যায় একটি বালক-পাশে পাশে ছুটতে থাকে তার ভাই…ঢলঢলে হাফপ্যান্ট একহাতে চেপে ধরে অন্যহাতে সে উঁচু করে ধরে আছে একটি গাছের ডাল-যার শীর্ষে একটিই সবুজ পাতা! ঋষি ভাবে, এই ডালটিকেই হয়তো সে পতাকা কল্পনা করে নিয়েছে-মুক্তির…এই যাপনের থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চিত্রকল্পও কি মিশে রইলো না এই ছবির ফ্রেমের মধ্যে?আসলে,নিজের নিজের মতো করে ভাবতে থাকে সবাই…ইরিগেশনের অফিসার ভাবে তার স্পেকুলেশন মেলানোর কথা; চৌকিদারি ট্যাক্স কালেক্টর ভাবে তার কাজ কমানোর কথা; খেয়ার মাঝি ভাবে তার পারানির হিসাব মেলানোর কথা; সুশান্ত ভাবে তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারের কথা; সৌমেন্দু ভাবে সেই সীমানার কথা, যেখানে “ইন্ডিয়া” শেষ হয়ে “ভারতবর্ষ” শুরু হয়; আর ঋষি ভাবে তার নন কমিশনড লেখায় সে এদের সকলকে ধরে রাখতে পারবে কি না!গঙ্গার পূর্বপাড়ে দাঁড়িয়ে সে লক্ষ করে-দিন ঢলছে পশ্চিমে… চোখ বন্ধ করে নিজের লেখার টেবিলটাকে দেখতে পায় সে!

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত