উত্তরবঙ্গপশ্চিমবঙ্গের একটি ভৌগোলিক অঞ্চল। উত্তরবঙ্গের বর্তমান আটটি জেলা হল: কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ ও আলিপুরদুয়ার। (কালিম্ঙ জেলা)। ভৌগোলিকভাবে এই অঞ্চলটি উত্তরে দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল ও দক্ষিণে গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের মধ্যবর্তী তিস্তা–তোর্ষা–মহানন্দা অববাহিকায় অবস্থিত। অর্থনৈতিক দিকের সাথে সাথে শিল্প সংস্কৃতিতেও উত্তরবঙ্গকে তাচ্ছিল্যের চোখেই দেথে দক্ষিণবঙ্গ। তবে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্যে এই অঞ্চলে পর্যটন শিল্প খুবই উন্নত। উত্তরবঙ্গের সাহিত্য ইতিহাস ও বেশ সমৃদ্ধি। সমসাময়িক সময়ে উত্তরবঙ্গে কেমন চলছে কবিতা যাপন? ইরাবতীর পাঠকদের জন্য তরুণ কবি নীলাদ্রি দেব তাঁর সম্পাদনায় একটা খন্ড চিত্র তুলে এনেছেন। আজ ইরাবতীতে থাকছে একমুঠো উত্তরবঙ্গের সমসাময়িক কবিতা। নীলাদ্রি দেব কে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা। আশা করি তাঁর সম্পাদনায় আগামীতে আরো অনেক কিছু পাবেন ইরাবতীর পাঠকরা।
চাবি
সুমন মল্লিক
আর কত মগ্ন হবো… স্বপ্নের হরিণেরা প্রতিদিন
ফুটো করে চলেছে মরমের চাঁদ
এই যে তিনটি ঘরের মাঝে অফুরন্ত অবসর
এতে গুছিয়ে রাখি প্রতিটি নিগূঢ় সৎকার
আর বারান্দায় চেয়ার টেনে বসে আকাশের বুকে
এঁকে দিই ঈশ্বরের চোখ
চোখ সব দ্যাখে, চোখ সব জানে –
মুখে তবু ঝুলিয়ে রাখি তন্ত্রসিদ্ধ যাপনের তালা
দূরে অনতিদূরে এখন আর কিছু নেই
শুধু মেঘাবৃত নির্জনতা
শুধু সময়ের অনীপ্সিত বেড়ি
এই অসময়েও কার হাত আমার বুকে তাঁত চালায়
এই যে অবশেষে গভীর উপলব্ধি, উপলব্ধির উড়ান
এটাই কি নবজন্ম… এটাই কি সেই অব্যর্থ চাবি…
এবং পরিস্থিতি
খোকন বর্মন
বেড়ে আসা অন্ধকারের দাবদাহ
জ্বলে ওঠা অনাহারী সলতে
যেন আত্মহত্যার শেষ লগ্নে বেঁচে থাকার অন্তিম প্রয়াস।
পরিস্থিতি কিসমিসের মতো চুপসে গেলে
প্রতিবাদের অনাবৃষ্টিতে শুকিয়ে যায় দেহের জল রক্ত
রাত্রিগুলি উদ্বাস্তু হয়।
স্ব-ইচ্ছায় ওত পেতে বসে থাকা আহত সন্ধ্যা-
এই নিয়েই আমাদের সংক্রামিত যাপন,
আমাদের কাটখোট্টা ব্রহ্মচর্য।
একটা পাহাড়
রাজ অধিকারী
জমে ওঠে। খুব বিষ।
সাড়া নেই। শুধু ক্ষীণ পরিবেশ।
পড়ি। পরী এলে। ডানা খুলে।
আমি উপত্যকায় শুয়ে পড়ি।
একে অপরের শরীরে। শুধু
যাতায়াত করি। বিচ্ছেদ ঘন হয়।
আমরা মানব বন্ধন গড়ে ফেলি।
পুরুষের মিথ্যে। একপেশে এক হাসি।
দুধ শেষ। আমি সর হয়ে গোঁফে ঝুলি।
ধার ধরে হাঁটি। ব্যালেন্স কমে গেলে।
বিছানায় প্রজাপতি ধরি।
কুপুত্র বড়ো হলে, বাড়িতে ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমি।
ঝুলে পড়ি। টুকরো টুকরো। ব্যালকনি।
নারীসঙ্গ দুষ্ট হলে। পাহাড় কমিয়ে ফেলি।
দেখে ফেলি। মন খারাপের পাহাড়ি মেয়ে।
আমি হিমবাহ দেখে ফেলি।
তন্ত্র
সুমন চক্রবর্তী
সুনসান রাস্তায় কাঁদানে গ্যাসের হুমকি :
সেই থেকে এর পোঁদে লাথি, ওর পোদে মলম। পুরু মেদের ভেতরে তো শুধুই গ্যাস। আর গ্যাস বেলুন হয়ে কতদিনই বা একটানা আকাশে ওড়া যায় বলুন। বেলুন তো ল্যান্ড আজ না হয় কাল করবেই কাকা!!
কালভাটে মানুষ ফেলে লঙ্কানৃত্য :
সাবধান! মাঝিমধ্যেই কিন্তু এস্ট্রয়েড ধেয়ে আসছে। তীর-ধনুক, ইট-পাটকেল, গোলা-বারুদ, ভাগাড়ের মাংস হজম যদিও সব তবু পোদে একবারটি গ্রহানুর থকথকে প্যাদানি পড়লে মন্দ হয় না, যদিও শেষে শুনি পোদ ঘেঁষে নাকি গ্রহাণুও বেরিয়ে যাচ্ছে বারবার!
কচুরিপানায় মুখ ঢাকে গণতন্ত্র :
তোমার আর কাম কি! দাঁত কিটমিট করতে করতে চোয়াল তো শক্ত বহুদিন আগেই করে ফ্যালাইসো। সিন্ধু, রোমান, মেসোপটেমিয়া সয়েছো। এখন না হয় ন্যানো সইবে। এ আর নতুন কি !!!!!
আঁধারে পথের বাতি
নাদিরা আহমেদ
স্বপ্নছেঁড়া হবার আগে আরেকবার খুবলে দেখি
ঘৃনা ও ভ্রান্তিতে ভরে গেছে প্রেমেদের গাছ,
চাঁদ ও জোনাকির জুটি দেখলে আর হাসি না
আমাদের সংসারের মাটিতে দেখেছি মৃত শৈবাল
পিঁপড়ের সারির সাথে আশাদের কত মিল
ভেঙে দিলেই দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে চিরকালের মতো
ভুলপথ চিনে নিতেই কেটে যায় অর্ধেক কৈশোর
তারপর বাসস্থান খুঁজে পেলে এলোমেলো সাজ–
আপ্যায়ন ও অবহেলাতেই কেটে যায় সবটুকু যৌবন…
জীবনের আলপথ বেয়ে হাঁটতে গিয়ে শুনেছি
কত পাথরভাঙা শব্দ — আর্তনাদ – তাড়না-তাগিদ
রাজপথের ভিড়ে পা মেলানোর সাহস পাইনি তাই
শুধু চেয়ে দেখেছি বাতিদানের নীচে মৃত শিশুর মা
চোখের কাজলের চেয়ে জল বেশি মূল্যবান হয়তো
তাই আলোর ফুলকির বদলে অন্ধকার কিনেছি..
আর একটু
মনামী সরকার
মাটিতে দাঁড়িয়ে চাঁদ কে দেখেছি যতবার
ততোবারই মনে হয়েছে,একটু আর একটু
উচ্চতা।
একে একে সিঁড়ি ভেঙেছি,বহুতলের ছাদ থেকেও
হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চেয়েছি,তার পরেও আর একটু।
পাহাড়ের সবচেয়ে উঁচু চুরাটায় দাঁড়িয়েও মনে হয়েছে আর একটু।
নিচে নামার সিঁড়ি গুলোতে জমেছে শ্যাওলা। চন্দ্রগ্রহণে চাঁদের উপর পরে পৃথিবীর ছায়া।
ক্ষত
পৌলোমী সরকার
গেরস্থ বাড়ির অভাব
লেগে থাকে ছাদের দড়িতে,
পাশের বাড়ি থেকে দেখা যায় সোজাসুজি
গোড়ালি ভিজবে বলে এক পশলা হয়ে গেলেও যাওয়া হয় না;
অমানিশায় ছাদে দাঁড়াই
অভাবের নিজস্ব ঘ্রাণ
পুরাতনী পরিচিত…
ফিরতি হাওয়া
রতন দাস
সমস্ত মুদ্রাদোষ জেনে গেলে কেউ
মানুষ ফিকে হয়ে আসে।
রহস্যের মায়াজল দারুণ সম্বল।
তবু নক্ষত্রের দোষে যারা
জীবনের কানাগলিতে ভ্যাবাচ্যাকা পথিকের দলে,
জীবনের এই সহজ সত্য জানা হয়নি তাদের।
তারপর বসন্ত চলে যায়,
আসলে ভুল বসন্ত।
বসন্ত চলে গেলে
শীতের শহরে প’ড়ে থাকে মরা নদী,
মাঝরাতে ভেসে আসে অভিমানী হাওয়া
ঝরা পাতাদের বোবাকান্না।
তবু অসহায়ভাবে যারা ভালবেসে গেল
অথবা ভালবেসে যারা অসহায়
তারা কিছু দাগ রেখে যায়,
দিয়ে যায় কবোষ্ণ আলো।
নির্জন দুপুরকালে পাতাঝরা হাওয়া দিলে
মনে পড়ে মাটিলেপা ঘর ।
হু হু করা বাতাসে তখন ফিরতি পথের টান…
তবু মায়া-হীন সে হাওয়া।
সব পিছুডাকে একই টান থাকে না।
সব পিছুটানে ডাকনাম থাকে না।
জেনো,
ছুঁয়ে দিতে জানে যারা, যেই হাওয়ারা,
একবার ছুঁয়ে দিয়ে ফিরে গেছে যারা,
বসন্তে কখনও তারা ফেরেনা আবার।
ক্রমাগত ভিজিয়েছে যে বৃষ্টিছাট,
তারপর ঢেউয়ে মিশে যাওয়া,
বানভাসি স্রোতে ফের তারা
ভাসাতে পারে না কোনদিনও।
জু
অনিমেষ
এই শহর একটা চিড়িয়াখানা , গোধূলি বানানের মতো খাঁচা নিয়ে উড়ে যায় সব সৃষ্টি । এই বৃষ্টি নামের কোনো খরচা নেই। কোনো মেধাবী রোদ আর দূর থেকে উড়ে এসে বসে না তারে। কিচিরমিচির একটা নিঃশব্দে ঢুকে পড়া এলোমেলো খুশী। আমার কোনো নিঃশ্বাসের প্রতি ভরসা নেই।ভরসা নিয়ে যতবার দেখি মৃত্যুর কাছাকাছি মানুষ এসে পড়ে…
হাওয়া ঘর ও নদী জীবন
শুভঙ্কর পাল
এই তো বৃষ্টি ধরে এলো। একফালি মেঘ যদিও আকাশে
হাওয়াঘর থেকে খবর আসে কালজানির হলুদ সংকেত এখনো জারি
আসলে পাহাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে এখনো
ঘোল জলের সাথে ভেসে যায় কিছু গাছ বা গাছেদের জীবন
একটা চর ভেসে যায় সংকোশের জলে, ভেসে যায় কিছু স্বপ্নের ফসল
কিছু গ্রাম ঘুমোতে পারেনা। ভয়। নদীর রঙ ওদের গায়ে মাখা।