আনুমানিক পঠনকাল: 5 মিনিটউত্তরবঙ্গ পশ্চিমবঙ্গের একটি ভৌগোলিক অঞ্চল। উত্তরবঙ্গের বর্তমান আটটি জেলা হল: কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ ও আলিপুরদুয়ার। (কালিম্ঙ জেলা)। ভৌগোলিকভাবে এই অঞ্চলটি উত্তরে দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল ও দক্ষিণে গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের মধ্যবর্তী তিস্তা–তোর্ষা–মহানন্দা অববাহিকায় অবস্থিত। অর্থনৈতিক দিকের সাথে সাথে শিল্প সংস্কৃতিতেও উত্তরবঙ্গকে তাচ্ছিল্যের চোখেই দেথে দক্ষিণবঙ্গ। তবে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্যে এই অঞ্চলে পর্যটন শিল্প খুবই উন্নত। উত্তরবঙ্গের সাহিত্য ইতিহাস ও বেশ সমৃদ্ধি। সমসাময়িক সময়ে উত্তরবঙ্গে কেমন চলছে কবিতা যাপন? ইরাবতীর পাঠকদের জন্য তরুণ কবি নীলাদ্রি দেব তাঁর সম্পাদনায় একটা খন্ড চিত্র তুলে এনেছেন। আজ ইরাবতীতে থাকছে একমুঠো উত্তরবঙ্গের সমসাময়িক কবিতা। নীলাদ্রি দেব কে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা। আশা করি তাঁর সম্পাদনায় আগামীতে আরো অনেক কিছু পাবেন ইরাবতীর পাঠকরা।
আলোর পবিত্রতার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়েছি
বসন্ত উবে যাওয়া বিবর্ণ পৃষ্ঠাগুলো
শব্দগুলো যথেষ্ট নিজের এখন
কিরকম আস্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়ে
আঙ্গুলের মাঝখানে নিবিড় হতে থাকে
বর্ষা বা বৃষ্টির কবিতা
হিমাদ্রী শেখর
গত বর্ষায় বৃষ্টি হয়নি,
মেঘ বাদলা করেছিল, মন খারাপ করেছিল
কিন্তু বৃষ্টি হয়নি।
রাস্তায় জল জমেনি, কোথাও ব্যাঙ ডাকেনি,
ঝিঁঝি পোকার একটানা কাব্যগ্রন্থও রচনা হয়নি কোথাও,
যদিও পূর্বাভাস বলেছিল বৃষ্টি হবে।
দিনে গ্রহণ এলো, বাজ-ও পড়লো কোথাও কোথাও,
নদী যৌবন ফিরে পেলো,
মৃত্যুহার বেড়ে গেল,
বর্ষাঘুমে পারি দিল দুর্দান্ত সব সাপেরা –
কিন্তু বৃষ্টি এলো না।
আজ আবার বর্ষা এলো,
আবহাওয়া দপ্তর বলছে বন্যা হবে,
শহরে শহরে জারি হচ্ছে ইয়েলো অ্যালার্ট –
কিন্তু জানি,
এবছরও বৃষ্টি হবে না।
রং খুঁজব,ব্র্যান্ড খুঁজব,
চলো সম্পর্ক তৈরি করার রাস্তায় হাঁটি
কিছুদিন থেকে যাও বৃষ্টি, রোদ্দুর, ভাঙাবাড়ি ঘিরে
সেখানে সৃষ্টি করতে পারো কাহিনি মনগড়া
চাইতে পারে সম্পূর্ণ একটি পৃথিবী
মানুষের শরীরে শ্যাওলার বাস
কতটুকু রোদ দিতে পারি রোজ ?
দুপুরের রোদ আনব ভেবেছি ছাদের থেকে
কখন যেন নিবে গেল আলো – ঝুপ করে ,
এক আকাশ যে রোদ ফিকে হয়ে আসে
আমি ভেবেছি সবার জন্য বুঝি ,
মানুষের শরীরে শ্যাওলার বাস
আমি রোদ দিতে পারিনি তাদের
মাঝে মাঝে এক আকাশ রোদও বুঝি
কম পড়ে যায় তাদের কাছে ৷
আজ নয়…কাল নয়…অন্য কোনও দিন….
দূরে মিলিয়ে যাওয়া অলস দৃষ্টি
নির্জনতা জড়িয়ে আঁচড় কাটে স্মৃতির
দু’রকম যুদ্ধজয়ের ইতিহাস লিখি
শারীরিক তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে
সমূহ বিচ্ছেদের সূত্র মিলিয়ে নেবার
সন্তানের কপালে বার বার হাত রেখে
আর ওদিকে বৃদ্ধ বাবার পাশে
মায়ের নিশ্চিন্ত ঘুমন্ত মুখে দেখে
তুমিও শেষরাতে এক প্রহর ঘুমিয়ে নাও
দাম্পত্য মানে কি শুধুই বীমা?
জেরুজালেমের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে চিঠি লিখছি
হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি ঈশ্বরের দিকে
ফাঁকা তলোয়ারের খাপ নিয়ে বসে আছে এ শহরের ক্লান্ত সৈনিক
মাঝি যুদ্ধজয়ের গান শোনাচ্ছে
এক একটি টুকরো জেরুজালেম ছুড়ে দিচ্ছে ভগ্ন রাজা
শেষ বিকেলে তুমি এসে বসলে আমার পাশে
বিকেলের চাঁদ ছুঁয়ে যাচ্ছে আমাদের চিবুক
আমরা তুলে রাখলাম কিছু স্মৃতিচিহ্ন
এই দৃশ্যকল্প আমার কাছে নতুন নয়
সময় নিঙরে খোঁজ চলে প্রতিদিন
চিলের মতো উড়ে যায় স্বস্তি
নদীকে শোনাই আনকোরা পাণ্ডুলিপি
সাক্ষী হই পাখিদের সঙ্গমের
মৃত্যু- জোনাকি হয়ে ছড়িয়ে পড়া মুহূর্ত…
অমাবস্যার গায়ে কিছু জীবন লেপ্টে থাকে, এমনই
জীয়ণকাঠির ছোঁয়ায় জোছনা জেগে ওঠে,
মাঝে মাঝে দাবনলও আসে, ঝড়ও ওঠে
তবু অন্ধ সন্ন্যাসী সাপের গর্তে পড়বার আগে
মৌচাক থেকে মধুর স্বাদ পায়
ইঁদুর কাটতে থাকে লতাপাতার বন্ধন
যদি হতো সেদিনের প্রথম দেখা।
জীবনের ভুল আর অসাফল্যগুলোকে
অভিমান আর ক্ষোভদের বলতাম,
বহুদিন না ছোঁয়ায় না দেখায়
কেমন যেন সব ঝাপসা হয়ে আসে
তখন এপার থেকে ওপার চলাচল বন্ধ
স্বপ্ন ছেঁড়া পতাকার মতো ঝুলতে থাকে
বানায় শূন্যের উপর ঘরবাড়ি
তখন প্রাচীরের খাঁজে খাঁজে
ফিরে যেতে চাইলে হলুদ খসড়া সব
যেভাবে স্রোত কেটে থিতিয়ে যাচ্ছে আঁশ
রুপালি মাছেরা ঠিকানা হারিয়ে ফেলে
তবু আমাদের নিজস্ব যাতায়াত ভারি হয়ে আসছে
ঘোলাজলেই খুঁজে নিচ্ছি ধূসর দেহের ছায়া
Related