আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
চিঠি-১
প্রিয় আপনি,
কেমন থাকেন আজকাল?
আমি ভালো নেই।
কী এক রোগ হয়েছে ছাতার!
প্রতিরাতে গহীন আগুন জ্বর।
অনবরত পানির ধারায় সেই জ্বর নামানো…
ভালো লাগে না আর!
চুল শুকানোর সময় আপনার কথা মনে পড়ে খুব!
আমার ভেজাচুলে আপনাকে ডুবতে হয়েছে
কত কত দিন… মনে পড়ে?
আপনার উষ্ণতায় চুল চুইয়ে পড়া জলেরা
বাষ্প হয়েছে নিঃশব্দে।
আর আমি? সেই উষ্ণতায় গলে গলে পড়তাম!
রাত বাড়ে, সাথে সাথে বাড়ে শরীরের উত্তাপ।
আর কত আবোলতাবোল ভাবনা এসে জড়ো হয়!
আপনার কপালে হাত রাখতে চাওয়ার
দিনগুলোর কথা মনে পড়ে।
কী এক ভীষণ সংকোচ ছিল তখন, মনে আছে?
পাশাপাশি হাঁটার সময় আঙুলে আঙুল ছুঁলেই
ছিটকে দু’দিকে সরে যাওয়া দু’জনের!
আর এখন?
একদিন আঙুল ছুঁতে না পেলে মনে হয়
শত বছর কেটে গেল!
আর লিখতে পারছি না।
চোখ কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে।
আজ এ পর্যন্তই থাক।
জ্বরটা বাড়ছে মনে হয়!
ইতি
আমি
চিঠি-২
এই সকালগুলো কেমন যেন অদ্ভুত, জানেন!
মনে হয়, আপনি আছেন বলেই
পাখিরা অনবরত ডেকে ডেকে
কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে!
হয়তো আপনি এত নিশ্চুপ থাকেন বলেই
পৃথিবীর আরেক কোনায় কোথাও
আকাশ আলো করে ভোর হতে শুরু করেছে।
হয়তো আমি জলের মতো কলকল করি বলেই
আপনার কথাগুলো সব বলা হয়ে যায়।
কোনো প্রশ্নের আগেই উত্তর পাওয়াটা
ভারি ক্লান্তিকর, না?
যোগাযোগ কেমন একতরফা বলে মনে হয়।
হয়তো আপনি আছেন বলেই আমার জল হওয়া।
মনে হয়, আপনার নীরবতা হিরন্ময় বলেই
এই সকালে আকাশ এত উজ্জ্বল।
এই সকালগুলো কেমন যেন অদ্ভুত!
আঙুল ছোঁয়ার জন্য আকুলিবিকুলি করতে থাকা,
কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিতে ইচ্ছে করা,
ঘুমন্ত চোখে চুমু দিতে চাওয়া,
আপনার মুখ বারবার মনে পড়া সকাল।
হয়তো আপনি আছেন বলেই
ঘুরেফিরে এই সকালগুলো আসে।
হয়তো আমাদের কাছে থাকাথাকি নেই বলেই
সকালগুলো অদ্ভুত হয়।
চিঠি – ৩
আমার বাইরে বাহির হতে ইচ্ছে করে না।
খালি আজিজের চিপায় গিয়ে
ইট্টুখানি জামের জুস খেতে ইচ্ছে করে!
খুব মাতবরি করে একা একা পুরান ঢাকায় গিয়ে
রাস্তা ভুলে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।
শাঁখারীবাজারে গিয়ে টিপের পাতা কিনতে ইচ্ছে করে।
ক্রিসেন্ট লেকের কৃষ্ণচূড়া গাছগুলির কথা মনে পড়ে খুব।
আর ফুলার রোড!
সব ঠিক থাকলে এই খা খা রোদে
আমি তো ওইখানেই থাকতাম এখন।
অথবা ধানমন্ডি লেকের কোনো কোনায়।
চা বেচে যে বৃহন্নলারা, তাদের সাথে হয়তো এত গরম ক্যান –
এ নিয়ে আলাপ করতাম।
আমি বাইরে যেতে চাই না।
আমি শুধু চাই আমার এই প্রিয় জায়গাগুলো ভালো থাকুক।
মানুষগুলো ভালো থাকুক।
যখন আমার বাইরে যেতে ইচ্ছে করবে,
তখন যেন সব আগের মতো পাই।
আপনাকেও যেন আগের মতো পাই!
ছোটবেলায় ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার। হস্তশিল্পের দিকে বেশি ঝোঁক থাকায় পড়াশোনা বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সৃজনশীল শিল্প বিভাগে। কিন্তু একইসাথে ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির নেশা থাকায় শেষ পর্যন্ত পেশা সেদিকেই যায়! নানান পত্রিকা, অনলাইন পোর্টালে ফিচার লেখক আর একটা টিভি চ্যানেলে ৪ বছর স্ক্রিপ্ট লেখক হিসেবে কাজ করার পর মনে হল ফ্যাশন ডিজাইনারও হয়ে দেখা দরকার! তাই আপাতত নিজের ছোট্ট বুটিক নিয়ে ব্যস্ত। আর পাশাপাশি চলছে লেখালিখিও।