লিখছি তোমায়,
এই যে শুনছ,
তার সাথে না হয় আমার সারাবচ্ছরই দেখা হয়,।রোজ না হলেও মাঝে মাঝে। আচ্ছা বাপু, না হয় মাসে দু’তিন বার। লেকের ধারে, দক্ষিণাপনের সামনে, সল্টলেক পিএনবির সামনে আর যদি আলটপকা এমনিতে দেখা পেয়ে যাই তাহলে তো দিন জমে ক্ষীর! তাই বলে ঠোঁট উল্টাবে?
বাড়িতে টিউশন পড়ানো রোজগার থেকে দু’পয়সা দি, বাবা তাই রাস্তায় ওর সাথে দেখতে পেলেই মুখ ভার করে। অকারণ বাজে খরচ হয় তো ওর পেছনে। এককালে বাবাও ওকে পছন্দ করত খুব। ইদানিং একটু সততার অভাব, বেশি বেশি তেল দেয় বলেই হয়ত বাবা নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।
বইমেলা সেইদিক থেকে সেফ জোন। এমনিতে আমার মত মোটা মেয়েদের খোঁজ কেউ নেয় না।চোখ পড়ে গেলেও ফিরিয়ে নেয় বুমেরাঙ গতিতে।
এই বইমেলায় যতবার দুজন একসাথে, ততবার দেখি বাড়িতে রিপোর্ট, হয়ত ওপাড়ার মেজকাকি, নয়তো কোন্নগরের মাসিদিদা, নিদেনপক্ষে কেউ না হলেও বখাটে হোঁদল দেখবেই তারপর মাকে বিঁধিয়ে বিঁধিয়ে কথা শোনানো। মেয়ে তো গায়ে গতরে বাড়ছে, এইবার বিয়ে দিয়ে দাও।
কি ঝক্কি রে বাবা! কোষ বিভাজন ঠিকঠাক হলে আমরা সবাই বাড়ব গায়ে-গতরে এটাই স্বাভাবিক। এই নিয়ে এত কিচাইন করার কি হল?
আমার প্রেমিকটি হালকা রোদে পুড়ে যাওয়া ফর্সা রং যেমনটা সেরকম। মাঝারি লম্বা, অদ্ভুত নরম হাত পা। হাতের মুঠোয় তার স্পর্শ পেয়েছি বলেই জীবনে আইসক্রিমের মত গলে গলে পড়ছে সুখ।
বইমেলায় ঢোকা থেকে বেরোনো ইস্তক ছাড়িনা তাকে। সেও যেন আদর খাওয়া বেড়ালটা, লুটুপুটি খায় আমার গালে, ঠোঁটে, ঠোঁটের ওপরে গুড় হয়ে লেগে থাকে আর হাত জুড়ে চ্যাটাল ভালোবাসা।
যেদিন বাইরে লম্বা লাইন পড়ে সেদিন আমার আকুলি-বিকুলি এতক্ষণে নিশ্চই বইমেলার বাকি সব আধেখলা মেয়েগুলো ঘিরে ধরেছে ওকে।ছেলেরাও ছাড়েনা এমনি মোহজাল তার।
বইকেনা ঘন্টা দুয়েক লাইন দিয়ে আনন্দ, দেজ, মিত্র ঘোষ গুল্লি মার, ডাঙ্গুলি মার এসব করতে থোড়াই যাই আমি। আমার যাওয়া লুকিয়ে দেখার মুহূর্তগুলো, একান্তে তার শরীরে দাগ বসানোর বাসন্তী বিকেলগুলো…।
যে বছর সরস্বতীপুজো আর বইমেলা মিশ খেয়ে যায় আমিও গুটি সাজাই অন্যভাবে। নিরিমিশ খিঁচুড়ি খেয়ে আমিষ প্রেম করা ঠিক নয় জানি। অন্য দেব-দেবী আলাদা ব্যাপার, কিন্তু বিদ্যাদেবীকে অকারণ বিরোধী পক্ষ বানাইনা। সেক্ষেত্রে দুদিন যাই বইমেলায়।
কি কান্ড দেখেছেন। এত বলছি নামটাই বলিনি এখনো আরে ওর নাম ব্যাটার ফ্রাই|
ছোটবেলায় বাটার ফ্রাই বলতাম, একবার এক বন্ধু কারেকশন করে দিল বলে সে বন্ধুই রয়ে গেল, প্রেমিক হলো না আর আরসালানের বিরিয়ানী চাইনা , চাইনা একহাত লম্বা বর্ধমানের বেগুনী আর সাথে পেঁয়াজ লঙ্কা মুড়ি, কিম্বা দুধেলা কুলফি ভাঁড়ে ভাঁড়ে! আমার বেনোজলে ভেসে যাওয়া হৃদয়ে যুগ যুগ জিও বেনফিশের ব্যাটার ফ্রাই।
আমেরিকায় পোস্ট ডক্টরেট করেছি কেমিস্ট্রিতে, কিন্তু লেখালিখি শুরু সাত বছর বয়েসে শুকতারায়। এগারো বছরে প্রথম প্রকাশিত গল্পের বই ভুটিয়া। আনন্দবাজার সংস্থার সব বাংলা ম্যাগাজিনে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতার হাতেখড়ি কলেজজীবন থেকেই। গল্প, প্রবন্ধ, ভ্রমণ, রান্না নানারকম লেখা প্রকাশিত হয়েছে দ্য স্টেটসম্যান, দেশ, আনন্দমেলা, উনিশকুড়ি, যুগশঙ্খ, সংবাদ প্রতিদিন ইত্যাদি পত্রপত্রিকায় এবং লিটল ম্যাগাজিনে। এইসময় পত্রিকায় নিজের ব্লগ আছে।