আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
আজ ১৬ ডিসেম্বর কথাসাহিত্যিক সালমা বাণীর শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
ঘুমহীন রাত কাটাতে কাটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ময়মনসিংহের মানুষেরা। প্রথমে ঘুমহীন রাত কাটায় ফুলবাড়িয়া গ্রামের মানুষেরা। তারপর ক্রমেই ঘুমহীন রাত কাটানো শুরু করে পুরো ময়মনসিংহের প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষেরা। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে ময়মনসিংহের প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ভীরু হয়ে ওঠে। ভয়ে দরজা জানালা শক্ত করে বন্ধ করে দেয়। তারপরও তারা ঘুমাতে পারে না। মধ্যরাতের আগেই আমাবস্যার মতো ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে যায় গ্রামের পর গ্রাম। অন্ধকারের গভীর থেকে ভেসে আসে করুণ কান্নার সুর। ময়মনসিংহের পুরুষেরা এই কান্নার উৎস খোঁজার জন্য দিনের বেলা অনেক রকম পরিকল্পনা করলেও রাতে কোনো যুবকই আর এগিয়ে আসার সাহস পায় না। এবং ঘুমহীন রাত কাটাতে কাটাতে ক্রমশ পুরুষেরা কর্মহীন হয়ে পড়ছে কারণ তারা ঘুমহীন রাত কাটানোর কারণে দিনের বেলা মৃতের মতো ঘুমায়।
যেদিন প্রথম এই কান্নার সুর ভেসে আসে সেদিন মেঘের মতো এক টুকরো গাঢ় কালো ছায়া দুলতে থাকে সুমির দেহের ওপর। নিকষ অন্ধকারে ডুবে ছিল পৃথিবী তখন।
তারও আগে সুমি ছিল বাসের শেষ যাত্রী। বাড়ি ফিরছে সুমি। সন্ধ্যা নামছে তার নিজের নিয়মে। গতি পরিবর্তন করে সুমিকে জোড় করে নিয়ে গেল নির্জন রাস্তায়। উল্লাসে মেতে ওঠে কতগুলো কামুক পুরুষ। তারা পালাক্রমে নির্যাতন করে দেহের ক্ষুধা মেটায়। নির্যাতনের এই খবর যেন প্রকাশ না পায় রাস্তার পাশের ঝোপের ভেতরে ছুঁড়ে ফেলে সুমির মৃতদেহ। ফেলে দেয়ার আগে তারা রড দিয়ে পিটিয়ে সুমির মাথা এমনভাবে থ্যাতলায় সুমির সুন্দর চেহারাটা বদলে যায় এক দলা মাংসপিণ্ডে।
রাত গভীর হলে রক্তের গন্ধে নিশাচর শেয়াল ও কুকুরেরা আসতে থাকে। নিথর সুমির থ্যাতলানো মাথার রক্ত ঘিলু চেটে চেটে খায়। কামড়ে কামড়ে তুলে নিতে থাকে সুমির গালের ঠোঁটের নরম মাংস।
তখন মেঘের মতো এই ছায়ার আর্বিভাব ঘটে। ছায়ার আর্বিভাব ঘটার সাথে সাথে নিশাচর প্রাণীদের মারামারি থেমে যায়। শেয়াল কুকুরের দল ভয়ে লেজ গুটিয়ে পালায় আর ছায়াটা সুমির দেহের ওপর দুলতে থাকে। শুধু শেয়াল কুকুরো নয়, আশে পাশের ঝোপঝাড়ের ভেতরে আরও কিছু রাত প্রাণীর ভয়ার্ত ডাক শোনা যায়। বট আম বা কাঁঠাল জাতীয় উঁচু গাছের ডাল থেকে বাদুর ও কাকেরাও ডানা ঝাপটিয়ে পালাতে থাকে।
ছায়া তখন সুমির সাথে কথা বলে—সুমিকে ছায়া জানায় তাকেও সুমির মতোই নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। তার নাম তনিমা। সুমিকে জেগে উঠতে সাহস দিলে ধীরে ধীরে সুমি জেগে ওঠে। সুমির নিথর দেহের ভেতর থেকে বের হয়ে আসে সুমির ছায়া। তনিমা সুমির ছায়াকে বলে—আমাদের যাদেরকে এভাবে হত্যা করা হয়েছে আমরা সবাই এভাবে মেঘের মতো জমাট বাঁধবো। তখন জমাট বাঁধা ছায়ার ভেতর থেকে ভেসে আসে করুণ কান্না।
সে রাতের পর থেকে প্রতিরাতে ভেসে আসতে থাকে এই কান্না। কান্নার করুণ সুর এমন হৃদয় বিদারক কোনো পুরুষ আর ঘুমাতে পারে না। কিন্তু আশ্চর্য এই কান্না কোনো নারীর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় না। এই কান্না প্রতিরাতে দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে মাঠের পর মাঠ, প্রান্তরের পর প্রান্তর। বিস্তার হতে হতে এখন ক্রমেই এগিয়ে আসছে ঢাকা শহরের দিকে।
শুভ জন্মদিন আপা