| 23 এপ্রিল 2024
Categories
গদ্য সাহিত্য

শূন্য সমান মহাশূন্য

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

আমরা যদি সৃষ্টির শুরুর কথা ভাবি,তাহলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক বিশাল শূন্য! যেখানে কোন কিছুই নেই। তারপর ধীরে ধীরে জগত, মহাজগত, এই সৌরমণ্ডল তৈরি হলো। কিন্তু কিভাবে? শূন্য থেকে, যেখানে কোন কিছুই নেই সেখান থেকে তো কোন কিছুর সৃষ্টি হওয়া সম্ভব নয়!

এখন স্বাভাবিক ভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে এই শূন্য আসলেই কী শূন্য, না শুধুই ভাবনা? নাকি শূন্যই ঈশ্বর! কিন্তু ঈশ্বর শূন্য হয় কী করে! এও তো ঠিক শূন্যের আগে শুধু শূন্যই থাকে। যদি তাই হয়, তাহলে শূন্য ভিন্ন ঈশ্বরের অন্য কোন রূপ নেই! এখন দেখার বিষয় শূন্য আসলেই কী শূন্য, নাকি অন্য কিছু!
প্রাকৃতিক নিয়মে শূন্য বলে কিছু নেই, সর্বত্রই কিছু না কিছু আছে। যেখানে কিছুই নেই সেখানে আছে বায়ু বা গ্যাসীয় কণা। আবার গাণিতিক ভাষায় শূন্য মানে খালি বা ফাঁকা। তবে গাণিতিকভাবে এও প্রমাণিত যে, পরম শূন্য বলে কিছু নেই। তারমানে শূন্য হলো ‘কোন নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট অবস্থায় নির্দিষ্ট কোন বস্তুর অনুপস্থিতি’। যেমন ধরা যাক একটা জল-শূন্য বোতল। বোতল যদি জল শূন্য হয় তবে তাকে শুষ্ক হতে হবে। এবার শুষ্ক হতে হলে বোতলের মুখ খুলে রোদে রাখতে হবে কিংবা তাপ প্রয়োগ করতে হবে। তাতে করে বোতলটি কিছু তাপ শোষণ করবে। আর যেখানে কিছুই নেই সেখানে তো বায়ু মহাশয় আছেই!
তাহলে দেখা যাচ্ছে, বোতলটি জল শূন্য কিন্তু তাপ ও বায়ু বিদ্যমান। শুধু তাই নয়, আমাদের চোখের সামনে যে ফাঁকাস্থান দেখতে পাই সেখানেও কিন্তু তাই! দেখতে ফাঁকা মনে হলেও সেখানে হাজার হাজার ক্ষুদ্র বস্তুকণার সাথে আছে গ্যাসীয়কণা বা বায়ুকণা। তাহলে বলতেই পারি শূন্য মানে শূন্য নয় অন্য কিছু। কিংবা এভাবেও বলা যায় শূন্য হলো নির্দিষ্ট বস্তুর অনুপুস্থিতিতে অনির্দিষ্ট বা অদৃশ্য অন্য কিছুর অবস্থান। একইভাবে ঈশ্বরের সংজ্ঞায়ও বলা আছে তিনি সর্বশক্তিমান সবকিছু সৃষ্টি করেছেন সর্বত্র আছেন কিন্তু তাঁকে দেখা যায় না!
যদি তাই হয় তাহলে ঈশ্বরের সাথে শূন্যের সাদৃশ্য র‌য়ে‌ছে! এবং তাদের আলাদা করা যায় না, তারা একই! এবং এও বলা যায় ঈশ্বর অকর্মা, নিজে থেকে কিছু করতে পারেন না! শূন্য যেমন একক স্থানে মূল্যহীন কিন্তু একের পিঠে অসীম হতে পারে, ঈশ্বরও তেমনি অন্যের উপর ভর করে যে কোন কিছুই করতে পারে! তখন ঈশ্বর হয়ে উঠে অসীম!
ধর্মগুলো পর্যবেক্ষণ করলে আমরা তাই দেখতে পাই। প্রচারক ছাড়া আল্লাহ্, ঈশ্বর, ভগবান কারুরই সৃষ্টিকর্তা হওয়ার যোগ্যতা ছিলো না। কারণ তাঁরা সকলেই শূন্য এবং প্রচারকের পিঠে চড়ে হয়ে উঠেছেন অসীম ক্ষমতার অধিকারী, ঈশ্বর!

এখন প্রশ্ন হলো সূর্য কেন্দ্রিক সৌরমণ্ডলের বাইরে এই মহাজগত কতদূর বিস্তৃত বা এর শেষ কোথায়! একটি গ্যাস সিলিন্ডারের মুখ খুলে দিলে কণাগুলো ছড়িয়ে পড়বে এবং চাপথাকা পর্যন্ত তা উপ‌রের দি‌কে উঠতেই থাকবে। সিলিণ্ডারে যেহেতু গ্যাস মজুদ থাকে সেখানে একটা সময় পর গ্যাসের আর চাপ থাকবে না তখন সে ভেসে বেড়ায়। অন্যান্য কণার সাথে ঠেলাঠেলি করে বেরিয়ে যাবে কিংবা আবদ্ধ হয়ে অন্য কিছুতে রুপান্তর হবে। এভাবে চলতে চলতে একের পর এক রুপান্তর ঘটতে থাকে।
এই মহাজগত হলো খোলা ব্যবধিতে গ্যাস বেলুন যেখানে প্রতিনিয়ত গ্যাসীয় উদগিরণ ও রুপান্তর হচ্ছে। সেই গ্যাসীয় রুপান্তর যখন আলোকোজ্জ্বল হয় তখনই দেখা দেয় কোন নতুন তারকামণ্ডল। অন্যান্য কণার সংঘর্ষে যখন তার বন্ধন শিথিল হয় তখনই সেই তারকার পতন হয়। এইভাবে মহাকাশে অনবরত তারকার জন্ম হচ্ছে মৃত্যু হচ্ছে। একইসাথে শূন্য থেকে মহাশূন্যে চলছে সৃষ্টি, সংঘর্ষ, ধ্বংস, নবসৃষ্টি, গ্যাসীয় কণার বিস্তার।
এ শুধু মহাকাশেই নয়, পৃথিবীতেও। জীবজগৎ কিংবা প্রাণিজগৎ সর্বত্রই জন্ম, টিকে থাকার লড়াই একসময় মৃত্যু। জীব কিংবা প্রাণী একই জাতের হলেও শতভাগ মিল থাকে না। এর অন্যতম কারণ স্থান কাল পাত্র ভেদে সকলের জন্মই আলাদা এবং একের থেকে অপরের সৃষ্টি। তবে একের থেকে যতরই সৃষ্টি হোক সকলেই হবে আলাদা। এই একে অন্যে আলাদা হওয়াই সৃষ্টির প্রধান বৈশিষ্ট্য। যেমন বলা যায় ভেবে করে দেখে ভেবো। কোন কিছু ভাবনায় যা আসবে তা শতভাগ কর্মে আসবে না, যতটা করেছে ততটা দেখা যাবে না, যেটুকু দেখেছি সম্পূর্ণ বুঝিনি।
এখন ঈশ্বর যেহেতু শূন্য তাই সৃষ্টি, টিকে থাকা কিংবা ধ্বংস হওয়ায় ঈশ্বরের কোন হাত নেই। কারণ তিনি কিছুই করতে পারেন না। তবে এভাবে জন্ম মৃত্যু হতে হতে একসময় শূন্য রুপ নেয় মহাশূন্যে। যেমন ধরুন, যেকোন বস্তু কিংবা ১ একটি সংখ্যা। একে যত টুকরো করাই হোক না কেন, কখনই শূন্য করা যাবে না। এত ক্ষুদ্র হবে যে হয়তো দেখাও যাবে না কিন্তু গাণিতিকভাবে তাকে অসীম সংখ্যক টুকরো করা যাবে। যা একসময় আমাদের চোখে অদৃশ্য হয়ে যাবে।
বিপরীতক্র‌মে সেই বস্তু কিংবা সংখ্যাকে বাড়াতে বাড়াতে এত বড় করা যাবে যস, আকাশ মহাকাশ ছাপিয়ে যাবে তবুও শেষ হবে না। একসময় আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যাবে, তখন তাকেও অসীম বলা হবে। তাহলে যেকোন কিছু ক্ষুদ্র হতে হতে অসীমে যাবে আবার বড় হতে হতেও অসীমে যাবে। অর্থাৎ সকলের গন্তব্যই অসীম কিন্তু ধনাত্বক বা ঋণাত্বক!
এদিকে শূন্য ধনাত্বক কিংবা ঋণাত্বক যাই হোক না কেন শূন্যই থাকে, কারণ তাদের আলাদা কোন মান নেই। তার মানে শূন্য বা মহাশূন্য আলাদা কিছু নয়! এরা সৃষ্টির শুরুতেও ছিলো শেষেও থাকবে এবং এরাই থাকবে। অতএব বলা যায়, ধ্বংস আর সৃষ্টির মাঝে বিশাল এক শূন্য বা মহাশূন্য। নি‌চের গা‌ণি‌তিক অংশটুকু পর্য‌বেক্ষণ কর‌লে হয়ত সম্পূর্ণ বিষ‌টি বুঝ‌তে সহায়ক হ‌বে।

শূন্য, ০ = ০ ১ ১, ৩ ৫ ৮, ১৩ ২১ ৩৪, ৫৫ ৮৯ ১৪৪, ২৩৩ ৩৭৭ ৬১০, ৯৮৭ ১৫৯৭ ২৫৮৪, ৪১৮১ ৬৭৬৫ ১০৯৪৬, ১৭৭১১ ২৮৬৫৭ ৪৬৩৬৮, ৭৫০২৫ ১২১৩৯৩ ১৯৬৪১৮, ৩১৭৮১১ ৫১৪২২৯ ৮৩২০৪০… = ০, মহাশূন্য, যা একটি ঈশ্বরীয় সংখ্যা।

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত