| 29 মার্চ 2024
Categories
প্রবন্ধ সাহিত্য

সর্বকালের চারণকবি উইলিয়াম শেক্সপিয়র

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

২০১৬ তে ছিল শেক্সপিয়রের ৪০০ তম মৃত্যু বার্ষিকী। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সেই বছর শেক্সপিয়রকে নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। ফিরোজ আহমদ অনূদিত সেই লেখাটি থাকলো ইরাবতীর পাঠকদের জন্য। আজ ২৩ এপ্রিল উইলিয়াম শেক্সপিয়রের জন্মতিথি ও প্রয়াণ দিবস।


এবছর উইলিয়াম শেক্সপিয়রের মৃত্যুর চারশততম বার্ষিকী শুধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ একজন নাট্যকারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগই এনে দেয়নি, বরং এটি এমন এক ব্যক্তির অসামান্য চলমান প্রভাব উদ্যাপনেরও মুহূর্ত যার বিষয়ে জুলিয়াস সিজার সম্পর্কে তাঁর নিজের বর্ণনা ধার করে বলা যায়, তিনি ‘সংকীর্ণ জগতে বিশাল স্মৃতির মতো দাঁড়িয়ে আছেন (‘doth bestriade the narrow world like a colossus’)।
শেক্সপিয়রের রচনা একশ’রও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং তাঁর রচনা অর্ধেক বিশ্বের স্কুলশিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করেছে। যেমনটি তাঁর সমসাময়িকদের একজন বেন জনসন বলেছেন, ‘শেক্সপিয়র শুধু একটি সময়কালের নন, বরং তিনি সর্বকালের’। তিনি বর্তমানে আমাদের ভাষায়, আমাদের সংস্কৃতিতে ও সমাজে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের মধ্যে বেঁচে আছেন।
আধুনিক ইংরেজির রূপায়ণে এবং একে বিশ্বভাষায় পরিণত করার ব্যাপারে সাহায্য করতে শেক্সপিয়র খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। স্যামুয়েল জনসন প্রথম যে বড় ধরনের অভিধান সংকলন করেন তাতে তিনি অন্য যে কোনও লেখকের চেয়ে বেশি শব্দ শেক্সপিয়র থেকে গ্রহণ করেছেন। শেক্সপিয়রের নাটকগুলোতে তিন হাজার নতুন শব্দ এবং বাগ্ধারা প্রথমবার মুদ্রিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। আমি আমার শৈশবে ফিরে গিয়ে স্মরণ করতে পারি তাঁর হেনরি ফাইভ নাটকে যেসব শব্দের কতগুলো প্রথমবার দেখতে পাওয়া গেছে। Dishearten, divest, addiction, motionless, leapfrog-এর মতো শব্দ এবং ‘Once more unto the breach’, ‘band of brothers’,  এবং ‘heart of gold’-এর মতো বাগ্ধারাগুলো সবই আজ আমাদের ভাষায় গৃহীত হয়েছে— তাদের মূল রচনা অংশের কোনো রকম উল্লেখের প্রয়োজন ছাড়াই।
শেক্সপিয়র ব্যাকরণগত গঠন এবং কাঠামোর উদ্ভাবনী ব্যবহারেও পথিকৃত্ ছিলেন— যার মধ্যে ছিল অন্ত্যমিলবিহীন কবিতা, সর্বোত্তমসূচক শব্দ এবং বিদ্যমান শব্দ যুক্ত করে নতুন শব্দ তৈরি করা যেমন bloodstained – একই সঙ্গে তাঁর নাটকগুলোর উত্কর্ষ বানান এবং ব্যাকরণের প্রমিতকরণে যথেষ্ট অবদান রেখেছে।
তবে, শেক্সপিয়রের প্রভাব আমাদের ভাষাকে ছাড়িয়ে বহুদূর পর্যন্ত অনুভূত হচ্ছে। তাঁর ব্যবহূত শব্দ, তাঁর কাহিনীবিন্যাস এবং তাঁর চরিত্রগুলো আমাদের সংস্কৃতি ও প্রসারিত সমাজে প্রচুর মাত্রায় অনুপ্রেরণা যুগিয়ে চলেছে। নেলসন ম্যান্ডেলা রবেন দ্বীপে কারাবন্দী থাকার সময় জুলিয়াস সিজার-এর একটি উদ্ধৃতি খুব পছন্দ করতেন: ‘Cowards die many times before their death, the valiant never taste of death but once’।
অপরদিকে, Kate Tempest-এর কবিতা My Shakespeare-এ শেক্সপিয়রের চিরন্তন উপস্থিতি ধরা পড়ে যখন তিনি লেখেন, শেক্সপিয়র ‘…is in every lover who ever stood alone beneath a window… every jealous whispered word and every ghost that well not rest’. (‘…. জালনার নিচে কখনও দাঁড়ানো প্রতি প্রেমিকের কাছে… প্রতিটি ইর্ষোমাখা ফিসফিস শব্দে আর ক্লান্তিহীন প্রতিটি অপছায়ায়’। শেক্সপিয়র প্রভাব বিস্তার করেন সর্বত্র, ডিবেন্স এবং গ্যোটে থেকে শাইকোভস্কি, ভার্জি এবং ব্রাম্স পর্যন্ত;  West Side Story  থেকে অগাথা ক্রিস্টি’র হ্যামলেট অনুপ্রাণিত নাট্য শিরোনাম The Mousetrap পর্যন্ত যেটি লন্ডনের ওয়েস্ট এন্ড-এর মঞ্চে আজ অবধি একটানা মঞ্চায়িত থিয়েটার প্রযোজনা। এছাড়া তাঁর মৌলিক নাটকগুলো লক্ষ লক্ষ দর্শককে আনন্দ দিচ্ছে। বিশ্বজুড়ে স্কুলের হলগুলোতে যেমন সেগুলো অভিনীত হচ্ছে, তেমনি গতবছর লন্ডনের  Barbican-এ হ্যামলেটের ভূমিকায় বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচের অভিনয় দেখার জন্য শত শত লোক শেষ মুহূর্তে টিকিট কেনার জন্য সারারাত সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন।
তবে, সম্ভবত শেক্সপিয়রের সবচেয়ে উদ্দীপ্ত ঐতিহ্যগুলোর একটি হলো শিক্ষাপ্রসারে তাঁর সক্ষমতা। যেমনটি আমরা রয়েল শেক্সপিয়র কোম্পানি এবং শেক্সপিয়র’স গ্লোব-এর দূরবর্তী স্থানে পৌঁছে দেয়া কাজ এবং শেক্সপিয়র স্কুল ফেস্টিভ্যালের মতো পুরোধা ব্রিটিশ চ্যারিটিজ-এর প্রবল প্রভাবের মধ্যে দেখতে পাই। তেমনিভাবে শেক্সপিয়র পাঠ এবং অভিনয় সাক্ষরতা ও আত্মবিশ্বাসের অর্জনে সাহায্য করতে পারে।
তাই, এই ৫ জানুয়ারি, ‘Twelfth Night’-এ এবং ২০১৬’র বর্ষজুড়ে প্রতিদিন ব্রিটেন আপনাকে উইলিয়াম শেক্সপিয়রের জীবন ও উত্তরাধিকারের উদযাপনে যোগদানের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। আমরা তাঁর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবকে তুলে ধরতে এবং সারাবিশ্বে সাক্ষরতা উন্নয়নের লক্ষ্যে শেক্সপিয়ার চর্চার বিকাশ ঘটাতে কর্মতত্পরতা এবং ঘটনাবলীর এক উত্তেজনাপূর্ণ বৈশ্বিক কর্মসূচি ‘Shakespeare Lives’ শুরু করতে যাচিছ।
ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং গ্রেট ব্রিটেন ক্যাম্পেইন-এর নেতৃত্বে ৭০টিরও বেশি দেশে এই কার্যক্রম চলবে। আপনি ইংরেজি ভাষাকে আয়ত্তে আনতে সামাজিক গণমাধ্যমে সেক্সপিয়রের প্রিয় সময়টা শেয়ার করতে পারেন, মঞ্চে, চলচ্চিত্রে অথবা অনলাইন-এ আগে দেখা হয়নি এমন পরিবেশনা উপভোগ করতে পারেন প্রদর্শনী দেখতে যেতে পারেন, কর্মশালা ও বিতর্কে অংশ নিতে পারেন এবং ইংরেজি ভাষাকে অধিগত করতে নতুন শেক্সপিয়রীয় শিক্ষা বিষয়ক সহায়তা উপকরণের সুযোগ নিতে পারেন।
ভাষার অসামান্য উপহারের বাইরে আমাদের ইতিহাসকে জীবন্ত করে তুলতে, আমাদের সংস্কৃতিতে তাঁর চলমান প্রভাব এবং শিক্ষার বিস্তারে তাঁর ক্ষমতা এসবই যথার্থভাবে উদ্বুদ্ধ করার শেক্সপিয়রের অপরিমেয় শক্তির প্রকাশ। সবচেয়ে বিখ্যাত প্রেমকাহিনী থেকে সবসেরা ট্র্যাজেডি, সবচেয়ে শক্তিশালী ফ্যানট্যাসি থেকে প্রবল হাস্যরসাত্মক কমেডি এবং সবচেয়ে স্মরণীয় উক্তি থেকে তাঁর অনেক কিংবদন্তীসম চরিত পর্যন্ত আমরা শেক্সপিয়রের মধ্যে এমন এক মানুষকে পাই যার বিপুল কল্পনাপ্রতিভা, সীমাহীন সৃজনশীলতা এবং মানবতার বোধ মানবিক অভিজ্ঞতার সামগ্রিকতাকে ধারণ করে আছে যা কেউ আগে বা তারপর থেকে পারেননি। তাই, যেভাবেই আপনি আপনার ভূমিকা রাখতে চান, অনুগ্রহ করে এই মানুষটার জীবন ও দীর্ঘস্থায়ী উত্তরাধিকার উদযাপনের সুযোগ নিতে ২০১৬’তে আমাদের সঙ্গে যোগ দিন এটা নিশ্চিত করতে যে, যেমনটি তিনি বলেছেন ‘সারা পৃথিবীটাই একটি মঞ্চ।’ আর এই উত্তরাধিকারের মধ্যেই শেক্সপিয়র আমাদের স্মৃতিতে স্থায়ী হয়ে থাকবেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত