অথ প্রেম কথা

Reading Time: 2 minutes

রবি কয়েকদিন খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আজ গরম থেকে জ্বর ও এসেছে। ইব্রাহিমপুরের কুঠি বাড়ীতে বাবা মশাই এবার বলেছিলেন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে খাজনার তদবির করতে। কিছু স্থানীয় স্বদেশী নেতা নৈরাজ্যবাদী এরা প্রজাপালক জমিদারদের ও বিশ্বাস করে না প্ররোচনামূলক ইন্ধন দিলে প্রজারা কর দেওয়া বন্ধ করে দেয় মাঝে মাঝেই। এদের ভরসা ঠাকুররা চেষ্টা করেও পাননি! জ্যোতিদাদা নিজে স্বদেশী  ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত তার জাহাজ ব্যবসা চলছে জানকীনাথের সাথে, জমিদারী তিনি কোনকালেই দেখেন না তাই রবিকেই যেতে বলেছিলেন বাবা মশাই  খাজনা পত্তর আদায়ের জন্যে। আদায়পত্র তেমন হয়নি। রবি বড় বিব্রত আছেন। বড় আশা করে জ্যোতি দাদা সে আর গুনি দারা সবাই মিলে একটি সারস্বত সমাজ খুলেছিলেন ফরাসী ফ্রেঞ্চ আকাডেমীর আদলে। সেখানে যোগদান করতে অস্বীকার করলেন প্রখর হিন্দুত্বের প্রবক্তা বঙ্কিম চন্দ্র, ঈশ্বরচন্দ্রের লেখাকে কোনদিন ও মর্যাদা দেন নি তিনি তাই তার নাম দেখেই সরলেন বিদ্যাসাগর ও। বাকি যারা আছেন,  সঞ্জীব চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য, হেমচন্দ্র বিদ্যারত্ন, তারা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে কে আগে কে পরে স্থানাধিকরণে ব্যস্ত। এইসব দেখে রবি মর্মাহত।  ইব্রাহিমপুর থেকে ভোরে ফিরে সোজা গেলেন দর্জিতলায় নতুনদার বাড়ী। নিস্তব্ধ বাড়িতে রবি উপরে উঠে এলেন সোজা।

দর্জিতলার বাড়ির দোতলাদো শুয়ে ছিলেন রবি।  মেজবৌঠানের কাছে যাবার কথা বলেছিল বলে রবির সাথে একপ্রকার কথা বন্ধ করে দিয়েছেন নতুন বৌঠান। বড় অভিমানী তিনি,  সময় পরিস্থিতি বুঝতেই চান না। রবিও মান ভাঙাননি, ইব্রাহিম পুর না বলেই চলে গেছিলেন। তার বড় কষ্ট লেগেছে। কেমন আপনার জন সে, মনের কথা বোঝেন না কেবল একলাটি থাকতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করেন।

নরম গোধূলির বসন্ত। দক্ষিন হাওয়ায় পর্দা উড়ে উড়ে রবিকে স্পর্শ করছে, বারান্দা জুড়ে রকমারি ফুলের সাজ। রাস্তার সামনে একটি বড় আকাশ মনি গাছ,   ছাদ ফুঁড়ে উঠে গেছে। রবি জ্বরের মধ্যে বলছেন তোমার নাম দিলাম অগ্নিশিখা! তুমি আমার অগ্নিশিখা!!
“অগ্নিশিখা এসো এসো আনো আনো আলো”- যাহ! ভুলে যাচ্ছেন! অতলে তলিয়ে যাচ্ছেন ক্রমশ!

রান্নাঘর থেকে একছুটে উপরে উঠলেন কাদম্বরী!  কালোর মাকে প্রচন্ড বকেছেন আজ। যা তাঁর স্বভাব বিরুদ্ধ। রবি এসেছে, রবির জ্বর, রবি কষ্ট পাচ্ছে, রবি একা অথচ তিনি কিছুই জানেন না! নিজেকে নিজের প্রচন্ড অপরাধী লাগল তাঁর। হায় ভগবান রবির দাদাও নেই, বাড়াবাড়ি হলে কি করবেন তিনি!
ঘরের মধ্যে ঢুকেই কাদম্বরী রবির কপালে হাত রাখলেন। আশ্চর্য! রবি অনেক কষ্টে ওচোখ মেললেন।  কাদম্বরীর কথা বলতে পারতেন না বেশি কিন্তু চোখদুটি ছিল বড় বাঙ্ময়! সে চোখে ব্যথা মলিনতা অপরাধ মাখামাখি ছিল।
— আমার কিছু হয়নি। জোর করে হাসল রবি
ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন কাদম্বরী!  আমার জন্যে, তোমার বেরামের জন্যে আমি ই দায়ী!
—- হাত ধরলেন রবি তার বৌঠানের।  এই পলাশকলি শ্যামালতা তরুটির পল্লবগুলির একটুও অনাদর সহ্য করতে পারেন না রবি। পুরুষ সতত ই মহিরুহ, তার আশ্রয়তলে তরুদল কেমন জেগে যায় বারবার। গোধূলিয়া ছায়ায় দেখলেন অমল অপাপবিদ্ধা এক মুখ!!  মুখে বললেন
— এমন করলে আমি আবার কুঠিবাড়ি চলে যাব।
—- ক্ষমা করে দিও আমায়। আর অমন হবে না! আমি আর অবুঝ হবো না দেখো!!
— আর হলে!
—শাস্তি দিও
— কোমল স্বরে উত্তর এলো, আমি যে তোমার কাছেই সবচেয়ে ভালো থাকি বৌঠান— তুমি সরে গিয়ে আমায় শাস্তি দিও না কখোনো…

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>