| 29 মার্চ 2024
Categories
দুই বাংলার গল্প সংখ্যা

গোপন                         

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.comপ্রায় সাঁঝবেলা থেকে ছায়া আর হিরণ্য ইটের ব্লকের উপর থাবড়ে বসে। ফুসুরফুসুর গুজুরগুজুর হা-হা হি-হি। কত যে রঙলাগা গপ্পো! ফুরায় আর না।

ওদের বসত এখানে নয়। ভিন্ন জেলা, অন্য থানা, আলাদা গাঁ। তবে পশ্চিমবঙ্গে। আজ আগুন তাতানো দুপুরে রাঙাবেলিয়ার মাইতি পাড়া থুয়ে পরিকল্পনা গুছিয়ে দু/ তিনটে নদীনালা ডিঙিয়ে রায়মঙ্গলের খেয়া চড়ে দক্ষিন চব্বিশ পরগনা কাড়িয়ে হেমনরের নটবর ঘাট। উত্তর চব্বিশ পরগনায় পা। কোন সক্কালে যে বেরিয়েছিল! তারপর এখানে গিরেণদের বাড়িতে যখন এসেছে বেলা গড়িয়ে পশ্চিম ঢালে।

এখন প্রখর দিনমানের নিভুনিতে তাত জুড়োতে জুড়োতে একটু স্বস্তির আমেজ। ধরিত্রীর প্রানীকুলে শান্তি-ঝিমুনি। গা-ঘোর আন্ধার পুরিয়ে রাত গাড়ো মেরে দুপুরমুখো। গোল চাঁদের পুন্নিমে ক’দিন পেরিয়ে ষষ্ঠি। ক’ঘড়ি মেরে খানিক রাতে চাঁদমামা অবশ্যই উঁকি মারবে। রও বাবা! ডাঙার ভুঁই চেটে ধ্বসিয়ে ভাসিয়ে কালিন্দি গাঙ এই মোহনামুখে বেশ ওসারো। পুব গায়ে বাংলাদেশের খুলনার ডাক। পশ্চিমের শেষ গাঁ ভারত, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর চব্বিশ পরগনার সমশেরনগর। গাঙবাঁধের গায়ে এই টেঁকটায় ইটের ব্লক বাঁধিয়ে প্রবৃদ্ধ কোনে শোওয়ানো ঢাল। চটনা ওঠা ধরেছে। বিকেলের ওম মুছে শীতলের দিকে। নোনা সমুদ্রের দখনে হাওয়ায় ফুরফুরে ফু। বেগ ক্রমে শ্লথ।

দু’জনে ঘন হয়ে জমকালো আন্ধার স্তুপ। গাঙমুখো চাউনি। ছায়া ধীরে কথা সরায় – কাল তাহলে কী করবে?

-তাই ভাবছি। কী করবে বলো তো!

– আমি কী জানি! বারে, তুমিই তো এনেছো আমায়।

হিরণ্য চুপ খানিক। মাথা চুলকিয়ে কথা ফ্যালে – ব্যাপারটা গিরেন কিছুটা আন্দাজ করেছে।

-কী?

– এই যেমন, আমরা দু’জনে পালিয়ে এসেছি। তুমি আমার মাসতুতো বোন নও, নকল বোন। আমরা আদিম ভাই বোন, তুমি আমার হবু বউ। হি-হি-হি।

– তুমি আবার এখনই ফাস কোরো না যেন। হুঁ-হুঁ-হুঃ!

– কাল অন্য কোথাও চলে গেলে হয়। গাঙ পেরিয়ে বাংলাদেশ যাবে নাকি!

ছায়া নড়ে না, চড়ে না, মাথা ঠোকে না বা নাড়ায় না। একেবারে কোলেকাছে বসে হিরণ্য এটুকু আন্দাজ পায়।

-গিরেণকে বললে ব্যবস্থা করে দেবে। ও এসব কলকাঠি জানে।

– তোমার ফোনটা থেকে বাবাকে একটা কল করবে?

– কেন, মনে উঠছে?

ছায়া মাথা ঠোকে।

-ওসব প্রথম প্রথম একটু হয়। সব সয়ে যাবে।

– কিছু কথা বলতাম।

– কেন, আমার উপরে বিশ্বাস নেই? ভরসা হচ্ছে না, নাকি!

ছায়া কিছুটা দমে আসে মনে হয়। পিঠ বেঁকিয়ে মাথা খানিক ঝুলিয়ে কোলে দম ফ্যালে।

হিরণ্য ছায়ার থুতনি ধরে মুখ ওঠায়। চোখাচোখি আবেশে কোলে টানে। হামি বসায় মুখে। বিনিময়ে দুই প্রাণীতে খুশি নামে।

“আমার কানের পাশা হারিয়ে গেল

ওই ঘোলা জলে

এত সাধের পাশা আমার নাগোর দিল

গত পুজোর কলে

হায় হায়, সে তো হারিয়ে গেল

ওই…”

গানের কলিধারীর চলন ছায়াদের কাছমুখো। দু’জনে সংযত। তাকিয়ে আছে চলতি পথে। ওদের পিছনে ইট পাতানো পথ। লোকটার গানের দমোক থমকায়! এ-ই যে, কা-রা তো-ম-রা?

চোখের সামনের লোকটা নেশায় বুঁদ। তবে পা নাট খাচ্ছে না তেমন। হাতে আলো নেই। অথচ মনে হয় ভালোই দেখতে পাচ্ছে, আসপাশ চৌপাশ। গামছার মুড়োয় পিঠে ঝোলানো পোঁটলা। চাল ডাল খাবারদাবার হয়তো।

দে-খি তো, কা-রা বা-প তো-ম-রা? লুঙ্গির গাঁটি উলটে ফোন। স্কিনটাচ। অপসানে গিয়ে ফোকাসে ফসকা আলো জ্বালে। জড়ানোমড়ানো কথা। ভেঙে ভেঙে উচ্চারিত শব্দ – নাঃ, তো-মা-দে-র তো আ-গে দে-খি-নি। বা-প-ধ-নে-রা, বা-ড়ি কো-থা-য়?

ছায়া সিঁটিয়ে এইটুক্কান। হিরণ্য বলে, আমরা এখানে বেড়াতে এসেছি।

অ্যাঁ, বে-ড়া-তে! ও-র-ক-ম বে-ড়া-তে স-বা-ই আ-সে, বা-ও-য়া। দাঁড়াও। লোকটা কানে ফোন ধরে, হ্যা-লো! সিং-জি…ম্যা-য় মা-তা-ল না-সে-র হুঁ…এ-ক লে-ড়-কা ও-উ-র লে-ড়-কি ই-স আ-ন্ধা-র-মে ব্ল-কে…

হিরু, তাড়াতাড়ি চলে আয়- গিরেণের গলা। আঁধারে গা ডুবিয়ে গিরেণ যে কখন হাজির! বাঁচা গেল।

-যো ম-হি-বু-ল হ্যা-য় না…উ-স-কো ঘ-র পা-ছ। ব্ল-কে…আইয়ে, আপ লোগ জলদি আইয়ে…ছা-র, ই-না-ম মি-লে-গি তো…নেহি ছার, এক বোতল নেহি, এ-ক দো পে-গ হো-গা, তো ও-হি ঠিক হ্যায়।

ততক্ষণে গিরেনের আলোতে ছায়া হিরণ্য আঁধার ফেড়ে হাপিস।

গিরেনের মুখ থেকে যা শুনল হিরণ্যরা! বর্ডার এলাকা তো! দু’একটা কেস বি এস এফকে দিতে পারলে কিছু পায়-টায়। সেই কারণে নতুন কাউকে দেখলেই সন্দেহ।

রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর ছায়া একলা ঘরে তক্তাপোষে, বাকি দু’জন বাইরে দাওয়ায়। গিরেনের বউ বাড়ি থাকলে ছায়াকে সঙ্গ দিত। বউটা ঝামেলা পাকিয়ে বাপের আলয়ে উঠে বেশ ক’মাস ঠান্ডা। গিরেনও বিন্দাস।

কত গপ্পোগাছা হল দুই বন্ধুতে। বহুত দিন পর। বেনামে বাংলাদেশ পারাপার, গোরু ছাগোল বাগদার মীন কাপড়চোপড় চিনি মশলা আরও কত কী পাচার, এখানকার মানুষজন, বি এস এফ, গিরেনের বউ মালবিকা। কিছু হিরণ্য এর আগে শুনেছে। যখন আসত। হঠাৎ গিরেণ তোলে কথাটা! কওসার মোল্ল্যার সেই হো-হো করা মেয়েটা-

হিরণ্য গিরেণের মুখ টিপে ধরে। আস্তে ফিসফিসোয়! বোন শুনলে বাড়ি গিয়ে বলে দেবে।

গিরেণ আর উচ্চবাচ্যে যায় না। মুচকি হেসে টান টান শোয়। টেবিল ফ্যানটা ফরফর চক্র মেরে গিরেনের ঘুম আনে।

হিরণ্য উসফাসায়। এই ফাঁকে ছায়ার নিকট ঘরে যাওয়ার ইচ্ছা খুব চাগাড় মারে। মশারি উলটে সাড়াহীন চলনে যায়ও।

সিলিং ফ্যানটা হাওয়া কেটে নিচে ছোঁড়ে। বোর্ডের গায়ে ইন্ডিকেটরের পুঁচকে লাল আলোটা ঘরের আন্ধার মুছতে হিমসিম। ছায়া অসাড় ঘুমে নেতিয়ে। জ্বালাপোড়া গরমে দিনমানে যে ধকলটা গেল! ইন্ডিকেটরের লাল আলোকের ঝাপসা বিচ্ছুরণে হিরণ্য ছায়ার বদনখানি দেখল। বড্ডো মায়া জড়ানো। গায়ে আলতো হাত দিতেই সাড়া মিলল। মুখে নিষ্পাপ হাসিতে আপন আপন ভাব। তারপর কত আদোরযত্ন। সোহাগ ছাড়িয়ে ছায়া বলল, বারান্দায় বন্ধুর কাছে যাও।

ছায়া এতদিনে সত্যিকারের আপন হয়েছে। দূর থেকে হিরন্য সাহাদের অ্যাসবেস্টসের দো-চালা দেখিয়ে কতদিন বলেছে, ‘ওটাই আমাদের। তোমার হবে। আমি না বললে কোনও দিন ঢুকো না যেন। মা খুব বদরাগি। কী বলে বসবে তার ঠিক নেই’। বলেনি, ‘ওর পাঁচ/ সাতটা বাড়ি পরে ওই পাকা কোঠা দালানটা আমাদের’। এবার বলবে। বলবে আর কী, সঙ্গে করে একেবারে নিয়ে যাবে তেল আলতা সিঁদুর শাড়ি পরিয়ে।

রাস্তার পিলারের গায়ে হলদেটে বাল্ব। হাওয়া ফাঁসিয়ে বারান্দায় ছিটেফোঁটা আলো। শরীর মনে খুশির ঝিলিক পুরে হিরণ্য বন্ধুর কাছে ঘুমিয়ে পাঁক। এত কিছু ছায়ার কাছে এযাবৎ পায়নি কোনও দিন।

রাতের আন্ধার নিভে আকাশ চুঁইয়ে নামা কাকভোরে গিরেনের ডাকে হিরণ্যের না-পোরা ঘুম চোটকে চ।

-তোর সে বোন কই!

– কেন, ঘরে তো!

– ছিল, এখন নেই।

– তাহলে বাইরে গেছে।

– সব দেখে এসেই বলছি।

হিরণ্যের মাথায় বাজ ফেটে সারা শরীরে বিদ্যুৎ। ঝটপট বিছানা ফেলে ঘর উঠোন বাথরুম বাহির রাস্তাঘাট। দৃষ্টি যতদূর চালান যায়। হতাশ মনে দাওয়ায় থির। গিরেণও কম খোঁজ লাগায়নি। কোনও বুদ্ধি খেলছে না আর দু’জনের। আনকা জায়গা। গেল কোথায়!

কথাটা গিরেণের কাছে না পেড়ে আর উপায় নেই। ছায়ার সঙ্গের সত্যি সম্পর্কটা খুলে গিরেণের সামনে ফেলল। আসলে, মেয়েটা আমার বোন নয়, বান্ধবী। কাল পরশুর মধ্যে আমরা বিয়ে করতাম…!

একটা ছেলে এসে খবর দিল, গিরেণকে বি এস এফ ক্যাম্পে ডেকেছে। গিরেণের স্বগতোক্তি! এই শালা মাতাল নাসেরটা স্পাই হয়েই ওদের কানে লাগিয়েছে।

পুব ঢাল গড়িয়ে সূয্যিমামা উর্দ্ধমুখি। বাতাসে এখন থেকেই যেন গরমের ধার। গা চিটচিট। একেতে বন্ধুনি হাপিস, তার ওপর বি এস এফ! ফাঁকা বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দু’জনে রোদ-তাতে ঘাস পোড়া ফাটা মাঠ ডিঙিয়ে ক্যাম্পে। প্লাস্টারের উপরে রঙ পড়েনি। কোনও মতে ইটের দেওয়ালে একতলা ছাঁদ।

একি, ছায়া এখানে! বেঞ্চে বসে। ভয় ধরা চোখে নাভিশ্বাস। এখান থেকে বেরোনোর ছটফটানি চোখে মুখে ফুটে।

দরোজা ফুঁড়ে তিন/ চার জন জওয়ান। সকালের ঘরোয়া পোশাকে। কেউ কেউ উদোম গায়ে। আদর করে গিরেণ, হিরণ্যকে বসাল। ছায়াকে প্রথম দর্শনে মুখে রুদ্ধশ্বাস পেরোনো হাসি নিভে এখন আবার চিন্তার থাবায় মলিন হিরণ্য।

মেলা কথাবার্তা হল। ছায়া হিরণ্য গিরেণকে হজম করতে হল কিছু কাঁচা খিস্তিখেউর, বকাঝকা, ধমকধামক, অপমানকর কথাবার্তা।

ওরা ছায়াকে রাতে ধরেছে। জওয়ানদের কথা মেপে, সে গিরেণের ঘরের প্রায় মিনিট সাতেক দূর থেকে। আঁধারে একলা। ওদের সাড়ায় নাকি মেয়েটা আরও জোরে ছুটছিল।

ছায়ার চোখের জল ধারা নিয়ে দাড়ি টুপিয়ে কোলে ফোঁটা ফোঁটা। হিরণ্যের রোগাটে মুখে হতাশা। গিরেনের চোখেমুখে ঝাঁঝ।

জওয়ানগুলো গিরেণের চেনাজানা হলেও এমনি ওমনি হবে না। কিছু ঠেকাতে হবে। না নিয়ে ছাড়বে না।

তাই বাড়ি যেতে হল গিরেণকে। বেলা খানিকটা বেড়েছে। রোদ্দুর তাত জুড়েছে বেশ। হঠাৎ দমকা হাওয়ার ঘুলুনিতে তার টের।

ছায়ার চোখের জলের ধারা শুকিয়ে কালোপানা ছোঁপ। কটমট চাউনি। হিরণ্য হাসতে গিয়েও লাগাম টানে। ভ্রূ-দ্বয়ের খাঁজে সন্দেহ পুরে এদিক ওদিক। অস্বস্তি ছাড়ে। দীর্ঘশ্বাসে কোলের বাতাস ক্ষণিক বেগ ধরে।

হনফনিয়ে গিরেণ আসে। হেড মতোন জওয়ানটার হাতে ভাঁজ করা একশ টাকার নোট গোঁজে। ক’টা, বোঝা যায় না।

জওয়ানটি চটুল মেজাজে মাথা ঠোকে। ঠিক হ্যায়, আপ লোগ যাইয়ে।

মুখে জোর করে হাসি ফুটিয়ে গিরেণ বলে, নে, এবার চল্‌ তোরা।

সটান রোদে ফাঁকা মাঠ। নোনা জল বাতাসে মাঠেও নুন ধুলোর ছাইয়ে পরত। মাঝে মাঝে বাতাস জড়িয়ে উড়ু উড়ু। ছায়াকে ঘাটতে হিরণ্য সাহস পায় না।। গিরেণকে বলে, কেসটা কী, শুনে দ্যাখ তো!

কেস আবার কী! ছায়া মেজাজে ছটফট। পটিয়ে পাটিয়ে এখানে কেন আনলে আমায়, বুঝতে পারিনি নাকি! সারা পথ কোথায় নিয়ে আসছ, বলোনি। জানালে আমি আসতাম না।

গিরেণ দাঁড়ায়। অন্যরাও থামে। হিরণ্যকে জিজ্ঞাসে কী রে!

ছায়া মুখ ছাড়ে, শালা, ছোটো লোকের জাত! জন মজুর খাটা লোকের মন মানসিকতা আর কত ভালো হবে!

হিরণ্য অবুঝ চোখে থ। গিরেণের চোখেও বিস্ময়।

-আমি বি এস এফকে খুলে বলিনি, এই তোমার কপাল ভালো। ইঙ্গিতটা হিরণ্যের দিকে।

কী হল, এত চটে যাচ্ছ কেন? হিরণ্য মুখে হাসি খোলে।

-মাস্টারের মেয়ের সঙ্গে পিরীতের ভান করে লোভ আর সামলাতে পারোনি, না!

– এই তোমাকে ছুঁয়ে বলছি –

– একদম গায়ে হাত দেবে না। ঝাঁকি মেরে সরে দাঁড়ায় ছায়া।

– তোমার বাবার সম্পত্তির উপর এই এতটুকুও লোভ নেই আমার। আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি, ছায়া, আর অন্য কিচ্ছু চাই না।

– ভা-লো-বা-সো! নিচ মনের কুচক্রি ছোটো লোক কোথাকার!

– কী বলছ তুমি!

– ঠিকই বলছি। কিডন্যাপ করা, নয় বাংলাদেশে পাচার করতেই তো এনেছিলে, না! সারারাত দুই বন্ধু তো সেই প্লান এঁটেছ।

গিরেণের কথায়ও সাবধানী। তুমি ঠিক ভাবছ না, ছায়া।

-ভু-ল! ভুল ভাবছি। আ-মি!

– রাতে পাচার নিয়ে আলোচনা করেছি ঠিকই, তোমাকে পাচারের কথা কেউই বলিনি।

– এখন তো চেপে যাবেনই। সাধু সাজবেন। ধরা পড়ে গেছেন তো!

বিশ্বাস করো – হিরণ্য ভীত।

-চু-প। চুপ করো। চো-র, সব চোরের পাল-

আকাশ নয়, বাতাস নয়, রোদ্দুরও নয়, স্বয়ং যেন সূর্য আছড়ে পড়ে হিরণ্যের মাথায়। থপ করে উবু বসে ছেলেটা সেই টাল সামলায় মাথায় দু’হাত চেপে।

যদিও ছায়ার সঙ্গে ও মিশেছে কম। গাঁয়ের মুখচেনা লোকের মাঝে সুযোগ তেমন হরদম মেলেনি। মোবাইল ফোনে ফোনেই মনের যোগাযোগ ও বদল। সে এক সাংঘাতিক প্রাণের টান। আর যা দু’দশ বার দেখাসাক্ষাৎ, মেলামেশা! ছায়ার মনজগতে এমন রাস্তাঘাটের হদিশ কোনও দিন পায়নি হিরণ্য। নাকি ওই ঘাপলা চেপে রেখে মন ভুলিয়ে বিন্দাস ধুম তুলেছিল ছেমড়িটা! ছায়ার মানসিক স্বাস্থ্যের হাল-হকিকৎ নিয়ে ও স্বপ্নেও কু-ভাবেনি। আবার গাড়ো আবেগের বেঘোরে ফসকে যেতেও পারে। ও সময় কি সবারই এমন হয়! হামেশাই এ দিকটা বেখেয়াল থেকে যায়! মুটে মজুর চাষি শ্রমিকের ডাল হলে তবু খানিকটা মনকে বোঝানো যায়, নামি মাস্টারের শিক্ষিত মেয়ে হয়েও মনে এমন জটিল অসুস্থ্য প্যাঁচ, ভাবা যায়! এরপর চেনা জানা লোকজনের মাঝে এই অসহ্য জিনিসের সঙ্গে ঘুরতে হবে! যদি তারা গাঁটির লোকের চলনে বলনে এমনি কলকব্জার উদ্দিশ পায় লজ্জার আর আগামাথা থাকবে না।

বাতাসে মেঠো নোনা ধুলোর ঘূর্ণি ওঠে হিরণ্যের কোলেকাছে। দু’পাশে দু’পায়ের তলায় মাটির জোড়নে ফাটা হা। ছেলেটার চোখ আটকায় ফাড়া ফুঁড়ে কালো আঁধারের গভীরে। আরও যদি বেশ ওসারো হত ফাড়াটা, অন্তত একজন সাঁধানোর মতো!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত