Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,Pahela Boishakh and the Bengalis emotions

প্রবন্ধ: পহেলা বৈশাখ ও বাঙালির আবেগ । সুকন্যা দত্ত

Reading Time: 6 minutes
প্রতিদিনের মতো আজ ও সকালের কাঁচা রোদটা একটু একটু করে নিজের পাখা মেলছে। চৌকো জানলা দিয়ে আমার বিছানায় হুমড়ি খেয়ে পড়তেই দূর থেকে রেডিওতে থেকে কানে ভেসে আসলো, 
“বৎসরের আবজর্না, দূর হয়ে যাক, এসো এসো। এসো হে বৈশাখ…”।
ফুটন্ত জলের বুদবুদের মতো বুকের ব্যথাটাও ফুটতে লাগলো টগবগ করে।  সুদূর অতীতের আবছায়া হলো স্পষ্ট হতে লাগলো। নববর্ষের স্মৃতি লিখতে বসলে একটা উপন্যাস শুরু হয়ে যাবে। বেতার থেকে  ভেসে আসা এই গানটা আমায় ফেলে আসা সময়ের  দরজার কাছে নিয়ে যায়।  গানটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ফেলে আসা  বৈশাখের প্রথমদিনের নতুন সকাল। আমাদের পুরাতন বাড়ির পাশেই একটা ঘাট বাঁধানো পুকুর ছিলো আর তার পাশেই ছিলো একটা ডালের হাত পা ছড়ানো  কৃষ্ণচূঁড়া গাছ। সদ্য বিদায়ী বসন্তে ঝরে যাওয়া লাল ফুল আর ফুলের টকটকে  লাল বীজগুলো গাছের নীচে সিঁদুরের  গালিচা বিছিয়ে দিতো। সেই  বৃক্ষতলের বেদীতে অনুষ্ঠিত হতো  বর্ষবরণ উৎসব।
“হে নূতন দেখা দিক আরবার, 
জন্মের প্রথম শুভক্ষণ” 
গানের সমবেত সুরে সুরে নতুন বছরের নতুন সকাল মুখরিত হতো। আজো সেই গাছের তলায়  দাঁড়ালে সেই সময়ের গল্পটা চোখের সামনে এসে দাঁড়ায়। সেই গল্পে  কত মানুষের না বেঁচে থাকার ব্যথাটাও আছে, যারা পয়লা বৈশাখের সেই প্রাতঃকালে গানের তালে মাথা দোলাতেন। এখন তারা কোথাও হয়তো ঘুমিয়ে আছেন নববর্ষের স্মৃতিটুকু বুকে নিয়ে। সেই সকালের  ভোরাই সুরের সাথে লাল পাড় সাদা শাড়ী, কপালে লাল টিপের চারপাশে খড়িমাটির আঁকিবুঁকি ,  পায়ে আলতার ছোঁয়া  পয়লা বৈশাখের আমার স্মৃতির খাম। তারপর!  পেরিয়ে গেছে কতগুলো বছর। বিগত বছরের ঘরবন্দী অভিজ্ঞতা আমাদের নববর্ষের প্রথম প্রভাতের কত কিছুই ছিনিয়ে নিয়েছে। হালখাতা,ভোরবেলা  মন্দিরে  পুজোর লাইন, সেলের বাজার। তবু ও নববর্ষ হলো বাঙালির কাছে অক্সিজেন। 
বৈশাখ এলেই  অন্য একটা জানলা খুলে যায়। গল্পেরা তাদের শাখা প্রশাখা বিস্তার করে।  সব পুরাতন কে দূরে ফেলে পয়লা বৈশাখের  দিনে ভালো থাকা, ভালো খাওয়া, ভালো পোশাক পরার মধ্যে দিয়ে সারা বছর ভালো থাকার   অলিখিত বিশ্বাসকে বাঙালি  বুকে লালন করে।  মা তার সন্তান কে শেখান, এই দিন মিথ্যা না বলতে তাহলে সারাবছর শিশুটি সত্যের পথে চলবে। পয়লা  বৈশাখ মানেই নববর্ষ, পঁচিশের রবীন্দ্র জয়ন্তী,  কালবৈশাখীতে আম কুড়োবার হিড়িক, প্রচন্ড  দাবদাহের নাভিশ্বাসের পর বর্ষার বারিধারাকে আহ্বান জানানো, নতুন বই প্রকাশের দিন, বৈশাখী মেলা, ভূরিভোজন,  প্রেমের দিন, ধুতি- পাঞ্জাবি, শাড়ীর কুচিতে  বাঙালির বাঙালিয়ানাকে আর ও একটু উসকে দেওয়া, কবি সাহিত্যিকদের সৃষ্টির অনুপ্রেরণা। 
বাঙালি জীবনকে আষ্ঠে পৃষ্ঠে  জড়িয়ে আছে নববর্ষ, যে নববর্ষে সাম্প্রদায়িকতা  আঁচড় কাটতে পারেনা। এপার বাংলা ওপার বাংলা নববর্ষের জোয়ারে ভেসে ওঠে। পুজো আসার আগে যেমন  পুজোর গন্ধ এসে যায়, শরৎ অরুন আলোর অঞ্জলি দেয়, কাশফুল হাওয়ায়  দোলে, গাছে গাছে শিউলি ফোটে, সাদা মেঘ আকাশে ভেলা ভাসায় তেমন নতুন বাংলা বছর আসে পুরাতন স্মৃতি ভুলিয়ে, অশ্রু বাষ্প কে সুদূরে মিলিয়ে মহারাজার মতো হৃদয়পুরে।  প্রতিটি আগমনের পিছনে যেমন কোনো  গল্প থাকে,ইতিহাস থাকে নববর্ষের আগমন ও তেমন গল্পময়। মুনশী সলিমুল্লাহ তার  ‘তারিখ – ই- বাঙ্গলাহ’ (১৭৬৩) গ্রন্থে বলেন, নবার মুর্শিদকুলি খাঁর সময়ে আঠারো শতকে পয়লা বৈশাখে পুন্যাহ অনুষ্ঠান হতো। পুন্য বা পবিত্র এবং অনহ বা দিন অর্থাৎ পুন্যাহ হলো পবিত্র দিন। এইদিন জমিদাররা রাজ দরবারে বার্ষিক রাজস্ব জমা দিতেন এবং নবাব তাদের আপ্যায়ন করতেন ও পদমর্যাদা অনুযায়ী ‘ খিলাত’ উপাধি দিতেন। আবার  ঐতিহাসিক  ইউসুফ  আলী খানের ” আহওয়াল-ই-মহব্বতজঙ্গ”(১৭৬৪) গ্রন্থ থেকে জানা যায়, নবাব আলীবর্দি খান আড়ম্বরের সাথে পুন্যাহ অনুষ্ঠান পালন করতেন। এইদিন  নবাব সুসজ্জিত হয়ে দরবারে বসতেন এবং সেদিন প্রায় ছয়- সাত লাখ টাকা রাজস্ব জমা পড়তো।
জমিদাররা নবাবের দরবারে ঘোড়া ও অন্যান্য মূল্যবান উপঢৌকন নিয়ে আসতেন। আবার জমিদাররা ও তাদের প্রজা-তালুকদারদের নিয়ে যে  প্রীতি অনুষ্ঠান করতেন, তাই হলো পুন্যাহ। তবে পরবর্তীকালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার সাথে সাথে এই অনুষ্ঠান ও বাংলার মাটি থেকে হারিয়ে যেতে থাকে। তবে  বৈশাখের রুক্ষ্ম তামাটে মলাটের মধ্যে ও পয়লা বৈশাখের উল্লাস লুকিয়ে আছে। বাংলা নববর্ষের ইতিহাস অনুসন্ধান খুব কঠিন।
সম্রাট আকবর একবার  তার রাজসভার জ্যোতিষ ফাতুল্লা সিরাজীকে ইসলামী চান্দ্র ক্যালেন্ডার ও হিন্দু সৌর ক্যালেন্ডার মিলিয়ে একটি দিনপঞ্জী তৈরি করার আদেশ দিলেন। আসলে চান্দ্র বা হিজরী পঞ্জিকা চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় কৃষকদের খাজনা দিতে অসুবিধা হতো।  ফাতুল্লা সিরাজী  সৃষ্ট সেই সনের নাম হলো ফসলী সন যা পরে হলো বাংলা বর্ষ বা  “বঙ্গাব্দ”।  সন অর্থাৎ ফসল ফলার সময়কে গননা করেই এমন দিনপঞ্জী। সম্ভবত সেই থেকেই বাঙলা ক্যালেন্ডারের সূচনা। চৈত্র  মাসের শেষ দিন খাজনা জমা দিয়ে কৃষকরা পরের দিন পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতো। এর পূর্বে যদি ও অগ্রহায়ণ মাস ছিলো  নতুন বছরের প্রথম। আমার এক্কাদোক্কা খেলার কালে   পয়লা বৈশাখ  মানেই ছিলো  নতুন জামার গন্ধ, দোকানে দোকানে হালখাতা, মিষ্টির বাক্স,  সেলের বাজারের ভীড়, আর নানান ছবির ক্যালেন্ডার হাতে বাড়ী ফেরা। আর ফিরেই বাড়ীর সকলের  সাথে নিজের পছন্দ করা মিষ্টি ভাগ করে খাওয়া। কে কটা দোকানে হালখাতা করলো তার হিসাব করা হতো আঙুল গুনে গুনে। হালখাতার গল্পটাও ভারী মজার। আমার দিদা মিষ্টি সুরেলা গলায় বলে যেতেন হালখাতার ইতিহাস।  এই দিন জমিদারের খাজনা পরিশোধের মধ্য দিয়ে হালখাতা সূচনা ।  এই উপলক্ষে জমিদার প্রজাদের জন্য মিষ্টি ও জলখাবারের ব্যবস্থা করতেন।  জমিদারি প্রথার বিলোপ হলে ও ব্যবসায়ীদের  হালখাতার ব্যবহার  থেকেই যায়। চৈত্রের শেষ দিন দোকান পাট ঝেড়ে মুছে, প্রয়োজনে দেওয়ালে ও আসবাবপত্রে নতুন রঙের প্রলেপ লাগিয়ে পরদিন পুজার মাধ্যমে পয়লা বৈশাখ পালিত হয়। বছরের দুটো সময় রাস্তা জুড়ে মানুষের মিছিল। দুর্গা পুজো আর পয়লা বৈশাখ। একেক দোকানে খাবারের একেক মেনু। আম পোড়া সরবত, গোলাপ সরবত, জল জিরা, কোকাকোলা, গরম থেকে খরিদ্দারদের বাঁচাতে আর মন জয় করতে নানান চেষ্টা আর কি। রঙ বাহারি সরবতের রঙে কেমন রামধনু দেখতে পাওয়া যায়। আমার শিশুকাল থেকে যৌবন পর্যন্ত  বিরাট প্রাপ্তি মায়ের হাতের সেলাই করা নতুন জামা। দিনের সব কাজের পর অপার ভালোবাসায় নিজের মেয়ের জন্য জামা তৈরি করার তোড়জোড় শুরু হতো আমার মায়ের। দুপুরে ঘুমের ফাঁকে মায়ের সেলাই মেশিন চালানোর  ঘটঘট শব্দ পয়লা বৈশাখ আসার কথা জানান দিতো।
এপার বাংলায় আদিবাসীরা পয়লা বৈশাখে স্নানের পর জৈড় গাছের( অশ্বত্থ গাছ) গোড়ায় জল ঢালেন। তারপর পুরুষরা সেই গাছকে আলিঙ্গন করে এবং মেয়েরা সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে। বৈশাখের প্রায় সবদিনই তারা এই নিয়ম পালন করা হয়। এই নিয়মের পিছনে আছে, বৃক্ষ তথা অরন্যের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান মমত্ববোধ। গাছের জন্য আমরা বেঁচে আছি, প্রকৃতিতে বৃষ্টি আনে তরুদল তাই বৃক্ষের অবদানকে আদিবাসীরা ভুলতে পারেনা। দিনাজপুরের আদিবাসীদের মুখে একটা গান শোনা যায়,
“পানতা, ইলিশ,  নাগরদোলা 
বটের ছায়ায় বৈশাখী মেলা
রাতভর  কবিগান
বাউলেরা গেয়ে যায় মানুষেরই জয়গান”।
দিনাজপুরের বহবলদীঘির ভুনজার গোত্রের মানুষেরা বৈশাখের প্রথমদিন তীর ধনুক আর কোদাল নিয়ে  শিকারে বের হয়।চৈত্রের শেষ দিন ও বৈশাখের প্রথমদিন এরা বাসন্তী  পুজা করে।  একেই ভুনজাররা বলে চৈতবিসিমা উৎসব।
বৈশাখে গম্ভীরা লোকগীতি ও লোকনৃত্যকে কেন্দ্র করে গাওয়া হয়, 
” বলো না ভোলা, করি কি উপাই
আমার বাজে কাজে সময় নাই।
দিনের বেলা নানান হালে
কোর্ট কাচারি মুন্সীপালে
কেটে যায় রে দিন আমার”।
আমার খেলনাবাটি খেলার বয়সে দেখেছি আমাদের বাড়ির কাছেই  বৈশাখী মেলা বসতো। হাতা খুন্তির পসরা সাজিয়ে কামার হাঁক দিতো। অন্যদিকে কুমোরের মাটির হাঁড়ি-কলসীর মেটে রঙে দোকান উপচে পড়তো। রঙ্ বেরঙের বেলোয়ারি  কাঁচের চুড়ির টুংটাং শব্দ শুনেই ছুটে যেতাম দোকানে। আচার-পাঁপড়ের গন্ধে মেলা ম্ ম্ করে উঠতো। মায়ের হাত ধরে মেলায় ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হলেই ফুচকা খাওয়া বায়না শুরু করতাম। এখন ও সে মেলা বসে তবে সেই প্রাণটা যেন অনুভব  করতে পারি না। 
ঠাকুমার কাছে শুনেছি ওপার বাংলার  বরিশালে বৈশাখ মাসে নৌকা বাইচ আর গরু দৌড়ের প্রতিযোগিতার কথা। মেলায় খৈ, মুড়ি, বাতাসা,  কদমা সাজিয়ে বসতো একজন। মেলাকে কেন্দ্র করে কুমার, কামার, মৃৎশিল্পী, তাঁতি, কৃষক, ছুতারের মিলন নববর্ষের মাত্রা বাড়িয়ে দিতো। রাতে চাঁদোয়ার তলায় কবি গান, যাত্রার আসর বসতো।   সেদেশের মেলার কথা  বলতে গিয়ে ঠাকুমার বলিরেখা আঁকা পান পাতার মতো মুখটা করুণ হয়ে উঠতো। দেশ ছেড়ে এ পার বাংলায় এলে ও   শিকড়ের  যন্ত্রনা হয়তো  আজীবন ভুলতে পারেননি।
পয়লা বৈশাখ এলেই শুরু হতো   রবীন্দ্র জয়ন্তীর মহড়া।  
দূরদর্শন এর নববর্ষের বৈঠক, গান বাজনায় ভরপুর আড্ডার অনুকরণ করে আমাদের ভাই বোনেরাও রবীন্দ্রনাথ জয়ন্তীর প্রস্তুতি শুরু করতাম। রবীন্দ্রনাথ তার ” নববর্ষ” প্রবন্ধে লিখেছিলেন,
” প্রান্তরের মধ্যে পুন্যনিকেতনে নববর্ষের প্রথম নির্মল আলোকের দ্বারা আমরা অভিষিক্ত হই”। ১৩৪৪ সালের পয়লা বৈশাখ শান্তিনিকেতনের চীনাভবনের উদ্বোধন হয় ।  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে শেষ নববর্ষ ছিলো ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে। সেদিন “সভ্যতার সংকট” পাঠ করা হয় এবং “ওই মহামানব আসে ” গানটি গাওয়া হয়। ১৯৪১ সালের ১৪ ই এপ্রিল প্রসঙ্গে রানী চন্দ লিখেছিলেন,“আজ নববর্ষ। এবারে ১ লা বৈশাখেই গুরুদেবের জন্মোৎসব হবে- আগে থেকেই ঠিক করা হয়েছিলো।  ভোরবেলা কচি শাল পাতার ঠোঙায় কিছু বেল জুঁই কামিনী তুলে ‘ উদয়ন’ এর দক্ষিণ বারান্দায় গুরুদেবের হাতে দিয়ে তাঁকে প্রণাম করলুম”।
১৯২৩ সালের ১৪ ই এপ্রিল ছিলো ১৩৩০ বঙ্গাব্দের পয়লা বৈশাখ।  সে সময় কাজী নজরুল ইসলাম রাজদ্রোহের অপরাধে হুগলির জেলে বন্দী ছিলেন। পয়লা বৈশাখের দিন তিনি জেলের বন্দীদের প্রতি অত্যাচারের প্রতিবাদে  অনশন ঘোষনা করেন। নজরুলের সাথে সেই অনশনে সামিল হন একুশ জন বন্দী। সারাদেশ যখন নতুন বছরকে বরণে মাতোয়ারা সেই সময় কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি চলছিলো ইংরেজদের বর্বরোচিত আচরণ। 
নববর্ষ মানে পত্র পত্রিকা বই প্রকাশের সময়। ১ লা বৈশাখ ১৩২০ তারিখে উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী সম্পাদিত “সন্দেশ ” পত্রিকার আর্বিভাব, ১৩৩০ সালে ” কল্লোল” পত্রিকা, এমনকি সম্ভবত গুপ্ত কবি ও একবার পয়লা বৈশাখে ‘ সংবাদ প্রভাকর’ এর একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে মহাভোজের আয়োজন করে অনেককে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। পয়লা বৈশাখের দিন বই পাড়ায় প্রায় সকল বিখ্যাত সাহিত্যকদের আনাগোনা ছিলো।
পয়লা বৈশাখের দিন  সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে নতুন জামা পড়ে   বড়দের প্রণাম করার  রীতিতে বাঙালির ঐতিহ্য বহন ফুটে ওঠে। রান্নার ঘর থেকে পাঁচফোড়নের গন্ধটা নাকে আসলেই বুঝে যাই আজকের জলখাবার লুচি আর আলুর সাদা তরকারি।  দুপুরে দীর্ঘ অপেক্ষার পর  পাঁঠার মাংসের ঝালে আর চাটনির টক স্বাদে মন জুড়িয়ে যায়  তাই নববর্ষের প্রথম সকালটা সব সময়  ভূরিভোজের জন্য ছটফট করে।  
নববর্ষ এলেই মনে আসে কালবৈশাখীর ঝড়ে আম কুড়ানো, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, শুকনো মাটিতে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার পর সোঁদা গন্ধ,  শিল পড়ার অপেক্ষায় বসে থাকা, হঠাৎ আকাশে বিদ্যুতের ঝলকানির পর   কড়কড় শব্দে বাজ পড়া। মোহিতলাল মজুমদারের লেখা “কালবৈশাখী”  কবিতার লাইনগুলো এ প্রসঙগে  উল্লেখ করি…
“নববর্ষের পূর্ন বাসরে কালবৈশাখী আসে,
হোক্ সে ভীষণ ভীষণ ভয় ভুলে যাই অদ্ভুত উল্লাসে
ঝড় বিদ্যুৎ বজ্রের ধ্বনি 
দুয়ার জানালা উঠে ঝন ঝনি,
আকাশ ভাঙিয়া পড়ে বুঝি, তবু প্রাণ ভরে আশ্বাসে।”
কালবৈশাখী এলেই  বাড়ীর গৃহিনীরা ঝড় কে শান্ত করার জন্য  শঙ্খধ্বনি করতে থাকে।
এখন সোশ্যাল মিডিয়া আছে, ওয়াটস্ অ্যাপে শুভেচ্ছা বিনিময় আছে, তখন দূরের আত্মীয়দের  ল্যান্ড ফোনের সামনে বসে এক একটা নম্বর ডায়াল করে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তা ও বাড়ীর  গুরুজনদের  প্রণাম জানাবার রীতিতে  সংক্ষিপ্তকরণের ঘূণ লেগেছে। তবে সে যাই হোক, “আমি বাংলায় গান গাই, আমি বাংলার গান গাই” এর মতো সোচ্চার হয়ে বলতেই পারি,
আবছা তুমি ছিলে  কবে?
নতুন বছর,  নতুন ভোরাই, সুর হয়ে আজ বাজে।
পুরাতনে মলিন যেসব, ধূলায় মিশে  যাক,
বর্ষ শেষের পয়লা দিনে, নতুন জীবন পাক।
কান্না ভেজা চোখের কোলে অল্প আশার আঁচ,
হালখাতা আর নতুন শপথ ভাসিয়ে নেবে রাত।
মাঝে মধ্যে আশা  খুঁজি, হাত বাড়িয়ে জলে,
ভালো থাকার স্বপ্ন ফুটুক, ভালোবাসার কোলে।
দেশ ভাঙছে,ঘর পুড়ছে বছর বছর পার,
প্রতিবছর সংযোজনে রক্ত ইতিহাস।
তবু জেনো পয়লা এলে পাখির কলোতানে,
ভালোবাসা, ভালো থাকা, নববর্ষ মানে।
যেমনভাবে সূয্যি ওঠে, যেমন নামে ছায়া,
তেমনভাবে ঘনায় বুকে নববর্ষের মায়া।।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>