| 25 এপ্রিল 2024
Categories
কবিতা সাহিত্য

পান্ডুলিপির কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

সাজ্জাদ সাঈফ তার নতুন পান্ডুলিপি  ‘ইগোর পলেস্তারা’ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। ইরাবতীর পাঠকদের জন্য রইল নতুন পান্ডুলিপির পাঁচটি কবিতা।

 

অসুখ

…………

এই দেখো অসুখ এসেছে কাছে

জোড়া কবুতর ডাকে, পাশের খুপরি ঘরে, এই দেখো পেশিতে প্রশ্নমতো ঘাম-

 

বুকের ওপর যেনো বুকের চাইতে পুরু

চিম্বুক হাওয়ারা বসে, ঘাসকাটা চাকুতে কাটছে কেহ

বুকের দীর্ঘশ্বাস, যেনো, বেঁচে থেকে কতকাল হলো

নিজেকে নিত্য দেখা, পিতার অমল চোখে

ভারি হয় অনিদ্রা, এই দেখো, অসুখ বন্ধু যেনো, স্মৃতির ভিতর হতে

আল পেরিয়ে আসে বৃষ্টিসিক্ত হাওয়া, ঝরে পড়ে ইগোর পলেস্তারা;

কেউ নেই, কথা নেই; অসুখ হতচ্ছাড়া; পাশ থেকে যায়নি কখনো সেও!

 

 

আলোর শিকার

…………………….

 

এই দেখো বৃত্তকে ছেড়ে নেমে আসে গোধূলিপরিধি

আর, যে হাত দ্বিধা ফেলে ধরে রাখে মোহন সেতার

যে হাতে বাজছে এসে, এলায়িত জোছনাসুতা

দেখো, সে হাত‌ও উচ্চে তুলে, পৃথিবীটা শূন্য হতে রাজি!

 

এভাবে ভাবছো যেনো, তিমিরে হারানো বাঁশি, কোনোদিন বাজবে না তাই

কখনো মিলবে না হাওয়া, তরণীতে শুষ্ক পাতায়!

 

এ হাতে বালির লাটিম, ছড়িয়ে পড়ছে সুতায়

এ হাতে ঘূর্ণি ডাকে, তুমি আজ আলোর শিকার!

 

 

শেখ মুজিব

…………………

তুমিও স্বপ্নে ওড়া পাতা, কোকিলের পায়ে পায়ে লেগে

ধুলাতে ছড়ালে প্রেম, গোধূলি যত্ন পেয়ে এলিয়েছে তোমার বুকে – তুমি এক হেমন্তমার্জার, উঠান অবধি এসে

বুঝে গেছো মায়া, পরনে সূর্যালোক, দুচোখে সুবর্ণ দেশ!

 

আর, দেখো, ভাঁজখোলা মেঘ, সন্ধ্যাকে জড়িয়ে নিয়েছে হেসে

স্বপ্ন অবধি নদী, বাসনাবর্ণে আঁকা; স্বপ্ন শেষে আততায়ী এসে ডাকে

কেনো তুমি সাড়া দিতে গেলে?

 

 

চুড়িভাঙা রঙ

(কবি নাঈম ফিরোজকে)

………………………

 

এই থির ধরা নদীর ছবিতে সিঁদুরকৌটা যেন একা সূর্যবিকাল, তুমি হাসো, তুমি ডান গালে হাসো

আর বামে টোল নিবিড়তা ঢেউ, এই ঝিম ধরে আসা শান্ত ভাটার কাছে;

চুড়িভাঙা কাঁচের মতোন চারিদিকে মেঘ, যেন দুহাত মুষ্ঠি করে

পৃথিবীতে নামছে করুণা, মিঠাপানি ভাঁজ করে ওঠে বাঘাইড় মাছেরা-

দূর থেকে শঙ্খচিল নামে মাঠের কিনারে, এই দ্যুতিলোকে আজ

নিথর পাথর বুকে, কেউ কেউ আধভাসা মাথা পুরোটা ডুবিয়ে দিয়ে

নিজেকে লুকায়! কেউ হাঁটে নিস্তার পাওয়া হরীণীভঙিমা নিয়ে;

পৃথিবীতে চিরকাল ঢেউ, দুই পাড়ে ছন্দোবদ্ধ হাঁস!

 

 

মাটির নিকটে

…………………..

লিখি অনিশ্চয়ের ভাষা, থৈ পাওয়া গাছের শেকড়ে নদী, লিখে রাখি নীড়ের ভিতর হতে

পাখা আর হেমন্ত পরিচিতি-

 

আজ দ্বিধা, আজ গায়ে দিনভর বাজে

শতমুখী ফুল, অযুত ভঙ্গিমা হাঁটার!

তির থেকে যেনো ছাড়া পাওয়া কেউ

আজ এসে ডাকছে সমুদ্রে, আর ক্ষত ছেড়ে

রক্তকে ডাকে মেঘ, যেনো রূপকথা

মাটির নিকটে নেমে ফেলে গেছে কতো রূপ-

সেদিকে, পানের বরজ এসে ঘোড়াশাল পেয়ে জাগে;

 

যেনো পয়সার পিঠে, স্বপ্ন লাগানো ধাতব ঝননে

রাজায় উজিরে হাঁটে, আর ভাঙে খোয়াবের মানে, মানুষের!

 

 

প্রেমের কবিতা

………………….

 

ভিড় থেকে রোদ ছিটকে বেরিয়ে আসে, যেন মরিচা বাতি

যেন তোমার শৈশব থেকে দেয়ালে এসে ধাক্কা খাচ্ছে অট্টহাসিরা!

 

আমাকে উজানব্যকুল হাওয়া ছুঁড়ে দেয় তীরের তপ্ত মেঘ, মৃদুল সাঁতার আর

ডুবতরঙ্গে আঁকা বাইমের লেজ থেকে সরে আসে ঢেউ, যেন গানের ভঙিমা এসে

পাঁজরে পিছল খেয়ে, স্নায়ু জুড়ে মেঘলা সেতার!

 

আর কেনো ফিরে চাওয়া গানে? স্নান পেয়ে আধুলির মতো জল

নাকি জলের কবিতা এসে দোদুল্যমান? বেজে ওঠে শরীরে তোমার?

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত