উড়ন্ত গিরিবাজের ইন্দ্রজাল
ওই শহরে বিকেল নামে মন্থর গতিতে। ধীর-স্থির ও মনোরম ভঙ্গিতে। শহরের তিনদিকেই পাহাড়ের সারি। ফলে রোদ্দুর হঠাৎ করে নিষ্প্রভ হয়ে উঠতে পারে না বা জলস্রোতের ভেতর নিরুদ্দেশে যেতে পারে না। গনগনে মধ্যদুপুর হয়ে তাকে ওইসব পাহাড়ের চূড়ায় ঝুলে থাকতে হয়। আর ভাঁপ-তাপের বিকিরণে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয়। পাহাড়ের শক্ত মাটিতে উত্তাপ ঢুকে পড়লে ক্রমে অবসাদ আক্রান্ত হয়। ক্লান্তি এসেও তাকে নিস্তেজ করে ফেলে। দীর্ঘক্ষণ পাহাড়ের চূঁড়ায় চূঁড়ায় লটকে থাকার বিষাদ ও জলহীন হাওয়ার যুগপৎ আক্রমণে সে নমিত হয়। সূর্যের নমিত হওয়া মানেই রূপালি-রঙা-উজ্জ্বল-আলোকরশ্মিতে ম্লানিমা ঢুকে পড়া। অথচ তখন তার উদ্যত তেজ অনেকাংশেই নিভে গেছে। কারণ আখসিকাতের পেটের ভেতর বিকেলের বাদামী আভা ঢুকে পড়েছে। বাদামী রঙের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে আখসিকেল্লা, ঘর-দোর-আঙিনা আর জল-ভরন্ত জলাধারগুলো।
গনগনে মধ্যদুপুরে যেসব পাহাড়ের সারি দৃশ্যমান ছিল, তারাও এক্ষণে অস্পষ্ট প্রায়। চারপাশে ছায়াচ্ছন্ন ও মাধুকরী বিকেলের তীব্র উপস্থিতি। খানিক বাদেই ওই অস্পষ্টতার ভেতর নিমজ্জিত পাহাড়-সারিকে আর আলাদা করে চেনার উপায় থাকবে না। ওই শহরের পাহাড়েরা তখন মেঘেদের ডানার ভেতর ঘুমিয়ে পড়বে। পাহাড় আর মেঘ একাকার হয়ে আকাশের অলিন্দে বিশ্রাম নেবে।
আখসিকেল্লার ছাদে দাঁড়ালে বাদামী-রঙা-বিকেলের মৌতাত তীব্রভাবে অনুভব করা যায়। শ্রান্ত-দেহের উপর মৃদুমন্দ-হাওয়া কোমল-পালকের স্পর্শ বুলিয়ে দেয়। ওই মৌতাত অনুভব করার স্পৃহাতে জহিরউদ্দিন মুহম্মদ বাবুর হররোজই ছাদে পায়চারি করে।
সলমাজরির কারুকাজ খচিত তার পায়ের নাগরা জুতা ক্ষীণ শব্দ তোলে। যা বিকেলগুলোর দীর্ঘ নীরবতায় চিড় ধরিয়ে দেয়।
পোড়ামাটির ছাদ। বাবুর পায়চারি করতে করতে খেয়াল করে, বড় যত্নের-হাতে এই ছাদ সমতল করা হয়েছে। কত শত দুরমুশ দেওয়ার পর ছাদের এমন সমতল চেহারা হয়েছে-কে জানে? পোড়ামাটির মসৃণ ছাদের ওপর সূর্যের আলো ক্ষণে ক্ষণেই রহস্য খেলিয়ে দেয়। দিবসের ফটফটা আলোতে এর রঙ হাতির চামড়ার মতো ধূসর। রোদ্দুরের উত্তাপ ক্ষীণ হওয়া মাত্রই পোড়ামাটি ফের রঙ বদলে ফেলে। তখন তাকে দেখায় কোনো প্রাচীন পুকুরে জমাটবাধা শ্যাওলার মতো। যেন-বা ওরকমই নিভন্ত-সবুজ তার গাত্রবর্ণ! ফের সন্ধ্যার প্রাক্কালে সে রঙ বদলে ফেলে। ওই নিভন্ত-সবুজ ততক্ষণে গাঢ়-গোলাপী। ক্রমে তা হালকা-গোলাপী।
কেল্লার ছাদে পোড়ামাটির রঙ বদল দেখতে দেখতে বাবুর তার আব্বাজানের জন্য অপেক্ষা করে। বাবুরের আব্বাজান ওমর শেখ মীর্জা। ফরগানার শাসক। ওমর শেখ মীর্জা ছাদে আগমনের পূর্বেই দুইজন খাস খানসামা বর্ণিল কারুকাজকরা টানাপাখা হাতে পৌঁছে যায়। অতঃপর পাখার হাওয়ায় কেল্লার ছাদের রৌদ্রতাপ বিলীন হতে থাকে। ইতোমধ্যে আরো দুই’জন খানসামা উর্দি পরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাদের একজনের হাতে রূপার ট্রেতে শরবতের গ্লাস। দুধ, পেস্তা, জাফরান, মিছরি আর বরফকুচি দেওয়া শরবত। জাফরানের খুশবু পাখার হাওয়ার সঙ্গে ছাদের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। অন্যজন খাস খানসামার হাতে জমকালো নকশার রূপার রেকাবি। রেকাবিতে রাখা তরমুজের সুদৃশ্য ফালি। ফালিগুলো রূপার জালিতে থেকে ঢেকে রাখা। বাবুরের আব্বাজান ওমর শেখ মীর্জার পছন্দের ফল তরমুজ। আব্বাজানের মুখেই বাবুর তরমুজের উচ্চ প্রশংসা শুনেছে। ওমর শেখ মীর্জা হরহামেশাই বলেন-
‘এই আখসির তরমুজই সর্বোত্তম। ‘মীর তৈমুরীর’চাইতে উত্তম তরমুজ দুনিয়ায় আর কোথাও নাই। বুখারা ও সমরকন্দের তরমুজেরও প্রসিদ্ধি রয়েছে। কিন্তু তা কোনোভাবেই মীর তৈমুরীকে টেক্কা দিতে পারে নাই।’
শরবতের গ্লাসে ছোট ছোট চুমুক দিতে দিতে বাবুর পোড়ামাটির রঙ থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। আকাশের দিকে তাকালে সে ইষৎ চমকে ওঠে। আখসির আসমান কখন মীর তৈমুরীর বক্ষের রঙ ধারণ করল? মেঘেদের ভাঁজে- ভাঁজে ওই রঙের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। ‘মীর তৈমুরীর’রঙটাই কোথাও কোথাও হালকা হয়ে গোলাপী বর্ণে পরিণত হয়েছে। ফলে লালচে ও গোলাপী মেঘে সয়লাব আসমান। কিছু সাদাটে মেঘ তুলার মতো ভেসে আছে। সাদা মেঘেদের সন্নিকটে অল্পবিস্তর সুর্মারঙা মেঘ। আব্বাজানের চোখের সুর্মা দেখে বাবুর ওই রঙটি ভালো করে চিনতে শিখেছে। বাবুর যাকে সুর্মারঙা মেঘ বলছে, আব্বাজান তাকে বলে ধূসর অথবা পাংশুর্মা-মেঘ। ছাদের কিনারে দাঁড়িয়ে বাবুর পাহাড়ের চূঁড়াগুলিকে খুঁজে চলে। কোথায় যেন তারা অদৃশ্য হয়ে গেছে। অথচ দিনের আলোতে মাথা উঁচু করে জেগে ছিল। এখন কোথায় যেন উধাও। হয়তো মেঘেরা তাদের আড়াল করে ফেলেছে। ধূসরবর্ণা-আলোয়ানের তলায় চাপা পড়ে আছে পাহাড়ের সুউচ্চ চূঁড়ারাজি।
মেঘ আর পাহাড়ের লুকোচুরি খেলা দেখতে দেখতে বাবুর ফের কী যেন ভাবে । কেল্লায় নিচের দিকে তাকালে খানিকটা বিস্মিত হয়। মীর তৈমুরীর কিছু রঙ ছলকে পড়েছে সৈহুনের জলে। কেল্লার ঠিক পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে ওই খরস্রোতা নদী। অতটা উঁচু থেকেও বাবুর কল্লোলধ্বনি স্পষ্ট শোনে। খানিকবাদেই সূর্য অস্ত যাবে এই নদীর বুকে। সূর্য ডুব দেয়ার পরক্ষণে সৈহুনের জল ঘন-অন্ধকারে পূর্ণ হয়ে যাবে। আখসির যাবতীয় অন্ধকার বুকে নিয়ে সে ছুটে যাবে দুর্বার বেগে। আব্বাজান বলেছিলেন এই সৈহুনের নদী খোদ বেহেশত্ থেকে নেমে এসেছে। বেহেশতে যে চারটি নদী রয়েছে তারই একটির ধারা সৈহুনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে।
বাবুরের আব্বাজান ওমর শেখ মীর্জাও কেল্লার ছাদে বিকেল কাটাতে ভালোবাসেন। আর আব্বাজানের সঙ্গে সময় কাটানো বাবুরের জন্য পরম আকাক্সিক্ষত। বাবুর আব্বাজানকে যারপরনাই ভালোবাসে। পছন্দ করে। আব্বাজান শেখ মীর্জা ইস্পাত চরিত্রের অধিকারী। চরিত্রের সাথে তাঁর অবয়বেরও কোথায় যেন কাঠিন্য রয়েছে। ওমর শেখ মীর্জার ছোট করে ছাঁটা দাঁড়ি। ঘনলোমে আবৃত খর্বকায় দোহারা শরীর। মাথায় পাগড়ি ‘দেস্তার পেচ’ কায়দায় পরা। অর্থাৎ যে পাগড়ি ভাঁজ ব্যতিতই পরা যায়। মীর্জা পাগড়ির লেজ পেছনের দিকে ঝুলিয়ে রাখেন। পরনের লম্বা আলখাল্লা কোমরবন্ধনীতে বাঁধা থাকে। সেই বন্ধনীর ভেতর বাম হাত ঢুকিয়ে রেখে ডানহাতে পায়রাদের খাবার খাওয়ান। ওমর শেখ মীর্জা পোষা পায়রা নিয়েই বিকেলটা কাটিয়ে দেন। খোজন্দ আর সমরকন্দ থেকে আনানো গিরিবাজরা ডিম-বাচ্চা ফুটিয়ে সংসার সম্প্রসারণ করে চলেছে। গিরিবাজদের দীর্ঘক্ষণ উড়ে চলাকে মীর্জা তারিফ করেন। দুই-চার ঘণ্টা তারা উড়ে বেড়ায়। আসমানের অনেক উঁচুতে উঠে মেঘের আবঁ শরীরে মেখে নেমে আসে। নামতে নামতেই শতবার ডিগবাজী দেয়। আকাশ পরিভ্রমণের ক্লান্তি নিয়ে কেল্লার ছাদে বিশ্রাম নেয়। ডানা ছড়িয়ে মীর্জার আশপাশেই ঘুরে বেড়ায়। আর তার হাতের তালু থেকে বাসমতি ধান খুঁটে খুঁটে খায়। উদর পূর্তি হলে মেঘের মতো গম্ভীর শব্দে ডেকে ডেকে ওঠে-বকম…বাকবকম…বকম
ওমর শেখ মীর্জার এই এক নেশা। নিত্যদিন গিরিবাজ নিয়ে খেলা করা। হাতের প্রশস্ত তালুতে গমদানা, সরিষা নয়তো বাসমতি ধান নিয়ে বসে থাকা। পায়রাদের ঠোঁকরানো দেখে মীর্জা পরম আনন্দে হেসে ওঠেন।
ওমর শেখ মীর্জা সপ্তাহের এক-দুইদিন সুরার মজলিশেও উপস্থিত থাকেন। বুজা ও তালার জাতীয় সুরাতেই তিনি অধিক আসক্ত। কিন্তু সুরার নেশা তাকে তেমন আকর্ষণ করেনা। সুরার চাইতে গিরিবাজদের বকম-বকম তাঁর প্রিয়। তাদের ধূসর-সাদা মেশানো মসৃণ পালক। ধপধপা সাদাডানা মেলে উড়ে যাওয়া মীর্জাকে স্বর্গীয় আনন্দ দেয়। গিরিবাজের পালক সরিয়ে দেহের উষ্ণতা নিতে নিতে মীর্জা জোরে হেসে ওঠেন। তাঁর সেই হাসির শব্দ সৈহুনের জলের ওপর আছড়ে পড়ে।
০২.
নিজেদের শৌর্য-বীর্যের কথা মীর্জা হরহামেশাই বাবুরকে বলেন। বাবুরও আব্বাজানের কথা মন দিয়ে শোনে। কারণ বাবুর জানে, তাকেও একদিন শৌর্যবীর্যশালী হতে হবে। জৈষ্ঠ পুত্র হিসেবে ফরগানার শাসনভার বাবুরের উপরই ন্যস্ত হবে। বাবুর জানে, আব্বাজান চান যে, সেও সুশাসক হোক। আরও দুই-চারটা রাজ্য সে ফরগানার সঙ্গে যুক্ত করুক। কিন্তু বাবুর এখনও কিশোর বালক। রাজ্য জয় করার মতো যুবক সে হয়ে ওঠে নাই। কিশোরের বুকের ভেতর মীর্জা প্রতিদিনই স্বপ্নের বীজ রোপন করেন।
বিকেল বেলাটা মীর্জা আর বাবুরের একান্ত নিরিবিলি সময়। দুপুরের বিশ্রাম নেয়ার পর বাপ-বেটা মিলে ছাদজুড়ে পায়চারি করে। পায়চারি করতে করতে খিদে পেলে দুই-চার টুকরা ফল মুখে দেয়। রেকাবি উপচে থাকে ‘মীর তৈমুরীর’ ফালি। নয়তো খোজন্দের ডালিম। অথবা সমরকন্দের আপেল। আম্মিজান খুতলাঘ নিগার নিজে তদারকী করে এইসব ফল ছাদে পাঠান। পেস্তাদুধজাফরানমিছরির শরবতের গ্লানে স্বহস্তে বরফকুচি ছড়িয়ে দেন। গ্লাসের রূপার ঢাকনার ওপর লেসের গিলাব পরিয়ে দেন। বাবুর দেখেছে, আম্মিজান এইসব কাজ খুব প্রসন্নচিত্তে সম্পন্ন করেন।
আব্বাজান আর আম্মিজানের একান্ত মুহূর্ত কাটে ফযরের নামাজের পর পরই। যখন আব্বাজান খামসা আর মসনবী পাঠ করতে বসেন। আম্মিজান খামসা আর মসনবীর বেজায় ভক্ত। মাওলানা রুমীর শাহনামা শুনতেও তিনি ভালোবাসেন। আর এসবই কিনা আব্বাজানের মেঘমন্দ্র গলায় দুর্দান্তভাবে মানিয়ে যায়। ফজরের নামাজ সম্পন্ন করে আব্বাজান কুরআন তেলওয়াতের পরপরই আম্মিজানকে ডাক দেন। বাবুরও ততক্ষণে তেলওয়াত শেষ করেছে। অতঃপর খামসা আর মসনবী পাঠের আসর জমে ওঠে। আম্মিজান ঘাঘরা ছড়িয়ে পারস্য-গালিচার উপর বসে আব্বাজানের পাঠ শোনেন। কখনবা বলে ওঠেন- ‘মারহাবা’।
গ্রীষ্মকালের বিকেলগুলো রোদ্দুরের ঝাঁজে পুড়তে পুড়তে আসে। খানসামার টানাপাখার হাওয়া সেই উগ্র ঝাঁজ সামান্য কমিয়ে আনে। আর ওমর শেখ মীর্জা তখন কেল্লার ছাদে গমের দানা ছড়িয়ে দেন। ধবধবে সাদা রঙের গিরিবাজদের জোড়া লেজ ফুলিয়ে দৌড়ে আসে। আর নৃত্যের ভঙ্গিতে দানা খেতে শুরু করে। সাদা-জোড়াদের পাশে গলার পালক ফুলিয়ে হেঁটে বেড়ায় ধূসর রঙের তিন-জোড়া। দুই-একটা ধূসরের গলায় কালো-কালো-ফুটকি। ফলে ওদের আলাদা করে চেনা যায়। আব্বাজানের ছড়িয়ে দেয়া গমদানা খেয়ে পায়রাদের গলার নীচটা উঁচু হয়ে ওঠে।
ওমর শেখ মীর্জা এতক্ষণে পুত্রের দিকে মনোযোগী হোন। বাবুরের কিশোর মুখের রেখায় পাহাড়ের চূঁড়ার মতো দৃঢ়তা। ওই দৃঢ় মুখে যেন সৈহুনের ঢেউয়ের ওঠা-নামা। বাবুর জানে আব্বাজান এখন কোন বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। তাঁর কণ্ঠ থেকে ঝর্নাধারার মতো ঝরে পড়বে পূর্বপুরুষদের স্তুতি। বলতে বলতে আব্বাজানের নয়ন দুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। আব্বাজান বলবেন- ‘তৈমুর লঙ, তুমি, আমি সকলেই তার বংশের শাহজাদা’।
তৈমুর লঙের বীরগাঁথা-কত বড় যোদ্ধা ছিলেন তিনি, ছিলেন অকুতোভয়-এসবই আব্বাজানের কথার ঝর্নাজলে ভাসতে শুরু করবে।
তৈমুর লঙ-যাঁর পূর্বনাম তৈমুর বেগ। কিন্তু লৌহের মতো শক্তির অধিকারী ছিলেন বলে তাঁর নাম হয়ে যায় তৈমুর লঙ। চকচকে সোনা আর দ্যুতিময় রত্মতে যার কোষাগার পরিপূর্ণ থাকত। পাথরের মতো শক্ত ছিল যার দেহ আর মনে ছিল অফুরন্ত আকাঙ্খা।
সোনালি রঙের আলখাল্লার ওপর কালোরঙের সিল্কের কোমরবন্ধনী পরেছেন মীর্জা। হাতদুটো পেছনে মুষ্টিবদ্ধ করে পায়চারি করছেন। পূর্বপুরুষদের শৌর্যবীর্যগাথা শোনাতে শোনাতে তাঁর চোখেমুখে উত্তজনা ফুটে উঠেছে। কপালে জমেছে বিন্দু-বিন্দু স্বেদ। বাবুর মুগ্ধ দৃষ্টিতে আব্বাজানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। মীর্জার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। সে যেন চলে গেছে তাঁর চারপুরুষ পূর্ব সেই বীরের কাছে। সেই যোদ্ধার কাছে। যিনি ঘোড়ায় চড়ে দাবড়ে যাবার সময় দুইপার্শ্বে মরুঝড় সৃষ্টি হতো। আর তাঁর চলমান অশ্বের শরীর থেকে ঘামের মতো রক্ত ঝরে পড়ত।
কেল্লার নিচে বয়ে যাওয়া সৈহুনের জলে সেই রক্তচিহ্ন ঢেউ হয়ে ভেসে আসে। মীর্জা ছাদের রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে রক্তাক্ত সূর্যের ডুবে যাওয়া দেখে। জলের তলায় সূর্য হারিয়ে গেলে বিষন্ন স্বরে বাবুরের উদ্দেশ্যে বলে-
‘বীরযোদ্ধা তৈমুর বেগ। তাঁর দুইপুত্র মিরান শাহ আর শাহরুখ । মিরান শাহের পুত্র মুহম্মদ মীর্জা। আর মুহম্মদ মীর্জার পুত্র আবু সাঈদ। আবু সাঈদ-আবু সাঈদ তোমার দাদাহুজুর-বুঝলে শাহজাদা বাবুর?’
আব্বাজানের প্রশ্নের উত্তরে বাবুর সম্মতিসূচক মাথা নাড়ে। অর্থাৎ আব্বাজানের সকল কথার অর্থই তার কাছে বোধগম্য। কিশোর পুত্রের দিকে তাকিয়ে মীর্জার বুকের ছাতি গর্বে ফুলে ওঠে। এই পুত্র একদিন বিশাল রাজ্যের শাসনকর্তা হবে।
রাজ্যশাসনের যোগ্য রূপে সে বাবুরকে গড়ে তুলছে। ভবিষ্যতে শুধু ফরগানা নয়, সমরকন্দ, খোজন্দ, কান্দবাদাম, আসফারা, মার্গিনান সব রাজ্যের অধিকর্তা বাবুরই হবে। মীর্জা ফের বলতে শুরু করেÑ
‘শোনো বাবুরÑতৈমুর লঙের রক্ত আমাদের শরীরে বইছে। তৈমুর লঙযুবা বয়সে জখম হবার কারণে যাঁর একপা অন্য পায়ের চাইতে লম্বা হয়ে যায়। ফলে তিনি সামান্য খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতেন। এই খুঁড়িয়ে চলা তাঁকে দমাতে পারেনি। তিনি দিল্লী থেকে ভূমধ্যসাগর, সমৃদ্ধ পার্সিয়া থেকে ভলগার অরণ্যভূমি পর্যন্ত বিশাল এলাকার অধিকর্তা হয়েছিলেন। বুঝলে, জয়ী হবার জন্য শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোনো বিষয় নয়। বিষয় হলো তোমার মন। তোমার মস্তিষ্ক। মস্তিষ্ক দ্বারাই জয়ী হওয়া যায়। রাজ্যদখল তখন ইশারা মাত্র।
মহান তৈমুর লঙ তাঁর শেষ অভিযান ছিল চীনের উদ্দেশ্যে। বিজয় নিশ্চিত ছিল তাঁর অস্ত্রের তীব্র ধারে। কিন্তু আল্লাহতাআলা তাঁকে বেহেশতে নিজের সান্নিধ্যে ডেকে নেন।’
বাবুরের চোখের দৃষ্টি সুচাঁগ্র হয়ে ওঠে। মৃদুস্বরে জানতে চায়-
‘আব্বাজান তাহলে তৈমুর লঙ মহান যোদ্ধা ছিলেন?’
‘শুধু যোদ্ধাই ছিলেন এমন বলা যাবেনা। তাঁর চোখের দৃষ্টি ছিল পাথরের মতো ঠান্ডা আর স্থির। সে চোখের দিকে তাকালে কেউ আর দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে পারত না। যোদ্ধার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন সংস্কৃতিবান মানুষ।’
‘সংস্কৃতিবান!’
‘নয়তো কী? তাঁর প্রিয় শহর ছিল সমরকন্দ। তুমিতো জানই, ওই শহর ছিল রুচি, জ্ঞান, সৌন্দর্য আর পৃষ্ঠপোষকতার শহর।’
‘রুচি, জ্ঞান, সৌন্দর্য তো আপনিও ভালোবাসেন, আব্বাজান।’
‘তা বাসি। আমি তো তৈমুরেরই উত্তরসূরী। কিন্তু দেখ বাছা, তার যা ছিল তা আমার নাই’
মীর্জার কণ্ঠ যেন হঠাৎ করেই খাঁদে নেমে যায়। কেমন করুণ ও আর্দ্র শোনায়। বাবুর ভেবে পায় না আব্বাজানের কী নাই?
মীর্জা তখন ফের বলতে শুরু করেন-
‘দেখ আমি কেবল ফরগানার শাসক। এটা কী একটা রাজ্য হলো? যার তিন দিকেই পাহাড় আর পাহাড়। যদিও ওই পাহাড়ই আমাদের রক্ষাবর্ম। মাত্র ৫০ ফারসঙ লম্বা আর ২৫ ফরসঙ চওড়া একটা ক্ষুদ্র রাজ্য। আমার এই ক্ষুদ্রতা কি তৈমুর লঙ মেনে নিতেন?
তিনি কত বড় যোদ্ধা আর কত কত রাজ্য ছিল তার কব্জার ভিতর।’
মীর্জার কথা বাবুরের কানে প্রতিধ্বনি তোলে।
‘কত কত রাজ্য ছিল কব্জার ভিতর’ ততক্ষণে চারপাশের সমস্ত আলো উঠাও হয়ে গেছে। ফ্যাকাশে অন্ধকারের মাঝে এক্ষুণি মাগরিবের আজান ধ্বনিত হবে।
মীর্জার সমস্ত কথা যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। আসন্ন সন্ধ্যায় মীর্জাকে বহু প্রাচীন পাথরের স্মৃতির মতে দেখায়।
আব্বাজানের নিশ্চল মূর্তির দিকে তাকিয়ে বাবুর সহসা ঘণ্টাধ্বনি শোনে। অজস্র-ঘণ্টা। যেন একই তালে বেজে চলেছে। বাবুর জানে, এসব ঘণ্টা বাঁধা রয়েছে ভেড়া আর ছাগলের গলায়। পাহাড়ে পাহাড়ে দিনভর তারা চরে ফিরেছে। আর সন্ধ্যা নামার পূর্বেই বাড়ির পথ ধরেছে। ছাগল আর ভেড়ার পাল নিয়ে বাড়ি ফিরছে ক্লান্ত রাখালেরা। বাবুরের মনে হয় কোনো অলৌকিক ও অপরূপ সংগীত শুনছে সে। যে সংগীতের মিঠে আওয়াজ কেল্লায় অন্দর-বাহির পূর্ণ করে দিচ্ছে।
০৩.
ওমর শেখ মীর্জার দেহরক্ষী দলটিকে ইদানীং অধিক তৎপর মনে হয়। দলপ্রধান ওয়াজির খানকে মীর্জার সন্নিকটেই ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। মীর্জাকে যেন সে ছায়ার মতো অনুসরণ করে।
গত কয়েকদিনে বাবুর ওই রকমই দেখেছে। আখসিকাতের সকালগুলোও ইদানীং যেন অন্যরকমভাবে ফুটে ওঠে। সূর্য পাহাড়ের চূঁড়ায় ওঠার পূর্বেই বল্লমের ধার পরখ করে যায়। ফলে প্রভাত আসে রূপালী রঙের আধিক্য নিয়ে। বাবুর আন্দাজ করতে পারে বড় কোনো অঘটন হয়তো ঘটতে যাচ্ছে। আম্মিজানের মুখে আগের সেই হাসি আর নাই। অম্লান মুখে হররোজই তিনি পূর্বের কাজগুলো করে যান। দুধপেস্তাজাফরানের শরবতের ওপর বরফকুচি ছড়িয়ে দেন। ফজরের নামাজ অন্তে খামসা ও মসনবীর আসরও যেন পূর্বানোরূপ জমে উঠছে না। খামসা ও মসনবীর পরিবর্তে আব্বাজান আর আম্মিজান কী নিয়ে যেন বিস্তর কথাবার্তা বলেন।
আম্মিজান চিন্তিত মুখে আব্বাজানকে বলেন-
‘সুলতান মাহমুদ খাঁ বেমতি হওয়ায় কারণ কী হুজুরে আলা?’
বাবুরের সম্মুখে সবকিছু খোলাসা করে বলা না গেলেও মীর্জা উত্তর দেন-
‘বেগম তেমন কিছু এখনও শুনি নাই। তবে গোপনসূত্রে জেনেছি তিনি সমরকন্দ গেছেন। সুলতান আহমদ মীর্জার সঙ্গে মোলাকাতের উদ্দেশ্যে’।
আম্মিজান সন্তর্পণে ফিরোজা রঙের ওড়না টেনে কপাল অব্দি ঢেকে দেন। হয়তো চোখের জল গোপন করার চেষ্টা করেন।
বাবুরের বয়স স্বল্প হলেও সে এই বয়সেই অনেক কিছুই বুঝতে শিখেছে। আব্বাজান ও আম্মিজানের কথার সূত্র সে ধরতে পারে। সমরকন্দের রাজা সুলতান আহমদ মীর্জা আব্বাজানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। যিনি আব্বাজানের ভ্রাতা। এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন মাতুল সুলতান মাহমুদ। তারা উভয়েই নাকি স্বসৈন্য অগ্রসরমান। ওমর শেখ মীর্জার চেহারা পাথরে খোদাই করা মূর্তির মতো। ওই বলিষ্ঠ চেহারা দেখে ভেতরের কোনো কিছুই কেউ অনুমান করতে পারে না।
বাবুর বুঝতে পারে শত্রুর আসন্ন আক্রমণ নিয়ে আব্বাজান ও আম্মিজান দুইজনই চিন্তিত। আম্মিজান প্রায়ই ওয়াজির খানকে গোপন নির্দেশ দেন। যাতে করে সে আব্বাজানকে ভালো মতন হেফাজত করে।
ওমর শেখ মীর্জাও ভীরু নন। কাপুরুষ নয়। যুদ্ধকে তিনি ভয়ও পান না। কিন্তু তার লোকবল অল্প। অস্ত্রশস্ত্র আরও অল্প। তবুও তিনি শাদা পতাকা তুলে আপোস প্রস্তাব করতে চাননা। তৈমুর লঙের রক্তধারা শরীরেও প্রবহমান।
আখসিকেল্লার ছাদে মীর্জার সঙ্গে বাবুরের রোজই আলাপসালাপ হয় সেই পুরাতন গৎবাধা তৈমুর লঙের বীরগাথা। বাবুর ইদানীং লক্ষ্য করছে- আব্বাজানের কথাবার্তায় যেন পূর্বের সেই দম নেই। সেই চাঞ্চল্য নেই। কথা বলতে বলতেই আব্বাজান যেন ফাঁপড়ে পড়ে যান। তার দম যেন হঠাৎ আসা দমকা বাতাসে নিভে যায়। তখন ছাদে নীরবতা বিরাজ করে। গিরিবাজদের দানা খুঁটে খাওয়ার শব্দ ছাড়া আর কিছুই কানে আসে না।
গ্রীষ্মকালের এই বিকেলেও পায়রাদের বকম বকম ছাড়া আর কোনো শব্দ ছিল না। রোদ্দুর সবেমাত্র ম্লান হতে শুরু করেছে। আর সৈহুন থেকে জলজ বাতাস ধেয়ে আসছে। বাবুরের চক্ষু আরামে বুঁজে আসতে চাইছে। কিন্তু আব্বাজানের কাণ্ডকারখানা দেখে সে চোখ মুঁদছিল না। আব্বাজান আজ যেন অন্যদিনের চাইতে পায়রাদের নিয়ে অধিক মগ্ন। পোড়ামাটির ওপর ইতোমধ্যে সে দুইবার গমদানা ছিটিয়েছে। আর দুধসাদা গিরিবাজের জোড়াকে দুইহাতে ধরে আসমানে উড়িয়ে দিয়েছে। ঘণ্টা দুয়েক হলো ওরা উড়ে গেছে। ওমর শেখ মীর্জা এখনো অপেক্ষমান ওদের অবতরণের। ফলে সে ঘনঘনই দৃষ্টি ফেলছেন উপরে। গিরিবাজ দূরে থাক কোনো পক্ষীর দেখাও মিলছে না। কিংবা কানে আসছে না কোনো পাখসাট। মীর্জাকে আজ খুব অধৈর্য্য দেখাচ্ছে। দুই-চারবার আকাশে দৃকপাত করে সে চবুতরার দিকে এগিয়ে গেল। চবুতরাগুলো চোঙাকৃতি। গিরিখাদের দিকে আংশিক ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। মীর্জা চবুতরার ভেতরে উঁকি দিল। তার মনে ক্ষীণ আশা, দুধসাদা জোড়াটি হয়তো অলক্ষ্যে এসে পৌঁছেছে। এক্ষুণি পালক ফুলিয়ে উড়ে আসবে। আর বসবে মীর্জার হাতের ওপরে।
মাগরিবের ওয়াক্ত সমাসন্ন। বাবুর জানে ওয়াক্তের নামাজ ওয়াক্তেই পড়ে নিতে হবে। কারণ নামাজ অন্তে জেনানামহল থেকে খাবারের ডাক আসবে। বাবুর তড়িঘড়ি করে ছাদের সিঁড়িতে পা রাখে। সেই মুহূর্তে কিছু একটা ভেঙে পড়ার প্রচন্ড শব্দ শোনে। বাবুরের পায়ের নিচের সিঁড়ি ভয়ালভাবে কেঁপে ওঠে। আর তার চোখে অন্ধকার নেমে আসে। যেন-বা ধূলিঝড়ের খপ্পরে পড়ে সে। সম্মুখের কিছুই দেখতে পায় না। তার চোখ বেয়ে শুধু দরদরিয়ে জলধারা নামে। কিন্তু কিছুই তার দৃষ্টির সম্মুখে স্পষ্ট হয়ে ওঠে না। আকস্মিক অন্ধতা নিয়েও বাবুর দ্রুত চিন্তা করে-কেল্লার ছাদ কেন ওইভাবে কেঁপে উঠল? আর ওই প্রচন্ড শব্দইবা কিসের? কী হলো হঠাৎ?
ধূলিঝড় আক্রান্ত বাবুর হঠাৎ অনুভব করে কে যেন তাকে দুই বাহু দিয়ে আড়াল করতে চাইছে। যে-ই চাইছে সে তার শুভাকাক্সক্ষী। কিন্তু কেন? কী ঘটল এক লহমায়?
‘শাহজাদা, আপনি এখন নিরাপদ’
দেহরক্ষী ওয়াজির খানের পরিচিত কণ্ঠে। ধাই করে বাবুরের মনে পড়ে শত্রুরা কি ইতোমধ্যে কেল্লা আক্রমণ করে ফেলেছে? আব্বাজান কোথায়?
ওয়াজির খানের হাতের বেষ্টনি থেকে বাবুর ছিটকে বেরিয়ে আসে। আব্বাজান? ওমর শেখ মীর্জা এই মুহূর্তে কোথায়?
কেল্লার ছাদ থেকে গিরিবাজদের চবুতরা অদৃশ্য হয়ে গেছে। দেয়ালের ওই দিকটা শূন্য। বাবুর সাহস সঞ্চয় করে সৈহুন নদীর দিকে ঝুঁকে তাকায়-পায়রাদের বাসা, সেই চবুতরায় ভাঙা অংশ স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছে। কিন্তু মীর্জার কোনো চিহ্নই ওই স্রোতের ওপর নেই। বাবুর ফের সন্ধানী দৃষ্টিতে তাকায়। পাথরের ফাটলে জন্ম নেয়া ঝোপের ডালে আব্বাজানের পাগড়িটা ঝুলে আছে। ঝোপের ওপর কাত হয়ে থাকা পাগড়িটা দেখাচ্ছে লালচে-খয়েরী রঙের ফুলের মতো। চবুতরার সঙ্গে সঙ্গে ওমর শেখ মীর্জাও কী আছড়ে পড়েছে? বাবুর এর চাইতে বেশি ভাবতে পারে না। তার হৃৎস্পন্দন স্তব্ধ হয়ে যেতে চায়। ফের বাবুর গিরিফাঁদে উঁকি দেয়। জলন্ত-মশাল হাতে সৈনিকরা ইতোমধ্যেই তালাশিতে নেমে পড়েছে। দূর থেকে মশালের আলো সোনালি ফুলের মতো দেখায়। যেন অন্ধকারের বুক চিরে সোনারফুল ফুটে উঠেছে।
ভেতর থেকে তীব্র কান্নার দমক বাবুরকে অস্থির করে তোলে। তার মনে হয় আকাশ ফাটানো চিৎকার দিয়ে সে ডেকে ওঠে-‘আব্বাজান’। কিন্তু বাবুরের কোনো ইচ্ছাই বাস্তবতা পায়না। বাবুর শাহজাদা। শাহজাদারা কখনও সাধারণ মানুষের মতো কোনো ইচ্ছা করতে পারে না। সাধারণ মানুষের মতো নিজের দুঃখ বেদনা জানাতে পারে না। আবেগের অতি প্রকাশ রাজরক্তের ধর্ম নয়। ফলে বাবুর বুকের ভিতর কান্না লুকিয়ে ফেলে। নিজেকে এই বলে প্রবোধ দেয়Ñ‘শাহজাদারা কোনো অবস্থাতেই ভুলে যাবে না; যে রাজরক্ত তার শরীরে বইছে।’
আখিসাতের আকাশে আর কোনো আলোর চিহ্ন নেই। তীব্র অন্ধকার ঝাঁপিয়ে নামছে। হঠাৎ পাখসাটের শব্দে বাবুর চমকে ওঠে। আব্বাজানের উড়িয়ে দেয়া দুধসাদা গিরিবাজ! ডানা দুটো প্রসারিত করে পৃথিবীর দিকে নেমে আসছে। বাবুর অন্ধকারেও তাদের দেখার চেষ্টা করে। অত দূর থেকে পায়রা দুটোকে বরফশুভ্র বলের মতো দেখায়।
জন্ম ১৯৬৫, ঢাকা। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। লেখক, সম্পাদক, গবেষক এবং অনুবাদক।