Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

একটি বিকেলের আত্মকথা

Reading Time: 2 minutes
..আসি ইন্দ্রানী। থ‍্যাঙ্ক ইউ সো মাচ্। 
..না, না সোমদি “থ‍্যাঙ্ক ইউ”-এর কী আছে ! আমি তো এদিকে আসছিলামই তাই তোমাকে নিয়ে এলাম। 
..সাবধানে ফিরো । টাটা।
..টাটা। কাল দেখা হবে অফিসে।
কী অসহ‍্য গরম! কে বলবে শ্রাবণমাস চলছে ! হাত ঘড়িতে সময় দেখল সোমলতা সেন। অন‍্য দিনের তুলনায় আজ সে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরছে। কতদিন পর  ইন্দ্রানীর সাথে  বকবক করতে করতে ফিরলাম। ইন্দ্রানী, সোমলতার অফিস কলিগ। নতুন জয়েন করেছে।  আগে কণিষ্ক ছিল আমার পথসাথী। সেই দিনগুলি  স্মৃতিমেদুর, মনকে একরাশ মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন করে রেখেছে।
গোলপার্কের সাতশো আশি স্কোয়ার ফিটের দুকামরার ফ্ল‍্যাটে সোমলতার কেটে গেল নাই নাই করে পঁচিশ বছর। সুশোভনের সাথে ছাড়াছাড়ির   পর পরই  ট্রান্সফার নিয়ে ছোট আরিয়ানের হাত ধরে চলে আসা।
ক্লান্ত হাতে লক্ খুলে ঘরে ঢুকে আগেই ব‍্যালকনির দিকের দরজা খুলে দেয়‌ । ব‍্যালকনিটাও খুব একাকী। কতদিন মালতীদিকে বলেছি জায়গার জিনিস জায়গায় রাখবে। কে কার কথা শোনে! তাড়াতাড়ি জায়গার জিনিস জায়গায় রেখে ব‍্যালকনিতে এসে দাঁড়ায় সোমলতা। কালো সাপের মতো রাস্তা কোনও কোনও দিন  জিজ্ঞেস করে ‘কি গো কেমন আছ?’ আশেপাশের হাড় জির-জিরে বাড়িগুলো বলে ‘অনেকদিন তোমায় দেখি না!’ ব‍্যালকনির উল্টোদিকের কৃষ্ণচূড়ার কাছে পাওয়া যায় বসন্তের আগাম বার্তা। মাঝে মাঝে ছিঁটেফোঁটা বৃষ্টি ভিজিয়ে দিয়ে যায় শুষ্ক খরায় ফেটে যাওয়া জীবনকে। এই সব ছাইপাশ ভাবতে ভাবতে কখন যে সাড়ে সাতটা বেজে গেল, টেরই পেল না সোমলতা। 
ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই  ‘এ যে তার ছেঁড়া সেতার’- কে যেন বলে উঠল। কে আর হবে? আমারই প্রতিবিম্ব। আমারই অন্তরাত্মা।
 গত সপ্তাহেই তো কণিষ্ক এসে কত বকাবকি করে গেলো। ‘সোম তুমি আমার কোন কথা শোন না। আগেও বলেছি, আবারও বলছি তোমাকে শরীরটাকে ঠিক রাখতে হবে। অভিমান করে নিজের শরীরকে কষ্ট দেওয়া মানে তো ঈশ্বরকে কষ্ট দেওয়া। আমাদের শরীরেই তো ঈশ্বর বাস করেন। তুমি যখন কোন প্রণম‍্য ব‍্যক্তিকে প্রণাম কর, তখন তো আসলে তাঁর শরীরে থাকা ঈশ্বরকেই তোমার প্রণাম জানাও। আবার জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একবার ভেবে দেখো, শরীর নামের এই যন্ত্রটা কিন্তু এমন কিছু দাবী করে না যা আমরা দিতে পারি না। সময় মত খাওয়া-দাওয়া, এক্সাসাইজ ও বিশ্রামটুকু দিতে পারলে সে তার সাধ‍্যমত ঠিকঠাক চলবে। তাই তুমি যেভাবেই হোক শরীরটাকে ঠিক রাখার চেষ্টা করবে।’ আমি চুপ করে শুনি। আসলে  সুনামিগ্রস্ত একটি দ্বীপ তার জীবনের সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেছে সেই রাতে। 
চায়ের কাপ হাতে ব‍্যালকনিতে এসে দাঁড়ায় সোমলতা। উদার আকাশ। কত তারার কারুকার্য। যেন অন্ধকারের রাজ পোশাক।
আরিয়ানও আকাশ দেখতে ভালোবাসে। ছোটবেলায় জিজ্ঞেস করত ‘মা তুমি আকাশে কি দেখ?’ বলেছিলাম আমার বাবাকে দেখি। ওই যে উজ্বল তারাটা আমার বাবা। আচ্ছা আরি তুমি আকাশে কি দেখ? ও বলেছিল ‘আমি স্বপ্ন দেখি মা। স্বপ্নের মতো তারা-রা মিটমিট করে।’ ব‍্যালকনিটাকে আমার যমজ বোন মনে হয়। এক বুক শূন‍্যতা নিয়ে বসে আছে অপেক্ষায়, ঠিক আমার মতোই। 
সন্ধের সাজে ঝলমল করছে কলকাতা শহর। রাস্তা দিয়ে হেলে দুলে চলছে জীবন। ব‍্যাটারি চালিত খেলনার মতো। কখন যে থেমে যাবে! দিন দিন  একাকীত্বের সাথে সহবাস যে বড্ড  ক্লান্তিকর । জীবন তো স্রোতের অফুরন্ত ফেনা, ফেনার বুদবুদেই জন্ম-মৃত‍্যুর মাদল সুর। আর গলন্ত মোমের বিন্দুর মতো জমায়িত অভিজ্ঞতা সাজায় সুসজ্জিত চিতা পরিখা- এমনটাই ভেবে কেটে গেল এ জন্ম। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস চার দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে সোমলতার ঠোঁটের বাসি লিপস্টিক সব টুকু শুঁষে নেয়, হঠাৎ ফোনটা বেজে…

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>