| 29 মার্চ 2024
Categories
ইতিহাস

চম্বল ডাকাত ফুলন দেবী: এক ভয়ংকর প্রতিবাদী প্রতিকৃতি

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

১৯৬৩ সালে উত্তর প্রদেশের জালৌন জেলার অন্তর্গত ঘোড়া কা পুরয়া নামক স্থানে নিম্ন বর্ণের এক মাঝি-মাল্লা সম্প্রদায়ে ফুলনের জন্ম। ফুলনের পরিবার অতিশয় দরিদ্র ছিল। তার বাবা দুই বোনের বিয়ের যৌতুকের উদ্দেশ্যে এক নিম বাগান করেন। কিন্ত ‍ফুলনের ১১বৎসর বয়সে তার ঠাকুরদার মৃত্যু হলে তার জেঠা বাবার নিম বাগানটি নিয়ে নেয় এবং তার জেঠাত দাদা মায়াদিন বাগানের গাছগুলো কেটে বিক্রি করা আরম্ভ করে। ফুলন এর বিরোধিতা করলে মায়াদিন কূট কৌশলে পুট্টিলাল নামে ৩০ বছর বয়সী এক লোকের সাথে ১১ বছর বয়সী ফুলনের বিবাহের আয়োজন করে। পুট্টিলাল একজন অসৎ চরিত্রের লোক ছিল। ফুলনের সঙ্গে তার স্বামী বলপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন ও শারীরিক অত্যাচার করত। অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে ফুলন নিজ পিতার গৃহে ফিরে যান যদিও পরিবারের সদস্যরা তাকে পুনরায় স্বামীর গৃহে দিয়ে আসেন। অবশেষে তার স্বামীর-কার্যকলাপের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি স্থায়ীভাবে নিজ পিতৃগৃহে ফিরে আসেন। ভারতীয় গ্রাম্য সমাজে স্বামীর ঘড় ছেড়ে আসা নারীদের কূ-নজরে দেখা হয়। ফুলনও তথাকথিত সমাজপতিদের দৃষ্টিতে একজন অসৎ নারীর চরিত্রে পরিণত হন। ফুলন ন্যায়ালয়ে মায়াদিনের বিরুদ্ধে পিতার সম্পত্তি অবৈধ ভাবে দখল করার অভিযোগ দেন। কিন্তু তিনি সেখানে ন্যায় বিচার পাননি। অধিকন্ত ১৯৭৯ সনে মায়াদিন চুরির অভিযোগে ফুলনকে গ্রেপ্তার করান। ফুলনের তিনদিন কারাবাস হয়। কারাবাসে তিনি আইনরক্ষকের হাতে ধর্ষণের শিকার হন। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে সামাজিকভাবে বর্জন করা হয়।
সুযোগ বুঝে বাবু গুজ্জর নামে এক ডাকাত সর্দার সমাজচ্যূত ফুলনকে অপহরণ করে ডাকাত দলে যুক্ত করে। বাবু গুজ্জর ছিল নিষ্ঠুর ও কামুক স্বভাবের লোক। বাবু গুজ্জরের কামুক দৃষ্টি ফুলনের দেহের উপর পড়ে কিন্তু দ্বিতীয় দলনেতা বিক্রমের জন্য ফুলন রক্ষা পায়। একদিন রাত্রে দলনেতা বাবু গুজ্জর ফুলনকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে বিক্রম মাল্লা বাবু গুজ্জরকে হত্যা করে ও নিজের দলের নেতা হয়। ফুলন তার সম্মান রক্ষা করা বিক্রম মাল্লার প্রতি প্রেমে পতিত হন। অবশেষে বিক্রম তাকে বিবাহ করে ও পত্নীর মর্যদা দেন।
শ্রী রাম নামক এক ঠাকুর সম্প্রদায়ের ডাকাত ছিল বিক্রম মাল্লার অপরাধ জগতের গুরু। শ্রী রাম ও তার ভাতৃ লালা রাম কারারুদ্ধ থাকার সময় বিক্রম তাদের জামিনের জন্য ৮০,০০০ ভারতীয় রুপি সংগ্রহ করেন। শ্রী রাম মুক্তি পাওয়ার পর বিক্রম তাকে দলের নেতৃত্ব নিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু দলের মাল্লা সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাতে রাজী না হওয়ায় দলে বিভক্তি দেখা দেয়। ঠাকুর সম্প্রদায়ের সদস্যরা শ্রী রাম ও মাল্লা সম্প্রদায়ের সদস্যরা বিক্রমের প্রতি অনুগত ছিল। শ্রী রাম ছিলেন নিষ্ঠুর প্রকৃতির এবং বিক্রমকে হত্যার সুযোগের সন্ধানে ছিল। একবার এক বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার সময়ে অপরিচিত ব্যক্তি বিক্রমকে গুলি করলে বিক্রম আহত হয় কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে বিক্রম সুস্থ হয়ে উঠে। কিছুদিন পর আবারও হামলা করে শ্রী রাম বিক্রমকে হত্যা করে ও ফুলনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
শ্রী রাম ফুলনকে উলঙ্গ প্রায় অবস্থায় এক গ্রামে নিয়ে যায় ও ঘোষণা করেন যে ফুলন বিক্রমকে হত্যা করেছে। ফুলনকে শাস্তি দেওয়ার জন্য গ্রামবাসীদের আদেশ করে। শাস্তিস্বরুপ প্রথম শ্রী রাম ফুলনকে ধর্ষণ করে। তারপর এক এক করে বহু ঠাকুরে তার উপর যৌন ও শারীরিক নির্যাতন করে। শ্রী রাম তাকে অনেকবার মাল্লা বেশ্যা নামে গালা গালি করেন। ৩ সপ্তাহের অধিক সময় তার উপর অমানুষিক অত্যাচার করা হয়। ২৩দিন পর ফুলন নিজেকে ঠাকুর সম্প্রদায়ের বেহমাই গ্রামে নিজেকে আবিস্কার করে। অবশেষে এক ব্রাহ্মণ ব্যক্তির সাহায্যে ফুলন গরু গাড়ী করে বেহমাই থেকে পালিয়ে যান।


নির্যাতিত ফুলনের দুঃখের কাহিনী শুনে বাবা মুস্তাকিন নামে আরেক ডাকাতনেতা তাকে নতুন একটি ডাকাত দল গঠন করতে সাহায্য করেন। ডাকাত দলটির নেতৃত্বে আসে স্বয়ং ফুলন এবং চম্বল উপত্যকায় গোপন আস্তানা গাড়েন। মান সিং ছিল ফুলনের দলের দ্বিতীয় নেতা। ফুলন দেবী বিক্রম মাল্লা থেকে বন্দুক চলানোর প্রশিক্ষন নিয়েছিল ও উত্তর প্রদেশ ও মধ্য প্রদেশে বসবাসকারী উচ্চবর্ণের লোকদের গ্রামে লুন্ঠন, ভূস্বামীদের অপহরণ, রেল ডাকাতি ইত্যাদি বিভিন্ন অভিযান চালিয়েছিল। ক্ষমতা নিয়ে ফুলন প্রথম স্বামী পুট্টিলালের অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে পুট্টিলালের গ্রাম লুন্ঠন করে ও পুট্টিলালকে জনসমক্ষে শাস্তি দেয় এবং প্রায় মৃত অবস্থায় পুট্টিলালকে ছেড়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় কম বয়সের বালিকা মেয়ে বিবাহ করা পুরুষদের জন্য সাবধানবাণী স্বরূপ একটি পত্র রেখে যায়।
আরো প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ফুলন রাম ভ্রাতৃদ্বয়ের সন্ধান আরম্ভ করেন । অবশেষে সন্ধান হয় যে শ্রী রাম বেহমাই গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে। ফুলনকে নির্যাতিত করার ১৭মাস পর ১৯৮১ সনের ১৪ ফেব্রয়ারী তারিখে ফুলন রাম ভাতৃদ্বয়কে হত্যা করার জন্য বেহমাই গ্রামে হামলা করে। সেই সময়ে বেহমাইবাসীরা এক বিবাহে ব্যস্ত ছিল। ফুলন ও দলের সদস্যরা সম্পূর্ন গ্রাম খুঁজেও ভ্রাতৃদ্বয়ের সন্ধান পাননি। ফুলন রামভ্রাতৃদ্বয়কে তার নিকট অর্পণ করার জন্য গ্রামবাসীকে আদেশ করেন। ফুলনের মতে গ্রামবাসীরা ভ্রাতৃদ্বয়কে গোপনে পালিয়ে রেখেছে। কিন্তু গ্রামবাসীরা এই কথা অস্বীকার করেন। ডাকাতের দল রাগে গ্রামের ২২ যুবককে লাইনে দাড় করে ব্রাশফায়ার করে নিহত করে। এটিই ছিল কুখ্যাত বেহমাই হত্যাকাণ্ড বা বেহমাই গণহত্যা।
বেহমাই হত্যাকাণ্ডের জন্য সেই সময়ের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ভিপি সিং পদত্যাগে বাধ্য হন। ফুলন জনপ্রিয় হয়ে উঠেন দস্যুরাণী নামে। প্রত্যেকবার অপরাধ করার পর ফুলন দূর্গাদেবীর মন্দির দর্শন করতেন ও তার প্রাণ রক্ষার জন্য দেবীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতেন। সেই থেকে তিনি ফুলন দেবী হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেন। সেই সময়ে উত্তর প্রদেশের শহরগুলিতে দূর্গা দেবীর বেশে ফুলনের মূর্তি বিক্রয় হত। তাকে চম্বলের রাণীও বলা হতো।
এভাবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আর অবহেলা অবজ্ঞায় বড় হওয়া ফুলন একসময় হয়ে উঠে প্রতিবাদী এক ভয়াবহ দস্যু। লাঞ্চিত-বঞ্চিত আর প্রতিশোধের তাড়নায় উন্মাদ ফুলন একের পর এক মানুষ হত্যা করে পরিচিতি পায় ইতিহাসের এক ভয়ংকর প্রতিবাদী নারী হিসেবে।
বেহমাই হত্যাকাণ্ড সমগ্র ভারতবর্ষকে কম্পিত করে দিয়েছিল। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে না পেরে তার উপর মানসিক চাপ দেওয়া আরম্ভ করে। পুলিশ তার মাতা-পিতাকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ হামলায় তার দলের বহুসংখ্যক সদস্যের মৃত্যু হয়। ফুলন দেবী কয়েকটি শর্তে ভারত সরকারের নিকট আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেন:
১. ফুলন ও তার অন্যান্য সঙ্গীরা কেবল মধ্যপ্রদেশে আত্মসমর্পণ করিবেন, বিচারের জন্য তাদের উত্তর প্রদেশে নেওয়া হবেনা
২. ফাঁসী দিতে পারিবেন না ও ৮ বৎসরের অধিক সময় কারাবাস হবেনা
৩. সম্পর্কীয় ভাতৃ মায়াদিন অবৈধভাবে দখল করা জমি ফুলনের পিতাকে ফেরত দিতে হবে
৪. ফুলনের পিতৃ-মাতৃকে মধ্যপ্রদেশে সংস্থাপিত করতে হবে
৫. সরকার ফুলনের ভাতৃকে চাকুরি দেওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে
সরকার তার সব শর্তে সম্মত হয়। বেহমাই হত্যাকাণ্ডের প্রায় দুই বৎসর পর ১৯৮৩ সনের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় ৮০০০ দর্শকের উপস্থিতিতে ফুলন আত্মসমর্পণ করেন। ফুলনের পরিধানে ছিল একটি খাকী পোশাক। শরীরে ছিল একটি লাল চাদর। মাথায় ছিল একটি লাল কাপড় যা বেহমাই গ্রামে চলানো যৌন অত্যাচার ও নির্যাতনের পর প্রতিশোধের প্রতীক। কান্ধে ছিল একটি বন্দুক। হাতজোড় করে তিনি জনসাধারনকে নমস্কার জানান। দেবী দুর্গা ও মহাত্মা গান্ধীর ফটোর সন্মুখে তিনি বন্দুকটি রেখে আত্মসমর্পণ করেন।
সরকারে ফুলনের সঙ্গে করা শর্ত মেনে নিলেও একটি শর্ত ভঙ্গ করেছিল। বিনা বিচারে তাকে ১১বৎসর কারাবাসে থাকতে হয়েছিল। অবশেষে ১৯৯৪ সনে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন।
১৯৯৪ সনে ফুলন দেবীর জীবনের উপর মালা সেনের ইণ্ডিয়া’জ ব্যাণ্ডিট কুইন নামক গ্রন্থ অনুসারে ব্যাণ্ডিট কুইন নামে একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। ছায়াছবিটির পরিচালক ছিলেন শেখর কাপুর, প্রযোজক চ্যানেল ৪। চলচিত্রে ভুল রূপে উপস্থাপন করার অভিযোগে ফুলন দেবী চলচ্চিত্রটি ভারতে নিষিদ্ধ করার দাবী করেন। অবশেষে প্রযোজক তাকে ৪০,০০০ পাউণ্ড প্রদান করায় তিনি অভিযোগ তুলে নেন। ছবিটি ফুলনকে আন্তঃরাষ্ট্রীয় ভাবে পরিচিত করে তুলেছিল। লেখিকা অরুন্ধতি রায় দা গ্রেট ইণ্ডিয়ান রেপ ট্রিক নামক এক লেখায় প্রশ্ন করেন যে, কি অধিকারে এক জীবিত নারীর ধর্ষণের দৃশ্য তার কোন অনুমতি ছাড়া পুনমঞ্চায়ন করা হয়? তিনি পরিচালক শেখর কাপুরকে ফুলন দেবী ও এর অর্থকে ভুলভাবে উপস্থাপনের জন্য দায়ী করেন।
এর আগে ১৯৮৫ সালে অশোক রায়ের পরিচালনায় বাংলা চলচ্চিত্র ফুলন দেবী প্রকাশ পায়। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন সুরেশ ওবেরয়, রীতা ভাদুড়ি, জয়া মুখার্জী প্রমুখ।
অসমের ভ্রাম্যমান থিয়েটার অপ্সরা থিয়েটার ফুলন দেবীর আত্মসমর্পণের পর দস্যুরাণী ফুলন দেবী নামক একটি নাটক মঞ্চস্থ করেন। কোন তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রী ছাড়াই নাটকটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। সাম্প্রতিক বিষয়-বস্তুর উপর রচিত এইটিই ছিল ভ্রাম্যমান থিয়েটারের জনপ্রিয় নাটক। ফুলন দেবী অতি সামান্য লেখা-পড়া জানতেন কিন্তু আন্তঃজার্তিক পর্যায়ে তিনি লেখক মেরী থেরেশ কানী ও পল রামবালীর সহযোগীতায় আই ফুলন দেবী: দা অটোবায়োগ্রাফী অফ ইণ্ডিয়াস ব্যাণ্ডিট কুইন নামক শীর্ষক আত্মজীবনী প্রনয়ন করেন। এই গ্রন্থটি ইংল্যান্ডের লিটল ব্রাউন এণ্ড কম্পানী ১৯৯৬ সনে প্রথম প্রকাশ করে। এই দুইজন লেখকের সহযোগীতায় ফুলন দেবী প্রণয়ন করা অন্য আরেকটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের নাম দা ব্যাণ্ডিট কুইন অফ ইণ্ডিয়া; এন ওমেনস্‌ এমাজিং জার্নি ফ্রম প্রেজেন্ট টু ইন্টারন্যাশনাল লিজেন্ট । মালা সেনও ইণ্ডিয়াস ব্যাণ্ডিট কুইন নামে একটি জীবনীমূলক গ্রন্থ লেখেন।
ফুলন দেবীর রাজনৈতিক জগতের গুরু ছিলেন সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়ম সিং যাদব। উত্তর প্রদেশের মির্জাপুর সংসদীয় আসনে বৃ্হৎ সংখ্যক ঠাকুর সম্প্রদায়ের ভোটার ছিল যদিও নিম্নবর্নের মাল্লা ও জুলাহা সম্প্রদায়ের সন্মিলিত সংখ্যার বিপরীতে ঠাকুর ভোটার ছিল কম। স্বাভাবিক ভাবে এই আসনটি দখল করার জন্য ১৯৯৬ সনে সমাজবাদী পার্টি ফুলনকে মির্জাপুর আসনের জন্য টিকেট প্রদান করে। ভারতীয় জনতা পার্টি ও বেহমাই হত্যাকাণ্ডে নিহত হওয়া ঠাকুরের পত্নীরা ঘোর বিরোধ করা সত্বেও তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হন। ১৯৯৮ সনের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ফুলন পরাজিত হলেও ১৯৯৯ সনে মির্জাপুর লোকসভা নির্বাচনে তিনি পুনরায় আসনটি দখল করিতে সক্ষম হন।
২০০১ সনের ২৫ জুলাই তারিখে সংসদ থেকে বের হবার সময় নয়া দিল্লীতে বেহমাই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ফুলন দেবীকে ৩৭ বছর বয়সে ঠাকুর বংশের তিন ছেলে শ্বের সিং, রানা, ধীরাজ রাণা ও রাজবীর এলোপাতাড়ি গুলিতে হত্যা করা হয়। তার দেহরক্ষীও আহতহয়। শ্বের সিং ও রাণা দেরাদুনে আত্মসমর্পণ করেন। ২০০৪ সনে শ্বের সিং তিহার জেল থেকে পলায়ন করেন কিন্তু ২০০৬ সনে পুনরায় কোলকাত পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। সেই সময়ে ক্ষত্রিয় স্বাভিমান আন্দোলন কমিটি নামক সংগঠন ক্ষত্রিয়ের মর্যদা অক্ষুন্ন রাখা ও বেহমাই হত্যাকাণ্ডের বিধবাদের অশ্রুর মর্যদা দেওয়ার জন্য শ্বের সিং-কে সন্মানিত করার করার সিদ্ধান্ত নেয়।
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত যে ক’জন সাহসী নারী যুদ্ধ করে বিজয়ী হতে পেরেছেন, তাদের তালিকায় বেশ উপরের দিকে থাকবে ফুলন দেবীর নাম। আইনের চোখে তিনি সন্ত্রাসী, নিচু জাতের মাল্লাদের কাছে ত্রাণকর্তা। মানুষের কটাক্ষকে বিন্দুমাত্র পরোয়া না করে যিনি নিজ হাতে নিজের দুর্দশার গল্প, বদলে যাওয়ার গল্প, ভদ্র সমাজের চোখে কিংবা সমাজের উচ্চ বর্ণের কাছে তীব্র বিতর্কিত এক যুদ্ধের ইতিহাস লিখে গেছেন এই নারী।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত