আজ ৩০ অক্টোবর কবি পিয়ালী বসু ঘোষের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
নৈঋতে মেহেদি রং
দিন তুমি-বিহীন যন্ত্রণা, নীল সাবালিক দুপুর
ক্লান্ত বালিশ |
সকালের ওম শুকিয়ে নেয় বিগত রাত্রিঘাম,
অনভ্যস্ত জমে যাওয়া রক্তের দাগ অভ্যাসে বিলীন |
বাইফোকালে মিথ্যে প্রেম দৃশ্যের ওপারে দাঁড়িয়ে সাবধানী অনুঘটক,
নো ম্যানস ল্যান্ড |
যতিচিহ্নে ব্যতিক্রমী সেইসব অনুভূতির লেনদেন |
ঝিনুকডোবা নদীর কাছে দুঃখটুকু জমা থাক
পরিযায়ী পালকে মুছে যাক জলকমলের শোক
আবারও ব্যর্থ মিথুন আব্রু খুঁজুক কোনো মগ্ন করবীর আর্ত বুকে…….
সহ্যের ঘুঙুর পায়ে বেঁধেছে বেহুলা
অপরাধের গায়ে ইতি লিখলেই খড়খড়ির এপারে রোদ নিভে যায় একা
একা এক পিয়াসী দুপুর, এলোকেশ সন্ধ্যা, মধ্যরাতের ক্যানভাস
সমর্পন জানে কতটা অভিমান জমলে, নৈঋতে মেহেদী রং ঢেলে দেয় মেঘ
চাঁদ বণিকের গল্প আর আলাপনে জমে অতিনীল মনসার কোপ
বৃহন্নলা স্মৃতি এখন কল্পলৌকিক গল্পগাথা |
ছাইজন্ম
১
সে সময়ে নদী ছিলো না
অমীমাংসিত খাত ছিলো শুধু
কথা ছিলো, একদিন ঘোর বর্ষায় সময়ের গর্ভে পিতার বীর্যপাত হলেই তুমি নদী হয়ে উঠবে
এখন নিজেকে ভীষণভাবে প্রতারিত বুঝে নীল আয়নাদের নদীতে ছুঁড়ে ফেলতে এসেই দেখি
একান্ত ব্যক্তিগত সেই প্রাচীন কথারা
টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে আছে
মৃত্যুর মতন …….
২
মৃত্যু এসে কড়া নাড়ে বুঝি
দুপুরে ফিসফিস করে
রাতে আবদার করে ….
আমি শ্যাওলা ধরা কলঘরে পা টিপে হাঁটি
রান্নাঘরে ছুরি না, প্রাচীন বটিতেই চালকুমড়ো কাটি
ধর মুন্ড সহ গোটা মাছ দেখলেই
ছেলের মুখ ভাসে চোখে
আমি অ্যালপ্রাজোলাম সরিয়ে রাখি
নিজেকেই আড়াল করে বুকের ধুকপুক
নিঃশব্দে অতিক্রম করি তার ছায়া
কড়াদুটি লুকিয়ে রাখি প্রতিরোধে
দরজাকে করে রাখি ঘরমুখী
তবু কে যেন ফিসফিস করে রাতে
আবদার করে দুপুরে
৩
ছাই আর জীবনের দূরত্ব মিনিট পঁয়তাল্লিশ
ছোঁয়া যায় না তবু কোলঘেঁসে দাঁড়িয়ে
একটা করে ভুল ভাঙি আর এক-পা দু-পা এগোই
নিস্ক্রিয় স্বর ভাঙে,শরীরে জাগে সন্ন্যাস
সত্যের খুব কাছে দাঁড়িয়ে বুঝি
আকাশেরও মৃত্যু আছে..জরা আছে
মহার্ঘ্য যৌবন শেষে একজীবন মাধুকরীই আছে সম্বল
৪
তুমি আমার দিকে এগিয়ে এলে
নাকি আমি হেঁটে গেলাম ক্রমশ
মাঝরাতের এ প্রশ্নে কোনও রাজনীতি নেই
চুড়ান্ত সন্ন্যাস চিরদিনই অরাজনৈতিক
আসলে মৃত্যু এক বৈভব
জীবন বাঁচিয়ে আমরা শূন্যে হাঁটা শিখেছি যারা
তাদের জীবনে সব মৃত্যুই জন্ম হয়ে যায়
৫
ছাইজন্ম, আগুন ভালোবেসেছিলে
তাই নির্ভীক সন্ধেতে উড়িয়েছো মুঠো মুঠো ফুলকি
আলোরেখা ধরে কুশলী হেঁটেছো
পথ ও অনুপথকেই করেছো ম্যাজিক মোমেন্ট
জানি সময়ের আস্তিনে সেটুকুও নিভে গেলে
ফুল রেখে যাবে মৃত সভ্যতার পাশে
নামহীন সম্পর্কের ফলকের গায়ে যেমন লিখে রেখেছো ‘রেস্ট ইন পিস’
সেসব কিছু যা আদতে প্রামাণ্য নয়
আমি ‘ বলতে নির্দিষ্ট কাউকে বুঝি না এখন
প্রচলিত অভ্যাসের দিনে যারা বিনা আয়াসে নির্জনতার সাক্ষী হয়
কাঙ্খিত স্মৃতিগুলিকে তারা বুকপকেটের নিভৃতে রেখে …
‘বিষাদ মরশুম ‘ লিখে রাখে
:
আমি ‘ বলতে নির্দিষ্ট কাউকে বুঝি না এখন
আয়না এবং ছায়ার দেওয়াল তোলা বাড়ি ঘিরে
যেটুকু শূন্যতা অবশিষ্ট থাকে …
:
স্নান বিকেলের নিভৃতি ছুঁয়ে … তাকে ‘ ছায়াজন্ম ‘ আখ্যা দিই
কার্ফিউ
ঠোঁটে এখনও গত জন্মের কার্ফিউ
প্রিয় বন্ধুর প্রেমিক কে চুমু খাবার পরে লিখে যাবো জীবনের শেষ শরীরী এপিটাফ
জাতিস্মর শহর …….
আমার স্বেচ্ছা মৃত্যু কে স্বচ্ছন্দে হাঁটতে দিয়ো ইয়েটস’এর দেশে
বৃষ্টি – একটি ব্যক্তিগত এপিটাফ
এখন রোজ নিয়ম করে বৃষ্টি নামে
একরাশ ক্রিসেনথিমাম হাতের মুঠোয় নিয়ে
কপালের ঘন নীল কালশিটে ছুঁয়ে …
চতুরঙ্গ বর্ণময় বৃষ্টি নামে
:
কোজাগরী ধুন তুলে
স্নায়ু যোগ্য কথাগুলি শিথিলতার গভীরতর আয়োজন সম্পূর্ণ করে
:
প্রতিটি অব্যক্ত ইচ্ছে এখন অমোঘ স্পর্শবর্ণাতুর
নীল নির্জনতা বিরহ- মিলনের আশাবরী…
আঙ্গুলের প্রতিশব্দে জেগে ওঠে পুনর্বার
:
এখন রোজ নিয়ম করে বৃষ্টি নামে
নষ্ট দুপুরে আরও একবার বিপজ্জনক ভাবে বাঁচার স্বার্থে
যাপনচিত্র
জীবন ও যাপনের মধ্যে কোনরকম সাযুজ্য রাখিনি ইচ্ছে করেই ।
এখন বিস্তৃত করেছি পরিসরের ব্যাসার্ধ , যাবতীয় বিরহ অভ্যাস …
:
নিজেকে আগলে রেখো জীবন … স্বল্পকালীন শালীন সংলাপে
অনবরত শব্দক্ষরণ … আর স্বয়ংক্রিয় মুহূর্তের আলফাজ মেপে
:
আলনায় পাট করে রাখো ছায়া- শরীর
যাপনের গালিচায় এখন আত্মঅনুসন্ধানের সর্বশেষ চিত্রকল্প
বেলাশেষে
কথা’রা এখন নেমে আসে নৈর্ব্যক্তিক দুর্যোগের মতো
:
সুদীর্ঘ নীরবতা পালনের মধ্যস্থতায়
‘প্রেম ‘ মহানাগরিক সম্পর্কের আখ্যা পায়
:
ছুঁয়ে দেখা হয়ে ওঠেনা আর …
তিনজন্ম পার করে ফিরে আসা প্রথম ঈশ্বর জন্ম মনে করিয়ে দেয়
:
চলে যাওয়া ‘ আসলে অকাল শপথ ভাঙা … জীবনের মধ্যবর্তী ঋণমাত্র
