আজ ৩০ অক্টোবর কবি পিয়ালী বসু ঘোষের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
পানপাত্র ও জ্যোৎস্না
আমার কাছেই এলে
পানপাত্র,
তুমি কি জানো রেসের ঘোড়ার চেয়েও মায়াবী পূর্নিমার চাঁদ
প্রায়ান্ধকার চিলেকোঠায় দাঁড়িয়ে মদির হয়েছিলে কতো
তুমি যে তৃষ্ণার চোরকাঁটায় ডুবে
ভাঙা বোতলে জ্যোৎস্না ভরে রেখেছিলে
চশমার অভাবে খুঁজে পাওনি তাকে
আমাদের অনিদ্র যৌবনের মন্ত্র
বেঁচে থাকার বাউল যন্ত্রণা
মুগ্ধপাঠ কবিতা আর খুব গোপনে ভিতরঘরে, বল্গা হরিণটার ছুট
তুমি কি একা থেকে আরও একা হবার নেশায় লুট করতে চাও চাঁদের ওম ?
কিন্তু প্রতিদিন একের পর এক বেনামী ঠোঁট অবহেলায় চেটে খায় তোমার শরীর
জ্যোৎস্নার ছুরি দিয়ে কেটে ফেলি আমি আমারই শরীর
এরপর লুকিয়ে রাখি গুচ্ছ গুচ্ছ আঙুর বিছানায়
বিশ্বাস না হলে আঙুরবাগানের লুকানো জ্যোৎস্না দেখে এসো ।
নৈর্ব্যক্তিক আলোয় ভাষা লুকোচুরি
অন্ধদের গ্রামে জোনাক জ্বলে রোজ
ওই উঁচু গাছটার ওপরে যেখানে কবি জটায় ধারণ করেন মেঘ
তারও উঁচুতে উঠে জোনাকগুলো আলো দেয়
অন্ধদের আলো দরকার হয় না,
জানতে পেরে গ্রামের মাটিতে সেই আলোর বিন্দুগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে গেল
যেই হেমবর্ণ পাতার মাথায় নেমে এলেন স্বাতী, চিত্রা, অরুন্ধতীরা
কবি টাল সামলাতে না পেরে হাত তুলে বলেন
এসো হাতে হাত রাখি
চোখে চোখ
আর নাভিতে নোঙর করে প্রবেশ করি আলোর শহরে
গুলঞ্চ ঝোপে পাহারায় থাক জোনাক
নিরাভরণ নক্ষত্রের শরীরে নিরাবরণ কবি হিরন্ময় অরণ্য দেখেন
মেধাহীন যৌনতায় অবান্তর ছটফট করেন তিনি
একে একে ফুরিয়ে আসে নক্ষত্রের বাসর
কবির সবটুকুই ছদ্ম একথা সত্য জেনে ফিরে যান নক্ষত্ররা
অন্ধ গ্রামের অন্ধ কবির বিছানায়
টিমটিম করে এখন, একমুঠো অন্ধ জোনাক।
চেনা শব্দের এসরাজ
সেই যে একদিন আমি করমচা আলোয়
টুকটুকে লাল শাড়ি আর ভারী গয়নায় সাজিয়ে
নিজেকে রোদ্দুর বানিয়ে ফেলেছিলাম
তুমি দেখে বলেছিলে “কাদম্বরী দেবী “
সেই রোদে এখন এসরাজ রেখেছি শুইয়ে ….
নির্জনে বেজে ওঠে ওর ব্যক্তিগত গূঢ় কামনা
আমি বড় অকারণে নীল অমৃতের মত রোদমেখলা পরি
প্রতারক বুলিরা পরাক্রান্ত স্বপ্ন প্রসব করে
অহংকারে টান লাগলে সলমাজরি সুজন ছায়া দেবে বলেছিলো
এখন তীব্র আলোতে মাখামাখি হয়ে আছে তার ‘বেশ ‘আর ‘ছদ্মবেশ ‘
ইন্দ্রিয়ে ইন্দ্রিয়ে ,অভিলাষী বর্ষণে যাবতীয় স্বরলিপি প্রতিবেদনায় গাঢ় হলে
সোনার নূপুর খানি ভেসে থাকে মায়াকাজলে
তুমি কেমন শিল্পী হয়ে উঠলে ধীরে
আলো ছায়া শিলুয়েটে বন্দী করলে ছাইভস্ম দিন
পরাঙ্মুখ নদীজলে ভেসে বেড়ালো তোমার বাসনাকুসুম
আর আমাদের অবহেলার আখ্যানমঞ্জরী
পদ্মগোখরো জীবন
রেখে যাচ্ছি উদ্ভিন্ন যৌবন ,ফুল আর পরাগ
তোমার চিবুকের সুনিপুণ কারুকাজ স্মৃতিবন্ধের মত জড়িয়ে ধরছে পা
ফিরে যাচ্ছি আঁচলের বেয়াড়া গিঁট খুলে কোনো বেয়াক্কেলে বিকেলের ডাকে
ঘূর্ণি জলে গোলাপগন্ধী নৌকা বাঁধা ,আঙ্গুলে এখনও শিশুবেলার বাঁশী
জানি এভাবেই পেরিয়ে যাবো মেঘ ও বিদ্যুৎ
তোমার টসটসে ঠোঁটের চুমু
এভাবেই কুৎসিত জীবনে ইতি টেনে নিঃশব্দে
নিজেই নিজের গুপ্তঘাতক হবো
তারপর একদিন,কোনো একদিন খোলস ছাড়ার দিন এলে
অক্ষরের চৌহদ্দি পেরিয়ে শীতঘুমের ছোবল নেবো জিভে
পদ্মগোখরো জীবনে দুধকলার বড়ই অভাব
মন্দিরের ফাটল খুঁজে লুকিয়ে নেব বিষদাঁত শিস আর অলীক সময়
নিরুক্ত
এই এলোচুল রাত্রি তোমার
এই আকণ্ঠ অমৃত তোমার
এতো যে আগুনলিপি,অক্ষরে অক্ষরে প্রেম
এই যে মায়াময় নষ্টনীড়
এই শুভেচ্ছার রুমাল -সব তোমার একার
আমার পরাক্রান্ত আলোগাছ
আমার নীলবিষ সংগীত,আমার জোনাক জানে ব্যঙ্গের ইতিহাস
আমার জীবন থেকে নোনাজল ধুয়ে গেলে
বুকের ওপর ঝুঁকে পরে উড়ন্ত উজবুক মাছ
শব্দের বারান্দা জুড়ে সময়ের কোলাজ
দৈনিক স্পর্শে জাগে গতানুগতিক ভোর
কথারা যদিও মূলস্রোতে ফেরে
ভালোবাসা কেন যে ফেরেনা !
সবটা পরাবাস্তব নয়
এসো,স্ত্রী বিষয়ক চিহ্নগুলো শরীর থেকে ছেঁটে
নৈশ ফোয়ারার উপর ফেলি পা
শান্ত কিম্বা স্যাঁতস্যাঁতে অভিজ্ঞতা প্রাপ্তবয়স্ক খাটের কোণায় জমা রেখে
জ্যামিতিক রোদ্দুরে খেলি আলোছায়া খেলা
ত্রিভুজ গভীরে ঘুমোক ভূতুড়ে রাত পেঁচারা….
অন্ধ ঈশ্বর ইঙ্গিত দিচ্ছেন
যাদুলাস্যে ভর করে বাতাসে উড়ছে সোনালী আঁশ
কিন্তু আর যে প্যারামবুলেটর চাইনা !
বেড়ালছানার মত আঁচড়ে দেখি বরং
তোমার লোমশ বুক
ডানা ছেঁটে শুঁড়িপথে খুব গোপনে
তোমাকে সেঁকে নিতে চাই এবার আমার উনুনে।
অমরাবতীর চাঁদ
উভচর জীবন আমার
ডাঙায় বাঁচি
জলে ভাসি
কখনও একা,পরিপাটি
কখনও পিচ্ছিল পথ গুটিপোকার সাথী
প্রজাপতি শরীর পাবার স্বপ্নে,ছুঁয়ে দি মৃত যুবকের ঠোঁট
জ্যোৎস্না এসে চুমু খায় প্রেমে, অপ্রেমে, মোহে
জীবাশ্মের উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
আকাশের কোলাজ দেখি
পরাবাস্তব বৃষ্টিতে ভেজে অদরকারী মেঘ
একা বসে দ্রাঘিমার দূরত্ব মাপে
অমরাবতীর চাঁদ
দৃষ্টিকোণ-১
ছুটন্ত দৃশ্যপটে অস্তিত্বের দূষণ
তবুও তোমাকে দেখছি
কাঁচের দেওয়াল ভেদ করে
যতটা দেখা যায়
আমার বাড়ির নিরাপদ
নিশিকুটুম্বরা বলছে
তুমি তো পরঘরণী
তুমি তো ঘর গড়নি।