স্বপ্ন সায়রের নিদ্রায় / অঞ্জনা দে ভৌমিক
……………………………………………………
এ ঘর থেকে অন্য ঘরে
হয়তো কিছু সত্য হবে, নয়তো সব অনুমান মিথ্যা।
বিজন পথে সারাবেলা
কুড়িয়ে নেওয়া ঝরাপাতায় যাপনের গভীরে জীবনের কথা।
স্রষ্টার চোখে চোখ রেখে, ভুলগুলি শুধরে নিলে
ঢেউয়ের পরে ঢেউ
বাতাস বাতাস খেলা
দূরে ছায়াপথে, স্বপ্ন সায়রের নিদ্রায় যে ছিল দাঁড়িয়ে
সে কি তা জানে!
দহন যখন অন্তরে, সব আলোটাই স্বপ্ন কেবল
পৃথিবীর রাতে।
এ ঘর থেকে অন্য ঘরে ভিতর আলো জ্বলবে যখন
সেই তো আবার আসবে ফিরে নতুন পাতার সৃষ্টিতে।
হয়তো কিছু সত্য হবে, নয়তো সব অনুমান মিথ্যা!
গোঁসা / অঙ্কুর কুণ্ডু
………………………………………
যাওয়ার কথা লুকানো থাক
পর্দা ফেলি ঘুমের আড়তে
বস্তা বস্তা চোখের অসুখ
হাঁটতে থাকি তোমার ট্র্যাকে।
জীবন যখন বইয়ের বিছানা
লম্বা শোওয়া, চওড়া নয়
ঠোঁটের থেকে খসলে কথা
তুমিই দূর, তারা খুব নিজের হয়।
ভাঙ্গার কথা বলব আবার
যখন তোমার ফুটনোটেতে
ফুসকুড়ি আর চন্দন বাটা
জাগাবে ফাটল আমার রাতে
ছোট্ট একটা চিমটি হয়ে !
তখন তুমি এক মোড়েরই রাজকন্যা
আমার খেউড় পরবাসে
কনকচাঁপা দিয়ে বোনা।
বিপদ ছিল মিথ্যে বলায়
তাইতো গভীর সত্যি লুকায়
ক্যালেন্ডার আর ঘড়ির ফাঁকে
ক্রুশবিদ্ধ যীশু ঝোলায়।
ঝুলতে থাকে শরীর তোমার
শুকোতে থাকে আমারও নজর
গ্লুকোমা ভেবে চোখের ডাক্তার
আলোর ও’পাশে চোখ রাঙায়।
ছাতিমের আর সময় কোথায়
কোথায় সময় ছাতিমতলায়
ভুল ভেঙে যদি ভালোবাসা দাঁড়ায়
গলা ডুবে যাবে ঋণের ভেলায়।
এই বেশ ভালো ছিল
ভালো ছিল ভালো থাকায়
লাইন করে তোমার বাসায়
চেয়ারখানি গোঁসা বাধায়।
আমরা একদিন / অমৃতা রায় চৌধুরী
………………………………………………………………..
যে কোনও দিনই কথা হতে পারে
কবে? কিভাবে? কোথায়?
সেটা ঠিক জানিনা..
তবে,
আমি কিন্তু নিশ্চিত! একদিন এমনটা ঠিক হবে..
আমরা দুজনে দোকান থেকে কিনে আনব চাল, ডাল, মুড়ি, চানাচুর,
একসাথে রান্না করব,
এক থালায় চেটেপুটে খাব,
কাজের মাসিকে ছুটি দেব,
ঘুরে বেড়াবো পাড়ার প্রতিটা গলি,
বৃষ্টি এলে তবেই ফিরব বাড়ি—-
প্রচন্ড জোরে বিদ্যুত চমকে উঠলে
দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরব।
কিন্তু..
তখুনি যদি হঠাৎ মনে পড়ে যায়!
যে আমাদের একদিন কথা হওয়ার কথা ছিল!
কত কত না বলা সব কথা!
কি বলবো তোমায় তখন?
তুমিও বা কি বলবে?
কিচ্ছু না।
দুজনে ছুটে চলে যাব ছাদে,
বৃষ্টিতে ভিজব
আমার জ্বর হবে।
হ্যাঁ, আমারই হবে, তোমার না!
তুমি আমার কপালে জলপট্টি দেবে ,
আর আমি তোমার হাত ছুঁয়ে ঘুমিয়ে পড়ব।
তখন যা বলার বোলো।
আমি শুধু তোমার হাত ছুঁয়ে থাকব।
কেঁচো বৃত্তান্ত / অনন্যা গোস্বামী
……………………..
সকাল হলেই কেমন একটা ভোর ভোর গন্ধে
ভরে ওঠে ফুসফুসের ডেরা।
চতুর্পাশে কিচিরমিচির যতো বাতাসের থলি,
কেঁচোখোর বলে গাল দেয় একে-অপরকে।
সবুজের কম্পাস দোলে
আগন্তুকের অঙ্গুলি হেলনে।
ভূগর্ভের অকস্মাৎ আন্দোলনে ঊষ্ণ হতেই পারে ক্ষুদ্র সমতট।
কখনো হরিৎ, কখনো লোহিত।
রাগে, না লজ্জায়,
না নেহায়েৎ উত্তপ্ত অনুবন্ধে…
সে বোধের গণ্ডি পেরোয়নি এমনকী মগজের দ্বাররক্ষীদ্বয় স্বয়ং!
ক্রমাগত কর্ষণে
একে একে উন্মোচিত হতে থাকে খনির শরীর।
উত্তোলনের নগ্ন প্রতিযোগিতায় শূন্য থেকে শূন্যতর হয়
জীবাশ্মের সাজানো সিন্দুক।
তাতে জ্বালানি ফুরোয় না।
গনগনে মধ্যাহ্নে তেড়ে আসে লাভা,
ফুঁসে ওঠে বুকের বাতাস।
যতটা নিদারুণ নিষ্পেষণে লুকানোর প্রয়াস ছিল ভস্মের তলায়,
ততটাই রুখে দাঁড়ায় লু হাওয়ার মতো।
লোভ দেখানো, চোখ রাঙানো, লাশ টাঙানো গল্পের ভলিউম শেষ।
ভোর-ভোর সকাল গেছে চলে।
এখন সকাল-সকাল ভোর হয়।
ঘুমভাঙা স্বপ্নেরা কানামাছি ভোঁ ভোঁ….
ভালোবাসার রাতগুলো একে-একে খসে পড়েছে উল্কাপিণ্ডের মতো।
পাখির চঞ্চুতে এখন কেবল অভালোবাসা।
প্রেমিক বুঝি???
যতসব কেঁচোর দল!
