| 20 এপ্রিল 2024
Categories
এই দিনে কবিতা সাহিত্য

পহেলী দে’র একগুচ্ছ কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

আজ ২৯ জুলাই কবি পহেলী দে’র শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।


 

 

স্মৃতির বীথি তলে

মৃত্যুই জীবনের শেষ গন্তব্য।
মৃত্যুকে আহবান করে জীবনের যত আয়োজন।
এত আরাম, এত আয়েশ, বহু যতন, কত রতন
কনিষ্ঠ আঙুল ধরে, ছোট্ট ছোট্ট পায়ে পৌঁছে দেয়
মরণের মোহন দুয়ারে।

যে যায় সে কি আর পেছন ফিরে চায়?
স্মরণে, বরণে, শোকে, সন্তাপে তার কী আসে যায়?
কত স্মৃতির বীথি বপন করে, মিলেছে সে অনন্ত সম্ভারে।
অশ্রু সাগরে, কীর্তির কোলাহলে বৃথাই খুঁজি তারে।

তবুও মন মানে না বারণ,
সংসার আঁকড়ে খোঁজে প্রিয়মুখ।
জন্মের আদরে লালিত মৃত্যু
মেনেও মানতে পারি না তারে।
যদি ভিন্ন কোন সুরে বাজে সেই চিরচেনা বাঁশি,
আবার হাঁটিবে পথ পুরনো সে পায়ে,
আবার হাসিবে বর্ণীল অধরে সেই পুরাতন হাসি।
চোখে চোখে কানামাছি আঁকবে আবার
কাঙাল ভালোবাসাবাসি।

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

টুকরো টুকরো পহেলি

আমার সকাল সন্ধ্যাগুলো অসুখের বিছানায় লুটোপুটি খেলে..
ঘুড়ি বালকেরা এক তুড়িতেই কুয়াশার পাহাড় ভেঙে রোদের পাঠশালায় জীবনের ধারাপাত শিখে ..
আমার রং বেরঙ্গের শিশুবেলার ছায়া পড়ে পূব দেয়ালে…
হাওয়ার খুশিতে উড়িয়ে দিতে যে জীবন একদা তুলে রেখেছিলাম আদরিনী নবান্নের সোনাঝড়া
বাতায়নে..
আজ সেখানে ধূলোদের সঙ্গে কানামাছিতে মেতেছে বালিকাবেলার ধুসর শিশুলিপি…
এখন শুধুই ফুরিয়ে যাওয়া..মিলিয়ে যাবার পালা ….

 

ভীষণ বিষণ্ণ একাকী বিকেল আমার হিম রোদ্দুরে মিলিয়ে গেল….
এখন শুধু ধুসর চাহনিতে চেয়ে আছি গোধুলীর চোখে …
তারপর মিলিয়ে যাব অন্তত অন্ধকারে …

 

নিজের অজান্তে অভিমানী সেতারটা নতুন সুরে ভিজে যাচ্ছে ,
হেমন্তের আঙিনা রোদের বদলে ফসলের নামাবলীতে বৃষ্টির ছায়া মেখে পাড়ি দিচ্ছে সময়ের মহাসাগর।
কুমারী নদীরা মাথায় ঘোমটা পরে জলরঙ দেহের লাবণ্য বিকিয়ে দিচ্ছে প্রজননের হাটে।

যেমন খুশি তেমন সাজোতে প্রথম স্থান অধিকারী স্কুল ফেরত বালিকাটিও জীবনের সব রঙ হারিয়ে শীতের দাওয়ায় এক টুকরো রোদ খোঁজে ।

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

 

মেঘের আয়না

৪.

দক্ষিণের জানলাটা কেমন আছে মা?
ওপাড়ের সাজনা গাছটি, কৃষ্ণচুড়া গাছটি, পুঁইলতাটি ভালো আছে তো ?
কাঁকরোল ক্ষেতের ঝোঁপে দোয়েলের বাসাটি কি
এখনো রয়েছে?
মা পাখিটি কি ছানাদের ক্ষুধাতুর ঠোঁটে খাবার গুঁজে দিতে এখনো চঞ্চল হয়ে ওঠে?
অতিবৃষ্টিতে ওরা উপড়ে যাবে বলে তুমি কি এখনো অস্থির হয়ে ওঠো?

তুমি কেমন আছ মা?
শুনেছি তোমাকে ঘিরে থাকা সবুজ ছায়ারা বেহুলার ভাসানে জলের সংসারে সন্ন্যাস নিয়েছে।
জানি তোমার খুব একলা লাগে,
আমার জন্য মন কেমন করার কষ্ট চেপে রেখেও হাসিমুখে ঘরকন্নায় মনোযোগ দাও।

আমিও ভালো নেই মা
কতদিন তোমার হাতে খাই না,
তোমার গলা জড়িয়ে ঘুমোয় না।

দক্ষিণের জানলাটিকে দক্ষিণে রেখে আমি তোমার বুকে মাথা রেখে শুতাম,
নদীর বাম অলিন্দে ঘুমন্ত টলটলে নিবিড় জলপরীটি যেমন
দুই পাড়ের পড়শি পাড়ানী
তেমনি আমাদের মধ্যিখানে নিরালায় শুয়ে থাকে তৃতীয় মহাশূণ্যের এক নীল নক্ষত্র ,
যার অশেষ আলোয় ভিজবে বলে আমাদের সমুহ স্বপ্ন খড়কুটোর মত উড়ে যাচ্ছে ,
পলিমাটির পরতে পরতে নতুন শস্যদানার উত্তরাধিকার বপন করছে।
জঠর জমিনে অঙ্কুরিত স্পদনটি ধ্বনিত হলেই
হৃদপিণ্ডের পাতাল প্রহরী আগ্নেয়গিরিটি তোমাকে স্পর্শ করার জন্য ধোঁয়ার মোহনায় সাঁতার দিত।
তখন আমি খুব নিরবে আমার প্রথম পৃথিবী তোমার তলপেটের জলমহল ছুঁয়ে মনের সলতেতে বারুদ মেখে দিতাম।
আর মনে মনে ভাবতাম কত ব্যথার লাঙলে নিজেকে খনন করে মাতৃত্বের ক্যানভাসে ফুটিয়েছ নতুন কলাবতী স্বপ্ন।

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত