জঙ্গলমহলের ক্যানভাস
ট্রাকের শব্দ ব্লটিং পেপারের মতো শুষে নেয় ঝড়ের আওয়াজ, খুন খারাপি রক্ত পড়ে থাকে মাটিতে। এলোমেলো ছড়িয়ে থাকা লাশের রক্তরঙ আর নরম মাটিতে টায়ারের গভীর ডোরাকাটা ধূসর দাগ উঠে আসে নববর্ষের ক্যালেন্ডারে, সেনাবাহিনীর গ্লাসে। এমনি ভাবেই বছর কাটে, মাস যায়, দিন যায়; জঙ্গলমহলেখড় পোড়ে,খাঁক হয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। সমাজশত্রু সন্দেহে নির্বিরোধী মানুষের লাশ!
জঙ্গলের আলোছায়ার ফোকর দিয়ে নেমে আসে সৈনিকের উর্দি। আমার ভাই-এর রক্ত বয়ে আনতে আমাকেই পাঠায় মহামান্য সেনাধিপতি। এমনি হাজারো সংঘাত আর তীরধনুকের ব্যারিকেডের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে আমার ক্যানভাসে তৈরী হয়ে যায় দুর্দান্ত এক জঙ্গলমহলের ছবি! আকাশ থেকে রক্তের ফোঁটা ঝরে পড়ে জঙ্গলমহলের জন্যে নির্মিত ক্যানভাসের অমানবিক চিত্রকলায়। বিশিষ্টজনের হেলিক্যাপটার নেমে এলে পর্দা সরিয়ে উন্মোচিত হয় জঙ্গলমহলের রক্তাক্ত ক্যানভাস, অমানবিক সময়কে যৌতুকে আর ভাষণে আলোকিত করবার মহৎ চতুর ভ্রান্তি। এক নগ্ন অপচেষ্টা!
রাত নেমে আসে জনহীন প্রান্তরে। মহুল পিয়ালের গোপনে গোপনে জেগে ওঠে অগ্নিকুন্ড, বেজে ওঠে দ্রিদিম দ্রিদিম ধামসা মাদলের বোল!
জন্ম ১৯৫৭ সালে, কোলকাতায়। কাঁচরা পাড়ার কাছে জোনপুর হাই স্কুল থেকে হায়ার সেকেন্ডারী পরীক্ষায় পাশ। তার পর সে ভর্তি হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর স্নাতক কোর্সে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর স্নাতক হওয়ার পর স্টীল অথরিটি অফ ইণ্ডিয়ার ভিলাই স্টীল প্লান্টে ১৯৮০ তে চাকুরীতে যোগদান। তখন থেকেই মধ্যপ্রদেশ / ছত্তিশগড়ের প্রবাস জীবন। চাকুরী জীবনে পাওয়ার প্লান্ট, রোলিং মিল ও প্লান্টের বিভিন্ন কাজকর্মে প্রযুক্তিবিদ ও আধিকারিক হিসেবে দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা । ২০১৭ সালে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার পদে ভিলাই স্টীল প্লান্টের চাকুরীতে থেকে অবসর গ্রহন। বর্তমানে ভিলাইতেই বসবাস। ভিলাইতে থাকাকালীন সময়ে কিছু কিছু সাহিত্য, সাংস্কৃতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন, ‘মধ্যবলয়’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাকালীন অন্যতম সম্পাদক ছিলেন। একসময়ে ‘অরণ্য রুদ্র’ ছদ্মনামে কিছুদিন লিখেছিলেন। অবসরের পর নিয়মিত লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন।
লেখালেখির ক্ষেত্র মূলত কবিতা হলেও , বিভিন্ন পত্র পত্রিকাতে সমরেন্দ্রর বিভিন্ন গল্প ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ –
তবু স্পন্দমান পথ (১৯৮৬);
সময়েরপদাবলী / স্রোতে স্রোতে ভাসমান ভেলা (১৯৮৯);
হাওয়া শিকার (১৯৯৫);
পিতৃস্মৃতি, উদ্বাস্তুশিক্ষিকা ও অন্যান্য কবিতা (২০০৫);
হাফিজের ফেয়ারওয়েল (২০১৫);
অনন্ত জলশব্দে আমি (২০১৬) ।
সম্মাননা- টেগোর ভিলেজ সম্মাননা– ২০০৯; বাসভূমি সাহিত্য সম্মান- ২০১৮