Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

নক্ষত্রের আলোয় বিনয় মজুমদার: সম্পাদকীয়

Reading Time: 2 minutes
১৭ সেপ্টেম্বর বাঙালি কবি ও ইঞ্জিনিয়ার বিনয় মজুমদারের জন্মদিন। তিনি মায়ানমারের মিকটিলা জেলার টোডো নামক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম বিপিনবিহারী মজুমদার, মায়ের নাম বিনোদিনী। তারা ছিলেন ছয় ভাই-বোন এবং তিনি ছিলেন সবার ছোট। তার ডাক নাম মংটু। ‘ফিরে এসো চাকা’ ছিল তার অতি জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ।
১৯৫৮ সালের জানুয়ারি মাসে, অর্থাৎ ছাত্রজীবন সমাপ্ত হবার কয়েকমাস পরেই এনবিএ থেকে প্রকাশিত হয় ‘অতীতের পৃথিবী’ নামক একটি অনুবাদ গ্রন্থ। এই বছরেই গ্রন্থজগৎ থেকে বের হয় তার প্রথম কাব্য গ্রন্থ ‘নক্ষত্রের আলোয়’।
বৌলতলি হাই-ইংলিশ স্কুলের ম্যাগাজিনে প্রথম তার কবিতা প্রকাশিত হয়। ত্রিপুরা গভর্নমেন্ট কলেজে অল্প কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর স্থির করেন শুধুই কবিতা লিখবেন। লেখা শুরু করেন ‘ফিরে এসো চাকা’। এই সময় তিনি দুর্গাপুর স্টিল প্লান্টেও কিছুদিন কাজ করেন। তখন থেকেই মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ দেখা যায়। ১৯৬৬ সালে লিখতে শুরু করেন ‘আঘ্রানের অনুভূতিমালা’ ও ‘ঈশ্বরীর স্বরচিত নিবন্ধ’। বিশটি কাছাকাছি কাব্যগ্রন্থ লিখেছিলেন। যার মধ্যে ‘ফিরে এসো চাকা’ তাকে সবচেয়ে বেশি খ্যাতি দিয়েছে। এছাড়াও ‘নক্ষত্রের আলোয়, গায়ত্রীকে’, ‘অধিকন্তু’, ‘ঈশ্বরীর’, ‘বাল্মীকির কবিতা’, ‘আমাদের বাগানে’, ‘আমি এই সভায়’, ‘এক পংক্তির কবিতা’, ‘আমাকেও মনে রেখো’ ইত্যাদি রচনা করেছিলেন। ১৯৬২-৬৩ সালে বিনয় মজুমদার হাংরি আন্দোলন-এ যোগ দেন এবং তার কয়েকটি কবিতা হাংরি বুলেটিনে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে ১৯৬৩ সালের শেষ দিকে তিনি শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়-এর কার্যকলাপে বিরক্ত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে একটি হাংরি বুলেটিন প্রকাশ করে কলকাতা কফিহাইসে বিলি করার পর হাংরি আন্দোলন ত্যাগ করেন।
তিনি দীর্ঘ রোগভোগের পরে ২০০৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে তাকে রবীন্দ্র পুরস্কার এবং একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হয়।
 
বিনয় মজুমদার ‘নক্ষত্রের আলোয়’ পথ চিনতে চিনতে নিজস্ব বোধির মুখোমুখি হয়ে বুঝে নিয়েছিলেন ‘মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়’।
কবিতার অবয়বে তিনি বার্মায় কাটানো ছেলেবেলার ধূসর স্বপ্নমালা, উদ্বাস্তু হয়ে জল্লাদবাহিনীর চোখ এড়িয়ে এপারে আসার দুঃস্বপ্নের জ্বালা, চাকরির মুখে ছাই দিয়ে কবিতাসর্বস্ব জীবন বেছে নেওয়া—এসবই কবিতায় এসেছে নানান প্রতীকে, এমনকি কখনও কখনও তা যৌনতার প্রতীকেও ধরা দিয়েছে। ভাঙা সময়ের বুকে নখের আঁচড় কেটে বলেছেন–
‘ভালবাসা দিতে পারি, তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম?
লীলাময়ী করপুটে তোমাদের সবই ঝরে যায়—’
গণিত নিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তে এসে ‘হদয় অবাধ্য পুরুষের’ মতো প্রেমে পড়েছিলেন, আর তারপরই এই গণিতবিদের নবজন্ম হল ‘বাল্মীকির কবিতা’য়।
তিনি কবিতায় আনলেন গণিতকেও। দেখালেন গণিতসূত্রও কবিতা হয়ে উঠতে পারে। হাংরি জেনারেশন আন্দোলনে উলটপালট করে দিলেন কবিতার ভাষা। তারপরেও তিনি বলেন–
‘কবিতা বুঝিনি আমি; অন্ধকারে একটি জোনাকি
যৎসামান্য আলো দেয়, কোমল আলোক–‘ এতটাই বিনয়ী তিনি।
বিনয় তাঁর কবিতায় যৌনতার অনুষঙ্গ ও আখরগুলিকে অস্বীকার করেননি, আবডাল খোঁজেননি। এক্ষেত্রে তাঁর সতীর্থ নবারুণ ভট্টাচার্যের কথা মনে আসে, তাঁর কবিতার কথা। লোকনাথ ভট্টাচার্যের কথা। বিশেষ করে ভুট্টা সিরিজের কবিতাবলি। যৌনতাও তো নতুন না কবিতায়। তবে বিনয়ের প্রকাশভঙ্গি নতুন, তাতেও থাকে ভাঙা সময়ের অন্বেষণ। সেখানেই বিনয়ের কৃতিত্ব।
কবি বিনয় মজুমদারের জন্মতিথিতে ইরাবতী প্রকাশ করছে বিশেষ সংখ্যা ‘নক্ষত্রের আলোয়’। বিশেষ এই সংখ্যাটি সম্পাদনা করেছেন ইরাবতীর অতিথি সম্পাদক এহসান হায়দার। তার নিরলস শ্রম ও সম্পাদনায় বিশেষ সংখ্যাটি বিশেষ একটি সম্পদ হয়ে থাকবে বলেই বিশ্বাস করি। ইরাবতীর পাঠকদের এই সংখ্যাটি ভালো লাগলেই আমার প্রচেষ্টা স্বার্থক হবে।
এহসান হায়দার সহ ইরাবতী টিমের সকলের প্রতি রইল অসংখ্য কৃতজ্ঞতা।
 
অলকানন্দা রায়
সম্পাদক, ইরাবতী
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>