দিনেশ কুশওয়াহ-র দুটি হিন্দি কবিতার অনুবাদ । স্বপন নাগ

দিনেশ কুশওয়াহ
উত্তর প্রদেশের দেওরিয়ার সতরাঁওয়ের একটি গ্রাম গহিলা। ১৯৬১ সালের ৮ ই জুলাই এই গ্রামে জন্ম কবি দিনেশ কুশওয়াহর। কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর। রাহুল সংকৃত্যায়নের ওপর গবেষণা করেছেন। ছাত্রাবস্থায় বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষরূপে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের রিওয়ার অবধেশ প্রতাপ সিং বিশ্ববিদ্যালয়ের জনজাতীয় অধ্যয়ন কেন্দ্রের হিন্দি বিভাগের অধ্যক্ষ। অন্ত্যজ, খেটে খাওয়া মানুষের কন্ঠস্বর উচ্চারিত হয় তাঁর কবিতায়। প্রকাশিত একমাত্র কাব্যগ্রন্থের নাম ‘ইসী কায়া মে মোক্ষ’। তাঁর সৃষ্টির স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৪ সালে কবি দিনেশ কুশওয়াহকে ‘নিরালা সম্মান’-এ সম্মানিত করা হয়।
সাপ
জীবন বড় কঠিন রে বেটা :
যেন ঝাঁপির সাপেদের শুনিয়েই
নিজের মনে বিড়বিড় করে বৃদ্ধ সাপুড়ে —
জীবন তামাশা নয়,
তবে তামাশাও খুব জরুরি এ জীবনে।
মোহাচ্ছন্ন সাপেরা ভাবল —
সত্যি সত্যিই সাপুড়ে
জীবনকে যেন দূরবীন দিয়ে দেখে।
সে রাতে প্রথমবার
সাপিনীর স্বপ্নে ভেসে উঠলো সাপের উদাস চোখ,
আর ভেসে উঠলো ক্রমাগত লাঠি-ডান্ডার আঘাত।
সাপিনী বুঝেছিল,
যতই আকর্ষক হোক সাপের চোখ —
সুবিধেবাদী আর ত্রস্ত মনকে বাঁধতে পারে
এমন কোন চোখ পৃথিবীতে নেই।
সাপ জানে
কিভাবে অন্যায় অভিযোগে বাধ্য হয়ে তাদের
লুকিয়ে থাকতে হয় আড়ালে, গর্তে।
অথচ কামড়ায় তো সব প্রাণীই —
পিঁপড়েই বলো কিংবা মানুষ !
সাপ জানে
কিভাবে সমাপ্তির দিকে হেঁটে যায়
একটি জাতির ইতিহাস ;
জানে, তাদের নিয়ে কেন বানানো হয়
আজব কুৎসিত সব গালগল্প !
মারার সময় কেন থেঁতলে দেওয়া হয় মাথা,
সাপ এও জানে —
শুধু মুখ দিয়ে এ দুনিয়ায় লড়াই করা যায় না।
ক্ষিপ্রতা, দংশন আর ফোঁস করার ক্ষমতা সত্ত্বেও
সাপ জানে মেরুদন্ডহীন জীবনের দুঃখ !
আরো পড়ুন: গোরখ পান্ডে-র দুটি হিন্দি কবিতার বাংলা অনুবাদ
কমেনি কারো মৃত্যুর মূল্য
অনেক ছোট হয়ে এসেছে আজকের দুনিয়া
কমে এসেছে আমাদের দূরত্ব
কিন্তু কমেনি আমাদের ভয়।
এ পৃথিবীতে আজ কিছুই অলঙ্ঘ্য নয় আর
এই সেদিনই ভেঙে গেছে বার্লিনের প্রাচীর
মন থেকে ভাঙতে চেয়েছে ওরা দুজন —
তবু সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে
আমাদের দু’ঘরের মধ্যবর্তী দুর্ভেদ্য দেওয়াল।
দেশ পেয়েছে স্বাধীনতার স্বাদ
অথচ মুখে এখনো লেগে আছে তেতো বিস্বাদ।
নরম হাতে মুছতে চাই চোখের দু’কোণ
ছুঁতেই সাত সমুদ্রের ওপার হতে
বিভাজনে কে যেন বলে ওঠে, হ্যালো !
তবু সেই মানুষটির জন্যে আজও
আমাদের উৎকণ্ঠা কমেনি একচুলও।
আজ দুনিয়া জুড়ে বেড়েছে আমাদের বার্তালাপ
অথচ কমেনি প্রশ্ন
আদান-প্রদানও বেড়েছে ঢের
কমেনি কিন্তু যুদ্ধ।
বদলেছে যুদ্ধের অস্ত্রও
একটি বিষয় কিন্তু বদলায়নি একদম —
যুদ্ধে মারা যায় আজও মানুষ !
দুনিয়া জুড়ে বেড়ে গেছে হত্যার হার
অথচ
একটুও কমেনি কারো মৃত্যুর মূল্য !
—————————————————————–
‘সাঁপ’ এবং ‘কম নহী হুয়া কিসী কা মরনে কা মূল্য‘ এই শিরোনামের দুটি মূল হিন্দি কবিতার বাংলায়ন : স্বপন নাগ

অনুবাদক