| 24 এপ্রিল 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত কবিতা

দুই অসমিয়া কবির পাঁচটি অনুবাদ কবিতা । বাসুদেব দাস

আনুমানিক পঠনকাল: 4 মিনিট

এক সময় অসমের নাম ‘কামরূপ’ ছিল। আরও প্রচীনকালে কামরূপ ছিল ‘প্রাগজ্যোতিষ’ নামে। উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যটি হিমালয়ের দক্ষিণে অবস্থিত। এর অভ্যন্তরে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদ, বরাক উপত্যকা এবং উত্তর কাছাড় পর্বতমালা। উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং মেঘালয় রাজ্য দ্বারা অসম বেষ্টিত এবং অসম সহ প্রতিটি রাজ্যই উত্তরবঙ্গের একটি সংকীর্ণ অংশ দ্বারা ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া অসমের আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে ভুটান ও বাংলাদেশের সঙ্গে। চা, রেশম, পেট্রোলিয়াম এবং জীববৈচিত্রের জন্য অসম বিখ্যাত। অসমিয়াদের প্রধান উৎসব হলো বিহু। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে অসমিয়ারা বিহু পালন করে। বিহু তিনটি- ব’হাগ (রঙালি) বিহু, মাঘ (ভোগালী) বিহু আর কাতি (কঙালি) বিহু। অসমীয়া সাহিত্য অন্য সমস্ত ভাষার মতো অসংখ্য উপন্যাস, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ এবং অন্য অন্য বিষয়ক গ্রন্থে পূর্ণ। অসমীয়া সাহিত্য ভাষাটির বর্তমানের সাহিত্য সম্ভার ছাড়াও এর ক্রমবিবর্তনের সময়ে সৃষ্টি হওয়া পুরানো অসংখ্য সাহিত্যের সম্ভারে পরিপূর্ণ, যে ধারার আরম্ভ ৯ম-১০ম শতকের চর্যাপদ থেকে আরম্ভ হয়েছিল বলে ধরা হয়। অজিৎ বরুয়া, অনন্ত কন্দলী,অনিরুদ্ধ কায়স্থ, অম্বিকাগিরি রায়চৌধুরী, আনন্দরাম বরুয়া , ইমরান শাহ, কমলাকান্ত ভট্টাচার্য্য, জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা, ভোলানাথ দাস, মফিজুদ্দিন আহমদ হাজারিকা, মহেন্দ্র বরা, মাধবদেব, রবীন্দ্র সরকার, রমাকান্ত চৌধুরী, বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা, স্নেহ দেবী, হরিবর বিপ্র, হীরেন ভট্টাচার্য সহ আরো অনেক অসমীয়া ভাষার উল্লেখযোগ্য কবি আছেন। এই সময়ে অসমীয়াতে কি রকম কবিতা লেখা হচ্ছে কারা লিখছেন, এই সময়ের দুই কবি ড.প্রাঞ্জল জ্যোতি দত্ত সামসুল হকের কবিতা নিয়ে আজকের আয়োজন। ইরাবতীর পাঠকদের জন্য মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ করেছেন অনুবাদক বাসুদেব দাস


 

 

poets from assam,Irabotee.com

ড: প্রাঞ্জল জ্যোতি দত্ত ১৯৭৪ সনে অসমের যোরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ। যোরহাট চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক।প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘তোমার বাটত তুমি অকলশরীয়া’।


 

 

মুখ

 

একটি মুখ থেকে অন্য একটি মুখে

বড় নীরবে চলে যেতে পারে মুখগুলি

এরকম একটি পথ,যে পথে ফিরে আশা যায় না

মুখগুলি তৈরি করে নিতে জানে সেই পথ

তুফান থেকে রোদে অথবা

রোদ থেকে তুফানে,মুখ হারায় মুখ

লুকিয়ে পড়তে চাওয়া অন্য একটি মুখের ছায়া

মুখগুলি বয়ে নিয়ে বেড়ায়

মুখগুলির দিকে তাকালে ভয় লাগে

প্রতিটি মুখ যেন

স্মৃতির এক টুকরো আগুন।

 

 

           

 

দুঃখ

         

 

দুঃখের কোনো অবয়ব থাকে না

জলের মতো,

চোখের জলও সেইজন্য জল

নদীর মতো-

আমরা মাঝি

নদীর তীরের মতো আমরা

দুঃখে বড় হই,পরিপূর্ণ হই

পরিত্যক্ত একটি ক্যানভাসে

আঁকতে শিখি একটা

সবুজ পাখি

দুঃখ ছায়া

দুঃখ স্বাধীন

দুঃখ নিশ্বাসের অঙ্কুর

দুঃখের জন্যও

এক টুকরো জায়গা চাই জীবনে

একান্ত নিজের এবং

প্রেমের মতো নির্জন।

 

 

 

 

ঈশ্বর

তোমার খোঁজে জ্বালিয়ে নিয়েছি একটা মোম,

মোমটা বলল-‘আমাকে নিয়ে চল

অন্ধকারে পথ হারানো গলিগুলির মধ্যে।’

ব্যস্ত কার্যসূচির পরে তুমি তখন

খুলে রেখেছিলে তোমার উগ্র প্রসাধন।

কোলাহলগুলি চলে গিয়েছিল সুরার ঢাকনা খোলার জন্য

বেশ্যারা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল স্বপ্নের অর্ন্তবাস

বাদুরের মতো ঝুলেছিল

নিঃশব্দতার ভয়ঙ্কর তাঁরে।

কেউ দেখে নি,

‘মিউনিসিপ্যালিটি’র নর্দমায় ভাসতে থাকা

মৃত শিশুর নামবিহীন মুখগুলি

কী যে এক আজব শূন্যতার শরীর তুমি

মানুষের ক্লান্ত জরায়ুতে বার বার –

তোমার বিবর্ণ সংজ্ঞার বীজ

তুমিই খুলে দেওয়া আস্তাবলের মাতাল দরজা

চেটে দেখা রক্তের নিচের আদিম বন্যতাকে বার বার

কেন্নোর মতো পাক খেয়ে থাকা নিজেরেই

সেই অন্তহীন প্রশ্নময়তার গর্ভে।

সুচতুর রাজনৈতিকের মতো,

কতকাল যে তুমি ঢেকে রেখেছ

আফিং খাওয়া মানুষের জাগৃতির দুচোখ।

অথচ তোমার খোঁজে

কেউ খুলে বসে না বীজগণিত,পড়েনা অভিধান

একটাই পুরোনো ছেঁড়া কাপড় পরে রেলগাড়িতে উঠে

মানুষগুলি তোমার কাছে আসে

ফুল এবং ফলের বিনিময়ে

কিনে নেয় সুখ-দুঃখ,তোমার মর্জ্জিতে।

এত নির্লজ্জ তোমার স্তবকগুলি

তুমি কীভাবে কবি হলে?

নিরাপদ দূরত্ব থেকে তুমি উপভোগ কর,

অশ্লীলতার এই প্রাত্যহিক কথাছবি,

হয়তো নিম্নরুচির দর্শকের মতো,চুরুট টানা

অথবা চিৎকার করে ডাকা বীভৎস উন্মাদনায়।

হে আমার পথভ্রান্ত ঈশ্বর,

আমি তোমাকে ফিরিয়ে আনব

অন্ধত্বের সেই বেসুরো গলি থেকে।

তোমার কানে কানে জিজ্ঞেস করব

‘বলতো দুটো বর্ণে লিখতে পারা পৃথিবীর

সবচেয়ে বিশাল শব্দটা কি?’

যদি তুমি বলতে পার ,হে আমার প্রিয় ঈশ্বর

বেরোবে,দুজনে বেরিয়ে পড়ব এক সঙ্গে-

গ্রন্থমেলা দেখব,চানাচুর খাব

নেহেরু পার্কে ঢুকে বসব

প্রেমিকরা বসা বেঞ্চটিতে-

সেদিন কেউ কাউকে জিজ্ঞেস করতে হবে না

তোমার ঠিকানা।

হে ঈশ্বর আমাকে ক্ষমা করবে কি,

ক্ষমা করবে কি আমার এই বিধর্মী বাসনাকে?

 

                       


poets from assam

১৯৬৪ সনে গুয়াহাটির উত্তর জালুকবাড়িতে কবি সামসুল হকের জন্ম হয়। অসম অভিযান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান থেকে মেকানিকেল ইঞ্জিনিয়ারিঙে ডিপ্লোমা লাভ করেন। গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা নিয়ে স্নাতকোত্তর এবং বি এড ডিগ্রি লাভ করেন।প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘পাখিলগা শব্দ’ এবং ‘কোন কালিন্দীর ধল মাতে’।জনপ্রিয় হিতেশ ডেকা সাহিত্য সাধনা পুরস্কার লাভ করেন।


 

       

 

 

অন্য একটি প্রেমের কবিতা

           

গভীরতা না জেনে যে জলে ঝাপ মারতে পারে

গায়ে নেপথালিন মেখে যে আগুনে দগ্ধ হতে পারে

সেই প্রেমে পড়তে পারে

অনেকবার ছুরিকাঘাত করা হবে

অনেকবার ফুটবল খেলা হবে

একটা কাঁচের পেয়ালার মতো

ঠনঠন করে অনেকবার ভেঙ্গে ফেলা হবে

তারপরেও বিস্তৃত করে এবং বিস্তৃত করে টেনে

যে মেলে দিতে পারে

ভেতরের দরজা

সেই ছুঁয়ে দেখতে পারে

ভালোবাসার তলা।

 

 

 

ফুটবল

           

তোমার পা দিয়ে আমাকে খেলছ

ভেবেছ কি কখনও

একদিনের জন্য খেলতে না পারলে

অসুস্থ হয়ে পড়বে তুমি

তোমাকে ভালোবাসি বলেই

তোমার গোড়ালির মাপে

আমার পিঠের চামড়া শক্তিশালী করে তুলেছি

কুঁচকে গেলেতো

আমার অস্তিত্বই থাকবে না

তোমার পদাঘাতে

যতই আমি ছিটকে পড়েছি

ততই তুমি মজা পেয়েছ

তোমার এই বিশেষ হাসির জন্যই

আমি যে জীবনপাত করেছি তুমি হয়তো জান না

সবার সামনে আমাকে এভাবে লাথিয়ে লাথিয়ে

তুমি প্রশংসা কুড়োবে

মানুষ মুগ্ধ হয়ে তোমার পায়ের কৌশলের প্রশংসা করবে

আমার জন্যই নয়কি

স্রষ্টা আমাকে নিঁখুত করে গড়েছে তার জন্য

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত