দুটি ফিলিস্তিনি কবিতা । ভাবানুবাদ : রেজাউল ইসলাম হাসু
বিশ্বপরিমণ্ডলে ফিলিস্তিনি-কবিতা একটা উজ্জ্বল অবস্থান দখল করতে সমর্থ হয়েছে বলে বোদ্ধাদের ধারণা। মাহমুদ দারবিশের হাতে তার শিকড় শক্তপোক্তভাবে বিশ্বসাহিত্যের ভূপৃষ্ঠে গ্রোথিত হয়ে যেন নাজওয়ান দারবিশ অথবা খালেদ আব্দুল্লাহদের মতো তরুণ-প্রজন্মের হাত ধরে তা আরো বিস্তৃত ও বিকশমান। তাদের কবিতার মূল উপজীব্য হিসেবে ধরা পড়ে যুদ্ধাক্রান্ত প্রেম ও রাজনৈতিক সংঘাত। রক্তাক্ত শব্দের ভেতর থেকে যেন উঠে এসেছে প্রতিটি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির মিথ ও মৃত্যুর মহত্ত্বতা। সেইসব কবিতা কোনো এক সুপ্রভাতের অপেক্ষায় আরাধ্যময়, জন্মান্ধ অর্থী। জীবীত ও মৃতের মেল বন্ধনে রচিত একেকটি পঙক্তি যেন প্রতিবাদের বারুদ। একটি অন্দিন্দ্য আগামী যেন সাহসী রক্তের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে অনন্তর হবার অভিপ্রায়ে ফিলিস্তিনি-কবিতার অভিযাত্রা।
নাজওয়ান দারবিশ জেরুজালেমে জন্মগ্রহণকারী একজন ফিলিস্তিনি কবি। ২০০০ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ হয়। আরবিতে তার আটটি বই প্রকাশ হয়েছে। তার লেখা প্রায় বিশটিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ২০১৪ সালে নিউইয়র্ক রিভিউ বুকস তার কালেকশন ‘নাথিং মোর টু লস’ এর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে। তাকে এই প্রজন্মের অন্যতম প্রধান আরবি ভাষার কবি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। ২০১৪ সাল থেকে আরবি ভাষার লন্ডন ভিত্তিক সংবাদপত্র ‘আল অ্যারাবি আল জাদিদ’ এর প্রধান সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদ কর্মরত রয়েছেন। ‘বহন‘ কবিতাটি মূল আরবি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন আতেফ আল শাহের। সেই ইংরেজি থেকে বাংলায় ভাবানুবাদ করা হলো এখানে।
বহন
বিভ্রান্তময় অশ্রুতে ভিজে যাওয়া
আমার হাতগুলো
ছিঁড়ে ছিঁড়ে যাচ্ছে
বয়ে যেতে
এই পাহাড়,
উপত্যকা
আর সমভূমি;
এবং সেই সমুদ্র
যাকে ভালোবাসতাম
যার হৃদয়ে
অহর্নিশ ডুবে থাকতাম
এই সেই প্রেমিক-আগুন
লাশ হয়ে
জলে প্লাবিত
বিভ্রান্তময় অশ্রুতে ভিজে যাওয়া
আমার লাশও
বিস্তৃত হচ্ছে অস্ত্রপ্রতিযোগিতায়
মৃত্যু
বয়ে যাওয়া সেই সমুদ্র,
যা নিমগ্ন রাখে এইসব…
খালেদ আবদুল্লাহ ১৯৭০ সালে গাজার দেইর এল বালহে জন্মগ্রহণ করেন। এফএম নামে তার দুটি কবিতার সংগ্রহ প্রকাশ হয়। এটি ২০০১ সালে এএম কাতান ফাউন্ডেশন কবিতা পুরস্কার এবং দার আল-আদাব (বৈরুত, ২০০২) জয়লাভ করে। বীজেরা উড্ডয়নকালে কবিতাটি আরবি থেকে অনুবাদ করা সারা ভ্যাঘেফিয়ানের ইংরেজি কবিতা সিডস ইন ফ্লাইট থেকে বাংলায় ভাবানুবাদ করা হলো এখানে।
বীজেরা উড্ডয়নকালে
তিনি এক প্রাচীন মহিলা,
যিনি সব মওসুমেই বেঁচে ছিলেন
বোহেমিয়ানের মতো ঘুরেঘুরে
ক্যামোমিল জড়ো করতেন
পৃথিবী-প্রাঙ্গণে।
তার অ্যাপ্রনের প্রতিটি ফুল
যেন একেকটি নক্ষত্র।
অথবা তার অ্যাপ্রন আকাশ।
যখন তিনি বাড়ি পৌঁছুতেন,
ফুলগুলো সৈকতে শুকোতে
খোসার মতো ছড়িয়ে দিতেন;
শুভকামনাকে ডাকতেন।
ভবিষ্যত ফিসফিস করতো।
রোদে তার উলকি জ্বলজ্বল করতো,
একটি নামহীন নক্ষত্র
জ্বলজ্বল করতো
তার সোনালি ঝুমকোয়,
শুকিয়ে যায় ক্যামোমিল ।
ঈশ্বরের নামে রাঙানো তার হাত,
তার চুলের গোছের পশমি তেজ,
অ্যামব্রোডারি করা বিয়ের পোশাক,
জড়ো করা শুকনো ফুল ।
কিন্তু পরের মওসুমে,
যখন ভবিষ্যত এলো,
ফিসফিসকে চুপ করে গেল।
তাকে পূর্বপুরুষদের সঙ্গে
সমাধিস্থ করা হলো।
অথচ আজো যেন
কোনো সুযোগে,
কোনো মন্ত্রবলে,
কিংবা কোনো দৈবক্রমে
প্রতিটি মওসুমে ক্যামোমিল জন্মায়
তার বাড়ির উঠোনে।
উড়ে গেছে অনেক বীজ।
কেবল রয়ে গেছে
এই বীজের ডানা ও ডমরু ।
উৎস : পোয়েট্রি ট্রান্সলেশন সেন্টার
জন্ম ১০ ডিসেম্বর, ১৯৮৭; রংপুর।
শিক্ষা : হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর, সরকারি বাঙলা কলেজ, ঢাকা।
পেশা : চাকরি [একটি বেসরকারি সংস্থায় উন্নয়ন-কর্মী হিসেবে।]
প্রকাশিত বই—
একটি ছুরি অথবা কুড়িটা ঘুমের পিল [সমকালীন গল্প, ২০২১]
ওকাবোকা তেলাপোকা [শিশুতোষ, ২০১৬]
এলিয়েনের দেশ পেরিয়ে [শিশুতোষ, ২০১৭]
সম্পাদনা : www.belabhumi.com [বাংলা ভাষার সৃজনে অনলাইন সাহিত্যপত্রিকা]