পুরাণ, ইতিহাস ও সাহিত্যে দুর্গাপূজা

Reading Time: 10 minutes
ছবিঃ সংগৃহীত

বাসন্তী পূজা দেখতে গিয়ে মনে হল চৈতালী এই দুর্গা শরতের মত বৈভবশালী নয়। তার আড়ম্বর খুবই কম। রামের অকাল বোধনের দুর্গাই আমাদের সমস্ত মনযোগ জুড়ে আছে। শরত এলেই কাশবনের দোলায় মন ও নেচে উঠে এই ভেবে মা দুর্গা আসচ্ছেন। রাম বসন্তের বদলে শরতে দুর্গাপূজা করেছিলেন বলে আমরা বাঙালীরা একে বলি দেবীর অকালবোধন। বসন্তের বদলে শরতে দুর্গাপূজা করাটা অকাল বোধন নয়! বেশ কিছুদিন ধরে এই বিষয়টা নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে দেখলাম মূল রামায়ণে শ্রীরাম দুর্গাপূজাই করেননি। আর রাম রাবণের যুদ্ধ শরতে নয়,হেমন্তে হয়েছিল। রামের অকাল বোধন কবি কৃত্তিবাস ই বাঙ্গালীর ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলেন তার রামায়ণ মারফত।কালিকাপুরাণ থেকেই সম্ভবত তিনি সূত্রটি নিয়েছিলেন।

বৈদিক যুগে যজ্ঞ হত সকালে। যজ্ঞাগ্নি জ্বালান ও হত সকালে ।কিন্তু দুর্গাপূজার বোধন সায়ংকালে বা সন্ধ্যায়। আধিভৌতিক অর্থে দুর্গা অগ্নিরূপা। তাই বেলকাঠের(পূর্বভারতে)অরণিতে মন্থন করে অগ্নি প্রজ্বলন করা হয়। অর্থাত্‍ কাঠে ঘুমিয়ে থাকা অগ্নিকে জাগানো হলো। তাই অ-কাল এখানে শরত ঋতু নয়,রাত্রি।তবে প্রশ্ন উঠতেই পারে রাত্রি কেন? রাত্রি কেন উত্তর খুঁজতে গিয়ে এখানে অন্য একটি ঘটনা এসে জুড়ে বসেছে ।বোধন পূজামন্ডপের বাইরে একটি বেদীতে হয়। বেদীতে আরো কিছু উপকরণ থাকে। চারটি শরকাঠি,সুতো,অলক্তক,ছুরি ও যুগ্মফল সমেত বিল্বশাখা।

শরকাঠিতে সুতো বেঁধে বস্ত্রগৃহ তৈরী করা হয়। নাড়ি কাটবার ও বাঁধবার জন্য সুতো। অলক্তক রক্ত দ্যোতক। যুগ্মফল মাতার কুক্ষি ও ভ্রূণ। যেন কোন ও শিশুর জন্ম প্রতীক্ষা? নববর্ষের সূর্যই এই শিশু। যে অন্ধকার ফুঁড়ে ভোরে জন্ম নেবে।শরত্‍যজ্ঞ,নববর্ষ,মহিষমর্দন এসবের সন্মিলনেই এই শারদোত্‍সব। ৪৫০০খ্রীস্টপূর্বাব্দে শরত্‍ ঋতুর প্রথম মাস ছিল আজকের অগ্রহায়ণ।

প্রসঙ্গত,আনন্দবাজার পত্রিকার(ভারতের পশ্চিমবঙ্গীয় পত্রিকা)১৩৬০বঙ্গাব্দের শারদীয়া সংখ্যায় যোগেশচন্দ্র রায় তার রামোপাখ্যান এ জানিয়েছিলেন দশানন বধ হয়েছিল আকাশে দশহাজার বছর আগে। শ্রীরাম ছিলেন আনুমানিক ২২০০খ্রীস্টপূর্বাব্দে। বাল্মীকি ছিলেন ১০০০খ্রীস্টপূর্বাব্দে।রামায়ণে এমন সব ঘটনা আছে যা ৪০০,এমন কি ২০০খ্রীস্ট পূর্বাব্দে আকাশে (নক্ষত্র লোকে)ঘটেছিল। হালে প্রকাশিত ভূতত্ত্ববিদ দীপংকর লাহিড়ীর বিলুপ্ত জনপদ প্রচলিত কাহিনী গ্রন্থে মিশরের দুই প্রাচীন চিত্রের প্রতিলিপি আছে। একটিতে তৃতীয় রামেসিসের এক দশানন সংহার,অপরটিতে এক সিংহবাহিনীর হাতে এক দশাননমর্দন।

দুর্গাপূজা আসলে একটি মিলন মেলার অপর নাম। ধর্মের বেড়াজালে না বেঁধে অবলীলায় বলা যায় কন্যার সন্তানসহিত বাপের বাড়ীর আগমনের কনসেপ্টটাই এখানে মুখ্য। মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার অবসানের পর মেয়েরা এতটাই অবজ্ঞা ও অবহেলার স্বীকার যে দেবী দূর্গার অসুর নাশ হতে পারে পুরুষ সমাজ ব্যবস্থার জন্য একটি র্বাতা। আর সর্বোপরি মা শব্দটায় তো মিশেই আছে স্নেহমমতার চিরন্তন মুখ। তাই দুর্গাপুজা অকাল বোধন নয় ,কোন ধর্মের নয়, দুর্গাপূজা একটি নারী উত্‍সবের নাম। যা আমাদের শেখা একান্নবর্তী জগতসংসারের শিক্ষা ও নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে। এবং কতগুলো পুংশক্তির সৃষ্ট নারী হয়েও তিনি জগতমাতা ও অসুরনাশিনী হিসেবে বিখ্যাত। তাই দুর্গার আরাধনা নারী শক্তি,অহং,মর্যাদা,সন্মানের আরাধনা। নববর্ষের মিলন উত্‍সব ।

বৈদিক সাহিত্যে দুর্গার উল্লেখ আছে। দুর্গাকে ডাকা হয় আদ্যাশক্তি, মহামায়া, শিবানী, ভবানী, দশভুজা, সিংহবাহনা প্রভৃতি নামে। বিভিন্ন পৌরাণিক উপাখ্যানে দুর্গাপূজার প্রচলন-সম্পর্কিত বিবিধ কিংবদন্তি রয়েছে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বলা হয়েছে, দুর্গোৎসবের প্রবর্তক স্বয়ং কৃষ্ণ। আদি বৃন্দাবনক্ষেত্রের মহারাসমণ্ডলে প্রথম দুর্গাপূজার পর মধুকৈটভের ভয়ে দুর্গার আরাধনা করেন ব্রহ্মা। তৃতীয়বার দুর্গাপূজা করেন মহাদেব, ত্রিপুরাসুরের সঙ্গে যুদ্ধে সংকটাপন্ন হয়ে। দুর্বাশা মুনির দ্বারা শাপগ্রস্ত হয়ে দেবরাজ ইন্দ্র চতুর্থবার দুর্গাপূজা করেন। এরপর থেকে পৃথিবীতে মানবজাতির মধ্যে দুর্গাপূজার প্রচলন হয়। পৃথিবীর শাসনভার পেয়ে ব্রহ্মার মানসপুত্র মনু দেবী দুর্গার আরাধনা করেন; এর উল্লেখ আছে দেবীভাগবতপুরাণে।

মার্কণ্ডেয় পুরাণের অংশ ‘দেবীমাহাত্ম্যম্’, যেটি ‘শ্রীশ্রী চণ্ডী’ নামে পরিচিত, সেখানে দুর্গোৎসব প্রচলনের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কাহিনী হলো মহিষাসুর বধের কাহিনী। পুরাকালে মহিষাসুর ১০০ বছর যুদ্ধের পর দেবতাদের কাছ থেকে জয় করে নিলেন স্বর্গরাজ্য। বিতাড়িত দেবতারা প্রথমে প্রজাপতি ব্রহ্মা এবং পরে শিব ও নারায়ণের কাছে যান। ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিবের মুখমণ্ডল এবং ইন্দ্র ও অন্য দেবতাদের শরীর থেকে নির্গত মহাতেজ মিলিত হয়ে হিমালয়ে অবস্থিত ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে এক নারীমূর্তি ধারণ করল। এক এক দেবতার প্রভাবে উৎপন্ন হলো এক এক অঙ্গ। বাহন হিসেবে হিমালয় দেবীকে সিংহ দান করলেন। দেবতাদের সম্মিলিত অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের উদ্দেশে যাত্রা করলেন। দুর্গাপূজার উল্লেখ রয়েছে রামায়ণে। তবে মূল রামায়ণে দুর্গোৎসবের কোনো বর্ণনা না থাকলেও কৃত্তিবাস ওঁঝা তাঁর বাংলা রামায়ণে কালিকা পুরাণের ঘটনা অবলম্বনে রামচন্দ্রের দুর্গাপূজার বর্ণনা দিয়েছেন। রাবণ-বধের জন্য ব্রহ্মা রামকে দুর্গাপূজার পরামর্শ দেন। শরৎকালে অর্থাৎ অকালে রাম দুর্গার আরাধনা করেছিলেন বলে শারদীয়া পূজার আরেক নাম হলো ‘অকালবোধন’। আবার রাজা সুরথ বসন্তকালে দুর্গাপূজা করেছিলেন বলে এর আরেক নাম ‘বাসন্তী পূজা’। বাসন্তী পূজা হয় চৈত্রের শুক্লপক্ষে, আর শারদীয়া দুর্গাপূজা হয় আশ্বিনের শুক্লপক্ষে। বাংলায় শারদীয়া দুর্গাপূজাই বেশি জনপ্রিয়। শুক্লা ষষ্ঠীতিথিতে দেবীর বোধন হয়; সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে পূজা দিয়ে দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। সম্পূর্ণ পক্ষটিকে বলা হয় দেবীপক্ষ। দেবীপক্ষ শুরু হয় পূর্ববর্তী অমাবস্যার দিন। এ দিন ‘মহালয়া’ নামে পরিচিত।

বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা হলেও পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি অভূতপূর্ব সঞ্জীবিত উদ্দীপনার চেতনায় দুর্গাশক্তির আড়ালে অভাব-অনটন, ব্যর্থতা-অক্ষমতা, শোক-দুঃখ উত্তরণে মাতৃশক্তির আরাধনায় আচ্ছন্ন থাকে। ভারতের বিভিন্ন অবাঙালি প্রদেশেও ভিন্ন ভিন্ন নামে দুর্গাপূজার প্রচলন রয়েছে। যেমন : কাশ্মীর ও দাক্ষিণাত্যে অম্বা ও অম্বিকা, গুজরাটে হিঙ্গুলা ও রুদ্রাণী, কান্যকুজ্বে কল্যাণী, মিথিলায় উমা এবং কুমারিকা প্রদেশে কন্যাকুমারী নামে দুর্গোৎসব পালিত হয়। তবে এই উৎসব সবচেয়ে জাঁকালোভাবে পালিত হয় পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায়। পাশ্চাত্য, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবাসী বাঙালি হিন্দুরাও মহাসমারোহে দুর্গোৎসব পালন করে। বাংলা অঞ্চলে যে সমারোহের সঙ্গে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয় তাকে কেবল ‘ধর্মীয় উৎসব’ বললে আংশিক বলা হয়; এটি একটি সামাজিক উৎসবও বটে। এ ছাড়া চীনে চানসান দেবী, তিব্বতে তার দেবী, নেপালে মঞ্জুশ্রী দেবী, মিসরে আইসিস হ্যাথর সিংহমুখী দেবী, বেলুচিস্তানের মরুদ্বীপে হিংলাজমাত দেবী, জার্মান, ব্রিটেন, আমেরিকা, ইউরোপ, ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল অঞ্চলে বিবিধ প্রতিমূর্তিরূপে মহাশক্তিধর দেবী দুর্গা পূজিত ও বন্দিত হন। বেদ, উপনিষদের ধারাবাহিক বিস্তারিত সাহিত্য ও ঐতিহ্য বর্ণনায় মনুষ্যদেহ মহাশক্তি দেবী দুর্গা সমন্বিতা। ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম—পঞ্চভূত; কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য; ষড়রিপুর প্রাণশক্তি হচ্ছে ব্রহ্ম। ব্রহ্মের আদি উপলব্ধি মহামানবের মহাশক্তি।

ছবিঃ সংগৃহীত

কৃত্তিবাস সংকলিত বাংলা রামায়ণের কাব্যিক সাহিত্যে পরিব্যাপ্ত আছে দশপ্রহরণধারিণী দেবী দুর্গার পূজার বিশদ বর্ণনা। ইতিহাসে পাওয়া যায়, লিখিত সাহিত্য সৃষ্টির আগেও হিমালয়বাসিনী দেবী দুর্গাকে শক্তির আধার হিসেবে মুক্তিপ্রদায়নীরূপে পূজা-অর্চনার। পাঁচ হাজার বছর আগে পাঞ্জাবের হরপ্পা ও সিন্ধু সভ্যতার মহেঞ্জোদারোতে খনন করে সে মূর্তির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে সেখানেও অতসী পুষ্পাবর্ণ, জটাজটধারিণী সিংহবাহিনী দেবী দুর্গা অর্চনা প্রমাণিত হয়েছে। বাংলা রামায়ণ সৃষ্টিতত্ত্বের পূর্ববর্তী রচিত সাহিত্যকর্মের ইতিহাসে দুর্গোৎসবতত্ত্ব এবং প্রাসঙ্গিক প্রায়োগিক বর্ণনা উল্লেখ আছে সুস্পষ্টভাবে। মার্কণ্ডেয় পুরাণ, দেবী পুরাণ, কালিকা পুরাণ, বৃহন্নন্দিকেশ্বর পুরাণসহ শাস্ত্রীয় সব গ্রন্থে দেবী দুর্গার বহুমুখী উপাসনার রীতি ও পূজা পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে সাবলীলভাবে। জ্ঞানশক্তি, সম্পদশক্তি সংগ্রাম কৌশল শিক্ষায় আসুরিক শক্তির বিনাস সাধনে সিদ্ধিশক্তির সম্মিলন প্রক্রিয়াও শাস্ত্রীয় গ্রন্থগুলোতে বিধানাকারে অবতীর্ণ বিষয় হিসেবে বিদ্বৃত আছে। পৌরাণিক, ভৌগোলিক, প্রাকৃতিক এবং সাহিত্যিক বর্ণনার চেতনা থেকে সনাতন ধর্ম বিশ্বাসীরা শক্তির উৎস চিহ্নিত করে অকৃত্রিম ভালোবাসা, ক্ষমা, সরলতা, পবিত্রতা ও ত্যাগের আদর্শ হিসেবে করে থাকেন দৈবশক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবী দুর্গাপূজা-অর্চনা ও আরাধনা।

ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলা অঞ্চলে সাধারণত নির্মিত হয়ে থাকে সপরিবার দুর্গামূর্তি। কলকাতায় সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার ১৬১০ সালে এই মূর্তির প্রচলন ঘটান। তাঁরা জমিদারপুত্রের আদলে কার্তিককে নির্মাণ করেন। এর আগে এটি সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের আদলে যুদ্ধের দেবতারূপে নির্মিত হতো। এ ছাড়া বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরসংলগ্ন অঞ্চলে দেবী দুর্গাকে বিশেষভাবে নির্মাণ করা হয়। লক্ষ্মী-সরস্বতী-কার্তিক-গণেশ ছাড়াও এখানে নন্দী-ভৃঙ্গীসহ বৃষভবাহন শিব এবং দেবীর দুই সখী জয়া-বিজয়া অবস্থান করেন। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে দুর্গার বিভিন্ন রকম স্বতন্ত্র মূর্তি চোখে পড়ে। অর্থাৎ স্থান-কাল-পাত্রভেদে অভিযোজন ঘটেছে দুর্গামূর্তির।

কথিত আছে যে, বঙ্গদেশে প্রথম দুর্গাপূজার প্রচলন করেন রাজশাহী জেলার তাহিরপুরের রাজা কংসনারায়ণ। এটি ঘটে সম্রাট আকবরের (১৫৫৬-১৬০৫) রাজত্বকালে। তবে মতভেদ রয়েছে যে, নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় (১৭১০-১৭৮৩) বাংলায় দুর্গাপূজা প্রবর্তন করেন। রঘুনন্দনের (১৫০০-১৬০০ শতক) ‘তিথিতত্ত্ব’, জীমূতবাহনের (আনু. ১০৫০-১১৫০) ‘দুর্গোৎসবনির্ণয়’, বিদ্যাপতির ১৩৭৪-১৪৬০) ‘দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনী’, শূলপাণির (১৩৭৫-১৪৬০) ‘দুর্গোৎসববিবেক’, কৃত্তিবাস ওঁঝার (আনু. ১৩৮১-১৪৬১) ‘রামায়ণ’, বাচস্পতি মিশ্রের (১৪২৫-১৪৮০) ‘ক্রিয়াচিন্তামণি’ প্রভৃতি গ্রন্থে দুর্গাপূজার বিস্তৃত বর্ণনা থাকায় ধারণা করা হয় যে, দশম অথবা একাদশ শতকেই বঙ্গদেশে দুর্গাপূজা প্রচলিত ছিল; হয়তো কংসনারায়ণ বা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের আমলে তা জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হয়।

 

ইতিহাসটা জানা আছে এমনভাবেই, সম্রাট আকবর বাংলা-বিহারের দেওয়ান নিযুক্ত করেন রাজা কংসনারায়ণকে। তবে বয়সের কারণে কংসনারায়ণ দেওয়ানি ছেড়ে রাজশাহীর তাহেরপুরে এসে আত্মনিয়োগ করেন ধর্মীয় ও সামাজিক কাজে। আহ্বান করেন তাহেরপুরে এসে তাঁর জমিদারির ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের মহাযজ্ঞের জন্য। ওই সময় নাটোরের বাসুদেবপুরের ভট্টাচার্যরা ছিলেন বংশানুক্রমে তাহেরপুর রাজাদের পুরোহিত। এদের মধ্যে ছিলেন রমেশ শাস্ত্রী নামের একজন বাংলা-বিহারের বিখ্যাত পণ্ডিত। তিনি শাস্ত্রমতে বললেন, বিশ্বজিৎ, রাজসুয়, অশ্বমেদ ও গোমেধ—এই চারটি মহাযজ্ঞ রয়েছে। বিশ্বজিৎ ও রাজসুয় নামক মহাযজ্ঞ শুধু সম্রাটরা করতে পারবেন। অশ্বমেধ ও গোমেধ যজ্ঞ দুটিও নিষিদ্ধ। একমাত্র দুর্গোৎসব ছাড়া অন্য কোনো মহাযজ্ঞ করা সঠিক নয়। রাজা রামচন্দ্রের বিধানে ভক্তিসহ দুর্গোৎসব করলে সর্বযজ্ঞের ফল লাভ করা সম্ভব বলে মতপ্রকাশ করেন রমেশ শাস্ত্রী। উপস্থিত অন্য পণ্ডিতরাও ওই মতের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন। আর রাজা কংসনারায়ণ সে মতেই পূজার বিশাল আয়োজন করেন। ওই সময় সাড়ে আট লাখ টাকা ব্যয়ে রাজকীয় পরিবেশে দুর্গোৎসব শুরু করেন তিনি। আর এই বিশাল পূজার পূরোহিত ছিলেন পণ্ডিত রমেশ শাস্ত্রী। আর এখান থেকেই শুরু হয় মহাধুমধামে দুর্গোৎসব। এই মহাযজ্ঞে আনন্দ, ধুমধাম ও উৎসাহে সবাই মোহিত হয়েছিলেন সেই সময়। পরের বছর থেকে এ অঞ্চলের অনেক সামন্ত রাজা ও ধনী ব্যক্তি দুর্গাপূজার আয়োজন শুরু করেন রমেশ শাস্ত্রীর পদ্ধতি অনুসারে। মার্কেণ্ডীয় পুরাণে যদিও দুর্গোৎসবের কিছু বৃত্তান্ত রয়েছে, কিন্তু সমগ্র যজ্ঞটির বিধান প্রাচীন কোনো গ্রন্থে সুস্পষ্টভাবে নেই। এ কারণে পণ্ডিত রমেশ শাস্ত্রীর প্রণীত আচারেই সনাতন হিন্দুসমাজ সানন্দে দুর্গোৎসব পালন করে আসছে।

তবে এত দিনকার এ ইতিহাসে দেখা দিলো মতান্তর। সম্প্রতি ইতিহাস পর্যালোচনা করে কয়েকজন বিশ্লেষক অভিমত দিয়েছেন : কংসনারায়ণ দুর্গোৎসব করেছিলেন ষোড়শ শতাব্দীর শেষে কিংবা সপ্তদশ শতাব্দীর শুরু দিকে। কিন্তু তারও আগেকার সাহিত্যে ও অন্যান্য সূত্রে বাংলায় দুর্গাপূজার উল্লেখ পাওয়া যায়। খুব সম্ভবত, যে বিপুল ব্যয়ে কংসনারায়ণ দুর্গোৎসব করেন, তাই সেই যুগের জনমানসে দুর্গাপূজার সংজ্ঞা বদলে দিয়েছিল। আর সেই থেকেই কংসনারায়ণী মিথের উৎপত্তি। এ কথা সত্যি যে দুর্গাপূজার ইতিহাস একেবারেই অর্বাচীন নয়। যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি বলেছেন, ‘দুর্গাপূজা বৈদিক যজ্ঞের রূপান্তর, তন্ত্র দ্বারা সমাচ্ছন্ন।’ তাঁর মতে, বৈদিক যুগে প্রত্যেক ঋতুর প্রারম্ভে যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হতো। শরৎঋতুর আরম্ভেও হতো। এই শরৎকালীন যজ্ঞই রূপান্তরিত হয়ে দুর্গাপূজা হয়েছে।’ তিনি বলেন, বৈদিক যজ্ঞ ও দুর্গাপূজার মধ্যে অনেক প্রভেদ রয়েছে। কিন্তু উভয়ের উদ্দেশ্য একই। বৈদিক যজ্ঞের উদ্দেশ্য, ধন-ধান্য-পুত্র, রোগমুক্তি ও শক্তিনাশের শক্তি প্রার্থনা। দুর্গার পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র বলে, ‘আয়ুরারোগ্যং বিজয়ং দেহি দেবি নমস্তুতে। রূপং দেহি যশো দেহি ভাগ্যং ভগবতি দেহি মে। পুত্রান দেহি ধনং দেহি সর্ব্বকামাংশ্চ দেহি মে॥’ (হে ভগবতী, আপনাকে প্রণাম করি, আপনি আমাকে রোগমুক্ত করুন, বিজয়ী করুন, যশ ও সৌভাগ্য প্রদান করুন, পুত্র ও ধন দিন এবং আমার সকল কামনা পূর্ণ করুন)। যোগেশচন্দ্র আরো দেখাচ্ছেন, দুর্গাপূজার মন্ত্রে ‘যজ্ঞ’ শব্দটির পরিব্যাপ্তি কতটা। বৈদিক হিন্দুধর্ম ছিল যজ্ঞসর্বস্ব।

ছবিঃ র্সগৃহীত

দুর্গাপূজাতেও দেখি, দেবীকে যজ্ঞভাগ গ্রহণে আহ্বান জানানো হচ্ছে (‘দেবি যজ্ঞভাগান্ গৃহাণ’) এবং পশুবলি দেওয়ার সময় বলা হচ্ছে, যজ্ঞের নিমিত্তই পশুর সৃষ্টি (‘যজ্ঞার্থে পশবঃ সৃষ্টাঃ তস্মিন্ যজ্ঞে বধোহ্‌বধঃ’)। যোগেশচন্দ্রের তাই অনুমান, বৈদিক শারদ যজ্ঞই তন্ত্রের প্রভাবে পর্যবসিত হয়েছে আধুনিক দুর্গোৎসবে। হৃদয়ে যা জাগে, শরৎমেঘে তাই তো দেখা যায়। বাংলায় যে দুর্গাপূজা প্রচলিত, তা মূলত মহিষাসুরমর্দিনীর পূজা।

মহিষাসুরমর্দিনীর পূজার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে (রচনাকাল আনুমানিক অষ্টম শতাব্দী)। এ ছাড়া দুর্গাপূজার কথা পাওয়া যায় মার্কণ্ডেয় পুরাণ (মূল পুরাণটি চতুর্থ শতাব্দীর রচনা, তবে দুর্গাপূজার বিবরণ-সংবলিত সপ্তশতী চণ্ডী অংশটি পরবর্তীকালের সংযোজন), বৃহন্নন্দীকেশ্বর পুরাণ (সঠিক রচনাকাল অজ্ঞাত), কালিকা পুরাণ (রচনাকাল নবম-দশম শতাব্দী) ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণে (রচনাকাল ১২০০ শতাব্দী)। নবম-দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যকার সময়ে নির্মিত একাধিক মহিষাসুরমর্দিনীর মূর্তি বাংলার নানা স্থান থেকে আবিষ্কৃতও হয়েছে। দুর্গাপূজার প্রাচীনত্ব অনুধাবনে আরো একটি উল্লেখযোগ্য প্রমাণ রঘুনন্দনের (১৫৪০-১৫৭৫) ‘দুর্গাপূজা তত্ত্ব’ গ্রন্থটি। নবদ্বীপের এই স্মার্ত পণ্ডিতের লেখা গ্রন্থটিতে দুর্গাপূজার যাবতীয় বিধান রয়েছে। এই সব বিধান তিনি নিজে সৃষ্টি করেননি। বরং আগের পুরাণ ও স্মৃতিশাস্ত্র থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করে পূজাপদ্ধতি লিখেছেন। কোনো কোনো বিধানের পৌরাণিক প্রমাণ দিতে পারেননি। একে তিনি বলেছেন আচার, দেশাচার বা কুলাচার। আচার তাকেই বলে যা, দেশে বা বংশে যুগ যুগ ধরে প্রচলিত। স্মৃতিশাস্ত্রের ধর্ম যা কিছু পুরনো, সে পৌরাণিকই হোক আর আচারগতই হোক, তাকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং নতুনকে বাতিল করা। স্মার্ত রঘুনন্দনের দেওয়া স্বীকৃতি দেখলে মনে হয়, দুর্গাপূজার যাবতীয় রীতিনীতি বহু বছর আগে থেকেই বাংলায় প্রচলিত ছিল। সম্ভবত, প্রাচীন দুর্গাপূজাকে রঘুনন্দন তাঁর গ্রন্থের মাধ্যমে একটি সুসংবদ্ধ রূপ দিয়েছিলেন। সেই কীর্তিই নতুন করে এই পূজার প্রতি বাঙালির দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কালক্রমে ঘটনাচক্রে তা বাঙালি হিন্দুর জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়। এ ক্ষেত্রে একটি তথ্য দিয়ে রাখি, কংসনারায়ণের বংশে প্রথম দুর্গাপূজার বাসনা প্রকাশ করেছিলেন তাঁর ঠাকুরদা উদয় নারায়ণ। সেটা ছিল ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দ। রঘুনন্দন তখন বাঙালি হিন্দুসমাজের অন্যতম প্রতীক।

ছবিঃ সংগৃহীত

এদিকে কারো কারো মতে, বাংলার অন্যতম প্রাচীন দুর্গাপূজা হলো বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের মৃন্ময়ী মন্দিরের পূজা। দেবী মৃন্ময়ী ছিলেন মল্লভূম রাজ্যের রাজরাজেশ্বরীমল্ল রাজবংশের কুলদেবী। মল্লরাজ জগৎমল্ল ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে এই পূজার প্রবর্তন করেন। সেই পূজাপদ্ধতি বাংলায় প্রচলিত দুর্গাপূজার থেকে অনেকটাই আলাদা; কিছুটা আলাদা দুর্গাপ্রতিমার গড়নও। মৃন্ময়ী দেবী সপরিবার বটে, কিন্তু লক্ষ্মী-গণেশ ও কার্তিক-সরস্বতীর স্থানবদল করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ, লক্ষ্মীর স্থলে গণেশ ও গণেশের স্থলে লক্ষ্মী এবং কার্তিকের স্থলে সরস্বতী ও সরস্বতীর স্থলে কার্তিক। এই রূপে দুর্গাপ্রতিমা নির্মাণের রীতিকে জগৎমল্ল-প্রথা বলা হয়। বাঁকুড়া জেলার অনেক প্রাচীন পরিবারেও পূজিত হয় জগৎমল্ল-প্রথায় নির্মিত দুর্গামূর্তি। তা ছাড়া মল্ল রাজবাড়ির পূজায় দেবীপটের যে ব্যবহার দেখা হয়, তা অনেকটাই স্বতন্ত্র প্রকৃতির। বাংলার সাধারণ দুর্গাপূজায় এমন পটের ব্যবহার দেখা যায় না। এই পূজাও কংসনারায়ণ প্রবর্তিত পূজার অনেক আগে প্রচলন লাভ করে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর প্রধান শিষ্য নিত্যানন্দ খড়দহে স্বগৃহে প্রতিমায় দুর্গোৎসব করেছিলেন। সেও কংসনারায়ণের বহু আগের ইতিহাস।

ছবিঃ সংগৃহীত

বারোয়ারি বা সার্বজনীন দুর্গাপূজার যে রূপ আজকের দিনে আমরা দেখতে পাই, তা নির্মিত হয়েছে পরিবর্তনের স্রোতধারায়। বাংলায় দুর্গার ধর্মীয় উত্থান প্রভাবিত হয়েছে সমসাময়িক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্বারা। পরিবর্তনের একটি বড় প্রমাণ পাওয়া যায় মূর্তির রূপান্তরে। পৃষ্ঠপোষকদের মনস্তাত্ত্বিক গঠনও এ ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। অষ্টাদশ শতকের জমিদার, নায়েব ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে এই পরিবর্তনের রাজনীতি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। দুর্গাপূজাকে আশ্রয় করে প্রচারিত হয়েছে তৎকালীন অভিজাত হিন্দু শ্রেণির আভিজাত্য। লৌকিক দেবদেবীকে ছাপিয়ে দুর্গাপূজা হয়ে উঠেছিল উচ্চ শ্রেণির আরাধনা। শাসকশ্রেণির সঙ্গে উচ্চ শ্রেণির স্বার্থসংশ্লিষ্টতাই ছিল এর প্রভাবক। তবে বর্তমানের সার্বজনীনতা একদিকে যেমন দুর্গোৎসবকে ব্রাহ্মণ্যবাদের কাঠিন্য থেকে মুক্ত করেছে, তেমনি বর্ণ-নির্বিশেষে সামাজিক সম্প্রীতি স্থাপনে হয়েছে সহায়ক।

ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলা সাহিত্যেও দুর্গাপূজা উঠে এসেছে বিভিন্ন রচনায়। দেবী দুর্গা সেখানে কখনো মাতৃরূপে, কখনো শক্তি রূপে, আবার কখনো-বা এটিকে দেখা হয়েছে কেবল অনুষ্ঠানিকতা হিসেবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় :

‘পুতুল পূজা করো না হিন্দু, কাঠ মাটির দিয়ে গড়া

মৃন্ময়ী মাঝে চিন্ময়ী হেরে, যাই আত্মহারা’

রবীন্দ্রনাথ দেবী দুর্গাকে আনন্দময়ী হিসেবে অভিহিত করে আরাধনা করেছেন মুক্তি ও ভক্তির সঙ্গে। রবীন্দ্রকাব্য, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটকে এমনকি চিঠিপত্রে উজ্জ্বল আনন্দময় দুর্গোৎসবের অপরূপ বর্ণনা ফুটে উঠেছে। ‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাসে বিমলা, সন্দ্বীপ ও নিখিলেশ চরিত্রগুলো দেবী দুর্গার সর্বজনীন সমন্বিতা রূপবৈচিত্র্যপূর্ণ করে সাজিয়েছেন। অন্যদিকে অপূর্ণতা, বিচ্ছিন্নতা, অখণ্ডতাকে মুক্তির পরিপূর্ণ তাৎপর্যে নিপুণভাবে সাহিত্যে প্রবেশ করিয়েছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। দেবী দুর্গাকে নজরুল দেখেছেন, ‘রক্তাম্বরধারিণী রূপে’। গান, কবিতা, উপন্যাস, ছায়াবাণী ছাড়াও প্রীতি, সৌহার্দ্য, সম্ভাষণে শাক্ত পদাবলি রচনা করে মহাকালজয়ী হয়েছেন।

‘মেঘনাদবধ কাব্য’ মাইকেল মধুসূদনের কালজয়ী সৃষ্টি। এখানে তিনি দেবী দুর্গাকে কল্পনা করেছেন ‘শশাঙ্কধারিণী রূপে’। বক্ষ বিদীর্ণ করা কিছু ‘সনেট’ রামায়ণ মহাকাব্যকে দুর্গোৎসবের পরিপূর্ণ প্রয়োজন রূপে রূপায়িত করেছেন মধুসূদন। দেবী বিসর্জন ট্র্যাজেডির এক অসাধারণ বর্ণনা দিয়ে মেঘনাদবধ কাব্যকে সমাপ্ত করেছেন তিনি।

‘বিসর্জি প্রতিমা যেন দশমী দিবসে,

সপ্ত দিবানিশি লঙ্কা কাঁদিলা বিষাদে।’

বাংলা সাহিত্যের আরেক নবরূপকার বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। জ্যোতির্ময়ী দেবী দুর্গার প্রভাব বলয় থেকে নিজেকে আড়াল করতে পারেননি তিনি। পার্বতী ও দুর্গা নামে কোমল, কঠিন ও মমতাময়ী আবেগপ্রবণ হৃদয়স্পর্শী চরিত্রায়ণ করে আরাধনায় রূপান্তরিত করেছেন সাহিত্য সৃষ্টিকে। আর শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর সাহিত্য সৃষ্টিকর্মে দেবী দুর্গার মাতৃমুখী সংস্কৃতি লাবণ্যে অপূর্ব বর্ণনায় আশ্চর্যজনক অভিব্যক্তি সৃষ্টিতে দেখিয়েছেন পারদর্শিতা। দেবী দুর্গাশক্তির সর্বজয়া উত্থানে কৌতূহল ও উৎসাহ সৃষ্টির অনুভূতি প্রভাব বৈরিতার অবসান ঘটিয়েছেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সমাজিক সাহিত্যকর্মে। অপু-দুর্গা, সতু, মালতী, হরিহর, ইন্দির ঠাকুরণ চরিত্রগুলোর শরতের শুভ্র শীতল কোমল ব্রহ্মশক্তির পরিপূর্ণ আরাধনাকে দারিদ্র্য মুক্তির অবলম্বন হিসেবে প্রকাশ করেন বিভূতিভূষণ।

এদিকে সংকট উত্তরণের শিক্ষা প্রদানকারী ব্রহ্মময়ী দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা যেন চলচ্চিত্রে জাগ্রত করেছেন বিভাসিত উপলব্ধি। ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘উৎসব’, ‘নৌকাডুবি’, ‘হীরার আংটি’ আর সত্যজিতের কালোত্তীর্ণ ‘পথের পাঁচালী’ সিনেমায়ও দুর্গাপূজাকে দেখা যায় মিলনের উৎসব হিসেবে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>