পৃথিবীর কবি প্রেমের কবি পাবলো নেরুদা

Reading Time: 5 minutes

রবিউল হুসাইন

চিলির কবি, কূটনীতিক ও রাজনীতিক পাবলো নেরুদা ১২ জুলাই ১৯০৪ পারর‌্যাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৬৯ বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। তার মৃত্যু হয় ১৯৭৩-এর ২৩ সেপ্টেম্বর। আসল নাম ছিল নেফতালি রিকার্ডো রেয়েস বোসোয়াল্টো। তার লেখালেখি পিতার অপছন্দের জন্য চেকোস্লাভিয়ার কবি জাঁ নেরুদার অনুসারে পাবলো নেরুদা ছন্দনাম নিয়ে লেখা শুরু করেন ১৯২০ থেকে। এ নামেই সারা জীবন লিখে গেছেন এবং ১৯৭১ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন পাবলো নেরুদা এ ছদ্মনামে, যেটি ১৯৪৬-এ বৈধ করে নেন। সদ্য প্রয়াত কলোম্বিয়ার অমর উপন্যাসিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ এ অসাধারণ কবিকে যে কোনো ভাষায় বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ কবি বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিশোরকাল থেকেই কবি হিসেবে পাবলো পরিচিতি পেতে শুরু করেন। বহু ধরনের কবিতা রচনা করেছিলেন-অতিবাস্তবতা থেকে নিয়ে ইতিহাস, লোককাহিনী, রাজনীতির ইস্তাহার, আত্মজীবনী ও যৌন উদ্দীপনানির্ভর এমন সব। ২০ বছর বয়সে ১৯২৪-এ ‘টয়েন্টি লাভ পোয়েমস্ অ্যান্ড এ সং অব ডেসপেয়ার ‘অর্থাৎ বিশটি কবিতা ভালোবাসার একটি গান হতাশার’ শীর্ষক দ্বিতীয় কবিতা সংকলন সান্তিয়াগোতে প্রকাশ পেলে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
এ বইয়ের মোট একুশটি কবিতার ইংরেজি তরজমা করেছিলেন ডব্ল– এম মেরউইন ১৯৬৯ সালে যুক্তরাজ্যে। নেরুদার পাবলো নামটি মনে করা হয় ফরাসি কবি পল ভার্লেন থেকে নেয়া। তার প্রথম কবিতার বই ‘বুক অব টুইলাইটস’ ‘ঊষসীর গ্রন্থ’ ১৯২৩-এ প্রকাশ পায়। তিনি প্রায়ই সবুজ কালি দিয়ে লিখতেন এবং মনে করতেন এ সবুজ বর্ণ তার ইচ্ছা ও স্বপ্নের একান্ত একটি ব্যক্তিগত প্রতীক।
নেরুদা প্রধানত চারটি ধারায় কবিতা সৃষ্টি করে গেছেন। প্রথমে প্রেম, দুঃখ ও হতাশাভিত্তিক যেখানে এ কবিতা গ্রন্থ, ‘দ্য ক্যাপটেন’স ভার্সেস (১৯৫২) ও ‘ওয়ান হান্ড্রেড লাভ পোয়েম্স’ (১৯৬৯) উল্লেখ্য। দ্বিতীয় ধারায় নিঃসঙ্গতা, একাকিত্ব ও নির্যাতনের আলেখ্য এবং ‘রেসিডেন্স অন আর্থ’ (১৯৩৫) সেই রকমে রচিত। তৃতীয় অধ্যায়ে মহাকাব্যিকতা, ‘জেনারেল স্টাডি’ (১৯৫০) তেমন ধারায় উপস্থাপিত। চতুর্থ ধারায় বাস্তব অভিজ্ঞতার নির্যাসে সাধারণ বিষয় দেখা যায় যেমন ‘এলিমেন্টারি ওডস’ (১৯৫৪)।
তাকে বলা হয় প্রেম ও রাজনীতির কবি। প্রথম প্রেম, হতাশা ও একা থাকা বা হওয়ার কবিতা থেকে সমাজ বাস্তবতা (১৯৪০), পরে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার অনুসারী এবং সারা জীবন তেমনি ছিলেন। প্রকৃতি থেকে নেয়া উপমা ও প্রতীক আগুন, পানি, বাতাস ও মাটি এ চারটি অনুষঙ্গ তার কবিতায় বারবার ব্যবহৃত।
মাটিকে প্রকৃতির প্রধান ভিত্তি ও উপাদান হিসেবে মনে করতেন। মানুষ এ সময়ে প্রকৃতি বা মাটি থেকে পৃথক হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এটাও ঠিক, মানুষের জীবন প্রকৃতির সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে যেতে পারে না একমাত্র মৃত্যু ছাড়া। কবির ‘মাচুপিচ্চু পর্বত’ নামে একটি বইয়ে একটিই দীর্ঘ বার অধ্যায়ের কবিতা যেটি ১৯৪৫-এ পরে ‘কান্টো জেনারেল’-এ বিশদভাবে বিধৃত হয়েছে।
আবেগ ও ইন্দ্রপরায়ণে মাটির নান্দনিকতার তিনি কবিতায় বলেছেন, ‘সোঁদা গন্ধক বর্ণ যেসব পাত্রের নিচে/প্রতœসম্ভারী স্বর্ণের মধ্যে/ধূমকেতু-ঢাকা তরবারির ন্যায়/আমার দুর্বল জর্জরিত হস্ত প্রবেশ করিয়ে দিই/মৃত্তিকার গভীরতম যোনিকূপে।’ শেষে উচ্চারিত ‘সমাপ্ত হয় এভাবে মানুষের বসন্ত ঋতু।’
বাতাস সমগ্র প্রকৃতিজুড়ে বিস্তৃত। বাতাস শূন্যতা ও নির্জনতায় জীবনের অর্থহীনতা বৃদ্ধি করে নৈরাশ্যের দিকে এগোয় ‘বাতাস থেকে বাতাসের দিকে’। কবিতা বারকারোলা-এ এই শূন্য অনুভূতি বর্ণিত হয়েছে ‘বাতাস ক্রন্দনরত বাঁশি হয়ে আমাকে ডাকবে’ আর পরিশেষে চূড়ান্ত স্থিরতা/ ‘কেউ আসবে/ দারুণভাবে প্রবাহিত হবে হয়তো।’
এই দ্বিধা নিয়েই জীবন। পানিও এরকম দ্বৈত দ্বন্দ্বে বিপুল ব্যাপ্ত। ‘সমুদ্র খুব একাকী’। পানি নিঃসঙ্গ-নির্জন। এর সঙ্গে মিলিত হতে পারে না, প্রেমিকার সঙ্গেও নয়। আগুন কবির কাছে ভালোবাসার ভরসা। ‘আকাশটাকে দগ্ধ করে তুলেছে আগুনের শিখা হলাহল’। এভাবেই সত্যকে পুড়িয়ে আগুন কবিতার রূপ নেয়। মাটি, বাতাস, পানি ও আগুন জীবনের প্রেম, স্বপ্ন, দুঃখ, হতাশা, আর্তি, কীর্তি, সম্মান, অপমান-এইসব মনোজাগতিক বোধানুভরের প্রতীক হিসেবে বাস্তবে কবিতায় বারবার ব্যবহার করেছেন অতি উজ্জ্বলতায় এবং সফলভাবে, তা পাঠকের কাছে সমাদৃত হয়েছে।
১৯২৭ থেকে কূটনীতিক শিক্ষানবিস হিসেবে প্রথমে বার্মার রেঙ্গুন, শ্রীলংকার কলম্বো, ইন্দোনেশিয়া জাভার বাটাভিয়া এবং সিঙ্গাপুর এসব দেশ ও শহরে নিয়োজিত হন। পরে চিলিতে ফিরে আর্জেনটিনার বুয়েনস আয়ারস ও স্পেনের বার্সেলোনায় কূটনীতিক কর্মে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। পরে কনসাল হিসেবে মাদ্রিদে তার প্রিয় ব্যক্তিত্ব নোবেল জয়ী কবি গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রালের স্থলাভিষিক্ত হন। সেখানে রাফায়েল আলবার্তি, ফেদারিকো গার্সিয়া লোরকা, পেরুর কবি সিজার ভাল্লেজো-এদের সান্নিধ্য লাভ করেন। এ সময়ে স্পেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় এবং নেরুদা ধীরে ধীরে প্রথমবারের মতো রাজনীতিমনস্ক হয়ে উঠতে থাকেন। বিশেষ করে স্পেনের স্বৈরাচারী শাসক ফ্রাঙ্কোর সৈন্যদল লোরকাকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর তিনি সমাজতান্ত্রিক মতবাদের অনুসারী হয়ে পড়েন এবং পরবর্তী সারা জীবন এরকমই ছিলেন। ফ্রাঙ্কোর বিপরীতে রিপাবলিকানদের প্রকাশ্যে সমর্থন দেন ও এই বিষয়ে ১৯৩৩-এ ‘রেসিডেন্ট অন আর্থ’- পৃথিবীতে বসবাস ও ১৯৩৮-এ ‘স্পেন ইন দি হার্ট’ ‘হৃদয়ে স্পেন’ শীর্ষক সংকলন প্রকাশ করেন এবং এ কারণে কনসালের চাকরি হারান। ব্যক্তিগত জীবনে নেরুদা নারীদের কাছে খুব প্রিয়পাত্র হিসেবে সবসময় আকর্ষিত হতেন। জাভার থাকতে ওলন্দাজ এক মহিলা ব্যাংকার মারিকার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এ সময়ে কবিতায় বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং অনেক অতিবাস্তবতাযুক্ত কবিতা নিয়ে ‘রেসিডেনসিয়া এন লা ডিয়েরা বিষয়-বৈচিত্র্য, আঙ্গিক, প্রকরণসহ প্রকাশ পায়। প্রথম বিয়েটি বিচ্ছেদে রূপ নেয়। দ্বিতীয়বারে তারচেয়ে বিশ বছরের বড় আর্জেন্টিনাবাসী দেলিয়া দেল কারিলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। মাদ্রিদ থেকে মন্টেকার্লো, নেদারল্যান্ডস হয়ে দেলিয়ার সঙ্গে প্যারিসে এসে বসবাস শুরু করেন।
সে সময়ে রিপাবলিকানদের জয় হলে পাবলো বিশেষ কনসাল হিসেবে স্পেনের অভিবাসীদের ফরাসি ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করে চিলি পাঠানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। দ্বিতীয়বারের বিয়েও ভেঙে যায় এবং তৃতীয় ও শেষবারে তার বিয়ে হয় স্বদেশী গায়িকা মাতিলতা উরুতিয়ার সঙ্গে ১৯৬৬ সালে। ১৯৪০-৪৩ সালে কনসাল জেনারেল হন মেক্সিকোয়। ১৯৪০ সালে লিও ট্রটস্কি হত্যা চেষ্টায় পাবলো জড়িয়ে পড়েন। মেক্সিকোর রাষ্ট্রপতি কামাচো-এর অনুরোধে ট্রটস্কি হত্যার অন্যতম সন্দেহভুক্ত ও ষড়যন্ত্রকারী মেক্সিকোর চিত্রশিল্পী ডেভিড সিকুয়েইরস, তাকে চিলির ভিসা দিয়ে চিলিতে পাঠানোর ববস্থা করেন। এতে তিনি বেশ সমালোচিত হন। তখন নোবেলজয়ী মেক্সিকান কবি ওক্তাভিও পাজের সঙ্গে সম্পর্ক হয়। চিলিতে ফিরে ১৯৪৩-এ পেরু-ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন এবং মাচুপিচ্চু পর্বত’ শীর্ষ দীর্ঘ কবিতা লেখেন। এ ধারাবাহিকতায় ১৯৫০ সালে ‘কান্টো জেনারেল ও কান্টো-১২’ এক মহাকাব্যিকতা ধরনের উল্লেখযোগ্য রচনা করেন। শেষে তিনি স্পেন-সৈন্য দ্বারা অগণিত পেরুবাসীর নিষ্ঠুর হত্যা বিষয় কবিতার মধ্য দিয়ে আবার তাদের জন্ম লাভের অনুরোধ করেছেন এবং কবির মাধ্যমে সেই মৃত জনগণকে কথা দিয়ে জানাতে ও প্রতিবাদে প্রতিরোধ করতে বলেছেন। এ কবিতাটিকে কবি ও শিক্ষাবিদ মার্টিন এসপাদা বলেছেন, ‘এটার মতো কোনো উঁচু স্তরের রাজনৈতিক কবিতা হতে পারে না’।
১৯৪৫ সালে পাবলো চিলির কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন ও সিনেটর নির্বাচিত হন। ১৯৪৬-এ পাবলো রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গঞ্জালেস ভিদেলার সমর্থনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন, কিন্তু শ্রমিকদের ওপর তার অত্যাচার-অবিচারের জন্য তীব্র প্রতিবাদ জানান। কট্টর সমাজতন্ত্রবিরোধী ভিদেলা এ জন্য তাকে গ্রেফতার করার আদেশ জারি করেন ১৯৪৭-এ। পরে দুই বছর দেশের ভেতরই আত্মগোপনে ছিলেন এবং ১৯৪৯-এ দেশান্তরী হন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নির্বাসিত জীবন কাটান। দেশে ফেরেন ১৯৫২ সালে এবং তখন তিনি কবি হিসেবে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি ও কীর্তির অধিকারী। প্রেম, রাজনীতি ও মানবতার কবি এ পরিচয়ে পৃথিবীর বহু ভাষায় তার কবিতা প্রকাশ পায়। ১৯৫০-এ আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার, ১৯৫৩-এ লেলিন শান্তি পুরস্কার ও স্টালিন শান্তি পুরস্কার এবং ১৯৭১-এ নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। এ সময়ে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি সালভাদর আলেন্দের এক ঘনিষ্ঠ জন ও উপদেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হন এবং তিনি তাকে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নির্বাচিত করেন।
বামপন্থী ছিলেন বলে নোবেল পুরস্কার অর্জনে নানা বাধা-বিপত্তি আসে। সেই জন্য নোবেল পাওয়ার বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘একজন কবি একই সময়ে যেমন এক সংহতির শক্তি তেমনি একটি স্বাতন্ত্র্যেরও। স্বৈরশাসক অগস্টো পিনোচেট ১৯৭৩-এ আলেন্দের রাজনৈতিক ক্ষমতা আমেরিকার সাহায্যে কেড়ে নেন এবং তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। পাবলোর সে সময়ে প্যারিসে মূত্রনালির কর্কট রোগ ধরা পড়ায় তিনি চিলিতে ফিরে আসেন এবং পিনোচেটের সৈন্যরা কিছুদিন পর তার বাড়ি তল্লাশি করতে আসে। তিনি তখন তার সেই বিখ্যাত উক্তি করেন- ‘চারদিক খুঁজে দেখ, শুধু একটি জিনিস, তোমাদের জন্য বিপদের, সেটা হচ্ছে কবিতা’। নোবেল পুরস্কারের পর সম্মানজনক গোল্ডেন রীথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন স্ট্রুগা কবিতা সম্মেলনে। পাবলো ১৯৭৩-এর ২৩ সেপ্টেম্বরে মৃত্যুবরণ করেন এবং পিনোচেট নেরুদার শব নিয়ে শোক মিছিল করার অনুমোদন না দিলে জনতা তা না মেনে দলে দলে রাস্তায় নেমে পড়ে।
পাবলো এ লাভ পোয়েম্স বইটির জনপ্রিয়তা দেখে বলেছেন- ‘আমি সত্যি বুঝি না এসব কেমন করে হয়, কেন এই দুঃখ, যন্ত্রণা, প্রেম নিয়ে বইটা এত মানুষ, এত তরুণ-তরুণী পড়েই চলেছে। সত্যিই আমি বুঝি না। সত্যি কেউ বোঝে না।’
পাবলোর কবিতা নিয়ে চিলিসহ গ্রিস, আমেরিকা, অস্ট্রিয়া, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা ও কানাডার বিখ্যাত সব সুরকার গান রচনা করেছেন। তাকে নিয়ে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। এ সবের মধ্যে নেরুদার ‘পোস্টম্যান’ উল্লেখযোগ্য। পাবলোর তিনটি বসবাসগৃহ এখন জদুঘরে পরিণত হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসির অর্গানাইজেশন অব স্টেটস ভবনের দক্ষিণ পাশে তার একটি আবক্ষ মূর্তি স্থাপিত হয়েছে।
তার বাড়ি আইলা নেগ্রা স্মরণে ‘কবিতা’ শীর্ষক কবিতায় বলেছেন, ‘কিছু একটা শুরু হয়েছে আমার আত্মায়/জ্বর কিংবা বিস্মৃত ভাবা/আর আমি আমার মতো/ উদ্ধার করি/সেই আগুন/এবং এই প্রথম অস্পষ্ট পঙ্ক্তি লিখি,/কোন সারবস্তু ছাড়া, খাঁটি, খামাখা,/প্রকৃত বুদ্ধিমত্তায়। এমন কারোর যে জানে না কোনকিছুই,/ এবং সহসা আমি দেখি স্বর্গ উন্মুক্ত ও উদ্ভাসিত। আবার ‘পূর্ণ নারী টসটসে আপেল, গরম চাঁদ’ কবিতায় লিখেছেন ‘পূর্ণ নারী টসটসে আপেল, গরম চাঁদ,/সমুদ্র শ্যাওলা, বিচূর্ণ কর্দম আর আলোর ঘন বর্ণে/কোঁন অস্পষ্ট উজ্জ্বলতা খুলে দেয় তোমার/স্তম্ভদ্বয়ের মধ্যে?/ কোন প্রাচীন আঁধার স্পর্শ করে, একটি মানুষ তার বোধ দিয়ে?/ভালোবাসা জল ও নক্ষত্রের সঙ্গে ভ্রমণ,/ধোঁয়াশা বাতাস এবং হঠাৎ গোধূমচূর্ণের সঙ্গে/ভালোবাসা হল একটি সংঘর্ষ বজ -বিদ্যুৎ/আর দুটি শরীরের সঙ্গে যা পরাজিত হয় এক ফোঁটা মধুর মাধুরিতে। আরও তিনি কবিতায় বলেন যেই অমোঘ অনুভূতি ‘ভালোবাসা একটুখানি, ভুলে যাওয়া কত দীর্ঘ’।
কবিতাগুলো যেহেতু এখনও সাম্প্রতিক, ধর্মে ধ্র“পদী এবং মর্মে চিরকালীন, তাই ওরকম অতল জলের অবগাহিত চরিত্র নিয়ে চির ভাস্বর ও চির উজ্জ্বল হয়ে কবিতার জগতে চিরকাল বিরাজ করবে পৃথিবীর কবি। প্রেমের কবি পাবলো নেরুদা।

 

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>