| 17 এপ্রিল 2024
Categories
উৎসব সংখ্যা’২০২১

উৎসব সংখ্যা প্রবন্ধ: আফগান নারী: লুট হয়ে যাওয়া পরিচয়  

আনুমানিক পঠনকাল: 7 মিনিট
১.
নব্বইয়ের দশকে(১৯৯৬-২০০১) মুসলিম বিশ্বে তালিবান নামে যে গোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছিল, তার অদ্ভুত বর্বরোচিত  ইতিহাস সবার জানা।সোভিয়েত উপনিবেশ থেকে নিজেদের মুক্তিলাভের লক্ষ্যে সভ্যতার বিবেচনায় দেশটি কতটুকু এগিয়েছিল তা কেবল নারীর জীবন যাপনের পরিবর্তন থেকেই অনুমান করা যাবে। 

 পুরো উপমহাদেশে জুড়েই মৌলবাদী রাজনীতির জয়জয়কার দেখা গেছে গত দুই দশক যাবৎ।নতুন শতকে তাদের পুনরুত্থানে তাই বিস্ময়ের অবকাশ নেই খুব একটা। তবু আফগানিস্তানের নারীদের জীবন প্রতিদিন যেন ইতিহাসে যুক্ত করে দিচ্ছে নব নব বিস্ময়ের অধ্যায়।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

২.
হোয়্যার ইজ মাই নেইম
জেন্ডার বৈষম্য সারা বিশ্বে কম বেশি বিরাজমান। কিন্তু আফগানিস্তানের নারীদের অবস্থা মনুষ্যেতর বললে কম বলা হবে।শিক্ষা বঞ্চিত করে,গৃহবন্দী করে,পুরো শরীর বস্তায় আবৃত করার পরও শেষ হয় নি, তাদের নামকেও ঢেকে রাখা হয় আব্রুতে।
মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে নারীর নাম বিষয়ে একটি  প্রচলিত কৌতুক দিয়ে শুরু করা যাক ।
জনৈক বৃদ্ধ ভদ্রলোকের এক বন্ধু এসেছে বাড়িতে। বৃদ্ধের স্ত্রী আপ্যায়নে ব্যস্ত,বৃদ্ধ নানা কাজে তার স্ত্রীকে সম্বোধন করছেন জানপাখি,ময়না,কলিজা ইত্যাদি নামে। বন্ধুটি মুগ্ধ হয়ে জানালো, এই বয়সেও তাদের এই প্রেমময় সম্পর্ক দেখে সে মুগ্ধ। তখন কাতর কন্ঠে বৃদ্ধ জানালো,আসলে অমুকের মা ডাকতে ডাকতে সে তার স্ত্রীর নামই ভুলে গেছে,তাই এই বিকল্প ব্যবস্থা।

কৌতুক তো আকাশ থেকে পড়ে না,বাস্তব জীবনের সংশ্লিষ্টতাতেই কৌতুকের জন্ম হয়।নারীর নাম ব্যবহার তার পরিবার ও সমাজের কাছে গুরুত্ববহ ছিলই না কখনো। তাই তার নাম হারিয়ে যেতে পারে, সমস্যা হয় না তাতে।কিন্তু পুরুষ তার বংশ,পদবী,গোত্র,গোষ্ঠী,সম্পদ সবকিছুর অধিকর্তা।তার নাম হারালে চলে?


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com


প্রখ্যাত উপস্থাপক ফজলে লোহানী তাঁর ‘যদি কিছু মনে না করেন’ অনুষ্ঠানে একবার নদী ভাঙনে ঘর বাড়ি হারিয়ে যাওয়া এক বৃদ্ধ  নারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন,যে নারী নিজেই তার নাম ভুলে গিয়েছিল। 
আফগানিস্তানের নারীদের অবস্থা আরো ভয়াবহ।জন্মের পর অসন্তুষ্ট বাবা মা দীর্ঘদিন কন্যাশিশুটির কোন নামই রাখে না।
নাম রাখার পর চাইলেও তারা নিজেদের নাম ব্যবহার করতে পারে না।জন্ম,মৃত্যু,বিয়ে — কোন সনদেই তার নাম থাকে না। নাম থাকে না তার কবর ফলকেও। এমনকি চিকিৎসার জন্য প্রেসক্রিপশনে নিজের নাম লেখার জন্য এক নারী তার স্বামীর দ্বারা নৃশংস ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এই প্রথার বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে যে আন্দোলন গড়ে ওঠে তার একটা নাম অবশ্য আছে। ‘হোয়্যার ইজ মাই নেইম’ শীর্ষক এই আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন হেরাতের বাসিন্দা সারাহ সামেত ও লালেহ ওসমানী। প্রথার নামে,ধর্মের নামে এরকম অদ্ভুত সব রেওয়াজ চালু আছে সেখানে। 

আমাদের দেশেও মেয়েদের নাম রাখা নিয়ে আছে নানা কাহিনী। পরিচিত এক সহকর্মী তার গর্ভস্থ সন্তান কন্যা হবে জেনে আনন্দিত চিত্তে নাম রেখেছিল খনা।কিন্তু জন্মের পর জানা গেল এরকম অমুসলিম গন্ধযুক্ত নাম রাখলে ইহকাল পরকাল দুইই যাবে। অতঃপর আকিকা দিয়ে আরবি নাম রেখে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছিল। মেয়েদের ডাকনাম শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে পরিত্যক্ত হয়ে যায়, যাতে সে নতুন জীবন ঠিকঠাক মতো শুরু করতে পারে পিছুটান না রেখে, এমন বিশ্বাসও আছে। ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’ উপন্যাসে মালতীর বয়ানে সে কথা জানা যায়।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com


৩.
নাদিয়া আঞ্জুমান : জীবনের দামে কেনা কবিতা 
তালিবানি শাসনের উত্থান কালে (১৯৯৬)তারা দেশের নারীদের জন্য স্কুল-কলেজ, খেলাধুলা, সঙ্গীত, ছবি তোলাসহ সকল ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ ঘোষণা করেছিল।শুধু তাই না,কেবল অচেনা পুরুষের সাথে হেঁটে যাওয়ার মতো অপরাধের জন্যও তারা পাথর ছুঁড়ে মারা বা বেত্রাঘাতের মতো শাস্তি বিধান করে।
নাদিয়া আঞ্জুমানের জন্ম আশির দশকে। তালিবানি শাসনের প্রথম পর্বের শাসনামলের শিকার এই নারী। বিবাহের ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও তাকে তার পরিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেরানি ফরিদ আহমাদ মজিদ মিয়ার সঙ্গে বিয়েতে বাধ্য করে।তারপরও নাদিয়া সাহিত্য চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকেন।শেক্সপিয়ার টলস্টয় বালজাক প্রমুখের সাহিত্যকর্মের সাথে তার পরিচিতি ঘটে।২০০১ সালে তালেবান শাসনের পতন ঘটলে তিনি হেরাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দারি সাহিত্যে পড়াশোনা শুরু করেন এবং এ সময় গুল-ই-ডুডি(ধোঁয়াটে ফুল) নামে তার কবিতার বই প্রকাশিত হয়।বইটি পাকিস্তান ও ইরানেও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই বইতে তিনি আফগানিস্তানের পিতৃতান্ত্রিক বর্বরতাকে তুলে ধরেছিলেন।
 ২০০৫ সালে এই বইকে কেন্দ্র করে স্বামী মজিদ তাকে প্রহার করে,পরে তার মৃত্যু ঘটে। যদিও এই ঘটনার কোন বিচার হয় না। কারণ স্বামীটি দাবি করেছিল সে মাথায় আঘাত করেছে বটে,কিন্তু এতে তার মৃত্যু হয়নি,তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে। বিচার কেই-বা দাবি করবে,নাদিয়ার নিজের পরিবারও তাকে নিয়ে লজ্জিত ছিল বলে লেখক সাংবাদিক ক্রিস্টিনা ল্যাম্বের বরাতে জানা যায়।কারণ নারী হিসেবে প্রেম ও সৌন্দর্য নিয়ে কবিতা লিখে সে তার পরিবারকে অসম্মানিত করেছে। 
 এই ঘটনায় প্রমাণিত হয়ে যায়, নারীর মালিকানাধীন কিছু না থাকলেও তার জীবনের মালিক প্রভু সংখ্যাতীত।রাষ্ট্র, প্রশাসন, স্বামী, পরিবার, পিতামাতা,প্রতিবেশী, সমাজ কে না।তালিবানের শাসন কায়েমে তার মালিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কেবল।
তালেবানি শাসনামলের দ্বিতীয় পর্যায়ে এবার নির্মমভাবে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে শিল্পী সাহিত্যিক সাংবাদিক সমাজকর্মীদের।এরই মধ্যে কবি ও ইতিহাসবিদ আবদুল্লাহ আতেফি এবং কৌতুকাভিনেতা ফজল মোহাম্মদকে হত্যা করা হয়েছে, যিনি একজন পুলিশ অফিসারও ছিলেন।
সাধারণ মানুষ ঘর থেকে ফেলে দিচ্ছে দেয়ালে ঝোলানো শিল্পকর্ম।কান্দাহারের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জানান,তিনি আতংকে ঘরে রাখা সাহিত্যের বইপত্র সব ফেলে দিয়েছেন, কারণ ‘ওরা’ এসব একদম পছন্দ করে না,কোন প্রশ্ন ছাড়াই গুলি করে মেরে ফেলে।এরপর  নারীদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। তাদের পড়াশোনা, খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চার ওপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে সবার আগে। যারা দেশ থেকে পালাতে পারে নি তারা আতংকে জীবন কাটাচ্ছে। কারণ ষোল বছরের ওপরে,পঁয়তাল্লিশের নিচে এই বয়সী নারীদের তালিকা করা হচ্ছে বাধ্যতামূলক বিয়ের জন্য। 
এই পরিস্থিতিতে নাদিয়া আঞ্জুমানের ‘আমি মুখ খুলতে চাই না’ কবিতাটি বারুদের মতো স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দিচ্ছে চারদিকে। 
আমি মুখ খুলতে চাই না
আমি কি গাইতে পারি?
আমাকে—জীবন যাকে ঘৃণা করে— 
আমি অকারণে জন্মেছিলাম
আমার মুখে সিলমোহর দেওয়া উচিত।
বসন্ত এসেছে, আমার হৃদয়ে
উদযাপনের অনুকূল মুহূর্ত।
কিন্তু আমি কী করতে পারি যদি একটি ডানা থাকে
আমি এখন আটকা পড়েছি?
তাই আমি উড়তে পারি না।
আমি অনেক দিন থেকে নীরব আছি,
কিন্তু আমি কখনও সুর ভুলে যাইনি
আমি ফিসফিস করা বন্ধ করতে পারি না
আমার হৃদয় থেকে প্রবাহিত গান
তারা আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে 
একদিন আমি খাঁচা ভেঙে ফেলব
আমি উড়ব, এই একাকিত্ব থেকে বেরিয়ে আসব
এবং বিষণ্ণতার সাথে গান করব।
আমি ভঙ্গুর পপলার নই যে
বাতাসে কেঁপে উঠব।
আমি একজন আফগান নারী
সুতরাং আমার ক্রমাগত অভিযোগটি বুঝুন।
আমি এক কোণে খাঁচাবন্দি
বিষণ্ণতা এবং দুঃখে পূর্ণ…
আমার ডানা ভাঙা এবং আমি উড়তে পারি না…
আমি একজন আফগান নারী এবং 
আমাকে অবশ্যই নেকড়ের মতো 
গর্জন করে কথা বলতে হবে।

(অনুবাদ :ফজল হাসান)


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

৪.

বাচ্চা পশ :গিনিপিগ জন্ম বন্ধ হোক
এবারের কন্যা শিশু দিবসে অনেকেরই প্রশ্ন ছিল, পুত্র দিবস বলে কিছু নাই কেন? 
এও এক চিহ্ন — দাম্ভিকতার,অহংকারের।যেন বাসে উঠে নারীর জন্য বরাদ্দকৃত কয়েকটি সিটে ইঞ্জিনের গরমে কুঁচকে থাকা কিছু অসহায় জীবের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকা, অধিকার কি বেশি দেয়া হয়ে গেল?
এ কথা কারো অজানা নেই যে, এই উপমহাদেশ নারীকে অবদমিত,অবনমিত,অবগুণ্ঠিত রাখার জন্য জন্য কত বিচিত্র কুখ্যাত সব প্রথা প্রচলন করেছে যুগে যুগে। 
এক ভারতেই ছিল সহমরণ,কুলীন বিয়ে,অবরোধের মতো প্রাণঘাতী, মানবেতর সব নিয়ম। কন্যাশিশু হত্যা এককালে ছিল, এখন আধুনিক যুগে তা ভ্রূণহত্যায় দাঁড়িয়েছে আলট্রাসনোগ্রামের মতো বিজ্ঞানের সহায়তায়।
অমর্ত্য সেন এই অস্তিত্ব প্রকাশ না হওয়া নারীদের নাম দিয়েছেন ‘মিসিং ওম্যান’ নামে।তিনি দেখেন,১৯৭০ সাল থেকে নারীর জন্মহার আশংকাজনক ভাবে কমে গেছে। 
ভবিষ্যতের লৈঙ্গিক ভারসাম্যহীনতার বিষয়টি তার নজরে আসে।তিনি জানান,ভ্রূণ হত্যা না হলে প্রায় এক কোটি নারী বেশি দৃশ্যমান থাকত। কেবল তাই নয়,নির্যাতন, হত্যা,ধর্ষণ 
নানাভাবে নারীর অস্তিত্ব প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে বিলীন হচ্ছে। 
আফগানিস্তানের অবস্থা আলাদা কিছু না,বরং আরো ভয়াবহ। সেখানে কন্যা শিশুর জন্ম মানে বংশসুদ্ধ অভিশপ্ত হয়ে যাওয়া। তাই সেখানে কন্যা শিশুকে বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত বালক সাজিয়ে রাখার প্রথা চালু আছে। ছোট চুল,ছেলেদের পোশাকে সাজানো এসব শিশুদের ডাকা হয় ‘বাচ্চা পশ’ নামে।এতে করে অন্তত কিছুকাল সমাজের কাছে মান রক্ষা হয়।’বালক’টিও কয়েক বছর পুরুষের মতো বাইরের ছোটখাটো কাজে পরিবারটিকে সহায়তা করতে পারে।
সবচেয়ে অদ্ভুত হলো,বিশ্বাস করা হয় যে,সেজে থাকা হলেও ছেলেটিকে দেখতে দেখতে মায়ের পক্ষে সম্ভব হবে পুত্র জন্মদান করার!তবে হরমোন পরিবর্তনকালে তাকে যখন হঠাৎই গৃহবন্দী হতে হয় তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই তার মনের ওপর চাপ পড়ে। এই প্রথাটি অমানবিক নিঃসন্দেহে। কিন্তু নতুন তালেবান শাসকেরা এই প্রথারও বিরুদ্ধে। কন্যা শিশু নিয়ে তারা কোনরকম নিরীক্ষায় যেতে রাজি না।আবার জানা গেছে, তালেবান শাসন পূর্বকালে নারী পাচার ও বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল বহুগুণ। বর্তমান সময়ে যেটি দাঁড়িয়েছে জোরপূর্বক বিয়ে এবং পশুবৎ খাঁচার বন্দী জীবন লাভ। 

আফগান নারীর জীবন যেন সেই তুলসীগাছ, মালিকানা বদলায় প্রভুদের ক্ষমতার লড়াইয়ে, কিন্তু অবস্থা বদলায় না তুলসীগাছের।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com


৫.
নারীর পরিচয় সংকট:আবহমান সংস্কৃতি(!)
আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি সংকটাপন্ন।শুরুতে তারা বোঝানোর চেষ্টা করেছিল এবারের কর্ম পরিকল্পনা ভিন্ন রকম হবে। সময় গড়িয়েছে,তারা স্বরূপে আবির্ভূত হয়েছে।আফগানিস্তানে নারীদের জন্য আবারো সঙ্গীত,খেলাধুলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নারী ফুটবলারদের ট্রেইনার খালিদা পোপাল আতংকিত হয়ে খেলোয়াড়দের ছবি আর জার্সি পুড়িয়ে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ এবার বাদ যাচ্ছে না পুরুষরাও।দাড়ি লম্বা না রাখার অপরাধে তাদের বেদম প্রহার করা হচ্ছে। 
ইতোমধ্যেই মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় ভেঙে দেয়া হয়েছে,তার বদলে নৈতিক বিভাগ চালু হয়েছে নারীকে ‘শুদ্ধাচারী’ করে তোলার লক্ষ্যে।রাজপথে নারীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করে দিতে তারা বদ্ধপরিকর। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তারা বলেছে, অর্ধেক জনগোষ্ঠীর গুরুত্ব বলতে তারা বোঝে ইসলামের অনুশাসন অনুযায়ী নারীর মর্যাদা প্রদান।এতকাল যারা বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করেছে তা পতিতাবৃত্তি ছাড়া আর কিছু না।তারা রাজপথে প্রতিবাদকারী নারীদেরও পতিতা বলে অভিহিত করেন।
নারীকে ‘পতিতায়িত’ করাটা যুগে যুগে, দেশে দেশে
সবচাইতে সহজ কাজ বলে বিবেচিত হয়েছে, যেহেতু 
মনোবল ভেঙে দিতে,সমাজের কাছে হীনম্মন্য করে তুলতে এই পতিতায়নের জুড়ি নেই । নারীর একমাত্র ‘পবিত্র কাজ’ মাতৃত্ব বলে তারা ঘোষণা দিয়েছে। এটা নতুন কিছু না। পৃথিবীতে পুরুষ সাম্রাজ্য অটুট রাখতে, বংশ প্রদীপ সমুন্নত রাখতে অধিকর্তার নির্দেশ অনুযায়ী নারীরা এই দায়িত্ব সহস্রাধিক কাল যাবৎ পালন করে আসছে।অথচ কন্যাশিশুর জন্ম প্রায় সর্বত্র অনাকাঙ্ক্ষিত বলে বিবেচিত।এই অন্ধ 
গরিমা আর স্ববিরোধের করদ রাজ্যে নারী অনাহুত এক অস্তিত্ব।
সবচাইতে বিস্ময়কর হলো,আমাদের দেশে দাম্পত্য কলহের কারণে কোন নারী যখন নির্মমভাবে নির্যাতনের শিকার হয়,তখন প্রতিবেশীরা স্বামী-স্ত্রীর নিজেদের ব্যাপার বলে ঘটনা এড়িয়ে যায়। কিন্তু আফগানিস্তানের মতো দেশে নারীর প্রতি এসব সহিংসতার চিত্র উঠে এলেও সেসব কি শুধু দেশের ভেতরকার বিষয় বলে ছেড়ে দেয়া হয়?জাতিসংঘ কী ভূমিকা পালন করে তখন?নাকি সময় এসেছে নারীর জন্য পৃথক আরেকটি জাতিসংঘ গঠনের? 
আফগানিস্তানের নারীদের অবস্থাদৃষ্টে নিজেদের সান্ত্বনা দেয়ার মতো অবকাশ বোধ হয় নেই খুব একটা।কারণ এই পলিমাটির দেশেও অন্তরের অন্তস্তলে বিষের বীজ রোপন হয়ে গেছে অনেক আগেই।সংবিধানে নারী নীতি বাস্তবায়িত হতে পারে নি সম্পত্তির সমবন্টন ইস্যুর বিরোধিতায়।অবুঝ শিশুও এখন আবৃত হয়ে যাচ্ছে পর্দায়।শেমিং-বুলিয়িংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ পেশা থেকে পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে নারীকে।বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় সর্বত্র বেতন বৈষম্য বিরাজমান। যে-কোন মুহূর্তে,দালান ধ্বসে,আগুন লেগে জীবন উৎসর্গ করে দিতে পারা অসহায় গার্মেন্টস কর্মীদের দেখিয়ে বলা হচ্ছে এটাই নারীর ক্ষমতায়ন।বিভিন্ন অজুহাতে মেয়েদের বিয়ের বয়স কমিয়ে ষোল করা হয়েছে।যার ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে ঝরে পড়া ছাত্রীসংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে গেছে।
সব মিলিয়ে আমাদের নারীদের জন্য আশা করবার মতো পরিস্থিতি না থাকলেও,নাম যেন না ভুলে যেতে হয়,অবয়ব যেন হারিয়ে না যায় অন্ধকারে,পরিচয় যাতে লুট না হয়ে যায় সেজন্য উৎকর্ণ থাকার দরকার আছে বৈ কি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত