Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,puja 2021 bangla golpo devadyuti roy

ইরাবতী উৎসব সংখ্যা গল্প: তালাক । দেবদ্যুতি রায়

Reading Time: 6 minutes

আয়েসী দুপুরের পরতে পরতে এক অনিন্দ্যসুন্দর মুখ জড়িয়ে আছে বলে মনে হয় খোরশেদ চেয়ারম্যানের। আর সে মুখের অধিকারিনীর কথা ভাবতে ভাবতে তার নূরানী চেহারার জেল্লা বেড়ে যায় যেন। আহ্ নাছিমামেয়ে তো নয়একেবারে পূর্ণিমার চান্দের টুকরা। এত সুন্দর মেয়ে কত দিন দেখেনি সে তা তার মনে পড়ে না। তবে এখন মাঝেমাঝে মনে হচ্ছে বৈকি যে এই ভর দুপুরবেলায় সবার চোখের সামনে দিয়েই নতুন বউয়ের ঘরে ঢুকে যায় সে– যার যা খুশি ভাবুক তাতে। তার মনে হয় যেন এই জীবনে ঐ নাছিমা নামের মেয়েটা ছাড়া তার আর কোনোকিছুকোনো গন্তব্য নেই। এই সংসারপারুলবিবিতাদের দুই মেয়েরাজনৈতিক পদ সব যেন নাছিমার পায়ের তলায় গড়াগড়ি খায়। তবু কী মনে করে নিজেকে সে সামলে রাখে। বোধহয় এই বয়সে উত্তেজনার বশে এমন করাটা উচিত হবে কি হবে না বুঝতে পারে না শেষ পর্যন্ত।

অবশ্য খোরশেদ নিজের উত্তেজনা সামলে রাখতে পারলে আর এই চৌষট্টি বছর বয়সে এসে দ্বিতীয়বার বিয়ের ঘটনাটাই ঘটত নাসেটাও ঠিক। অনেকেই নিশ্চয়ই ভাবছে শেষ বয়সে এসে রীতিমতো একটা অপকর্ম করে ফেলেছে সে। কাল প্রাইমারি স্কুলের মাঠে উপস্থিত বেশিরভাগ মানুষের অবাক হওয়া মুখ সে দেখেছে। ঘর পালানো কোনো মেয়ের সালিশ করতে গিয়ে আর কোনো চেয়ারম্যান তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে– এমন ঘটনা নিশ্চয়ই ওখানকার কেউ মনে করতে পারেনি। খোরশেদের নিজেরও মনে পড়ে না এমন কোনো কথা সে বাপের জন্মে শুনেছে। কিন্তু ওই সময়ে আর কীই বা করার ছিল তারমুখ ঢেকে রাখা ওড়নাটা সরে গেলে মাথা নিচু করে বসে থাকা হুরপরির মুখটা দেখে নিজের বয়সী বুকের ভেতর যে তোলপাড় শুরু হয়েছিলতাকে অস্বীকারও বা করত কী করেতখন কি তার মনে হয়নি যে এই সুযোগে ওই মেয়েকে বিয়ে না করলে তার এইসব চেয়ারম্যানগিরিরাজনীতিজীবন সব সবকিছু বৃথা?

কাল থেকে আজ পর্যন্ত কতকিছু ঘটে গেল– সে কথা ভাবতে ভাবতে কাছারি ঘরের খাটে শুয়ে খোরশেদ চেয়ারম্যান এপাশ ওপাশ করে। এ ঘরে এখন কেউ নেইচন্দনকে বলে রেখেছিল আজ যেন অকারণে তার কাছে কেউ না আসে। মানুষের আগ্রহের তো কোনো শেষ নেইআর এই বিয়ের জন্য কত উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করে বসতে পারে লোকেএমনিতেই কাল উপজেলার ছোকরা সাংবাদিক লিমন বহুত জব্দ করার চেষ্টা করেছে তাকে। বাপ রে বাপসে কী জেরাবলে কি না– আপনি এমন একটা কাজ কেমন করে করতে পারছেনচেয়ারম্যান সাব?

ইশএকরাশ বিরক্তি ভেতর থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসে লিমনের কথা মনে আসায়। ছেলেটার এত কথায় কাম কীযেন তার বিয়ে করা বউকে ভাগিয়ে নিয়ে এসেছে সেলিমন নামের হাড়বজ্জাত ছেলেটাকে একটা ভালোমতোন ডলা দেওয়া দরকার বলে মনে হয় তার।

মেজাজ খারাপ করে দেয়া লিমন ছেলেটারর কথা পরে ভাবলেও চলবে। এই নরম খাটে শুয়ে এখন খোরশেদ বরং নাছিমার মুখটা মনে করার চেষ্টা করে। সত্যি সত্যিই যেন সাত আসমান থেকে একটা জলজ্যান্ত হুরপরি নেমে এসেছে পৃথিবীতে। কাল রাতে সেই হুরপরির চরম অনিচ্ছাতেও তার শরীর ছেনেছুনে এক করেছে সে। অবশ্য হুরপরির শরীরের ভেতর যে নদীতাতে ডুব দেবার সময়ই সে বুঝে গিয়েছিল নাছিমা কুমারী নয়। তাতে কীপরিরা কুমারী কি না তার খোঁজ নিয়ে কার কবে কী লাভ হয়েছেআর যে পরি এক সাধারণস্য সাধারণ মানবসন্তানের হাত ধরে ঘর পালিয়েছিল এক সপ্তাহ আগেতার কুমারিত্ব আশা করার মতো মোটা বুদ্ধি চেয়ারম্যান ধরেও না। লোকে বলে তার বুদ্ধি চিকনসেই চিকন বুদ্ধির কারণেই নাছিমার প্রতি তার একটুও রাগ হয়নি। বরং অল্প ‍কিছুদিন আগে কুমারিত্ব হারানো নাছিমার কোমল শরীরের ভাঁজে ভাঁজে গোসল করতে পেরে তার দিল খুশি হয়ে উঠেছিল। যদিও বয়সের দোষেই হোক বা আবেগ উত্তেজনার বশে– একটু পরেই হাঁসফাঁস করতে করতে খোরশেদ নাছিমার ওপর থেকে নেমে এসেছিল।

গত রাতের অকালসমাপ্ত সংগমের কথা ভেবে আরও একবার চেয়ারম্যান অস্থির হয়ে ওঠেনাছিমার কাছে এক ছুট দিতে মন চায়। কিন্তু এত কালের অনভ্যাসে আর লজ্জার আতিশয্যে সে এবারও মটকা মেরে শুয়ে থাকে এখানেই। কে জানেকাল বিয়েবিছানা সবকিছুতেই জোর করেছিল বলে নাছিমাই বা কী ভাবছে তাকেএকে তো অল্প বয়সী শরীর তারশেষে মনটন একেবারে বিগড়ে গেলে মহা মুসিবত।

ঘটনার শুরুর কথা মনে করে খোরশেদ। বাতাসের তোড়ে হঠাৎ করে ওড়না সরে যাওয়া হুরপরির মুখটা দেখে তার বুকের ভেতর একেবারে মোচড় দিয়ে উঠেছিল। মন বলে উঠেছিলএই মেয়েকে তার চাইই চাই। আর তাইতো কেমন সম্মোহিতের মতো সে অতগুলো লোকজনের সামনে কাল ঘোষণা করেছিল– “এই মেয়ের তো এখন যাওয়ার জায়গা নাই। মেয়ের পরিবারের আপত্তি না থাকলে আমি অরে বিয়া করতে পারি।”

যাওয়ার জায়গা কি আর সত্যিই ছিল না নাছিমারছিল নিশ্চয়ই। তবে খোরশেদের এই ঘোষণার জবাবে নাছিমার ক্ষীণ প্রতিবাদী স্বর ওড়নার আবডাল ভেদ করে জোরালো হয়ে উঠতেই পারেনি। আর তাছাড়া ওর বাপ যেন হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলঘর পালানো মেয়েকে হয়তো সত্যিই সে আর তার ঘরে ফিরিয়ে নিতে চায়নি। নাছিমার বাপের স্বস্তি দেখে নিজের একটুখানি অস্বস্তির ভাবও উবে গিয়েছিল তার সঙ্গে সঙ্গেই। তবে খোরশেদের কেমন অশান্তি লেগেছিল নাছিমার নাগর ছেলেটার আগুনচোখ দেখে। ওই তো অতটুকু একটা ছেলে কিন্তু কী তার খরতাপএক মাঠ মানুষের সামনে চোখের আগুনে সে যেন চেয়ারম্যানকে পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছিল। আর তারপর সালিশ শেষ হবার আগেই সে ত্যাদড় ছেলে তারপর কথা নাই বার্তা নাই কোথায় হাওয়া হয়ে গিয়েছিল। কোথায় যে গেল সেই ছেলে সে খবর আজ পর্যন্ত মিলল না। চন্দনরমিজ সবাইকে বলা ছিল যেন ছেলেটার কোনো খবর পেলেই তাকে জানায়– বলা তো যায় না কী করতে আবার কী করে বসে ছোকরা কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোনো খবর জোটেনি।

এলোমেলো ভাবনা ভাবতে ভাবতে খোরশেদের তন্দ্রা আসে। সেই তন্দ্রার মধ্যে চরাচর ভাসিয়ে আবার হাজির হয় নতুন বউয়ের মুখনরম ডাগর শরীরগায়ের পাগল করা গন্ধরাজের ঘ্রাণ। সে ঘ্রাণ আর শরীরের নরমে ডুবে যেতে যেতে হঠাৎই পারুলবিবির নাম মনে পড়ে তার। পারুলবিবিএ বাড়ির বড়ো বউসপ্তাহখানেক আগে মেয়ের বাড়ি গেছে– তার ছোটো মেয়ে তাবাসসুমের বাচ্চা হবে হয়তো আজ বা কাল কিংবা আরও দিন দশেক পরে। মেয়েটার এমন সময়ে এই বাড়িঘরসংসার সব কাজের লোকদের হাতে সঁপে দিয়ে পারুলবিবি তার দেখাশোনা করতে গেছে। কবে ফিরতে পারবে তার ঠিক নেই। খোরশেদের মনে পড়ে পারুলবিবির সঙ্গে তার কথা হয়েছে গত পরশু রাতে। তাবাসসুম এখন একদমই ঘুমাতে পারে নাতার পায়ে বিচ্ছিরিরকম পানি জমে গেছে এইসব নিয়ে খুব দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছিল তখন। তারপর এই লম্বা সময়ে আর কথা হয়নি তার সঙ্গেতাবাসসুম বা ছোটোজামাই ‍ইকবালের সঙ্গেও কথা হয়নি আর।

পারুলবিবির নামের সঙ্গে সঙ্গে তার মাথায় আবার অপ্রিয় চিন্তাটা ফিরে আসে। পারুলবিবি এ ঘটনাটা কেমন করে নেবে সেটা সে কাল থেকে বহুবার ভেবেও ঠিক বুঝতে পারেনি। এ খবর শোনার পর সে কি রেগে যাবে খুবমুখটা টকটকে লাল হয়ে উঠবে অন্য সময় যেমন হয়অথবা খুনখুন করে কাঁদবে অনেকক্ষণ ধরেনাকি কিছুই বলবে না– এই বিয়েকে তার নিজেরই অপারগতার শাস্তি মনে করে চুপ করে থাকবেএত বছরের সংসারে একটা ছেলে সন্তানের মা হতে না পারার শাস্তি যে এই গাও গেরামে একটা থাকতেই পারে এ তো তার অজানা নয়। পারুলবিবির সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া চেয়ারম্যান এই মুহূর্তে নিশ্চিত হতে পারে না কিছুতে। চন্দন অবশ্য কাল খুব ভরসা দিয়ে বলেছিল– চাচি খুব নরম মানুষচাচা। দ্যাকপেন নে কিছুই বলবে না আপনারে।

তা এ ব্যাপারটা নিয়ে এমনিও অত চিন্তার কিছু দেখে না খোরশেদ। পারুলবিবি এ নিয়ে একটু রাগ বাগ করলেই বা কীএকটু রাগ করে যদি সে মনে মনে শান্তি পায় তো পাক না। আর তার বাড়ি ফেরারও দেরি আছে এখনো। তাবাসসুমের বাচ্চাকাচ্চা হলে পরে তারপর। ততদিনে নাছিমা এ বাড়িতে আরেকটু থিতু হবে আর ওই অত দিন পর পারুলবিবিও এই ঘটনা নিয়ে তেমন মাথা গরম নাও করতে পারে। চেয়ারম্যানের মনে হয় এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে অকারণে বেশি বেশিই ভাবছে সে।

পারুলবিবির চিন্তায় হারিয়ে যাওয়া তন্দ্রাটুকু এরপর আবার ফিরে আসে। আরাম করে একটা ভাতঘুম দেবে বলে চেয়ারম্যান কোলবালিশটা জড়িয়ে নেয় বেশ করে। তারপর আবার কল্পনা করতে চায় নাছিমার মুখ কিন্তু পঞ্চদশী সেই ‍আশ্চর্য সুন্দর মুখের পাশে হেসে ওঠে এক শীর্ণকায়া পঞ্চাশোর্ধ সংসারক্লান্ত নারীর মুখওসে মুখ পারুলবিবির। বহু পরিচিত সেই নারীর হাসিতে যেন আগুননাছিমার প্রেমিক সেই আগুনচোখের ছেলের মতো সেও আগুনের হল্কায় লালচে হয়ে ওঠে। পারুলবিবির চোখের কোণের আগুন বুঝি বা পুড়িয়ে দিতে চায় খোরশেদ চেয়ারম্যানের মতো নির্লজ্জ পুরুষকেও।

এই প্রথম খোরশেদ সত্যিকার অর্থেই ধন্দে পড়ে যায়। গাঙপাড়ের কাদার মতো নরম পারুলবিবির তো এমন আগুনের মশাল হয়ে ওঠার কথা নয়। এই সংসারের চল্লিশ বছরে যে পারুলবিবি কোনোদিন তার মুখের ওপর চোখ তুলে তাকানোর সাহস করেনি তার মুখহোক সে নিজের অবচেতনেতবু এমন ঝলসে ওঠে কেননিজের বিক্ষিপ্ত ভাবনার ওপর বিরক্তি আসে তার। দূরমুখের ওপর এমন বিদ্রুপ দেখানোর দুঃসাহস পারুলবিবির হবে না কখনও। আর এই বয়সে আরেকটা বিয়ে কি কেবল সেই করলোযে পুরুষের হিম্মত আর ক্ষমতা আছে বউ পোষার তার পক্ষে বরং কেবল একটা বউ নিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়াটাই অস্বাভাবিক নয়আর তাছাড়াও এসব পদে টদে থাকলে যে একটা সুন্দরী কম বয়সী বউ থাকা ভালো বিভিন্ন দিক থেকেতা না বোঝার মতো বোকা তো সে নয়। এসব হাবিজাবি ভাবনা বাদ দিয়ে খোরশেদ তাই এবার ঘুমাতে চায়। আজ রাতে কালকের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে দেয়া যাবে না। নতুন বউয়ের মনের খবর দূর অস্ত কিন্তু শরীরটা তো হাতের কাছেই আছেসেই শরীরের হদিস পাওয়া চাই ঠিকঠাক।

বহুবিধ ভাবনায় ডুবে যেতে যেতে অবশেষে তার ঘুম আসে। সেই ঘুমের ভেতর সে স্বপ্ন দেখে তের বছর বয়সী এক ভুলে যাওয়া পারুলবিবিকে– যে পারুলবিবির সাথে আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগে তার দেখা হয়েছিল। সেই অপরূপ পারুলবিবির হা হা হাসির শব্দে ভরে যায় এই ঘরবারআসমান জমিন। চেয়ারম্যানের ঘোর লাগে– পারুলবিবি সারা জীবনেও এমন হা হা করে হাসেনিতার হাসি রোদের মতো কোমলনিঃশব্দ। ঘুমের ভেতর তলিয়ে যেতে যেতে খোরশেদ দেখে অমন কলিজা কাঁপানো হাসির শেষে পারুলবিবির মুখ আবার নরম হয়ে এসেছে পরিচিত দিনের মতো। সেই নরম মুখ তুলে পারুলবিবি ঠাণ্ডা স্বরে উচ্চারণ করে– আপনারে আমি এইবার তালাক দিবচেয়ারম্যান সাব।

হরিণডাঙ্গার মাটির মতো খোরশেদও জীবনে এই প্রথম কোনো নারীর দৃপ্ত মুখে এ কথা শোনে। এ কেমন কথাপারুলবিবি তাকে তালাক দিতে চায়এ কী করে সম্ভবকোমল সাদা সুতি পাঞ্জাবির ভেতর তার শরীর ঘামে ভিজে ওঠে। যেন কোনো গভীর ঘুম থেকে এক মুহূর্তে উঠে বসে সেচোখ মেলে নিজের চারপাশটা আঁচ করতে চায় আর এই ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নের সমাপ্তি আশা করে মনে মনে। কিন্তু সমাপ্তি কইচেয়ারম্যানের দুঃস্বপ্নক্লান্ত চোখের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে পারুলবিবি। সামনে দাঁড়ানো সেই নারীর বয়স তের কিংবা তিপ্পান্ন তা সে ঠাহর করতে পারে না কারণ কী এক আশ্চর্য যাদুতে ক্ষণে ক্ষণে পারুলবিবির মুখের রেখা বদলায়রূপ বদলায়বয়স বদলায়। সেই অবিরাম বদলে যেতে থাকা মুখ এক দৃঢ় কণ্ঠে বলে যেতে থাকে– এক তালাকদুই তালাকতিন তালাক… সে কণ্ঠের দৃঢ়তা আর বয়স কিন্তু অবিকল থাকেবদলায় না।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>