Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,puja 2021 bangla golpo moumita ghosh

উৎসব সংখ্যা গল্প: পাসওয়ার্ড । মৌমিতা ঘোষ

Reading Time: 3 minutes
“চলিয়ে, চলিয়ে লাঞ্চ করে। আরে সুলগ্না ম্যাম,আপ ইতনা কাম করোগি তো কোম্পানি আপকো ইকুইভ্যালেন্ট বোনাস নেহি দে পায়েগি। আরে, জয়িতা ম্যাম,আ যাও,বিনা খাকে দুবলি হো যাওগি।” এটা জোনাল ভাইস প্রেসিডেন্টের লাঞ্চ কলের স্ক্রিপ্ট।রোজ পুরো টিম নিয়ে একসাথে লাঞ্চ করবেন, এটাই ওনার রেজোলিউশন।বিশেষ কোন কাজ না থাকলে এর অন্যথা হয়না। ভদ্রলোক নর্থ ইন্ডিয়ান, দিল্লির লোক (আসলে পাঞ্জাবি।) নর্থ ইন্ডিয়ান কেউ আসছে শুনে সুলগ্নার প্রথমে একটু অস্বস্থি হয়েছিল। কিন্তু ভদ্রলোক লিডার হিসেবে ব্যতিক্রমী, মানুষ হিসেবে অসম্ভব ভালো।কাজ পাগল হলেও এই সময়টা জোনাল টীমের পুরো রিল্যাক্সেশন। সবার খাবার হাউস কিপিং এর ছেলেরা গরম করে দিয়ে গেছে। সতেরো জন ভাগাভাগি করে খেতে শুরু করে। “কী রে দেবজ্যোতি,তুই আলাদা বসে আছিস কেন? আলাদা খাচ্ছিস কেন?”
“না, ম্যাম, অ্যাকচুয়ালি আমার খাবার আপনাদের সঙ্গে খাওয়া যাবেনা।”
“কেন?” প্রশ্ন করে পাঞ্চালি।
“ম্যাম, এটা মন্ত্র পড়া। মানে এটা সাধারণ মানুষের জন্য নয়।”
সুলগ্না বলে,” রাস্তার বাসি জিলিপি আনিয়েছিস,সেটা মন্ত্র পড়া?গুল মারার জায়গা পাসনা? আর ওটা ওই নিচের ফুটপাথের চাউমিনটা না?”
“আরে ম্যাডাম, আনিয়েছি নিচ থেকেই, তারপর মন্ত্র পড়েছি।
“খা, বাবা, একাই খা।”
দেবজ্যোতি তিনমাস হল জয়েন করেছে।বিশ্বগুলবাজ। ছোটবেলায় লোকে এসব করে থাকে। কিন্তু এত রেসপনসিবল জায়গায় এবং পজিশনে চাকরি করে কেউ এরকম গুলবাজ থাকতে পারে, ওকে না দেখলে বুঝতো না সুলগ্না।
পরের দিন কাজের ফাঁকে ওরা একটু গল্প করছিল।জয়িতা সেদিন চুপচাপ দেখে সবে সুলগ্না বলেছে,”কী হয়েছে রে? এত ডিপ্রেসড লাগছে কেন?” জয়িতা উত্তর দেওয়ার আগেই দেবজ্যোতি উঠে এসে বলে,”আই নো, জয়িতা ম্যাম কেন ডিপ্রেসড্। ম্যাম কোন চিন্তা নেই। আপনার মতো সমস্যায় যারা আছেন, তাদের জন্য ই তো আমার সাধনা।আমি সব ঠিক করে দেবো।”
“আচ্ছা, কী ঠিক করে দিবি?”
“আপনাকে যে নেগেটিভ এনার্জি ঘিরে আছে, সেটাকে একদম সরিয়ে দেবো। সারা পৃথিবী জুড়ে লোকে তো এর জন্য ই আমাকে যোগাযোগ করে।
“তুই চাকরি করছিস কেন? এটা তো ভালো প্রফেশন।”
দেবজ্যোতি জিভ কেটে বলে, “ছি ছি, গুরুদেব বারণ করে গেছেন এর জন্য টাকা নিতে।”
অফিস পিকনিক চলছে। অবিনাশবাবুর স্ত্রী মোটেই পছন্দ করেন না মদ খাওয়া। সেদিন অবিনাশবাবু দুটো পেগ লুকিয়ে খাওয়ার পরে সাহসী হয়ে উঠেছেন।সেই সঙ্গে রোমান্টিক ও।একটার পর একটা রোমান্টিক ওল্ড নাম্বারস গাইছেন স্ত্রীকে উদ্দেশ্য ক’রে, আর অকুতোভয় হয়ে গ্লাসে চুমুক দিচ্ছেন। বিস্ফোরণের আশা ছিল। কিন্তু একটা সময়ের পর সবাই দেখলো‌ উনি রাগ ভুলে অবিনাশবাবুর গান এনজয় করছেন। দেবজ্যোতি এইচ আর হেডকে সাইডে নিয়ে গিয়ে বলল,”কেসটা কী,বুঝতে পারছেন স্যার?”
শুভাশীষ বলল,” না তো।”দেবজ্যোতি পকেট থেকে একটা ছোট্ট শ্যাম্পুর শিশি বের করল, খালি,যেগুলো হোটেলে দেয়, সেরকম।”এর মধ্যে অবিনাশদার স্ত্রীর স্পিরিটটা ভরে রেখেছি।এখন অবিনাশদা এনজয় করে নিক।পরে ছেড়ে দেবো। তারপর বাড়ি গেলে ওনার মনেও থাকবে না। শুভাশীষ আর কিছু বলতে পারে না। পিঠ চাপড়ে বলে, “ব্রেভো।”
 
এভাবে রোজ চলে কিছু না কিছু। আগে লোকে মানে বোঝার চেষ্টা করতো। এখন অপেক্ষা করে নতুন কী গুল দেবে দেবজ্যোতি।এত ইনোভেটিভ গুল কর্পোরেট সেক্টরে পাওয়া যায় না। একদিন লাঞ্চের আড্ডা জমে উঠেছে। কথা হচ্ছে ভূত নিয়ে। কনক বিল্ডিঙ এ যখন অফিস  ছিল তখন পাঞ্চালি অনেক রাত অবধি কাজ করতো। রোজ দেখতো একজনের ডেস্কে ঠাকুর ওলোট-পালট হয়ে পড়ে থাকে। একদিন অনেক রাতে অফিসে মাত্র চারজন লোক ছিল, সিকিউরিটি মিলিয়ে, পাঞ্চালি টয়লেটে যাওয়ার সময় দেখে ওই ডেস্কে ঠাকুর ঠিক আছে। টয়লেটে গিয়ে ওর মনে হতে শুরু করে, বাইরে সবকিছু তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে।ও ভয়ে চিৎকার করে বাকিদের ডাকে। ওরা এসে ওকে নিয়ে যায়।কেউ কিছু দেখতে পায়নি, কিন্তু ঠাকুরগুলো কেউ উল্টে রেখে গিয়েছিল। এইসব ঘটনা বলছে পাঞ্চালি চোখ-মুখ বড় বড় করে। শুভাশীষ বলল, “আমি ও ওই বিল্ডিং এ কাজ করেছি,কখনো কিছু দেখিনি।”
সুলগ্না বলল, আমি তো ছাতে গিয়ে, পাশের জোড়া বাড়ির সিঁড়ি দিয়েও নেমেছি, কিছু হয়নি।”
” তোরা কি রাত দশটার পরে ছিলি?”
“না।”
“তবে?”
হঠাৎ সবাই দেখে দেবজ্যোতি চোখ বুজে বসে আছে।”কীরে? তোর কী হল?”
দেবজ্যোতি সিরিয়াস মুখ করে বলে,”পাঞ্চালি ম্যাম ঘটনাটা বলার সময় আমি ওখানে, ওই সময়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম। গিয়েড দেখে এলাম ব্যাপারটা।”
কৌশিক জিজ্ঞেস করে, “কী দেখলি?”
“ইঁদুরেই উল্টেছে। কিন্তু ম্যামকে ঘিরে আছে নেগেটিভ স্পিরিট ,তাই ম্যাম ভয় পাচ্ছিলেন।”
“তুই এইটুকুর মধ্যে পৌঁছে, ফেরত ও এলি? কী প্রতিভা মাইরি! সৌরভ বলল। দেবজ্যোতি নির্বিকার।
দুদিন বাদে করোনা নিয়ে তুমুল আলোচনা জমে উঠেছে। কলকাতায় এখনো কেন কোন কেস রিপোর্টেড নয়, শুধু দুজন সাসপেকটেড,কোয়ারেনটাইনে আছে।ইটালি, ফ্রান্স নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। কেউ আবার বলছে ‘ওটা চীনের বজ্জাতি’, কেউ অন্য কিছু বলছে।
এইসময় দেবজ্যোতি বলে ওঠে, “ইউ ওন্ট বিলিভ হরতাল, কাল যখন ভিডিও কনফারেন্সিং টা হল, তখন আমার কাছে স্পষ্ট প্রমাণগুলো এলো যে চীন ই করেছে এটা। দেখাতে বলবেন না কিছু। যে কোন সময় ওরা আমাকে মেরে ফেলতে পারে। মাই লাইফ ইজ অ্যাট থ্রেট।”
“কিন্তু ভিডিও কনফারেন্সিং টা কাদের সাথে?”
“কিচ্ছু বলা যাবে না স্যার, এখন জীবন নিয়ে খুব চাপে আছি।” দেবজ্যোতি উদাস মুখ করে ওর মন্ত্রপূতঃ খাবারে মন দেয়।
রাতে অফিসের একটা অকাজের, মজার গ্রুপ আছে শুধু জোন টীমের।তাতে সবাই আবার নানা সমস্যার কথা নিয়ে আলোচনা করছে, তার সঙ্গে জোক,  মিম সবই চলছে। হঠাৎ কৌশিক জিজ্ঞেস করে গ্রুপে,” দেবজ্যোতি,ইওর ভিউ অন দিস প্রবলেম?”
দেবজ্যোতির উত্তর: “হুইচ প্ল্যানেট অফ দি গ্যালাক্সি ইউ আর টকিং অ্যাবাউট নাও। আই অ্যাম বিজি উইথ হ্যান্ডলিং প্রবলেমস অফ মার্স নাও।”
একচোট  হাসাহাসি হলো।
পরের দিন লাঞ্চের সময়। সবাই খিল্লি করছে, “কী রে তুই এই প্ল্যানেটেই আছিস তো? আচ্ছা এলিয়েনদের তো বেচে আসতে পারতিস কিছু মার, কোম্পানির রেভিনিউ বাড়তো।
দেবজ্যোতি বলে, আপনারা হাসাহাসি করছেন তো, আমি সত্যিই যেতে পারি, সলভ করতে পারি নানা সমস্যা।
কৌশিক বলে, “আচ্ছা, কীভাবে?”
দেবজ্যোতিসুলভ সিরিয়াস মুখ করে ও দেখায় ওর হাতের বারকোডের মতো দেখতে ট্যাটুটাকে।
“স্যার,এর নিচে একটা ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ লাগানো আছে,কোডেড , ওটাই ওই জগতে যাওয়ার পাসওয়ার্ড।”
সবাই আগামী তিনদিন লাঞ্চে মৌনতা পালন করবে ঠিক করেছে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>