উৎসব সংখ্যা গল্প: সিয়াচেনের বরফ এবং পাঁজরার কারুকাজ
সুশীল গতকাল খেয়াল করেছিলেন জিন্দালদের বাড়ির সামনে মস্ত বড় প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের কাপড়ের ফুটোতে চোখ রেখে দেখলেন অনেকটা আগেকার দিনের বিয়েবাড়ির মত ব্যাপার। বালতি বালতি মাংস শালপাতার ওপর ঢেলে দিচ্ছে পাড়ার ছেলেরা। যারা খাচ্ছেন তাদের গায়ে কাপড়চোপড় তেমন নেই। তাই পাঁজরার কারুকাজ সহজেই চোখে পড়ে। হাপুস হুপুস করে সবাই খাচ্ছেন। সুশীল কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলেন না। প্যান্ডেলের পাশেই একজন সাইকেলের হ্যান্ডেলে হেলান দিয়ে বিড়ি ফুঁকছিলেন। সুশীল তাকে জিজ্ঞেস করলেন , কী ব্যাপার ভাই। কার বিয়ে?
উত্তর এল না। তার আঙুলের ইশারা বলল,ওই দিকে। সুশীল ওই দিকে এগিয়ে গেলেন।
কমলা রঙের ফতুয়া পরা মানুষটির বুকে বাংলা হরফে লেখা , সির্ফ মুঝসে পুছিয়ে।
সুশীল জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার ভাই?
কাঙাল ভোজন।
তা হঠাৎ কাঙাল ভোজন কেন?
ট্যাস্ক।
ট্যাস্ক! সেটা কী?
সেকি! আপনি স্বাধীন ভারতের নাগরিক হয়ে ট্যাস্ক জানেন না। ট্যাস্কে অফার চলছে। কাঙাল ভোজন করালে ট্যাস্কে ছাড় পাবেন। তবে বিদ্ধ গোছের কেউ মোত্তে হবে।
তাই নাকি! কীভাবে?
ধরুন আপনি মোল্লেন। আপনার ছেলে কাঙাল ডেকে খাওয়াল। কাঙাল ভোজন অভিযান সাইটে আঁধার কাড দিয়ে রিজিস্টার করে কত টাকার কাঙাল খাইয়েছে সেটা বলে দিল । সে অনুযায়ী ছাড়। যত বেশি কাঙাল তত বেশি ছাড়।
তাতে কার কী লাভ হল ভাই?
লাভ লয়? সরকার ট্যাস্ক পেল। হ্যাংলা কাঙালগুলো মাংস পেল। নেড়ি কুত্তাগুলো মাংসের হাড় পেল, আর জিন্দালরা কিষ্ণ ভগবানের আসিব্বাদ পেল।
তা কী করে হয়? জিন্দালদের তো কোটি টাকার ব্যবসা।দশ হাজার টাকার খাইয়ে লক্ষ টাকার ট্যাক্স ফাঁকি। এটা কি ঠিক?
আপনি বহুত পোশ্ন করেন তো দেখছি । জানেন না সিয়াচেনে ভারতীয় জওয়ানরা কীরম লড়ছে।
মানে? এখানে সিয়াচেন কোথা থেকে এল?
আবার পোশ্ন। যান তো মশাই। বেশি ব্যাড় ব্যাড় করবেন না।
সুশীল মুখঝামটা খেয়ে পিছিয়ে এলেন। জিন্দালদের মার্বেল বারান্দায় পরিবারের একমাত্র ছোট নাতি বসে তখন চকলেট খাচ্ছে। ছেলেটা খুব চকলেট খায়।যখনই চোখে পড়ে হাতে চকলেট। সারাদিন চুষছে। সুশীলকে দেখে চকলেটটা বেশি করে চুষতে লাগল ছেলেটা । সুশীলের নিজের নাতির কথা মনে পড়ল। এখন বিদেশে থাকে। সপ্তাহে একবার কম্পিউটার স্ক্রিনে খুব আদর করেন নাতিকে। সুযোগ পেলে একটু আধটু শাসন ও করেন। যেমন বেশি চকলেট খেতে বারণ করেন।
সুশীল জিন্দালদের ছোট নাতির পাশে গিয়ে বসলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
অত চকলেট খায় না খোকা।
নাতি ঘুরে জবাব দিল, সো হোয়াট?
দাঁতে পোকা হবে খোকা।
সাদা মার্বেলে গাঢ় খয়েরির এক বিন্দু চকলেট ঘিরে কিছু কালো পিঁপড়ে ঘুরছিলো। ছেলেটি একটা কালো পিঁপড়ে মুখে পুড়ে চিবিয়ে ভেংচিয়ে বলল , পোকা খেয়ে নিলাম। নাও হোয়াট?
অমনভাবে বড়দের সাথে কথা বলতে নেই খোকা।আমি তোমার দাদুর মতো।
সো হোয়াট?
দাঁতে পোকা হবে খোকা।
ছেলেটি চিৎকার করে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে নব্বই কিলোর এক নিটোল মেদ ভাস্কর্য সিঁড়ি বেয়ে থপ থপ করে নেমে এল।
আসতেই তিনি বললেন , কী ব্যাপার মিস্টার বাসু আপনি আবার চকলেট আর পোকা নিয়ে শুরু করেছেন। আপনার মাথাতেই দেখছি পোকা আছে। বিগ ইন্সেক্ট। আপনি জানেন।
না মানে… চকলেট বেশি খেলে।
আপনি চকোলেটে পড়ে আছেন আর ওদিকে সিয়াচেনে ইন্ডিয়ান জাওয়ানরা কত লড়ছে সে খবর রাখেন?
না মানে…
কোনও মানে ফানে নেই। আপনি এবার আসেন।
জিন্দালদের বাড়ি থেকে মানে মানে কেটে পড়ার পর মাস তিনেক কেটে গিয়েছে। দু’ হাজার আঠেরোর ফুটবল বিশ্বকাপ, দুটো আচমকা গভীর নিম্নচাপ এখন ইতিহাসের পাতায়।
সুশীল স্নান করতে যাবেন যাবেন করছেন খেয়াল করলেন স্ত্রী কেমন একটা জট পাকিয়ে গিয়ে মাদুরের উপর গড়াগড়ি খাচ্ছেন আর আমাকে খোলো আমাকে খোলো বলে চিৎকার করে পাড়া মাতিয়েছেন। সামনে টিভি চলছে। সামদেব বাবা বাঁ হাতের কনুই ডানদিকের বগলের তলা দিয়ে গলিয়ে ডান দিকের হাঁটু গলার কাছে নিয়ে কী একটা করছেন। সুশীল বুঝলেন স্ত্রী সেইরকমই কিছু একটা করতে গিয়ে হাত পায়ে গিঁট মেরে ফেলেছেন ।সুয় নষ্ট না করে পাজামার দড়ি খোলার অভিজ্ঞতায় স্ত্রীকে যোগমুক্ত করলেন। স্ত্রী উড়ি বাবা কী ব্যাথা বলে আবার বললেন , এখনই যাও মলম নিয়ে এস। আর পারছি না। সামদেব বাবার অন্তর্জলি মলমটাই নেবে কিন্তু।
তুমি খামোখা এই বুড়ো বয়েসে এসব কঠিন যোগ কর কেন ? কিছু জিনিস এবার বিয়োগ করতে শেখ। আমি যদি বাড়িতে না থাকতাম কে এই গিঁট ছাড়াতো ? যে বাবা তোমায় গিঁট মারল তারই মলম লাগাবে ? বোধ বুদ্ধি সব জলাঞ্জলি দিলে নাকি?
স্ত্রী ঝাঁজিয়ে বললেন ,জলাঞ্জলি নয় অন্তর্জলি। মলমটার নাম। সামান্য একটা ওষুধ আনতে দিয়েছি বলে এতো কথা। জান না সিয়াচেনে ভারতীয় জওয়ানরা কীরকম লড়ছে?
সুশীল কথা বাড়ালেন না। মানি ব্যাগে শুধুই গোলাপি রঙের দু হাজার টাকার নোট। দোকান সাফ জানিয়ে দিল খুচরো হবে না। অগত্যা এটিএম গিয়ে লাইন দিলেন সুশীল। এ তল্লাটে একমাত্র এখানেই নাকি একশ টাকার নোট পাওয়া যাচ্ছে। সুশীলের সামনে গোটা পঞ্চাশ মানুষ। তাড়াহুড়োর চোটে সুশীল ঘড়ি পরতে ভুলে গিয়েছেন। সামনের জনকে জিজ্ঞেস করলেন , দাদা কটা বাজে। তিনি উত্তর দিলেন না। আঙুলের ইশারায় ওইদিকে যেতে বললেন। সুশীল ওই দিকে এগিয়ে গেলেন।
কমলা রঙের ফতুয়া পরা মানুষটির বুকে বাংলা হরফে লেখা , সির্ফ মুঝসে পুছিয়ে। তবে এই মানুষটির বয়েস অনেক কম।
সুশীল জিজ্ঞাসা করলেন , ভাই কটা বাজে ? বারোটা কি বেজে গেছে?
অনেকক্ষণ বেজে গেছে।
কী ঝামেলা বলুন তো। কী যে দিনকাল পড়ল! আধ ঘন্টা হয়ে গেল লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।
কী হল দাদা এতো সমস্যা কীসের ? এই সামান্য ব্যাপারে এতো পিটপিট করছেন কেন? আপনি জানেন না…
হ্যা ভাই জানি জানি।খুব জানি।
কী জানেন?
সিয়াচেনে ভারতীয় জওয়ানরা লড়ছে।
বাহ্ আপনি তো সবই জানেন দেখছি। সাব্বাস।
ভাই একটা প্রশ্ন ছিল। করব?
কী?
আচ্ছা দাদা ভারতীয় জওয়ানরা স্নান খাওয়া দাওয়া করেন? সময় পেলে লুডো টুডো খেলেন নিশ্চই? নাকি সারাদিন লড়াই করেন?
বোকার মতো কথা বলবেন না তো। লড়াই না করলেও তো আপনাদেরকে বাঁচাতে বডারে বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর আপনি সামান্য এটিম লাইনে দাঁড়াতে পারছেন না। যান যান টাকার পেছনে লাইন দিন।
ধমক খেয়ে লাইনে ফিরে এলেন সুশীল। অন্তর্জলি মলম কিনে বাড়ি ফেরার সময় খেয়াল করলেন দুজন ফলো করছেন। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন দুটো আধা নাঙ্গা হাড়গিলে মানুষ। দূর থেকে পরিষ্কার পাঁজরার কারুকাজ দেখা যায়। স্ত্রীর হাতে মলম ঠুসে সুশীল জানলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখলেন ল্যাম্পোস্টের পাশে সেই দুজন হাড়গিলে হাঁটু গেড়ে বসে এই বাড়ির দিকেই দেখছে।
সুশীল চিন্তায় পড়লেন। কেন এরা ফলো করছে তার কারণ কিছুতেই বুঝতে পারছেন না। নিশ্চয়ই বেশি প্রশ্ন করে ফেলেছেন। জিন্দালরা বদলা নিচ্ছে না তো?
সুশীল ভয়ে বাড়ি থেকে দুদিন বেরোলেন না। তৃতীয়দিন বিকেল বেলায় মেয়ের গানে ভাতঘুম ভাঙল। ছোট হাইটা তুড়ি মেরে ঠান্ডা করে দেখলেন মেয়ে জন গণ মন গেয়ে চলেছে। উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে মেয়ের গানের টিচার ডানদিকের ঠ্যাং তুলে দাঁড়িয়ে হারমোনিয়ামটাকে থাইয়ের উপর ব্যালেন্স করে বাজিয়ে চলেছেন।
স্ত্রী এসে বললেন, দুদিন ধরে বসে বসে খাচ্ছ আর ষাঁড়ের মত ঘুমোচ্ছ। ওদিকে গিয়ে দেখ সিয়াচেনে…
জানি জানি আর বলতে হবে না।
জানোই যখন যাও বাজারটা করে নিয়ে এস। আমার রাতে ভাত বসাতে ইচ্ছে করছে না। কোমরে খুব ব্যথা। একটু রুটি তড়কা আর তিনকিলো কমলালেবু নিয়ে এস মনে করে।
কমলালেবু ?তিন কিলো? তুমি তো কমলা খেতে না। আপেল আর পেয়ারা খেতে।
এখন খাই। এবার থেকে খাব। হয়েছে।
বাজার যাওয়ার পথে সুশীল লক্ষ্য করলেন সেই দুজন মানুষ এখনও পিছু ছাড়েনি ।কেন ধাওয়া করছেন? ধুকপুক বুকে ভাবলেন এই প্রশ্নের উত্তর কে দিতে পারে? সুশীল এদ্দিনে কিন্তু বুঝে নিয়েছেন।
কমলা ফতুয়া পরা মানুষটা ওইদিকেই ছিল। সুশীল ওইদিকে এগিয়ে গেলেন।
সুশীলের থেকে প্রায় পঁচিশ মিটার দূরে হাড়গিলা মানুষ দুজন দাঁড়িয়ে। এদিকেই দেখছে।
ও দাদা আপনি তো সব জানেন। বলতে পারেন ওই দুজন আমাকে কদিন ধরে ফলো করছে কেন ? আমি কী অপরাধ করেছি?
সেকি আপনি জানেন না?
না জানি না। না না জানি জানি। সিয়াচেনে ভারতীয় জওয়ানরা দারুণ লড়াই করছে।
আরে ধোর মসাই সে তো সবাই জানে।আসল গপ্প অন্য জাগায়। সেই যে জিন্দাল কাঙালদের মাংস ভাত পাট্টি দিল তারপর তো এ তল্লাটে কেউ সটকায়নি। না সটকালে মাংস ভাত ওদের কে গেলাবে? ওদের সালা কুমিরের খিদে। বুঝলেন কিনা।
তা তো বুঝলাম কিন্তু আমার পেছন পেছন কেন ভাই?
আর বলবেন না। ওই যে বসাকদের, চেনেন তো?
যাদের পলতার মোড়ে সোনার দোকান আছে? বসাক জুয়েলারস?
হ্যা হ্যা ওই কেলে বসাক। ওর মার নব্বই বছর বয়েস। হসপিটালে ভত্তি ছিল। তা কেলে বসাক কল্লো কি আগেই বলে বসলো মা মোল্লে কাঙালদের ডোমিনজের পিজা খাওয়াবে। সে শুনে পাড়ার কাঙালদের সে কি কেত্তন মাইরি ! যদি দেখতেন। কিন্তু মা মনি বহাল তবিয়তে ফিরে এলেন।পাট্টি ক্যান্সেল। ব্যাস কাঙালগুলো গেল খেপে। বসাকদের বাড়ি ঘেরাও করল। কেলে বসাক জান বাঁচাতে বলল , এ তল্লাটে যেই পটল তুলবে আর সে যদি বিদ্ধ মানুষ হয় তাহলেই পিজা। তারপর থেকে পাড়ায় সব বুড়ো হাবড়াদের পেছনে ওরম দু চাজ্জন কাঙাল ফেবিকলের মতো লেগে আছে। সুযোগ পেলেই সটকে দেবে। একটাকে তো নদ্দমায় ফেলে দিয়েছিল। নদ্দমায় জল কম ছিল।মালটা বেঁচে গেছে।
কী মুশকিল! সবাইকে ধরে পিজা খাইয়ে দিলেই তো হয়।
অতই সোজা! চাসশো কাঙাল খাওয়াবে আর ট্যাসকে কোনো ছাড় পাবে না। কেলে বসাক কি অতই সাধু।
সুশীল সময় নষ্ট করলেন না। বুঝতে পারলেন সময় ঘনিয়ে এসেছে।দেখে নিলেন কাছাকাছি নর্দমা আছে কিনা। বাজারে গিয়ে চটপট রুটি তড়কা আর তিনকিলো কমলালেবু কিনলেন। কিনেই স্মার্ট ফোন বার করলেন। খুঁজে বার করলেন ডোমিনোজ পিৎজার ওয়েবসাইট। মেয়ের কাছে এসব শিখেছেন। মেয়ে দাঁড়িয়ে গান করলে কী হবে এসব বিদ্যা নখের ডগায়। ডায়াল করলেন , সিক্স ত্রিপল ফোর সিক্স ত্রিপল ফোর।
ইংরেজিতে একটি মেয়ে কীসব বলে যাচ্ছে।
হ্যালো।
আবার ইংরেজিতে একটি ছেলে কীসব জানতে চাইছে।
সুশীল বললেন, পিজা। পিজা। পিজা চাই।
ইয়েস স্যার। কলকাতা পাটনা ?হুইচ লকেসান স্যার?
কলকাতা কলকাতা।
আলিপুর সল্টলেক গলফগ্রীন? হুইচ পার্ট স্যার?
না না। গড়িয়া। গড়িয়া।
ভেজ অর নন ভেজ স্যার?
নন ভেজ নন ভেজ।
স্পাইসি অর নন স্পাইসি।
দিন না যা ইচ্ছা। ঝাল ঝাল। খুব ঝাল দিন।
স্মল ঔর লার্জ?
লার্জ লার্জ। যত বড় হয়। জলদি পাঠান।
গোল্ডেন চিকেন ডিলাইট লিজিয়ে স্যার। উইথ এক্সট্রা চিস।
ইয়েস ইয়েস। ওইটাই।
ইওর এক্স্যাক্ট লোকেসন স্যার।
গড়িয়া। ঢালু রিকশা স্ট্যান্ড। নিয়ার চণ্ডীতলা কালীমন্দির।
ঢালু হোয়াট স্যার?
ঢালু রিকশা স্ট্যান্ড। নিয়ার চণ্ডীতলা কালীমন্দির। জলদি করুন।
টাইম লাগেগা স্যার। উহা গাড়ি নেহি পৌঁছেগে।
কত কত টাইম লাগেগা?
মিনিমাম এক ঘন্টা লাগেগা স্যার।
মিত্তিরদের বাড়ির পাশের গলির ভিতর ঢুকলেন সুশীল। দুজন ফলোয়ার খুব কাছে চলে এসেছে। হিসেবে কোষে দেখলেন এক ঘন্টায় পিজা না পৌঁছলেও তিনি নির্ঘাত নর্দমায় হাবুডুবু খাচ্ছেন।
সুশীল লাইন কেটে দিলেন। অযথা সময় নষ্ট হল। গলি থেকে বেরোতে যাবেন সামনে দেখলেন পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছেন সেই দুজন হাড়গিলা মানুষ। ঠিক পেছনেই একটা খোলা ম্যানহোল। দুজন খুব সামনে চলে আসতেই সুশীল থতমত খেয়ে হঠাৎ গেয়ে উঠলেন, জন গণ মন অধিনায়ক জয় হে।
কোনও হেলদোল নেই।
চেঁচিয়ে বললেন , আমি ব্যাংক মোবাইল গ্যাসের সঙ্গে আঁধার কার্ড লিংক করেছি। বিশ্বাস করুন। আপনারা পিজা খাবেন? উইথ এক্সট্রা চিস।
কোনও হেলদোল নেই।
সুশীল এবার চেঁচিয়ে বললেন, আপনারা জানেন না সিয়াচেনে ভারতীয় জওয়ানরা কী ভীষণ লড়াই করছে।
ওরা দুজন এখন সুশীলের খুব কাছে।এতটাই কাছে যে পাঁজরার হাড়গুলো সহজেই গোনা যায়।
সুশীল আর নিস্তার নেই দেখে চোখ বুজলেন। নাতিকে আর আদর করতে পারবেন না।কত কাজ বাকি থেকে গেল। ডান হাতে টান পড়ায় বুঝতে পারলেন ওরা এসে হাত থেকে রুটি আর তরকার প্যাকেটটা ছিনিয়ে নিয়েছে।
চোখ খুললেন সুশীল। ওরা ওখানে দাঁড়িয়েই রুটি আর তরকা গোগ্রাসে গিলতে শুরু করেছে। সুশীল নড়লেন না। ওদের চোখ দেখলে বোঝা যায় খিদে এখনো মেটেনি। তিনকিলোর কমলালেবু ওদের দিকে এগিয়ে দিলেন সুশীল।
সুশীল বাড়ি ফিরেছেন। মুখে হাসি। এই আকালের দিনে আধ ঘন্টা আগের ছবিটা আবার মাথায় নিয়ে আসাটা খুব জরুরি মনে করলেন। হাড়গিলে মানুষ দুটো যখন কমলালেবুর প্যাকেকটা ফেরত দিয়েছিল তাতে দুটো কমলালেবু কম ছিল। প্যাকেটটা ফেরত পেয়ে সুশীল একটু আশ্চর্য হয়েছিলেন বইকি।কিন্তু সেটা সাময়িক।তারপর হেসেছিলেন। ঠিক তখনই কমলার খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে হাড়গিলা মানুষ দুজন গলির অন্ধকারে মিলিয়ে গিয়েছিল।
শঙ্খদীপের জন্ম ১৯৭৯ সালের ১৮ই ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে। বেড়ে ওঠা সেখানেই। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন থেকে গণিতের স্নাতক। স্নাতকোত্তর কম্পিউটার বিজ্ঞানে। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘ পরিষেবা সীমার বাইরে ‘ প্রকাশিত হয়েছে ২০১৮ বইমেলায়। ছোট গল্পের পাশাপাশি বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে সমাজ ও বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ লিখে থাকেন।