উৎসব সংখ্যা গল্প: ভুল হয়ে যায় । শ্যামলী আচার্য
লোকটার মুখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিল নীলু। হুবহু একরকম। চিবুকের খাঁজ, হালকা দাড়ির আভাস, একটা জরুল। যেন অমনটিই হওয়ার কথা। যেন অমনটিই হবে। কোনও বাড়তি থাকবে না, কিচ্ছু কম পড়বে না। মাপসই। আচ্ছা, লোকটা কি এক্ষুনি বাজখাঁই গলায় হাঁক দেবে? নীলু চোখ সরিয়ে নেয়। অমন হাঁ করে তাকিয়ে থাকা… ইস, লোকটা টের পেলে কী ভাববে!
এই সময় খুব ভিড়। একে শুক্রবার। সপ্তাহশেষের কিছু ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা থাকে। নীলু লক্ষ্য করে দেখেছে, শুক্রবার মূলত মধ্যবিত্তরা আসেন। অনেকেই সরকারি কেরানি। শনি-রবি তাঁরা ঘোর সংসারী। ছেলেপুলে বাপ-মা বৌয়ের আবদারে নিবেদিত প্রাণ। সপ্তাহান্তে একদিন সন্ধেতে চুপিচুপি বেহিসেবী। শনিবার প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করা লোক বেশি। আইটি কর্মী। মহিলাদেরও সমানে সমানে যোগদান। রবিবার সব মিলেমিশে একাকার। কোনও শ্রেণীচরিত্র স্পষ্ট নয়। কে যে কখন কার সঙ্গে আসছে, তারও হিসেব থাকে না।
সিমরন খুব ভালো নাচে আজকাল। প্রথম প্রথম একটু আড়ষ্ট ছিল। শুধু কোমর দোলাত। কিন্তু ওর কোমরের খাঁজে যেভাবে আলো পিছলে যায়, সেটুকুই নেশা ধরা চোখের জন্য যথেষ্ট। কেউ এখানে ভরতনাট্যম কথাকলি দেখতে আসে না। দু’মাস ওর ট্রেনিং হয়েছে। এখন মোটামুটি লোক টানতে পারে। কালেকশান ভালো। চোখ-মুখ চড়া মেকআপে ঢাকা। ভোরবেলা সবজিবাজারে ফুলছাপ কামিজে ওকে দেখে কেউ চিনবে না। এখানে ঝাপসা আলোয় শুধু লাস্যটুকুই সব। সিমরন বাঙালি নয়। মাঝরাতে একা মুখের মেকআপ ঘষে ঘষে তোলে। তারপর গিয়ে একটা ভাড়া করা গাড়িতে ওঠে। মেকআপ করা মুখ নিয়ে ও কিছুতেই পাড়ায় ঢুকবে না। নীলুকে ও পাত্তা দেয় না। সিমরন অবশ্য কাউকেই পাত্তা দেয় না। গম্ভীর। প্রথমদিকে ভীতু ছিল। ওকে ভয় পেতে দেখেছে নীলু। ব্যাণ্ড মাস্টার জিতুর কাছে কেঁচোর মতো গুটিয়ে থাকত। সেইসময় নীলু একদিন ওর সঙ্গে কথা বলেছিল।
“একটু জল খাবে?”
“নেহি চাহিয়ে।”
তবু একটা জলভরা কাচের গ্লাস এগিয়ে দেয় নীলু।
“জহর মিল সকতি হ্যায় কেয়া?” সিমরনের এই ডায়ালগটাও নীলুর চেনা। ওরা বিষ চায়। পেলে খেত না। বিষ পাওয়া সোজা। তার চেয়ে টাকা রোজগারের প্রয়োজন ঢের বেশি।
সিমরন থর থর করে কাঁপছে। সেদিন বারের মালিক ইদ্রিস আর ব্যাণ্ড মাস্টার জিতু ওকে খুব ঝাড়ছিল। সঠিক কারণ জানে না নীলু। আন্দাজ করতে পারে। সিমরন নতুন। এই শহর চেনে না। নীল আলো চেনে না। পানশালার ঘাঁতঘোঁতও বোঝেনি। কল সেন্টারে কাজ দেবে বলে ওকে কেউ অন্য শহর থেকে নিয়ে এসেছিল। ফেঁসে গেছে। পেটের ক্ষিদে আর টাকার প্রয়োজনের সেই চেনা ঘুরপাক।
ওর চোলি ধরে টেনেছিল কেউ। পানশালায় রাত বাড়লে বেসামাল হয় অনেকেই। চোলির বাঁধা গিঁট আলগা হয়ে যেতেই সিমরন ঘুরে দাঁড়িয়ে… না চড় মারেনি, একটিও খারাপ শব্দ উচ্চারণ করেনি। ওর স্বভাব বিরুদ্ধ। শুধু কড়াচোখে তাকায়। কেন তাকাল? কেন তাকাবে ও? এত সাহস? সুরাপাত্রের সঙ্গে মোহময়ী দৃষ্টির ককটেল তৈরি না হলে আর মস্তি কীসের? তার জায়গায় আগুনে চোখ! মাইরি! ইল্লি আর কী! ভরসন্ধেয় বারে বসে বাড়ির বউয়ের মতো কটমটে মেজাজ কে সহ্য করবে? লোকটা পালটা খামচে ধরে সিমরনের অনাবৃত কাঁধ। ধস্তাধস্তি শুরু হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ সিমরন পোড়-খাওয়া নয়। অনভিজ্ঞ। সেই মুহূর্তে মালিকের খাস লোক ইব্রাহিম ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। সিমরনের জায়গায় আয়েশা আর ঝিলিক চটপট ডান্স ফ্লোরে চলে আসে। সেদিন ওদের ডিউটি ছিল না। ঝিলিকের ছুটি। আয়েশা রিজার্ভে। কাছাকাছি থাকে বলে চট করে ওদের তুলে নিয়ে আসা যায়। ততক্ষণ বারসিঙ্গার জয়ী একাই হট আর হিট। রাত বাড়তে জয়ীও সেদিন খাপ্পা। এটা তার ডিউটির মধ্যে ছিল না। একস্ট্রা পেমেন্ট চাই।
সিমরনের কালেকশন সেদিন আয়েশা ঝিলিক আর জয়ীর মধ্যে ভাগ হয়। অন্যদিন ডান্সার আর ব্যাণ্ড লিডার ফিফটি-ফিফটি। নীলু চুপচাপ ভাগাভাগি দেখে।
সেদিন নীলু জলের গেলাস দেবার সময় কথা বলেছিল সিমরনের সঙ্গে। তারপরে আর বলেনি। তারপর থেকে সিমরনও আর ভুল করেনি। ওর আগল ভেঙে গিয়েছিল। আর সেইদিনই নীলু কাছ থেকে লক্ষ্য করে সিমরনের চোয়ালটা একটু চৌকোমতো। গালের হাড় উঁচু। বিষণ্ণ মুখে ওকে খুব চেনা লাগে। বড় পরিচিত। খসখসে গলায় সিমরন কথা বললে চেনা সম্বোধন শুনতে চাইবে নীলু। সিমরন নিশ্চই ওকে নীলুর বদলে নীল বলে ডাকবে। মাঝেমধ্যে আকাশ জুড়ে দেবে। নীলাকাশ। নীলুর বুকের মধ্যেটা শরতের ঝলমলে রোদে চনমন করে উঠবে। আলপথ ধরে হেঁটে যেতে ইচ্ছে করবে কুলতলির মাঠ অবধি। ওখানে একটা ঝুপসি ছাতিমগাছে কেমন নেশাধরানো গন্ধ। সেখানে ওই মেয়েটা গুনগুন করে একটা হিন্দি গান গায়, অগর তুম মিল যাও, জমানা ছোড় দেঙ্গে হাম। চোখের কোনায় মুক্তো টলমল করে।
কিন্তু গম্ভীর সিমরন নীলুর সঙ্গে কথা বললে তো!
শুক্রবারের নিয়মিত খদ্দের দত্তবাবু। অনেককাল ধরে আসছেন। নীলু যখন এই বারে চাকরি করতে আসেনি, তখন থেকে আসেন। কোনের টেবিলে সন্ধে থেকে বসেন। কখনও একা। কখনও দু’তিনজন একে একে জড়ো। সামনে বই বা খাতা। কলম। আজকাল মোবাইল খুলেই পড়তে থাকেন। নীলু অর্ডার নিতে গিয়ে এতদিনে বেশ বুঝে গেছে, ওই দত্তবাবু কবিতা লেখেন। একটু আধটু নামডাক আছে। কিন্তু ওনাকেও চেনা লাগে। ওনার সামান্য কুঁজো হয়ে বসার ভঙ্গি, কপালের দুপাশে পাতলা হয়ে আসা চুল, পুরু ঠোঁট আর জোড়া ভুরু ওকে অন্য কার কথা মনে করায়। সেই লোকটি কি ওকে সবজির ভ্যানে চড়িয়ে মাঝেমধ্যে ইস্কুলে নিয়ে যেত? যেদিন হাঁটতে হাঁটতে পায়ের গোছে টান ধরত… কী করে যেন বুঝতে পারত লোকটা। মাঝপথে ডেকে তুলে নিত ভ্যানে।
বারের ঠিক পাশের টেবিলের ভদ্রলোকও চেনা। টেবিলে দু’হাত জড়ো করে মাথা গুঁজে দেন। যেন স্কুলের টিফিনটাইম। বড় পরিচিত ভঙ্গি। ঢিলে বাঁধা কাগজের টুকরোতে পেনসিলে লিখেছিল, হেডু একটা চোর। শাস্তি পেয়ে মাথা গুঁজে বসেছিল খানিকক্ষণ। নীলুরই সামনের বেঞ্চে।
“নীলু, আজ চারদিক এত ফাঁকা কেন রে?”
ম্যানেজারের এই এক দোষ। যেদিনই আসে, যখনই আসে, চারপাশ ফাঁকা দেখে। সব টেবিল ভর্তি থাকলেও ওর মনে হয় তেমন ভিড় হয়নি। বাতিকগ্রস্ত লোক। এই বাড়াবাড়িটা অসহ্য লাগে নীলুর। ম্যানেজারের রোদে পোড়া বাদামি মুখ আর কাঁচাপাকা চুলে সাধন মুহুরি এসে দাঁড়ায়। পঞ্চায়তের ভোটের সময় আসত। তখন জোড়হাত। ঘরে ঘরে ঢোকে। ছাপটা মনে করে দেখবি। তিন নম্বরে।
“রেগুলার কাস্টমার তো আজ তেমন নেই। কিন্তু আর একটু পরেই সব ভর্তি হয়ে যাবে স্যার। এখনও রাত তেমন হয়নি।”
“নাঃ, ঠিক লোক টানতে পারছি না। মালিককে বললেই শালা খিঁচিয়ে উঠবে। মেয়েগুলোও আজকাল নেতিয়ে যাচ্ছে কেমন। ওগুলোর একটু ডোজ বাড়াতে হবে।”
ডোজ বাড়ানোটা মারাত্মক। মেয়েরা ক্লায়েন্টের সঙ্গে রাত কাটাতে যায় অনেকেই। এই বারে বসেই সব সেট হয়। আধাআধি বখরা পায় ব্যাণ্ডমাস্টার। ডোজ বাড়লে তাদের আর নিজস্ব ইচ্ছে-অনিচ্ছে বলে কিচ্ছু থাকবে না। ম্যানেজার বা ব্যাণ্ডমাস্টারের কথামতো ভাড়া খাটতে হবে। সেদিন সোজা পাঁচতারা হোটেল। ফাইভ স্টার হোটেলের রাত্রিবাস মানেই আনন্দ, এমন ভাবার কোনও মানে নেই। বরং পয়সা নিয়ে আরও চুলচেরা হিসেব হবে। ওদের শরীর খাটিয়ে ম্যানেজার লাভ করবে। মাইনে করা প্রস্টিটিউট। নীলু দেখেছে, ডোজ বাড়ালে মেয়েগুলোর শরীরের আড় ভাঙে তাড়াতাড়ি। মনেরও। কিন্তু মুখের আগল থাকে না আর। তারাও চিল্লিয়ে গলা ফাটিয়ে নিজেদের হিসেব বরাবর করে নেয়। না পোষালে সিধে অন্য মধুশালা।
ওদের যেদিন মুখে কুৎসিত শব্দের ফোয়ারা ছোটে, নীলু দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখে ওদের সব ভাবভঙ্গি। মিলে যাচ্ছে, সব হুবহু মিলে যাচ্ছে। পাশের বাড়ির নিবারণজ্যাঠার বউ আর মা ঠিক এইভাবেই… অবিশ্রান্ত। শুধু মেয়েগুলো ওদের মতো দা-বঁটি কিংবা ঝাঁটা নিয়ে… কোনওদিন আধলা ইঁটও হাতে তোলেনি।
দুটো নতুন মেয়েকে চেনা চেনা লাগে। একজনের ডানগালে টোল পড়ে। আরেকজনের থুতনিতে তিল। নীলু ভাবে, জিগ্যেস করবে একবার, বাড়ি কোথায়। জিগ্যেস করা হয় না। ডালিম পুদিনা আর লেবুর কোয়া দিয়ে মোহিতো বানাতে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ে নীলু। অর্ডার এসেছে। কোনটা আগে পিষে নিতে হবে, কতটা বরফ… কীসের পরে কোনটা, কতখানি, একটু এদিক-ওদিক হলেই গুলিয়ে যাবে সব। পুরো মকটেল মাটি। প্রচণ্ড ধৈর্য আর মনোযোগ দিয়ে বানাতে হয়। তার মধ্যেই একটা মেয়ের পানপাতা মুখ, গমের মতো গায়ের রঙ দেখে শরীর আনচান করে। নতুন কাস্টমার এসেছে একজন। কাঁধ অবধি চুল। রঙিন গার্ডারে বাঁধা একটা ছোট ঝুঁটি। নীলুর মনে হয় ঘাড় ঘোরালেই নিশ্চই দেখবে ওর কপালে রসকলি, ওর গলায় তুলসীর মালা। ঝকঝকে মুক্তো দাঁত। ওর হাসিমুখ। ও নীলুর দিকে চেয়েই গুনগুনিয়ে উঠবে, সে বিনে আর জানে না… জানে না এ মন। ওর মৃতদেহ কাঠের মতো শক্ত হয়ে পড়েছিল নয়ানজুলিতে। হাইওয়েতে খুব জোরে লরি যায়। রাতে পালাগান গেয়ে ফিরছিল কোথা থেকে। এক ধাক্কা মেরে হাওয়া। পথের ধারের নয়ানজুলিতে বডি দেখা গেল দু’একদিন পরে। শুনশান হাইওয়েতে কেই বা অত খেয়াল করে?
লোকটা মুখ ফেরাল। ইশারায় মেনুকার্ড চাইছে। নাঃ, ও কখনওই কানুবোষ্টম নয়। হতেই পারে না।
ডানগালে টোল পড়া মেয়েটাকে ধানক্ষেতে পাওয়া গেল শেষরাতে। মরেনি। গোঙাচ্ছে। ক’টা শকুন চড়াও হয়েছিল, কেউ জানে না। গাঁয়ের সব লোক লন্ঠন জ্বেলে খুঁজতে খুঁজতে…। কয়েকদিন পরেই পদ্মবিলে ভেসে উঠল ওর পচে ফুলে ওঠা শরীর। তখন আর ওর ধর্ষিতা শরীরে আঁচড়ের চিহ্ন নেই। ওর গালের টোল খুঁজেছিল নীলু। কে যেন টেনে সরিয়ে নেয়। কারা যেন ডুকরে কেঁদে ওঠে।
আর ওই পানপাতা মুখের মেয়েটা তো বাণীমাসির মেয়ে। নাম মনে নেই। ক্লাসে ফার্স্ট বরাবর। সাইকেলে করে ইস্কুল। পাশের পাড়ার নেপালের দাদা ওকে টিটকিরি দিত। একদিন সাইকেল থামিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে এক চড়। নীলু অনেক পিছনে। চুপ করে দাঁড়িয়ে। বাণীমাসির মেয়েটার একদিকের ফর্সা গাল গলে গেল অনেকটা। ঠিকরে বেরোনো চোখ। নেপালের দাদা আর তার এক বন্ধু সস্তায় এক বোতল অ্যাসিড ছুঁড়ল যেদিন…। ওদের কারও কিচ্ছু হল না। দিব্যি বুক ফুলিয়ে আবার পাড়াতেই। ঘরের কড়িকাঠ থেকে গলার দড়ি ছাড়িয়ে যখন নামাচ্ছে মেয়েটাকে, বাণীমাসির অজ্ঞান হয়ে যাওয়া মুখখানা খুব মন দিয়ে দেখছিল নীলু। মেয়ের মুখখানাই যেন বসানো, একদম পানপাতার মতো না?
নীল শাড়ি পরা নতুন মেয়েটার থুতনির তিল দেখে নীলু আনমনা হয়ে যায়। ঝড়খালি থেকে অনেক দূরের শহরে খাটতে এসেছে সে। ওই তিল তাকে বাঁধতে চেয়েছিল। নীলুর কতটুকু ক্ষমতা যে হাত বাড়ায়! নীলুরা ভীতু হয়। পুঁচকে তিলেরও সে জোর থাকে না। একরত্তি অস্তিত্ব। নীলু একদিন সব ছেড়ে পালিয়ে এল। শিখে নিল একের পর এক উপকরণ মিশিয়ে মকটেল তৈরির ফর্মুলা। এই কাজে নীলুর খুব সুনাম।
সিমরন, জয়ী, ঝিলিক, আয়েশা, ম্যানেজারবাবু, ব্যাণ্ডমাস্টার, দত্ত, সান্যাল, সেনশর্মা… এখানে এসে ইস্তক সবাইকে খুঁটিয়ে দেখে নীলু। চেনা মুখ সব। ওরা সবাই নিলুর কাছে সারাদিন ধরে ফিরে ফিরে আসে। মরার পরেও মানুষের এক-একটা বিশেষ চিহ্ন থেকেই যায়। শরীরে, ব্যবহারে। মায়ের গালের বড় আঁচিল, বাবার কুঁজো হয়ে দাঁড়ানো, স্কুলের হেডমাস্টারের জোড়া ভুরু, ক্লাসের হীরকের কোঁকড়ানো চুল, পঞ্চায়েতের লখাকাকার পানখাওয়া লালচে দাঁত… নীলু দেখে। সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
একের পর এক দারুণ সব মকটেল বানাচ্ছে নীলু। কাচের গ্লাসের মধ্যে একের পর এক সিরাপ, ফ্লেভার। সব স্বাদ বর্ণ গন্ধ পিষে নিতে হবে, ঝাঁকিয়ে সামান্য নেড়ে ছেঁকে সাজিয়ে পরিবেশন। কোনও ভুল না হয়। নতুন কাজ। নতুন সম্পর্ক। নতুন মানুষ।
সিমরন এসে সামনে দাঁড়ায়। “মেরে লিয়ে এক গ্লাস রেডি রখনা… জারা দেখে তো ক্যায়সা হ্যায়…”।
নীলু আর তাকায় না অন্য কারও দিকে।
জন্ম ’৭১, কলকাতা
বর্তমানে আজকাল প্রকাশনা বিভাগের অ্যাসিস্ট্যাণ্ট ম্যানেজার পদে কর্মরত।
১৯৯৮ সাল থেকে আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের এফ এম রেইনবো (১০৭ মেগাহার্তজ) ও এফ এম গোল্ড প্রচারতরঙ্গে বাংলা অনুষ্ঠান উপস্থাপক।
কলকাতা দূরদর্শন কেন্দ্রের ক্যাজুয়াল ভয়েস ওভার আর্টিস্ট।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে যাদবপুর ইউনিভার্সিটি কমিউনিটি রেডিওতে (JU ৯০.৮ মেগাহার্তজ) ‘এবং রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক সাপ্তাহিক ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের নিয়মিত গবেষক ও উপস্থাপক।
২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে ‘সানন্দা’ ও ‘আনন্দলোক’ পত্রিকায় ফ্রিলান্সার অ্যাডভার্টোরিয়াল কনটেন্ট লেখার নিয়মিত দায়িত্ব।
কর্মসূত্রে ‘আজকাল’, ‘আবার যুগান্তর’, ‘খবর ৩৬৫’ ও অন্যান্য বহু পত্র-পত্রিকায় ১৯৯৬ সাল থেকে ফিচার এবং কভারস্টোরি লেখার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা।
‘একদিন’ পত্রিকার বিভাগীয় সম্পাদক হিসেবে ‘নারী-শিশু-বিনোদন-স্বাস্থ্য’ বিভাগে দীর্ঘদিন কাজের সুযোগ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর এবং ‘ফ্রেশ ওয়াটার ইকোলজি’ বিষয়ে গবেষণা করে পি এইচ ডি ডিগ্রি।
একমাত্র প্যাশন গল্প লেখা।
‘গাংচিল প্রকাশনা’ থেকে প্রথম গল্প সংকলন ‘অসমাপ্ত চিত্রনাট্য’; সংকলনের গল্পগুলি বিভিন্ন সময়ে আনন্দবাজার পত্রিকা, সানন্দা, এই সময়, একদিন, উনিশ-কুড়ি, প্রাত্যহিক খবর, তথ্যকেন্দ্র পত্রিকায় প্রকাশিত।
পরবর্তী গল্পসংকলন
“প্রেমের বারোটা” রা প্রকাশন
“ব্রেক আপ চোদ্দ” রা প্রকাশন
প্রকাশিত উপন্যাস—“জলের দাগ” (রা প্রকাশন), “সুখপাখি”, “এবং ইশতেহার” (সংবিদ পাবলিকেশন)
কিশোর গল্প সংকলন – ‘পড়ার সময় নেই’ (সৃ প্রকাশন)
কিশোর উপন্যাস – ‘বিষচক্র’ (কারুবাসা প্রকাশনী) এবং ‘এক যে ছিল রু’ (কেতাবি প্রকাশন)
এছাড়াও গবেষণাঋদ্ধ বই ‘শান্তিনিকেতন’। প্রকাশক ‘দাঁড়াবার জায়গা’।
আরও একটি ফিচার-সংকলন ‘মলাটে দৈনিক’। প্রকাশক ‘দাঁড়াবার জায়গা’।
চমৎকার লাগল।
আপনার অন্য লেখা কি আছে ? পড়তে চাই।
হীরক সেনগুপ্ত
খুব স্পর্শ করল লেখাটি।
দারুণ গল্প।
সব মানুষই আদতে চেনা। চেনা মানুষের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। মিল খোঁজে নীলু। মিল খুঁজে পাই যেন আমরাও।
খুব ভালো লাগল।
অন্য স্বাদের লেখা, বেশ ভাল লাগল