Reading Time: 2 minutes
বাগানে বা বাড়ির চারপাশে গাছগুলি দ্যাখো
অসাধারণ, যেন শব্দপ্রয়োগ, রঙিন কোলাজ,
অথচ যে কোনো দিন এবড়ো খেবড়ো গর্ত ফেলে রেখে
পালিয়ে যেতে পারে ওই তালগাছ অথবা পাইন বৃক্ষ।
ভাবছ শেকড় আছে, মাটিতে পা, কিন্তু খোঁটাবাঁধা
স্থায়ী নয় কেউ, পাশাপাশি তরল সবাই, জালবোনা,
অজস্র বন্ধুর মত ব্যস্ত ফেসবুকে,
এদিকে সামারের গুবরে পোকা, সবুজ জাপানি বর্গী
চলে গেছে কান্ড, পাতা ঝাঁঝরা করে, গর্ত পড়ে আছে,
নোড নিয়ে উঠাও সেই পাতাবাহার।
স্মৃতি আসলেই একটা অত্যাচার, বেদনার
কর্ষিকা টান এখানে আঙুলের মত, ফ্র্যাকটালের মত,
ছড়িয়ে পড়েছে ব্রেন ক্যান্সার।
জোনাকিনী দেখে একবার, মাপজোখ তীক্ষ্ম,
চোখে হয়তো দুফোঁটা জরিপের জল –
তোমাকে গর্ত ভরাতে হবে সুন্দরী, কাঠকুঠো,
পুরোনো কাগজ, স্মৃতি, ওপরে একটা সুন্দর চাদর, বেডকভার
টুইল কটন কিংবা নকশী কাঁথা।
গোপন উপাদান বা পাকা রাঁধুনির বিশেষ মশলা –
রহস্যময় মনে হলেও সব রান্নার বিধান একই,
আড়াল থেকে একটু সর্ষেগুঁড়ো অথবা মৌরিবাটা –
ধরে যদি ফেলে পাড়ার বৌদি অথবা
ভোজনরসিক, পুনরাবৃত্তি কিন্তু সহজ নয়
কারণ কোন সময়, কতটা পরিমাণ এই ট্রাম্পকার্ডটি
ব্যবহার করা হয়েছে, জানা সম্ভব নয়, আসল রাঁধুনিকে
আমি দেখেছি এ প্রস্তাব জীবনের অন্য আখড়ায়
কাজে লাগে, এমন নয় যে জীবনের সবকিছু
রান্নার সঙ্গে তুলনা করা যায়, কিন্তু ঠিক সময়ে,
ঠিক তালে, সংবেদনা কাজ করে বেশ, যদি একেবারে
ভেতর থেকে আসে, যদি হারতে হারতে, মুখঝামটার
সামনে দাঁড়িয়ে, তাড়িয়ে দেবে, কী মাইনে কাটবে,
এই সংরক্ষণে চাপা পড়ে না যায়,
সর্ষেগুঁড়ো এবং মৌরিবাটা ম্যাজিক বানাতে জানে।
ঘ্রাণকেই মর্যাদা দিই পূর্ণ, পূর্ণতর, আর সব স্বাদ
ঘোলাটে মেরে যায়, জমজমাট সংসারে বাঁচে টর্নেডোর গন্ধ
ধুলোবালির, শুকনো মাটি, খড়, ওজোন, ইলেক্ট্রিকের,
একবার তোমাকে শুঁকতে দাও, দূরে দাঁড়িয়ে
শরীর, মন, সান্নিধ্য, সব রয়ে যাক ছোঁয়ার বাইরে
শুধু কটা নিজস্ব মলিক্যুল, কটা আত্মীয় মলিক্যুল
সম্পর্ক গড়ুক, ব্যবধানে, দূরত্বের ঈথার পেরিয়ে।
আজ আর কোন পারফ্যুম নয়, শ্যানেল ইডোলের বর্ম
শুধু কটা নিজস্ব মলিক্যুল, আনাড়ি কাঁচা,
বিশুদ্ধ অণুর দল, ফেরোমোন, ঘাম
এই দ্যাখো আমি চোখ বুজলাম,
এই দ্যাখো ম্যারাথন দৌড়ের লম্বা নিশ্বাস,
আমি টেনেই চলেছি … বুকভরা গন্ধগ্রহণ
তুমি স্থির থাকো, তুমি নোড়ো না …
অনিশ্চয়কে আমি চৈতালী সবুজ রঙে
ছদ্মবেশী পোঁচ, একটা ঝলমলে পাঞ্জাবি পরে
দাঁড়ায় যদি সে, তুমি কী স্মিতহাসি,
না কি গুটিগুটি পায়ে পেছন পেছন,
সম্মোহনে, সব ফেলে, পালিয়ে, স্বপ্নচারণ?
এইভাবে ঝুঁকি নিতে, রিস্ক নিতে ভয় গড়ে ওঠে।
জলে পড়ে থাকা শুকনো পাতা যেমন,
কিন্তু অগ্রগতি নেই। তাই উদাসীন
পরোক্ষে একটু অশান্তি হয়তো, তবু তো
হাত আঁকড়ে থাকা সেই একই চেনা,
বই সংগ্রহের তালিকা এবং গুগল সার্চের ইতিহাস –
লোহাও কিন্তু সব লিখে রাখে জিমের পান্থশালায়।
এ লেখা স্থায়ী, ক্লাউডে বা বিচ্ছিন্ন ড্যাটাবেসে নয়
খাঁজে খাঁজে, ডাম্বেল বা বার্বেলে দাঁড়িপাল্লায়
গোপন হিসেব থাকে মানুষটি কত দুঃখী, বিচলিত
আমার কৌতূহল কম, কারো নিজস্ব লাইব্রেরিতে শক্তি
বা জন অ্যাশবেরি না থাকলে, সূক্ষ্ম বিচার হয় না,
নিগূঢ় কোনো অধ্যায় নেই। উদাসীনতা বেশি।
তাই হেরে যাব জেনেও আমি নদীর খোঁজে যাইনি।
শুধু মনে আছে সেবার আমি বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু বাড়ি মানে কী খেলাঘর, অথবা যেখানে রূপা সহজে বিদায়,
আসলেই কৌতূহল কম, একবার সে
ধ্বংস করে চলে গিয়েছিল, সেই থেকে প্রতি জন্মদিনে
জন্ম সোনারপুর অঞ্চলের কোদালিয়া গ্রামে। ছাত্রাবস্থায় অনেক লেখা এবং ছাপানো কলকাতার নানান পত্রপত্রিকায়। ১৯৮২ সাল থেকে আমেরিকায়, প্রথমে উচ্চশিক্ষার জন্য পরে অধ্যাপনায়। এখন ক্যানসাস স্টেট ইউনিভারসিটি তে কলেজ অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের ডিন। সম্প্রতি প্রকাশিত কবিতা – বাক, কবিতা আশ্রম, ছায়াবৃত্ত, বম্বে Duck, যুগসাগ্নিক, অন্যনিষাদ, বাতিঘর অনলাইন, শারদীয়া খোঁজ, শব্দের মিছিল, মহাভারত, অপার বাংলা, উত্তর আমেরিকার পত্রিকা বাঙলা লাইভ, উদ্ভাস এবং আরো অনেক পত্রিকায়। ঋক প্রকাশনী আয়োজিত বিরহের কবিতা প্রতিযোগিতায় উচ্চস্থান। উত্তর আমেরিকার নিউ জার্সি অঞ্চলের পত্রিকা অভিব্যক্তির কবিতা বিভাগের সম্পাদক। প্রথম কবিতার বই “অতসীর সংসারে এক সন্ধ্যাবেলা” প্রকাশ পাচ্ছে এই সেপ্টেম্বরে (২০২১) রা প্রকাশনী থেকে।
Related