ইরাবতী উৎসব সংখ্যা কবিতা: সংলাপ গুচ্ছ । চিরশ্রী দেবনাথ
আক্ষেপ
যাওয়ার আগে,
পাশাপাশি বসি কিছুক্ষণ আজ, কেমন নীলবর্ণ গোধূলি
গোধূলি লাল হয়, নীল তো তার বেদনা
ভারতের অবস্থা এখন কেমন?
খুব ভালো, প্রাণ এসেছে, ফিরে আসছে বিশ্বাস, হাতে হাত
তবে যে সবাই বলে রক্তাক্ত, হত্যা আর দ্বেষ
বাদ দাও তো,
এনেছি পুরনো খাম, বিগত দিনের দলিল, আলপনা
তাহলে খুলে বসো পুঁথি, চশমা হারিয়েছো?
হয়তো
আসলে হারিয়েছি এতো কিছু আমরা, সেই পুরনো সময়, অভিমান না ভাঙানো মধ্যাহ্ন, স্পর্শক বিন্দু
এখন তো মেঠোপথ, সামনে অতিথিশালা, চলে এসেছি একসঙ্গে অথচ আলাদা আলাদা…

হে মান্দারবৃক্ষ, গোপনে তুমি
কতদিন হয়ে গেলো কথা হয় না
এভাবে ম্যাসেঞ্জারে গল্প করতে ভাল্লাগে না
কথা হবে মুখোমুখি, সন্ধ্যা নামতে নামতে, গোধূলির লাল রঙে
কিন্তু এখানে তো নির্জনে কালো জল, বেলে হাঁস
দেখা যায় না, মুখের এক্সপ্রেসন বোঝা যায় না, ভুল না ঠিক
মুছে দিয়ে, কেটেকুটে সংশোধিত প্রুফ, তাই বলছিলাম
ও!
এটাও বোঝা গেলো না
কোনদিন কাটাকুটি খেলবো, একদম মুখোমুখি। মিলবে না, খাদের পাশে একটাই রাস্তা তো
সেখানে এখন মেষের পাল, যীশু যাচ্ছেন, সাদা জোব্বা, প্রেম নয়, বাণী
ধূপের বন দেখেছো কখনো ? অনুর্বর পাহাড়ি মাটি।
সেখানেই বসত আমার। স্যাঁতসেঁতে। চোখজ্বালা দিতে পারি খুব বেশি হলে,
বলেছিলে না সন্ধ্যা হয়েছে, হয়তো এমন কোন অনির্বান শ্বাশ্বত গোধূলি, জ্বলন্ত …নিভন্ত।

উষ্ণতা চাইছি না
তাহলে চলে এসো চন্দনের বনে
যে অক্ষরগুলো সাদা কালো সেসবই তবে চন্দনের বীজ
কেন চন্দন দস্যু চাই না তোমার? নির্বিচারে?
দস্যুদের দিয়েছি বিদেয় ধূপ ধুনো দিয়ে
এখন সুগন্ধি সমিধ চাই, পোড়াবে আমাকে,
এ মুহূর্তে তুমি আমাকে মিষ্টি করে ডেকো, ‘যজ্ঞাহুতি ‘

ধাতব শব্দ হচ্ছে খুব
আমাদের সঙ্গীর নাম দোষারোপ
একটু ভুল হলো, বলো অভিমান
আমাদের সঙ্গীর নাম ভুল বোঝাবুঝি
একটু ভুল হলো, বলো ইগো, ইগো প্রবলেম
আমাদের সঙ্গীর নাম বারান্দা আর অপেক্ষা এবং অপেক্ষা
ভুল হলো, এসব আগে ছিল কোনদিন বহু আগে
এখন রূপোর খিল দিয়েছি ঘরে, মুখোমুখি হবো না কোনদিন হয়তো
তাই বোধহয় কল্পনায় দেখে নিই, আস্তে মুখ নামিয়ে তুমি দেখে যাচ্ছ সমস্ত সন্ধ্যাসারস, রাজহংসী ছায়াগ্রীবা
আমিও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, তবে এতো কঠিন করে নয়,
সন্ধ্যার আলো জ্বলে উঠল,
একটু হাসলে, অল্প লজ্জা পেয়ে তাকিয়ে রইলে দূরে, বহুদূরে ..

অভিমানের পুরাতন উষ্ণীষ
দূরে চলে যাচ্ছো কেবল!
ভালোবাসা পূর্ণ করে পেলে আমি দূরে চলে যাই, আধখানা দিতে যদি, অসম্পূর্ণ না হয়,
স্বার্থপর তুমি? নির্ভরতা আর বাকি শর্তাবলী রেখে চলে যাচ্ছো? পারো না? পারো না কিন্ত তুমি!
ভেবে দেখো একটি শর্ত ছিল, ক্লান্তি, ক্লান্তি আসার আগে।
কোথায় পড়লে? মানে কি করে জানো?
পড়িনি, কিন্তু জানি।
দেখতে পেলাম আমার প্রশ্নে তোমার চোখে মৃত উৎসাহ, তখন থেকেই, হয়তো সেই খণ্ডিত মুহূর্তে।