ইরাবতী উৎসব সংখ্যা: কবিতাগুচ্ছ । দালান জাহান
ঘ্রাণবিদ্যা
একান্ত বাল্য বয়সে
লাস্যময়ী এক চকলেট পেয়েছিলাম
জাহাজ ভাঙা মানুষের হাত
সেই হাত নাকে চেপে ধরে বসে থাকতাম বলে
দাদিমা গোপনে শিখিয়েছিলেন ঘ্রাণবিদ্যা।
দাদিমা বলতেন
যারা তেল বিক্রি করেন হাঁটে-বাজারে
সীমাহীন তাদের সম্পর্কের শহর
এক টুকরো রঙিন জল পেতে
তারা ঘি মাখেন এপোলোর তিরে
হীরার খনির চেয়ে উজ্জ্বল তাদের ভবিষ্যত।
সেই থেকে ঘ্রাণ শোনে বুঝতে পারি
পতঙ্গ ও মানুষের উচ্চতা।

প্রশ্ন
শরীরে রোদ চাষ করা ছেলেটি
রেললাইন আর টেলিফোনের গল্প বলে
তার কাছে ট্টেন মানেই দুরন্ত আকাশ
আনন্দ ঝকঝক।
টেলিফোন মানেই সমুদ্র আমিষ
সে হাত ছাড়া করতে চায় না
বিধাতার সাথে কথা বলার সুবর্ণ সুযোগ।
কতগুলো কালো কাক ঠোঁটে করে নিয়ে যায়
ওয়েদিপাউস শহর পাথরের মূর্তি
ইটের হৃদয়ে খোদাইকৃত মাতৃরঙ।
গ্লানিভাঙা জল পাহাড় ভাঙা বুক
লোক দেখানো জনশ্রুত কার বাড়িতে যায়!
এইসব ছেলেটা দেখে
বিধাতা দেখে না কেন?

আমসত্ত্ব
মা বললেন বাজারে যাও
সবজি মাছ মাংস কিনে নিয়ে এসো
বাবা বললেন সবকিছুতে বিষ
সব খাবার ফুরিয়ে গেছে।
সমাবেশে যাও
একজন ভালো মানুষ নিয়ে এসো
বাবা বললেন সমাবেশ শূন্য
সেখানে পড়ে আছে পুতুল সদৃশ চেয়ার
ভালো মানুষেরা অমাবস্যায়
বিক্রি হয়ে গেছে।
সাধুর কাছে যাও সন্যাসীর কাছে যাও
সততার উত্তাপ নিয়ে এসো
এবার বাবা কিছু বললেন না
রোদে শুকাতে দেওয়া
আমসত্ত্বে তাকিয়ে রইলেন
সেখানে মাছি ভনভন উড়ছে।

কামান
অমানুষ হওয়ার অনেক বছর
হঠাৎ একদিন তিনি…
মানুষের মতো কথা বললেন
আয়নায় ফেলে ডেসড্রেন প্রতিবিম্ব
মুখোমুখি হলেন পয়েন্টস অব হিমাগারে।
তার উল্টানো চোখ এখন
ডোন্ট কেয়ার বালিকার
শতাব্দী খোলা মাংস দেখে হাসা
সেই বৃদ্ধের মতো….
যে কি না সিফিফাস লজ্জায়
লুঙ্গি ধরে নিজের মুখ ঢাকতে গিয়ে
নিচের দিকে খুলে দিয়েছেন
পাকিস্তানের দিকে হেলে পড়া
কুচকুচে কালো কামান…!!
দেন হাততালি দেন বাজান।

আধুনিকা
আগে আধুনিকা বলতে বুঝতাম
মেহেরুন্নেসার বুক ভরা বকুল বাগান
এখন দেখি বাট ভাঙা উদোম সিগারেট
হালের ছেঁড়া ছিন্ন জামার নিচে
খোলে রাখা উর্বশী’র উলঙ্গ বোতাম।
এখন আকাশ দেখি নৈরাশ্যের শেষ সীমানায়
জ্বালিয়ে রাখে মাংসপ্রদীপ
আনন্দ চাবি সবুজ শ্যাম্পেইন
বাউলের কেশ ভরা মিথুন পুরুষ
কুন্তি রমণীর শয্যা ধরে হেঁটে যাওয়া দূর।
এখন আধুনিকা বলতে বুঝি
হেক্টরের রাজ্যে বাড়া সুখের সোনা
এখন আধুনিকা বলতে বুঝি
চৌবাচ্চায় চাষ করা মানুষের পোনা
ঠোঁটে রকেট নিয়ে ছুটে চলা..
মেহেরুন্নেসার ঢাকা দুবাই এয়ার টিকেট।

তোমার মতো কেউ হয় না
তোমাকে দেখলেই মনে পড়ে
সেই রঙ মিস্ত্রির কথা
যে কি-না যাদুর রঙ দিয়ে
পুরাতন সবকিছু নতুন করে দিতো।
তোমাকে দেখলেই মনে পড়ে
সে-ই শিক্ষকের কথা
যে কি-না একখানা আগুনের দলা
বগলে বইয়ে , স্কুলে নিয়ে যেতো
বছরের পরে বছর ধরে।
তোমাকে দেখলে,
আরও অনেক কিছু মনে পড়ে
কিন্তু তোমার মতো কাউকে মনে পড়ে না
তোমার মতো কেউ হয় না
