Categories
ইরাবতী উৎসব সংখ্যা: কিঙ্কি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
একটি একাঙ্ক নাটক
বাহাত্তুরে বুড়োর মতো এখন বিকেলের রোদ
দু চোখে ছানি নিয়ে ট্রেনের জানালায়৷
তোমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি বহু দূরের দেশে৷
ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম গভীর আবেশে৷
তোমার গভীর শ্বাস ছুঁয়ে গেলো পালামৌ জঙ্গলের
নির্জন বাতাস ৷ রক্তের পারদ চড়ে৷নোঙর ফেলে
আমার ওষ্ঠ নরম অধরে৷ উষ্ণ প্রস্রবনের গা বেয়ে
ওড়ে জলীয় বাস্প ৷মসৃন গ্রীবা নাড়ে চিতল হরিণী৷
ইতিউতি চঞ্চলা চাওয়া৷ অদ্ভূত গন্ধ নামে গ্রীবা বেয়ে
চাঁপা ফুলের মতো ৷ ফিয়েমা ডি উইল ৷
বুকের ধ্বক ধ্বক আরো শব্দ নির্মানে পটু হয়ে ওঠে৷
চারপাশে কোলাহল থেমে গিয়ে সন্ধ্যা নামে৷
চোখ তবু অচঞ্চল জানালার বাইরে৷
ভিতরে এইসব স্বপ্নের অঘটন৷
সবাই নেমে গেছে
শুধু আমি একা ট্রেনের কামরায়৷
উৎসব
বহুযুগ পরে দেখা পূজোর প্যান্ডেলে ,
তোমার পুরোনোপাড়ায় ৷
একটু বুড়িয়ে গেছ তুমি ,
মাথার সামনেটা যেন ঈষৎ হালকা
নোয়াপাতি ভুঁড়ি,
সঙ্গে যুবতী মেয়ে, বোধকরি তোমারই
নিবিষ্ট আলাপে মগ্ন সমবয়সী যুবকের সাথে৷
আমাকে দেখনি তুমি, আরতি শুরু হোলো ৷
ধুন্ধুমার ধুনুচি নাচ, ধোঁয়াময় তপ্ত চারিধার
মায়ের মুখের গর্জনতেল ক্রমশ: আরো
চকচকে আর দ্যুতিমান৷
সে দ্যুতিতে পড়ে ফেলি তোমার পাঠানো চিঠি
লুকিয়ে আমাকে৷ কোথায় সে চিঠি গেল?
কোন পিয়নেরা নিয়ে গেল ডেড লেটারবক্সের
ঝাঁপিতে?সেখানে সে চিঠি থেকে গাছ হোলো,
তার থেকে মহীরুহ ,মুখ চোখ একেবারে
ঢেকে ফ্যালে লতায় পাতায়৷
বহুদিন আগেকার উৎসব
দ্রিমি দ্রিমি মাদলের
শব্দ আনে মনে৷
নারী দিবস
কহনা প্যার হ্যায় ভাঁজতে ভাঁজতে
আধখাওয়া বিড়িটা ছুঁড়ে ফেলে
চিটে বেড়ার ঘরের পর্দা তোলে সে৷
মেয়েটির পরনে হলুদ লালের সস্তার ছাপা শাড়ি৷
শরীরে সস্তার প্রসাধন,কাঁচের চুড়ি,
দেওয়ালে মাকালি, প্লাস্টিকের জবার মালা গলায়
আর মনখারাপ করা একটা টিউবলাইট৷
শায়ার দড়ি বাঁধতে বাঁধতে
টাকা গোনে মেয়েটি ৷
পঞ্চাশ রুপিয়া কম দিলি যে!
শক্ত হাতে সার্টের কলার চেপে ধরে মেয়ে৷
বাচ্চার জ্বরটা কাল থেকে আবার বেড়েছে৷
এবারে ভালো ডাক্তার না দেখালেই নয় ৷
চিটে বেড়ার ঘরের পর্দা টেনে আবার
দোর গোড়ায় এসে দাঁড়ায় এক মা৷
ল্যাম্প পোস্টকে দুয়ো দিয়ে
ভরা জ্যোৎস্নার আলো এসে পড়ে
তার শুকনো মলিন মুখে৷
তমসো মা
( ১১)
ভোরবেলাটা চুপটি করে বসে আছে
গাছের ডালে৷ নীচে দাঁড় বাইছে একটি
ছোট্ট মেয়ে৷ দাঁড় বেয়ে গাছের তলায় যখন
এলো ,তখন সে যুবতী৷ ঠিক তখনই উঠল
সূর্য ৷ভোরবেলা অবাক হয়ে তাকিয়ে
রইল মেয়েটির দিকে৷ওর পোশাকের নাম শান্তি৷
তাই শ্বেতবর্ণ৷ মাথায় সোনারবরন বিশ্বাসের মুকুট৷
কপালে সত্যের লাল কুমকুম , আর দাঁড়টি তার ভালোবাসায় মোড়া৷বেয়ে চলেছে ভবিষ্যতের দিকে ৷ কুলু কুলু বয়ে যাওয়া জলে
উন্মেষ আর কল্যান ভেসে বেড়াচ্ছে৷
অন্যপাড়ে বসে আছেন ঈশ্বর
বাঁশি বাজাচ্ছেন….
রাগ ললিত৷
দিনগুলি রাতগুলি
শব্দের ভিতর ঝোঁকে দিনগুলি রাতগুলি
মেপে নেয় কতটুকু জল
গভীরতা —-
আরো ঝুঁকে পড়ে
হৃদয়ের ছায়াপাত দেখে
কিন্তু ডোবেনা৷
পাছে লবণাক্ত জল
চলকে এসে পড়ে৷
আগে খুব কষ্ট হোতো
অবহেলা পেলে,
ইদানিং শব্দেরা অনেক গভীর
ইঁদারার মতো ৷
একদিনে নয়,
খুঁড়ে খুঁড়ে গভীর হয়েছে৷
জন্ম কলকাতায়, পড়াশুনো লেডিব্রেবোর্ণ কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। অর্থনীতির আ্যাসোসিয়েট অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহন।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ তিনটি
আরো দুটি প্রকাশিতব্য৷
প্রবন্ধের বই ১টি
একটি রম্যরচনা ও প্রবন্ধের বই প্রকাশিতব্য৷