| 16 এপ্রিল 2024
Categories
উৎসব সংখ্যা’২০২১

ইরাবতী উৎসব সংখ্যা: গুচ্ছকবিতা । মোস্তফা মঈন

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
হাড়ের পিয়ানো
 
 
আর আমি সেই পিয়ানোবাদক, যে একদল
পাখির উদ্দেশে কেবল পিয়ানো বাজাই।
বেরিয়ে যাই সরাইখানা থেকে
আমার একদল পার্থসারথি পাখি
ঘোরলাগা সুরের দরোজায়
আমার হাড়ের পিয়ানো শঙ্খনীল মুনিয়া পাখি।
আমি পিয়ানো বাজাই।
অঙ্গে জেগে ওঠে জমাট ব্যাথা
কেঁপে ওঠে ঘাস, রাতের লতানো পাতা পতঙ্গ
শেষ রাত্রির ঝাউবন।
প্রিয় পাখিদের উদ্দেশে আমি পিয়ানো বাজাই।
তুলে আনি পাখিদের আত্মার গান।
তাদের উদ্দেশ্যে আমার হাড়ের পিয়ানোটা।
 
 
 
 
নাচ
 
কাল দুপুর থেকে ভালুকটার গায়ে জ্বর
কে এসে নাকে কালি জিরার তেল লাগিয়ে গেলো
থুতনির তলা থেকে সারা ঘরময়
চলছে নাচের দুলকি, চলছে গম্ভীরা…
চেয়ার টেবিল কলম কাগজ এশট্রে চিরুনি
যেন এক একটা পরীনাচ
শার্সি ভেঙে উদারা মুদারা তারা দোল তোলে স্বপ্ন
এই ঘরটাতে বুনো ভালুকের মতো
আমি পড়ে থাকি।
 
 
 
 
 
বোধ
সব হাতে পাখি আসেনা
কাঁধে চড়ে বসে না বেজি।
পাখিও বেজি তোমার নিয়তি জানে।
সব উঠোনে কচ্ছপ এসে তাপায় না রোদ
সব বোধের ভেতরে
সে ডিম পাড়ে না।
 
 
 
 
 
ছিলিম
একদমে কবিতা হয়
গাঁজার একদমে হয়না
তার বহু দম ছিলিমের গল্প দরকার।
ঘোর কাটলে শিথিল শরীর
আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে ঝরে পড়ে জোছনা কায়া।
 
 
 
 
জেনে রেখো তিলাঘুঘু
 
ধারণার চেয়ে বেশি
সঙ্গীতের চেয়েও শৃঙ্গার যদি মানো— বনহরিণী নেমে আসবেই।
জেনে রেখো তিলাঘুঘু! নদীর ধারে খঞ্জনার নামে কদমতলায়
আমার বাঁশি বাজবেই।
কিন্তু কিছু তিলে খচ্চর তো ছিলোই।
এ-দেশে চিরকাল নদীরাও থাকবে।
নদীদের উদ্দেশ্যে কোনোকালেই আমার বাঁশি থামবেনা।
 
 
 
 
 
আলোর মধু
 
কিন্তু আমিই মাটি থেকে পাতা ও পাথরখণ্ড উড়িয়ে দিই।
পাতাটা শূন্যে গড়াগড়ি যায়।
অন্ধকার বেয়ে চুইয়ে পড়ে ফোঁটা ফোঁটা
আলোর মধু।
আমি মধুর স্তনে ঠোঁট চেপে পাখি হয়ে পাখা ঝাপটাই ।
 
 
 
 
পাঠ্য বই
 
মা আমার প্রথম পাঠ
তিনি বলতেন
পড়ো।
আমার দ্বিতীয় পাঠে
বাবার মুখ পড়তে শুরু করলাম।
মানুষের মুখগুলো আমার আবশ্যিক
পাঠ্য বই ।
আমার স্তবগান মানুষের মুখ।
 
 
 
 
 
সাকার
 
জন্মসূত্রে এই দেহঘরে আমি আমার সাকার পেয়েছিলাম।এইঘরে
ঠাঁই-ঠিকানা হয়েছিলো আমার। যখন সেই পরম সত্তার প্রদীপ্ত আলো
থেকে সহসা ভ্রমণে বেরিয়ে এসেছিলাম আমি।
ইতোমধ্যেই জেনে গেছি , পৃথিবীর ছায়া-সবুজ আলো-ঝলমল
এই মনোমুগ্ধকর বাড়িতে আমার আর বেশিদিন থাকা চলবে না।
রহস্যঘেরা এই গ্রহের বাসিন্দাদের প্রতিটি মুখে আমি তাকিয়ে দেখেছি
কারো দেহ কোঠাতেই আমার দ্বিতীয় ঠিকানা নেই।
 
 
 
 
 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত