Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,puja 2021 bangla kobita Pias Majid

ইরাবতী উৎসব সংখ্যা: কবিতাগুচ্ছ । পিয়াস মজিদ

Reading Time: 2 minutes
প্রেম-পরিস্থিতি
 
বিধি মেনে বেঁচে আছি সীমিত পরিসরে,
তোমার হৃদয়নদীও অসীম লকডাউনে।
 
ও আমার প্রেমপুরের পরানরঙা পাখি,
তোমাকে ধরতে আজ আমি স্রেফ দুটো ডানার চাষী।
 
জনমভর লিখে গেছি নদীর জলজীবনী,
আয়ুশেষে জানলাম প্রেম মানে আগুনের অঞ্জলি।
 
তুমি পরিবাগে আর আমি ভূতের গলি,
মধুসুরে প্রেমপাখি গায় গান, ধ্বংসের অঞ্জলি।
 
 
ক্রুশকুসুম
 
আমিই আনন্দম, ক্রুশের মিনার। আকাশেরও মগডাল থেকে দেখি কোথায় তুমি -চোরাগোপ্তা ফুল। তুমি তো কাননে নও। কবরখানায় নৃত্যরত লাবণ্যপ্রেত। তোমাতে প্রেম ঢালি। তুমি আজ হাড়ে গলা মোম। আর এমতে কৃষ্ণনিখিল চুরমার। আয় ধ্বংস, আয় সবুজ। চাঁদ ডুবল যায় করুণ রসধারায়। আবার তুমি মা মেরিতে ছেয়ে গেছ; জেরুজালেমে খড়ের গাদায়। রাত গাঢ় হলে তুমি সোনালি রক্তের জতু। যখন বনভূমি দগ্ধ শৈত্যে, জল ডুবন্ত ঘৃণায়। এই পথ কাঁটাশোভা, এই পথ যিশু। আজ ঝরে পড়ে সমুদয় সিডারের গাছ। তুমি তবে নবরূপে রোপিত বিষাদ। তার ছায়ামূলে আমি সংগীতের রিমঝিম জলসা বসাই।
সেথা দেখো কেমনে অসুর ঘনায়!
শূন্যতায় ভরপুর
 
উদয়পুর থেকে সূর্যাস্তসমাধি,
রাজাভিষেক, প্রজাবিদ্রোহ।
একটু থামো,
দেখে আসি
কতদূর অসুরের আস্তানা
দরবারি কানাড়া।
বিকেলটা বিসমিল্লা খাঁ
শ্বাস নিতে দরকার
সানাই-সংহার,
বাহুল্য স্মৃতির চুরমার।
তবু বারানস
বয়ে চলা মানে
জলের জখম,
জ্বালিয়ে দাও তুমি
অনন্তের ওই কুটির।
আগুনের অঞ্জলি
এই নাও মুঠো ভরে
কবির ঘরই কবির কবর।
পোকার প্রাসাদ থেকে
মাকড়ের মধু নিয়ে
বেলাবেলি অরণ্যে পালাই।
সবুজের সভায়
অনাহূত ধূসর আমি;
বাঁয়ে রেখে হাড়কাটা গলি
পরিবার ভেঙে বানাই
পারিবারিক গোরস্তান।
স্বপ্ন, তোমার দাফন-কাফন
হয়ে গেলে
মেঘের মাধুরী
কতটা ঢাকতে পারে
কুয়াশার ঘাটতি?
বৃষ্টির বিষয়ে এখনও কোনো
সিদ্ধান্ত হয়নি।
সসপ্যান-হাত আন্দাজ লবণ,
রাহুর রান্না;
প্রস্তুত কী দারুণ শরতের সরুয়া!
চেখে দ্যাখি, ঋতুনিরপেক্ষ গরমে
তোষাখানার শোভা।
তোমার-আমার ঠাণ্ডাযুদ্ধ
একলা একটা হেমন্ত,
ন্যুড ও আভরণের পসরায়
বুকের বুলবুলি
কোথায় কোথায়!
যার ডাকে
ভোর তার বাহুল্য বস্ত্র ত্যাগ করে
রাত্রিলাজুক ঘোমটা টানা হয়
আকাশের নীল আঙিনায়।
প্রেমপথ-পানিপথ
দেখা হল কতকিছু!
মানুষের ইতিহাস মূলত
দাঁড়িয়ে থাকার সনদ,
দাঁড়িয়ে থেকে
তদারক করা বসাভাত,
লড়াই না হোক
লড়াইয়ের রসদ।
ভাবছি ভাবছি
ভাবনা-ভবনে
শ্যাওলা বুনেছি।
তোমার জন্য এই আকালেও
আশাতীত ফলন
আগাছার গুচ্ছ।
কান্নার গোলাঘরে পনির জমেছে
খাদ্য নেই পেটে
আছে একটা খাদ্য জাদুঘর।
ঢুঁকে পড়ো টিকেট কেটে;
ভূতচতুর্দশী
পাতালপরি
মহাকাশমঞ্জরি
এখানে সব পাবেন
পাইকারি দরে,
সদর দরজায় তোপ দাগো;
আমার মতো খুচরো খরিদ্দার
নষ্ট করে তোমার
বাজারের ভারসাম্য,
তুমি যে কিনা ‘আমি’র সাপেক্ষ,
‘আমি’ যা কিনা
তোমার তত্ত্বের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে
যৌথ অবচেতনের যূপকাঠ
পুড়ে পুড়ে
ছাই হওয়া,খাক হওয়া
শূন্যতায় খাবি খাওয়া
বিধবা পৃথিবীর এতিম মুকুট।
 
 
মৃত্যুর মেটাফর
 
এমন বোবা-বেলা
বধির বুঝতে থাকা
সকলের সেরা কবিতা
বিলয়ের বাকপ্রতিমা।
 
বাগানের বাহারি বুলবুল
বিষবাক্যে বুনে তুলেছে
তার মধুভাষা,
মূলত মানুষের পোষা যত
সাপের শোভা।
 
শীতল এই অবরুদ্ধ-আত্মা
আমারই আহূত
দাউ দাউ আগুনের আরাধনা।
 
গহীন গিটারে
প্রতিটি আমিই এনেছি ডেকে
আমার অসুর;
সমবেত মৃত্যুর মেটাফর।
নিশ্বাসের সমুদ্র
 
যে আগুন এখনও জ্বলেনি
তার ছাইয়ে ছেয়ে আছি।
আয়ুর অঙ্গনে তুমি কে
আমার ধূসর দোসর!
এমন মানুষজন্ম
উদয়ের আগে ঠিকঠাক
বিদায়ের বাড়ি,
ফুল ফোটে-ফল আসে
প্রাণের প্লটে এক হয়ে যায়
হেমন্তহাসি, ব্ল্যাককমেডি,
নিরুদ্দেশ নক্ষত্রের নীচে
প্রয়াত আত্মা স্মরণে মুলতবি সভা।
তোমাকে নদী নামে ডাকি
পুড়তে পুড়তে মূলত তুমি
সামুদ্রিক সর্বনাম।
জলজ জখম নিয়ে ফিরে ফিরে ফের ওই
অগ্নিবলাকায়,
যে আগুন জ্বলেনি এখনও
তার আভাই তো জানে ঠিক
কতটা গহন,
দহনের ভাষা।
 
হেমন্তভোরে
 
বাগান, ঘুমের গুচ্ছ;
ফুলের ঘনতায়
ভোর ভেঙে যায়।
নিশিনাট্য, স্বপ্নের মহড়া
আমার উপর
অতর্কিতে হামলে পড়া,
আমি এক কুশীলব অসহায়;
তেলরঙ জলনদী বয়ে যায়
মিশ্রমাধ্যম হেমন্ত- রাস্তায়।
আমাদের প্রাচীন প্রেম
ওই গাছে গাছে,
মরেটরে ভূত হয়ে গিয়ে
সবুজের রূপ ধরে আছে।
ভোরের মায়াবৃক্ষ
রাতের জীবনে হেলে যায়,
ছায়ালু রোদের অলীকে
আমি তবু আগুনে
শীতল বসে বসে,
পুড়ে ছাই স্মৃতির পাহারায়।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>