Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,Puja 2021 bangla kobita rita islam

ইরাবতী উৎসব সংখ্যা : রীতা ইসলাম এর কবিতা গুচ্ছ

Reading Time: 2 minutes
মেঘের বাড়ি
প্রথম যেদিন জানি, সর্ষেফুলের আছে মৃদু ঘ্রাণ;
তখন তুমি অরণ্যের ভাঁজে নিচ্ছো পৌষের ওম
গোধূলির অসীম সিঁদুর পরে ঘোমটা-টানা বধূটি;
আমি পাঠিয়েছিলাম হলুদ রঙা সুবাস আঁচলে
মোড়া খামে প্রাপকেরা ঠিকানায় লিখে–
‘আমার মেঘের বাড়ি’ বাহক ছিলো স্বয়ং ঈশ্বর।
ঈশ্বর কোথাও খুঁজে পায়নি আমার মেঘের বাড়ি;
                                           –সেই তোমাকে।
সেদিন আকাশ-দেবতা, সমস্ত হলুদ রঙ খরতাপ
করে পুঁতে দিয়েছিলো আমার এই বক্ষে। কোনো
জলের সাধ্য নেই হৃদ-ঘরে ঢুকে সেই পুড়ে যাওয়া
রঙ সতেজ করে দেয়–
জানো মেঘ,
পৃথিবীর কোনো বৃষ্টি-জল ধুয়ে দিতে পারেনা হৃদয়!
————-
ব্যথাতুর পদ্ম
একদিন গোধূলিতে জমা ছিলো পাখিদের, ঘরে ফেরার
যে-গদ্য
সন্ধ্যার বয়স বাড়ার সাথে রাত ঘনিয়ে এলে হারিয়ে
গেছে তার মাহাত্ম্য
জারুলবনে উড়ালপথে ঝরে পড়া পালক ছাড়া অবশিষ্ট
নেই আর কিছু’ই
তবুও রাত্রির গান লিখে যায় অস্তমিত দিবাকর
কক্ষপথের ওপাশ থেকে
নক্ষত্রের কাব্য শুরু হয় দূর কোনো প্রান্তরে, যেখানে
থেমে গেছে সমস্ত দিনের কোলাহল
পৌষের ধানক্ষেত মাড়িয়ে দেয় ঔদ্ধত্য জ্যোৎস্না;
জন্মায় কিছু ব্যথাতুর পদ্ম, রাত্রির নৈঃশব্দ্য ঘেঁষে।
————————-
সিঁদুরে সহেলি 
ইদানীং উড়াল জানতে ইচ্ছে করে। বললে ভালো হয়
পাখি হতে ইচ্ছে করে। আরো স্পষ্ট করতে চাইলে—
এ-যেনো নিজের কাছে ইচ্ছে মেলে, নিজেকে বলা: হতেম
যদি একটি সিঁদুরে সহেলি; ডানায় ভর করে হেঁটে যেতাম
পৃথিবীর সব ট্রাফিক সিগনাল পেরিয়ে তোমার জানালার
পাশে’র ল্যাম্পপোস্ট-এ চুপটি করে বসতে।
ভাবনা আসে, পাখিদের চোখে কী সমস্যা থাকে, তাদের
চোখের অসুখে কবিরাজ লাগে, নাকি সজন ভেষজ দিয়ে
দৃষ্টি ক্ষমতা সতেজ করে দেয়, নাকি তাদেরও লাগে
পাওয়ার গ্লাস ধরনের কোনো চশমা; জানি না কিছু’ই।
পাখি নিয়ে জানা-জ্ঞান কম। শুধু একবার একটি উড়ে আসা
চড়ুই, আর কিনে-আনা টিয়ার সাথে সখ্য হয়েছিলো, ও-ই
টুকু’ই।
কতোখানি দূর থেকে, অসুস্থ চোখে প্রিয় দেখতে চশমা
লাগেনা একটি স্কারলেট মিনিভেটের, আমি জানি না।
মানুষ-জন্মে চশমা ছাড়া দূরের সব ঝাপসা, তাই ভয়…
তবে এই-জন্মে আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে
ছবি আকঁতে জানি, চশমা লাগে না। এটা হয়তো পরমাত্মার
জন্য, সীমানা অতিক্রম করতে পারা।
ইদানীং হলুদ পালকের নিচে, লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে
একটি সাদা শাঁখা, বা-পাশের ডানায় পরবো বলে!
এই-জন্মে কিঞ্চিৎ শঙ্খ হতে পারায়, সমুদ্রের গর্জন পুষে রাখি
তোমায় শোনাবো বলে; যদিও আমি জানি এর কিছু’ই তুমি
টের পাবে না; ইদানীং আর জানাতে ইচ্ছে হয় না বলে।
——————-
নক্ষত্রতিলক
দোলপূর্ণিমা রাতে আকাশে তর্জনী তুলে দ্বিখণ্ডিত করি
একটি নক্ষত্র, তোমার ললাটে ফেলবো বলে; ভূমন্ডলের
বহুদূর হতে বিস্ময় জাগানিয়া হে, তুমি হয়ে ওঠো সুন্দর-
আর আমি হয়ে যাই তোমার ললাটতটের নক্ষত্রতিলক।
——————-
টেলিপ্যাথি
টেলিপ্যাথি নির্মাণ হয়না তিন টুকরো মাংসপিন্ডে
সপাটে খুলে দিতে হয় অন্তরাত্মা এবং তিনশগ্রাম
হৃৎপিণ্ড দিয়ে নির্মাণ করতে হয় মিলিয়ন বর্গমাইল
ভূমন্ডল। তুমি কাকে বলো ভালোবাসা, কী সে-প্রেম
সমস্তটাই বিভ্রম, যদি অসীমের নাভিকূপ ভেদ করে
না’ই ছোঁয় তোমায়— আমার অনন্ত শয্যার সৌরভ।
দৃষ্টিতে বিঁধে থাকা কায়া জানে, চোখ-দিঘিতে ছলাৎ
ছলাৎ ডুবসাঁতার। সে আদরে ডুবে আবার ভাসে রোজ
পূর্ণিমায় সে’ই তো শঙ্খ বাজায়, নোনা জলে শ্বাস নেয়
গহীন ভেতর!
————————
শূন্য
ভালোবাসা মেঘ হয়ে যায়
ইচ্ছা গুলো পাখি
স্বপ্ন মেঘের গন্ধ
শূন্য তুমি, শূন্য করে দাও
শূন্য হয়ে যায় সমস্ত
মেঘের গন্ধ নিয়ে পাখি উড়ে
পালক নিয়ে শূন্যতা
শূন্য তুমি, শূন্য করে দাও…
————————
প্রজ্ঞা
শরৎ, নাম দিয়েছিল কুরচি–
আমারও আছে কিছু পুষ্পসৌরভ
তোমার জন্য পুষে রাখা সুবাসগুলো
একদিন দিগন্তের মেঘ লাল হয়ে গেলে
উড়িয়ে দেব গভীর অরণ্য-পথে
দেখে নিয়ো, কোনো এক ঘোর অমাবস্যায়
কুরচি’র সাদা ফিনফিনে সুগন্ধি-ডানা, বাঁ-বুকের
তিলকে দাগ কেটে আসবে, আর তুমি
–চিরতরে হারিয়ে যাবে আফিমের বনে

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>