ইরাবতী উৎসব সংখ্যা: কবিতাগুচ্ছ । সরদার ফারুক
আনন্দ
আনন্দ বলতে আমি যেটুকু পেয়েছি
তার সবটুকু জুড়ে তিতকুটে আরকের স্বাদ
জলসত্র মনে করে চলে গেছি কসাইখানায়
দেখেছি রক্তের ধারা, পশুর অক্ষম প্রতিরোধ
বুনোলতা খুঁজতে খুঁজতে কতোবার
পেয়ে গেছি পাহাড়ি মেয়ের
ছিন্নভিন্ন কণ্ঠহার, হারানো ঘুঙুর
জিপসি রমণী আমাকে চেনালো
সরাইখানার গোপন আয়না
কস্তুরির ঘ্রাণ
খোলের আওয়াজে একদিন ছুটে গেছি
সংক্রান্তির মেলা, মানুষের সঘন উল্লাসে
দেবী
মন্দিরের কাছে গিয়ে দেখি
দেবীর মস্তক ভাঙা, হাতের খড়গ
দূরে পড়ে আছে
জেলেপাড়া থেকে কান্নার আওয়াজ,
কে যেন হঠাৎ কার মুখ চেপে ধরে
তারপর নীরবতা, শেয়ালের পায়ে
শব্দহীন জুতো
মাঝেমধ্যে ঝিঁঝিপোকা ডাকে
পপিফুল
একটি নতুন সুর আদুরে বেড়াল হয়ে
কোলে বসে আছে
পানশালা জুড়ে মাতালের মৃদু পাগলামি
বইয়ের কাহিনী থেকে বিদুষী নায়িকা এসে
বাড়িয়ে দিয়েছে রেশমি রুমাল
কোথাও বেড়াতে যাবো—এই কথা ভেবে
তামাকের মুখে আগুন ধরাই
আবার বিলের ধারে ছিপ দিয়ে মাছ ধরা হবে
গ্রামের মেলায় শ্যামলা মেয়ের পিছে ঘুরে
একদিন তার চোখে দেখে নেবো
কুমারী বিস্ময়
আমি কি চেয়েছি এই ভিনদেশী পপিফুল, বিষে ভরা মাঠ-
যেখানে মৌমাছি দুপুরের রোদে মরে পড়ে থাকে?
দোতারার তার ছিঁড়ে গেছে
কেউ আর গাড়িয়াল নামে ডেকে
আনতে বলে না রঙচঙে ফিতে, আলতা, কাজল
কারা যেন মুছে ফেলে ছবিঘর, আলপনা, নাচের আসর
বিউটি সার্কাস
বাইরে যেসব ভাই ঘোরাফেরা করছেন, তাদেরকে বলি,
আমাদের কাউন্টার খোলা। টিকিট জোগাড় করে তাঁবুতে আসুন
এখানে এখন চলে ট্রাপিজের খেলা। ষাট ফুট উঁচু এক দোলনায়
সুন্দরী তরুণী, সঙ্গে আছে পাঁচ বছরের শিশু
এই যে দেখুন, শিশুটি কীভাবে মেয়েটির হাত ধরে
শূন্যে দোল খায়, নিচে পড়লেই সাড়ে সর্বনাশ!
আতঙ্কের সুখ দিতে পারে শুধু আমাদের বিউটি সার্কাস
যেসব বামন অসভ্য কৌতুকে মেতে আছে
ওদেরও তো পেট আছে, কাকু!
সামনে আসন খালি, দেরি করে লাভ নেই
এরপর শুরু হবে গোলকের মাঝখানে বাইক চালনা
ভয়ংকর সিংহ আছে খাঁচায় মজুত!
আধুলি
অচল আধুলি হয়ে আছি। ছুটি শেষ হয়ে আসে,
আর সেই জ্বরের বিরাম নেই
কিছুই ছিল না, তবু কেন হারাই হারাই ভাব?
কেউ বোঝে না বলেই একা। আড়বাঁশি
বাজাতে জানলে কিছু উপশম হতো?
একদিকে অশ্রুমতী রাত, অন্যদিকে
দিনের শেকলে বাঁধা আলাভোলা হরিণশাবক
সরদার ফারুকের জন্ম ১৯৬২ সালের ৯ নভেম্বর। পৈত্রিক নিবাস বরিশালের কাশিপুর। পেশায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি নব্বুইয়ের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক।
১৯৮০ সাল থেকেই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন।
প্রকাশিত কবিতার বই– আনন্দ কোথায় তুমি; পড়ে আছে সমুদ্র গর্জন; উন্মাদ ভূগোল; দীপালি অপেরা; ও সুদূর বীজতলা, মঠের গম্বুজ; দূরের জংশন; অন্যদের তর্কে ঢুকে পড়ি; খেলছে একা নীল বিভঙ্গ; নির্বাচিত কবিতা; গির্জার ঘণ্টার মতো উদাসীন; সিংহাসনের ছায়া; যূথিকা নার্সারি; ওঁ মধু, ওঁ শাশ্বত পরাগ; দিন কাটে পালকের শোকে; দ্বিতীয় সংসার; দাসীর বাজারে; সরদার ফারুকের ১০০ কবিতা
গল্পগ্রন্থ-নোনা শহর