Categories
ইরাবতী উৎসব সংখ্যা: শাশ্বতী বসাক’র কবিতা
আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট
প্রত্যাশা
কবিতার কাছেই শুধুই দাবী
এমন কথা বলিনি তো–
যাঞ্চা করেছি বাড়ানো দু’হাত
ছল করে চোখ মুছিনি তো
#
যে কথা শুধুই দু’চোখ বলেছে
কণ্ঠস্বরে ধ্বনিত নয়,
সে কথা কারো অন্তঃস্থলে
অতৃপ্তি আনে, বৃষ্টি নয়
#
তাকিয়ে দেখেছি প্রকৃতি সেজেছে
পল্লবে, তৃণে শ্যামল সুখে
চাহিদারা সব ঘুমিয়ে পড়ুক
নরনারীর তৃপ্ত বুকে।
স্রোত
নতুন শব্দবন্ধ বুনে বুনে চলি
রক্তমাখা যোনিস্রোত যন্ত্রণা জাগায়,
আবার সম্ভাবনার অপমৃত্যু…
#
সব কুঁড়িদের গলা টিপে টিপে
হত্যাকারীকে মমতার আচ্ছাদনে
আবৃত রাখি, তলপেটের সেলাই
বর্ণনা করে যায় জরায়ুর
শব-ব্যবচ্ছেদ, আমি অচেতনে
শুনতে পাই ডাক্তারবাবুর কণ্ঠস্বর —
এডিমা, এডিমা,…. এমার্জেন্সি, অপারেশন….
#
মুখে বাইপ্যাপ, অসম্ভব তৃষ্ণা নিয়ে
হাত বাড়ালে দু’ফোঁটা জল জোটে
নিঃশ্বাস নিস্পৃহ হয়ে আসছে,
চেতন আর অবচেতনের মাঝখানে
দাঁড়িয়ে আমি প্রহর গুণে যাই,
শরীরের নিচে আবার স্রোতধারা,
আস্তে আস্তে চেতনা বিলীয়মান…
#
ভেন্টিলেশনের শেষে আমি বাইরে
আকাশ দেখি, দুটো পাখি…
ঠোঁটে ঠোঁট, লাল রঙ ধীরে ধীরে
শরতের নীল হয়ে যায়…
কুয়াশা
‘গত দশ বছরে ধরে একইরকম আছো’–
এ’কথা শুনেছি আর ভেবেছি,
শরীরে এতো সময়ের পলি পড়ে গেছে,
তা সরিয়ে নিজেকেই অচেনা লাগে,
চুল রুপোলি, চোখের তলায় কালি’
আর মুখের দাগ, কনসিলার নিত্য সঙ্গী,
শরীর ক্রমশ জানান দিচ্ছে, বানপ্রস্থের
সময় আগত, চাঁদের এখন অমাবস্যার দিকে
যাত্রা, তারপর ক্রমশ বিলীন
মন আরও বেশি সাদা থেকে ক্রমশ
ফ্যাকাশে হয়ে যাবে, প্রস্তুতি প্রয়োজন,
ক্রমশ নিজেকে ভারমুক্ত করতে ইচ্ছে হয়।
আবদার আর আহ্লাদ এখন অন্তস্থলের
অন্দরে প্রবেশ করে না
বাইরের ধাক্কা খেতে খেতে মনও ক্রমহ্রাসমান।
#
শরীর কি তবে কুয়াশায় ভাসমান !
ঘন্টাধ্বনি
হাত বাড়ানোই ছিল, এখনো অর্গলহীন –
তবু তাকে তুমি দক্ষিণের বারান্দা ভেবে
ভুল কোরো না
#
আশ্রয় চাও, ছায়া চাও, ফুলের বিস্তার চাও
কুড়িয়ে নাও,
সময়ের ভুলচুকে নকশি কাটা
নকশা বোনার সুতোও পেতে পারো.
তবু নকশিকাঁথার মাঠকে শীতরাতে
পাশে চেও না –
সে উষ্ণতার পরিবর্তে তোমায়
ঝর্ণার জলতরঙ্গ শোনাবে
#
হয়তো সেই তরঙ্গধ্বনি
তোমায় সমুদ্রের নোনাজলের
আস্বাদ এনে দেবে
আর শোনাবে অনিবার্য মৃত্যুঘন্টা
#
সেই অনিবার্যতাকে অন্তরঙ্গতা ভেবে
নিজেকে ভুলিও না…..
সমীকরণ
মৃত্যুর মতো মহৎ সত্যি আর কিছু হয় না,
দু’দিনের জীবনের গায়ে হা-হুতাশ,
কালি লেগে থাকে….
শুধু স্মৃতিরা চলে আসে ল্যাপটপের পর্দায়,
তোমার ছবিতে বার বার চোখ চলে যায়,
পুরোনো কথা, কথোপকথন, কানে ভেসে আসে,
আর্তি, অন্তরঙ্গতা আর অভিমানের গল্প,
ফোনের ওপারের কন্ঠস্বর, দীর্ঘদিনের মনখারাপ,
অসুখ, সঙ্গে সার বাঁধা চিকিৎসা-কথা….
#
শরীর সঙ্গে দেয় না, মন তো অনেক আগেই
হাল ছেড়ে দিয়েছে, শুধু শেষদিকের কথা
বারবার ফিরে ফিরে আসে, তবু —
ইচ্ছে, হাহাকার আর অব্যক্ত যন্ত্রণারা
যেন সামনের জীবনে পূর্ণতা পায়….
জন্ম ১৯৭১। বেহালা গার্লস হাই স্কুল ও ঠাকুরপুকুর বিবেকানন্দ কলেজে পড়াশোনার শেষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন,পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। কর্মজীবনের শুরু থেকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন শিক্ষকতাকেই। বেশ কিছুদিন বেসরকারি প্রাইভেট স্কুলে পড়ানোর পর বর্তমানে একটি সরকার প্রোষিত স্কুলের ইংরেজির দিদিমণি। এছাড়া হাতে ছুঁচ-সুতো পেলেই কাপড়ের বুকে বুনে চলেন নিত্যনতুন নকশা। জীবনের বিচিত্র রঙ, রূপ, ছন্দ আর আনন্দকে দু’হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার একান্ত প্রয়াসই কখনো কবিতা হয়ে ধরা দেয় নিভৃতে।