ইরাবতী উৎসব সংখ্যা: সৌমনা দাশগুপ্তের কবিতা
সেগুন ফুলের কাছে
পালকের প্রসাধন খুলে উঠে বসে পাখি
হাওয়া তো হাওয়ার মতো একলা দানব
উন্মাতাল সাগরের ধুনে তার হাসি বেজে যায়
সে তোমাকে ডাক দেয় তরাইয়ের বনে
দমচাপা সোঁতাটির পাশে
নুড়িছাওয়া রাস্তায় ঝুঁকে আছে ঝোপঝাড়
নীচে তার শ্যাওলাবিছানা
নিজেকে হারাবো আমি, তুমিও কি একদিন
হারাবে তোমাকে ওই ছোটো জলে, মাছের সাঁতারে
সেদিন সে ঝোরাজুড়ে কত ঘাম কত নুন
দুপুর নতুন করে লেখা হয়
দুপুর নতুন করে ভেসে যায়
সেগুন ফুলের কাছে রেখে আসি কথাঝাঁপি
বই
এক ফর্মা ঝিঁঝিঁডাক, দশ ফর্মা পাখিডানা
চার-ফর্মা নদীর বীজ
গাছের বাকল দিয়ে বাঁধানো এ বই
শাদাপাতা, সারাদিন সারারাত হিম ঝরে
ময়নাতদন্তের পর পড়ে আছে মেঘেদের হাড়গোড়
গান
শাদা-কালো খোপ কাটা বাড়ির চাতালে
স্বপ্ন আর মৃত্যু এসে দাবা খেলে রাতে
পার্থেনিয়ামের ঝাড়, ওই ডাকে ওই ওই
সবুজের লোভে লোভে বারবার ছুটে যাই
বিষের প্রপাত দেখে ছুটে যাই
এসবের সাক্ষী কিছু ঝরা পাতা, শিরীষের জারুলের
ঈষৎ বাদামি আর মুচমুচে
পুরোনো ডায়েরি থেকে ভেসে আসা গান
জলের গল্প
আলমারি খুলতেই ঝাঁপিয়ে একটা নদী নেমে এল
সেদিন এ-ঘরজুড়ে কেবল জলের গল্প
জলের ভেতরে যেন পিংপং বল
ড্রপ খাচ্ছে স্বপ্ন
ঠিক তখনই শাড়ির ভাঁজে ডেকে উঠল মেঘ
মেঘেদের বলরুমে
রাতের ক্যাটওয়াক। মেঘেদের বলরুম
গেলাসে গেলাসে ওরা ঢেলে দেয় তারার শ্যাম্পেন
খোঁড়া চাঁদ পিঠে নিয়ে হেঁটে যায় অন্ধ খরগোশ
আমিও কি ঝাঁপ দেব, আমিও কি
আকাশের বুকে পিঠে গিঁথে দেব অপার বুলেট

কবি ও গদ্যকার।